...

22 views

রহস্যময় সুন্দরবন( অংশ 4)
গল্প পড়তে পড়তে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তা বুঝতেই পারিনি। জেগে উঠলাম তাও অপুদার ডাকে। উঠে দেখি সবাই যে যার মতো রেডি হচ্ছে, আমার বইটা অপুদার বিছানায় পরে থাকতে দেখলাম। এবার অপুদা ওর সার্ট এর বোতাম লাগাতে লাগাতে বলে উঠলো নে এবার রেডি হয়ে নে আর একটু পরেই ডাক পড়ে যাবে। আমি চড জলদি রেডি হয়ে নীচে এসে দেখি সবাই রেডি হয়ে গাড়িতে বসে রয়েছে, প্রথমে ভাবলাম বোধহয় আমার জন্য অপেক্ষা করছে সব, পরে বুঝলাম যে গাইড নিশান বাবুর জন্য দাড়িয়ে আমরা। নিশান বাবু এলেন একটা বড়ো ঝোলা নিয়ে। জিজ্ঞেস করায় উনি বললেন প্রয়জনীয় সরঞ্জাম, মেডিসিন রয়েছে। তবে আমি মনে করি এসব না নিলেও চলত। কারণ আমরা তো আর একেবারেই খালি হাতে আসিনি। এখন আমরা যে রাস্তা দিয়ে চলছি তার দুপাশে শুধুই গাছ। সত্যিই কি সুন্দর এই প্রকৃতি যেন ঈশ্বর তার অপার সৌন্দর্য ঢেলে দিয়ে গেছে। আমরা এখন বনের দক্ষিণ দিকটাই এসে পড়েছি। গাড়ি থেকে নেমে এই সৌন্দর্য ময় বনের রূপের রহস্য বোঝার চেষ্টা করছি। চারিপাশে শুরু জঙ্গল আর বড়ো বড়ো গাছ। এখানে অনেক গাছের মধ্যেই যেটা বেশি চোখে পড়ে শালগাছ, কত রকম পাখির আওয়াজ যে শুনতে পাচ্ছি তা গুনে বলা মুশকিল। তাছাড়াও এদের মধ্যে অনেক পাখি তো আমরা তিনিই না। এর মধ্যে কে যেন চিৎকার করে বলে উঠলো ওই দেখ বাদঁর। তাকিয়ে দেখি সত্যিই মোটামুটি পাঁচ ছটা বাঁদর একটা গাছের ওপর। দাঁত কিটিমিটি করে কী যে করছে।
বনের মধ্যে সরু রাস্তা চলে যাওয়ার কারণেই বুঝতে অসুবিধা হলো না যে এদিকেই গ্ৰাম রয়েছে। একটু ঘুরতে ঘুরতে জলের কুলুকুলু আওয়াজ শুনে দূরে গিয়ে দেখলাম নদী নয় তবে বড়ো ও সরু একটা খাড়ি । তবেএই খাড়িটি কে জঙ্গলের মধ্যে বেশ লাগছে দেখতে। খাড়ি টি কোনাচে হয়ে বেকে গিয়ে নদীতে মিশেছে। খাড়ির ওপারের জঙ্গল আর যেখানে কোনাচে হয়েছে সেখানে বৃদ্ধ মরা একটা গাছ। গাছটা প্রথমে চিনতে না পারলেও পরে নিশান বাবু বললেন যে ওটা বট গাছ। ওখানে আগে লোকে পূজো করতো তবে গাছটা মরে যাওয়ার পর নাকি কেউ আর পুজো করে না এমনি নাকি শূনেছেন তিনি। হ্যারি পাশে একটা পাকুড় গাছ দেখতে পেলাম বইকি। তবে খাড়ির এপারেও একটা বড় পাকুরগাছ রয়েছে তবে সেখানে কোনো বট গাছ নেয়। গাছ টা বেশ পুরনো এর শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে পড়েছে সম্পূর্ণ বনে। সবচেয়ে সুন্দর হলো এর গাছ মধ্যে হা করা একটি কুঠোর।। এখানে ঘোরার পরে আমরা পাঁচটা নাগাদ এখানকার আদিবাসী পাড়ায় গেলাম ।সেখানে তাদের পরবর্তী, সন্ধ্যা হতে না হতেই শুরু হল মাদলের টান ও মন শান্ত করা বাসির আওয়াজ। সঙ্গে আদিবাসী মেয়ে দের নৃত্য যেন মনের মধ্যে ছন্দ তুলে দেয়। অন্ধকার হওয়ার পর যেন তাদের সৌন্দর্য আরও ফুটে উঠেছে। মাঝখানে আগুন জ্বলছে আর তার উপর জ্বলছে একটি মৃত পশুর ঝুলন্ত দেহ।বুঝলাম অনুষ্ঠান শেষে এর ভক্ষণ হইবে। অন্ধকারে কে কোথায় তা বোঝা মুশকিল। তবে আমার পাশে যে কীলূ স্যার ও সমড় আছে তা বুঝতে পারছি। কারণ কথায় কথায় স্যরের পীঠে চড় মারার অভ্যাসটা আমার ওপরই পতিত হচ্ছে। আগুনের ওপারে একবার দেখতে পেলাম অপুদাকে। ও কোনো একজন আদিবাসীর সঙ্গে কথা বলছিলেন তবে কি যে বলছিলেন তা বোঝা মুশকিল। তবে সবাই কে দেখলেও নিশান বাবু কে দেখতে পেলাম অনেকক্ষণ পর। উনি বোধহয় সব ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছিলেন। তাই চোখে পড়ে নি এতক্ষণ। এবার যা হল তা অপ্রত্যাশিত কীলূস্যার নাচতে আরম্ভ করেছেন মাদলের তালে। তাই আমরাই বা বাদ যায় কেন। রাত্রি আটটা নাগাদ হঠাৎ জঙ্গলের মধ্যে থেকে শুনতে পেলাম কারো ভয়ংকর চিৎকার। আতঙ্কে আমাদের গা শিউরে উঠছিল। আমরা দৌড়ে সেখানে গিয়ে দেখি একজন কালো কোট পরা ভদ্রলোক উপর হয়ে নিথর ভাবে পরে আছে। পাশে একজন আদিবাসী ছোকরা।পড়ে থাকা লোকটির শরীর সম্পূর্ণ ভীজে গেছে রক্তে। পায়ে জরিয়ে আছে অনেক কাঁদা। অপুদা প্রথম উপর হয়ে থাকা লোকটা কে সোজা করায় যেন আমাদের মাথায় বজ্রপাত করল! আমাদের গাইড রমেশবাবু! আমরা নিজেদের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না। রমেশ বাবুর দেহটা নিথর ভাবে শুয়ে আছে। ওনার মুখে ভয়ের প্রবাশ, আর গালে পেটে হাতে বাঘের আচড়!দেখে আমার ভয়ে অবস্থা খুব খারাপ। শেষে ঘুরতে এসে বাঘের মুখে। তারপর কীলূস্যার কে দেখলাম উনি লাফিয়ে গিয়ে রমেশ বাবুর নারি স্পন্দন দেখে নিরুৎসাহ ভাবে বসে রয়েছেন, চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ। আমাদের বুঝতে আর বাকি রইলো না যে রমেশ বাবু মৃত। হঠাৎ দেখি নিশান বাবু ফরেস্ট অফিসার রঞ্জিত যাদবকে সঙ্গে করে এনেছেন। হয়তো উনি ব্যপার টা টের পেয়েই ওনাকে ফোন করেছিলেন। রঞ্জিত বাবু আমাদের বললেন এখন আমাদের এখানে থাকাটা সেফ নয়। কারণ লাশের গায়ে বাঘের আচড় ও পাশে বাঘের পায়ের ছাপ এলোমেলো ভাবে জঙ্গলের মধ্যে গিয়ে হারিয়ে গেছে। স্থানীয় থানায় খবর দেওয়ার পরেই আমরা চলে আসি হোটেলে। আসার সময় কীলূস্যার বলেন না! না! আর এক মূহুর্তও এখানে নয় কালই আমরা ফিরে যাবে কেষ্টপুরে। যখন হোটেলে আসলাম তখন রাত্রি পৌনে দশটা বাজে আমি না খেয়েই শুয়ে পড়লাম। মাঝরাতে একবার ঘুম ভেঙে যায় কারো পায়ের শব্দে। উঠে দেখি অপুদা পায়চারি করছে। আর সিগারেটের দোয়ায় ঘর যেন অন্ধকার। আমি বললাম কী ব্যপার বলোতো তুমি এখনও জেগে আছো।ব্যপার টা কি খুব একটা কঠিন বাপি। মানে !কী বলছো তুমি আমি তো কীছুই বুঝতে পারছি না। অতোবুঝে লাভ নেই, আগে বলতো তুই বাঘের পায়ের ছাপ দেখে কি বুঝলি। আমি প্রায় বিরক্তি হয়েই বললাম এতে আবার বোঝার মতো কী আছে? ভালো করে ভাব বাপি ভালো করে ভাব এই ছাপ আর আসলে বাঘের পায়ের ছাপের মধ্যে কী কোনো ডিফারেন্স নেই? কী যা তা বল কথাটা শেষ করতেও হল না হঠাৎ আমার মাথায় বজ্রপাত করে উঠল পুরোনো এক স্মৃতি। আমি যেটা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার রহস্যে পড়েছিলাম। আমি প্রায় চিৎকার করেই বলে উঠলাম, আছে! আছে পার্থক্য আছে! বাঘ যেখানে তার প্রথম দুটো পা ফেলে ঠিক সেইখানেই পরের পা দুটো। কিন্তু এখানকার ছাপ একদম আলাদা একটা এলোমেলো ভাবে রয়েছে তাতে। আর একটা জিনিস, কথাটা বলে ও আমায় ওই গল্পের বই টা আমার সামনে রাখলো। ও আমায় প্রথমে জিজ্ঞেস করলো পুরোটা পড়েছিলাম। আমি মাথা নেরে বোঝালাম আমি পুরোপুরি পড়নি গল্পটা । ও তাহলে এই পাতা টা পড়।আমি পড়ে বিস্মৃত, যে জমিদার তিলকেশ্বর রায়চৌধুরী এর মৃত্যু এই বনেই হয় বলে লেখেছেন লেখক। অপুদা বলল হ্যাঁ, ওনাকে জলপথে জলদস্যু আক্রমণ করে তাই তিনি প্রাণ বাঁচানোর জন্য এখানে আসেন, তবে এখানে এসে বাঘের কবলে পড়েন তিনি। তা যাইহোক, আসল কথাটা হল তিনি মারা যাওয়ার আগে কিছু লুকিয়ে রাখেন বলে ব্রিটিশ সরকার মনে করেছেন। কিন্তু অপুদা সে কথাটা তো ভূয়ো প্রমাণিত হয়েছে ।আর তাছাড়াও ব্রিটিশ সরকার তো এই নিয়ে সন্ধান চালিয়েছিল। আর কিছুই পাই নি তারা। হ্যাঁ কিছু পায় নি ঠিক তবে কিছু রাখেননি এই কথাটা বলাটা ঠিক হবে না। কারণ ঘটনা ঘটার সময় না আমরা ছিলাম না ব্রিটিশ সরকার ছিল কাজেই এই ঘটনার সব উত্তর তো এই কবিতাটিই দিবে। আমি স্বজরে বলে উঠলাম মানে?
মানেটা আমি তোকে কাল বলবো ,তুই না হয় আমার কথা গুলি বোঝ। আমি ততক্ষণ ঘুমিয়ে নেই। এই বলে ও টানটান হয়ে বিছানার উপর সুয়ে পড়ল। এই দিকে আমি পড়লাম ফ্যাসাদে মনের মধ্যে কিন্তু শব্দটা থাকলে আমার ঠিক ঘুম ধরে না। তবে আমি আর বেশিক্ষণ ভাবতে পড়লাম না। সকালে অপুদাকে দেখতে নি পেয়ে সুবির কে জিজ্ঞাসা করলাম। ও বলল ও নাকি প্রাতঃভ্রমনে বেড়িয়ছে।
আমরা যখন চা খাচ্ছিলাম তখন ও ভালো মেজাজে ছিল ও শিশ দিতে দিতে ঘরের মধ্যে ঢুকলো। কিলুবাবু ওকে দেখে খানিকটাহতভম্ব হয়েও নিজকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন কী মশাই এখানেই থাকার প্ল্যান করছেন নাকি? আরে না! না! কী যে বলেন কিলূবাবু জায়গাটি ঘোরার জন্য যোগ্য হলেও বাসস্থানের জন্য সঠিক নয় আমার মতে। তবে?
তবে কি? আমারা যদি দুপুরে গাড়ি না ছেড়ে রাত্রে ছাড়িয়ে তাহলে কি কোনো সমস্যা আছে? কীলূস্যার কিছু টা সন্দেহের স্বরে বললেন কেন বলুনতো? কারণ টা পরে সালে হয় না! এই বলে অপুদা বাথরুমে ঢুকে পড়ল। এদিকে কালকের রাত্রের ঘটনায় আমার মেজাজ ভিষন রকম বিগরে আছে। আমি কিছুই ভেবে পাচ্ছিনা, আর বুঝতে পারছি না যে কালকের ঘটনার সঙ্গে ওই জমিদারের কি সম্পর্ক। আর অপুদা আমায় কবিতার মানেই বা খুজতে বলল কেন? আর বাঘের পায়ের ছাপ যদি মিথ্যে হয় তাহলে সত্যিটাই বা কি? এই সব নানান কথা ভাবছি ওমনি বাইরে গাড়ির শব্দ শুনতে পেলাম।
বাইরে বেরিয়ে দেখি রঞ্জিত বাবু সঙ্গে আরও একজন, পোশাক দেখে বুঝলাম স্থানীয় থানার একজন পুলিশ। পরে উনি ওনার পরিচয় দেন উনি হলেন স্থানীয় থানার ওসি প্রমোদ ঘোষ। ওনারা এসে ম্যনেজার কে বলে গেলেন যে আজই কোনো ভাবেই যেনো কোনো টুরিস্ট কে বনে যেতে না দেওয়া হয় যতক্ষণ না বাঘ টাকে পাওয়া যাচ্ছে। ম্যনেজার মশাই বলে উঠলেন তা ঠিক আছে। আপনারা কি কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কী? তা আর বলতে! পাহাড়া রয়েছে আর তাছাড়া বন্দর পুরো তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছি। তা আপনারা কি রাত্রে ও পাহাড়া লাগাবেন নাকি? না না সেটা আজ আর হবে না তবে কারণ এখন যদি বাঘটি না পায় তবে বুঝতেই পারবে! আর তাছাড়া আপনারা কেউই কিন্তূ যাবেন না ওই দিকে কারণ একবার যখন ও একজন কে ঘায়েল করেছে তাহলে আর কাউকে যে ঘায়েল করবে না এটা বলা সত্যিই কঠিন।
আমাদের গাড়ি রাত্রি নয়টার আগে ছাড়বে না তাই রেডি হওয়ারও অতো তারা নেই। কিন্তু অনুদানে দেখছি সন্ধ্যা হতে না হতেই রেডি হচ্ছে তাই দেখে কীলুস্যর বলল কোথায় যাওয়া হচ্ছে আমাদের গাড়ি তো সেই মধ্য রাত্রে। ও মাথায় চিরুনি করতে করতে বলল রহস্য উদঘাটনে। রহস্য? সেকি মশাই চোখের সামনে এত বড় রহস্য জ্বলজ্বল করছে আর আপনি বুঝতে পারছেন না। আর আপনি তো বইটা পড়েছেন। কোন বই! আর কিসেরই বা রহস্য? কেন সুন্দর বন রহস্য। আ্য!চলুন চলুন।
অবশেষে আমি অনুদান সুবির আর কিলু স্যার চলমান। কিন্তু কোথায় যে যাচ্ছি তা যানি না কারণ অন্ধকার হয়ে এসছে। তবে বুঝতে পারছি আমাদের গাড়িটা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে চলছে।যাওয়ার সময় ও কীলুবাবুর হাতে একটা কাগজ দিল আমরাও উকিঁ মেরে দেখার বৃথাচেষ্টা করলাম। আমরা নেমে ঠিক সেই জায়গায় গেলাম যার ঠিক পাচঁ ছ পা দুরেই ওই কালকের ঘটনাটি ঘটে।যার উত্তর দিকে রয়েছে সেই বৃহৎ পাকুড় গাছটি। আকাশের অর্ধচন্দ্র সরু নালার মধ্যে ছায়া ফেলেছে। আমরা চারজন ঝোপের মধ্যে বসে আছি তবে কেন তা জানি না। ওই খানেপ্রায় আধাঘণ্টা ধরে বসে আছি তবে কার জন্য অপেক্ষা করছি? এই সময় যেন ফুরচ্ছেই না অকাল যাবৎ ধরে আমরা যেন অপেক্ষা করছি। কীলুবাবু অধৈর্য হয়ে কী একটা বলতেই যাচ্ছিল অমনি একজনের আবির্ভাব হল। অন্ধকার কে ভেদ করে সে বেরিয়ে এল। আমার বুকের মধ্যের ঢিপ ঢিপ টা যেন বেড়ে গেল। শ্বাসপ্রশ্বাসেও যেন ভয়ের শব্দ। হঠাৎ কীলুবাবু তাঁর বন্ধ হয়ে আসা ভীত আওয়াজে ফিসফিস করে বলে উঠলো এতো মশাই বাঘ! হ্যাঁ একটা প্রকান্ড বাঘ আমাদের থেকে ঠিক দশ কদম দূরে ওই গাছের তলায় এসে বসেছে। ভয়ে আমাদের প্রাণ যায় যায়। হঠাৎ পাঁচ সাত মিনিট পর ঘটল এক আশ্চর্য ঘটনা বাঘটি উঠে দাড়াল কিন্তুু চার পায়ে নয় মানুষের মতো দুপায়ে। তার পর গাছের কোঠরে হাত ও অর্ধেক মাথা ঢুকিয়ে কী যেন খুজছে। কিন্তু হঠাৎ দেখলাম ওর চারিদিক ঘিরে ফেলেছে বন্দুকের নল। তারপর ওসি প্রমোদ ঘোষ বলে উঠলো অর্পণ বাবু চলে আসুন ,এতো কষ্ট করলেন আর মুখ দেখবেন না। আমরা সবাই বেরিয়ে গেলাম অপুদা হাসি মুখেই বলল দেখব বইকি। তবে না দেখলেও যে আমি আদানায় চিনতে পারিনি তা কিন্তু নয় বাঘ মশাই। তবে অপরাধির মুখ থেকে তার অপরাধের কথা শোনার মজাটাই আলাদা। তাই না নিশান বাবু! এই বলে মাথার মুখোশটা টান দিয়ে খুলে ফেলাই দেখতে পেলাম এক চেনা মুখ। তবে বেশ রাগান্বিত চোখ গুলো জ্বলজ্বল করছে রাগে। তা আপনিই আপনার অপরাধের কেচ্ছা শোনাবেন না আমি শোনাবো। অবশেষে অপরাধের কথা শিকার করলেন অপরাধি। উনি শিকার করলেন উনিই রমেশ বাবুকে মেরেছেন। আর বাঘ সাজার কারন হল তিনি সবাই আতঙ্কিত করতে চেয়েছিলেন। কারণ সবাই বাঘের ভয়ে এখানে না আসলে তাঁর কাজের সুবিধা হবে। জমিদার তিলকেশ্বরের গুপ্তধন খোজার কাজে। অপুদা বলল কিন্তু রমেশ বাবুকে কেন মারলেন উনি তো আপনার মালিক ছিলেন। মালিক! কীসের মালিক ও একটা গাদ্দার আছে । আমি ওকে খবর জানালাম আর ওই সব হরাপ্তে চাইলো। তাই আমি ওকে মেরে দিলাম।অপুদা প্রায় চিৎকার করে ই বলে উঠলো আপনার মুখে একথা মানায় না নিশান বাবু। আপনিও তো গাদ্দারি করেছেন আপনার জাতির সাথে। আপনিই তো প্রথম ওই বট গাছের তলে খুলতে গিয়েছিলেন আর সেই কারণেই আপনাকে বহিষ্কৃত করে আপনার জাতি কারণ ওখানে আপনাদের কুলো দেবীর পূজা হত। তবে এখন আর হয় না।নিশান বাবু অবাক হয়ে অপুদার দিকে চাইলো! আপনি কি করে জানলেন? এটা বিশেষ কিছু নয় নিশান বাবু। জাস্ট একটা অনুমান মাত্র। কারণ প্রথম পরিচয়ে আপনি বলেছিলেন আপনার বাড়ি কলকাতায় তবে আপনার ভাষা এমন কেন, যখন আদিবাসী পাড়ায় যায় তখন বুঝতে পারি আপনার ভাষার সঙ্গে এদের ভাষার অদ্ভুত একটা টান আছে। আর এখানকার অদ্ভুত বহিষ্কৃত করার নিয়মকানুন জানার পর আমি ওই পাড়ায় আবার আসি আজ সকালে ব্যপার টা জাচায় করার জন্যে। আর সত্যিই জানতে পারি কোনো একজন কে মোটামুটি নয় বছর আগে বহিষ্কার করে এই সমাজ। আমি বললাম সবই তো বুঝলাম কিন্তু নিয়ম টাকে তুমি অদ্ভুত কেন বলছো। দোষ করলে তো বের করে দেবেই। এটাকে অদ্ভুত বলার কারণ আছে। কারণ টা হল দোষী কে শাস্তি না দিয়ে বহিষ্কৃত করে না এরা। অপরাধির ঘারে অপরাধিমুলক একটা চিন্থ গেথে দেওয়া হয়। যেটাকে উনি ওনার শার্টের কলারের নীচে ঢেকে রাখেন। আমি আজ ওটা দেখতে পায় ওনাকে বাথরুম থেকে স্নান সেরে বের হওয়ার সময়।
সবকিছু প্ল্যান করা ছিল কিন্তু আপনার জন্য সব ভেস্তে গেল অর্পণ সান্যাল।আমি আপনাকে ভুলবো না সান্যাল বাবু ভুলবো না ক্রুদ্ধান্বিত হয়ে বলল নিশান বাবু। ও তাতে ভ্রুখেপ নাকরেই বলতে আরম্ভ করল। আপনার সব প্ল্যানই কী পারফেক্ট ছিল নিশান বাবু। মানে? মানেটা এই যে আপনি বাঘ সেজে ছিলেন ঠিকই তবে বাঘের আচরণ গুলিই ভুলে গেলেন। বাঘ কখনো প্রথম আক্রমণ পেটে করে না। তার প্রথম আক্রমণের জায়গা হল ঘাড়। রমেশ বাবুর ঘাড়ে ঘা ছিল ঠিকই তবে সেটা কামড়ের নয়। আচরণের যেটা আপনি আপনার তৈরি করা খোলোশে মধ্যে লোহার চোখা ধারালো নখ নামক অস্ত্রের দ্বারা করেছেন। আরও একটা ব্যাপার আমি খেয়াল করি রমেশ বাবুর পোসমডেম রিপোর্ট দেখার পর যে ওনার মৃত্যু পেটের ক্ষত এর জন্যই হয়েছে। যা বাঘের হামলায় সাধারণত হয় না। সে ক্ষেত্রে মৃত্যু টা ঘাড়ের ক্ষত ও শ্বাস না নিতে পারার কারণে হওয়া উচিত ছিল। তবে অপুদা তুমি কি করে জানলে উনি এখানেই আসবেন। কারণ টা ওসি প্রমোদ বাবুই বললেন তল্লাশি করার সময় আমাদের একজন কন্সটেবল এই কোঠোরের মধ্যে এই ব্যবসা পায়। প্রথমে কিছু বুঝতে না পারলেও পরে যখন মিস্টার সান্যাল জমিদারের ব্যপারটা বললেন তখন আমরা প্ল্যান করে এখানে আসি। রাত্রে পাহাড়া না থাকার কথা গুলো সবই সাজানো কার্লপিট কে সাদা ফেলার জন্য। আরগূপ্তধন খোজার ব্যপার টা তো বললে না। সবই রমেশ বাবুর দৌলতে বলে হেসে উঠল অপুদা। আর তাছাড়াও আমাদের যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। এখনই রওনা না হলে ওরা আমাদের থুয়ে একা একাই কেষ্টপুরে চলে যাবে। বাকিটা না হয় গাড়িতে বসেই সুনবি।আমরা এখন চলছি কেষ্টপুরের উদ্দেশ্যে। গাড়ির জানালার বাইরে সমস্ত দোকান পাট ছেড়ে চলেছি আমরা। আমি এবার অপুদা কে বিরক্তি হয়ে বললাম কবিতার ব্যপার টা তো ঠিক বললে না। তোকে তো ভাবতে বলেছিলাম। ধূর! আমি তো কীছুতেই বুঝতে পারছি না তোমার হেয়ালী। হুমম বুঝলাম। কী বুঝলে? কীছুই না ছাড় ও কথা। কবিতার মানেটা না বুঝলি লাইন গুলো মনে আছে তো। আমি একটু উতসাহিত হয়েই বলে উঠলাম হ্যাঁ হ্যাঁ মনে আছে। বলতো?
আমি আরম্ভ করলাম দুরে চইলা গেলে কান্দায়া মোরে , থাম! বলে উঠলো অপুদা। এখানে বোঝা যাচ্ছে যে এটি প্রেমের কবিতা। কিন্তু ওই বনে প্রেম করে এমন কিছু আছে কি? আমি বুঝতে পারছি না কি হতে পারে তাই আমি মাথা নেড়ে না করলাম। ও বলে উঠলো গাধা কোথাকার! বট গাছ আর পাকুড় গাছ। আমি সত্যিই অবাক ব্যপার টা আমি ধরতেই পারলাম না। কিন্তু অপুদা গাছ তো তাহলে দুটি থাকার কথা কিন্তু একটা করে বট পাকুড় থাকা সত্ত্বেও নালাটার এপারেআরও একটা পাকুড় গাছ রয়েছে। ও বলল এগোএগো ঠিক পথেই যাচ্ছিল। কান্দায়া মোরে কথাটি বুঝলি? না! নালা টি। এক্ষেত্রে কে কাদছে জানিস বট গাছ টা। তাহলে বলতো কার জন্য কাঁদছে নালার এপারের পাকুড় গাছ টার জন্য। গুড। কি করে বুঝলি। কারণ ওর পাশে তো একটা পাকুড় গাছ সেটার জন্য নিশ্চয় কাঁদবে না দুরের জন্য ই কাদবে।দাড়াও দাড়াও এবার আমি বুঝতে পারছি এখানে বট গাছটি বধূ ,আর পাশের জন বর হলে দুরের পাকুড় গাছ টি প্রেমিক যার সে কেঁদেছে। ঠিক এবার পরের লাইন পর নব বধূর পঞ্চমূখ দেখি বারে। এর মানে আরও সহজ পর নব বধূর, পর মানে পরে নব মানে তো তুই জানিস। পঞ্চ হল গে পাঁচ। এর মানে নব অর্থাৎ নয় পরে তার আগে পাঁচ। অর্থাৎ পাঁচ এর পিঠে নয় উনষাটতম পা যেতে হবে। কাকে জানিস ওর প্রেমিক কে অর্থাৎ ওই পাকুড় গাছ থেকে বট গাছ টির দুরত্ব ঊনষাট পা। পরের লাইনের মানে তো একদম জলের মতো দেখা হল মরনে গাছ টা মৃত ছিল তা তুই রেখেছিল। পরের লাইন গুলো শোন। মুই মুখ ঢাকিয়া সরমে।গাছ টা মৃত ছিল অথচ চারিদিকে অনেক জঙ্গল ছিল কিসের জঙ্গল বাপি? এমন কোন জঙ্গল আছে যে সরম অথ্যাৎ লজ্জা পায়। আমার মাথায় যেন অকস্মাৎ বাজ পড়ল। লজ্জাবতী গাছ! হ্যাঁ লজ্জাবতী গাছের ঝোপ। ও আচ্ছা! তাই বলা হয়েছে যদি খুলিতে মোর সালের ঘোমটা খানি দেখিয়া বিস্মৃত হইতে মোর দুর্লভ মন্ত্র খানি। মানে ওই জঙ্গল কেটে সালের বোঝা যাবে দুর্লভ মনরত্ন খানি কোথায় আছে। আ্যবসুলিটলি রাইট বলে উঠলো অপুদা। সত্যিই অপুদা তুমি জিনিয়াস। না! জিনিয়াস আমি নয় জিনিয়াস হল রমেশ বাবু। আমি বুঝতেই পারতাম না যদি না রমেশ বাবুর বডিটা ভেজা থাকত। তাই বুঝতে পারি যা রহস্য তা ওই নালার ওপারে। তবে এক্ষেত্রে নিশান বাবুর অবদান ও কম নয়। ও বহিষ্কৃত হয়ে কোথায় ছিল জানিস। রমেশ বাবুর বাড়ি। আমি অবাক স্বরে বলে উঠলাম কী? হ্যাঁ ও ওখানে মালীর কাজ করতো। ওই মালিক কে এই খবর টা দেয়। বাবা! তাহলে তো এখানে এটাকে সবচেয়ে বলতে হয়। তা আর বলতে! এমন সাংঘাতিক প্ল্যান তো আর গবেটদের মাথায় আসে না বলে হা! হা! করে হেসে উঠল আমাদের স্পোর্টস টিচার অর্পণ সান্যাল ওরফে অপুদা। রাত্রের নিস্তব্ধতা যেন ভেঙ্গে দিল ওর হাসি। আমরা অন্ধকার কে ভেদ করে ছুটে চললাম কেষ্টপুরের দিকে।।

T H E E N D