...

3 views

বিমূর্ত স্বীকারোক্তি – 3
মাঝে মাঝে গল্প শুনতে ইচ্ছা করে। যদি আরব সাগরের উপকূলে বসে সন্ধান পেতাম কোনো তারাদের ইহলোকের, যদি কোনো বিড়ম্বিত বিদ্রুপ শোনা যেত পরলোক থেকে – এসো, এখানে এসে বসো, তোমার স্থান গ্রহণ করো গ্রহাণুর মতো – তবে আমি নিশ্চিত হতে পারতাম – আমি অনতিদূরে। প্রশ্রয় পেতাম সেখানে যাবার। তবে আক্ষেপ হয়তো হতো, কেননা সকলেরই হয়। গল্পের গাংপাড়ে আকাশ যে নীল হয়না রোজ! তার জন্য প্রয়োজন প্রাণ, একান্ত কাম্যতা। অপরাহ্নে ভবঘুরে কাঠগোলাপের ছায়ায় দাঁড়িয়ে ঘোষণা করতে হয়না – পাইনি আমি সবটা। সব পেলে গল্প লেখার দরকার পড়ে না। যাদের হৃদয় থেকে গল্প নেমে আসে না, উপচে পড়ে না পেয়ালার চায়ের মতো, তারা অন্যের অভিজ্ঞতা শুনেই শান্তি অনুভব করে, শীতের চায়ের মতো উষ্ণতা খুঁজে পায়। গল্পে বাস্তবিকই অনেক কিছু হয়। কবিতার লাইনের অভিধায় যশ আছে, বিদ্রোহ আছে, আবেগ আছে। কিন্তু গল্পে সবই আছে। অন্তত হিসেবটা তাই বলে। প্রকৃতির মতো সত্য ও সততা, জীবনের রূঢ় চারণস্থল, কিংবা আফিমের মতো ভ্রাম্যমান মিথ্যা আশ্রয়, অথবা এদের বাইরে যা কিছু কল্পনা করা যায় বা যায় না – সবকিছু নিয়েই নাগরিক সমাজে গল্পের মহাজাগতিক মাহাত্ম্য। গল্প যেন কিছু কিছু মুমূর্ষের কাছে জ্বরের ঔষধ, যারা গল্পের সাক্ষী হয়ে বাঁচতে চায়। কারণ তারা গড়ে তুলতে পারেনি কাঙ্ক্ষিত জীবন। আর জীবনে গল্প লেখার জীবনীশক্তি অবশিষ্ট না থাকলে তখনই একা হতে ইচ্ছা করে – মরুর ক্যাকটাসের মতো। কমেডি নয়, ট্র্যাজেডি লিখতে ইচ্ছা করে। অর্থাৎ শিল্পীর চোখে শিল্প ছাড়া আর কোনো কিছুর বাড়বাড়ন্ত থাকে না। আমরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ গুণে, পেশায় এক একজন অভিজ্ঞ শিল্পী হয়ে উঠি, তবু বাকি রয়ে যায় অনেক কথা বলা। আর সেই গল্প বলার মাঝে ছেড়ে উঠে চলে যাওয়ার নামই জীবন।

© soumik299