...

22 views

রহস্যময় সুন্দরবন( অংশ 4)
গল্প পড়তে পড়তে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তা বুঝতেই পারিনি। জেগে উঠলাম তাও অপুদার ডাকে। উঠে দেখি সবাই যে যার মতো রেডি হচ্ছে, আমার বইটা অপুদার বিছানায় পরে থাকতে দেখলাম। এবার অপুদা ওর সার্ট এর বোতাম লাগাতে লাগাতে বলে উঠলো নে এবার রেডি হয়ে নে আর একটু পরেই ডাক পড়ে যাবে। আমি চড জলদি রেডি হয়ে নীচে এসে দেখি সবাই রেডি হয়ে গাড়িতে বসে রয়েছে, প্রথমে ভাবলাম বোধহয় আমার জন্য অপেক্ষা করছে সব, পরে বুঝলাম যে গাইড নিশান বাবুর জন্য দাড়িয়ে আমরা। নিশান বাবু এলেন একটা বড়ো ঝোলা নিয়ে। জিজ্ঞেস করায় উনি বললেন প্রয়জনীয় সরঞ্জাম, মেডিসিন রয়েছে। তবে আমি মনে করি এসব না নিলেও চলত। কারণ আমরা তো আর একেবারেই খালি হাতে আসিনি। এখন আমরা যে রাস্তা দিয়ে চলছি তার দুপাশে শুধুই গাছ। সত্যিই কি সুন্দর এই প্রকৃতি যেন ঈশ্বর তার অপার সৌন্দর্য ঢেলে দিয়ে গেছে। আমরা এখন বনের দক্ষিণ দিকটাই এসে পড়েছি। গাড়ি থেকে নেমে এই সৌন্দর্য ময় বনের রূপের রহস্য বোঝার চেষ্টা করছি। চারিপাশে শুরু জঙ্গল আর বড়ো বড়ো গাছ। এখানে অনেক গাছের মধ্যেই যেটা বেশি চোখে পড়ে শালগাছ, কত রকম পাখির আওয়াজ যে শুনতে পাচ্ছি তা গুনে বলা মুশকিল। তাছাড়াও এদের মধ্যে অনেক পাখি তো আমরা তিনিই না। এর মধ্যে কে যেন চিৎকার করে বলে উঠলো ওই দেখ বাদঁর। তাকিয়ে দেখি সত্যিই মোটামুটি পাঁচ ছটা বাঁদর একটা গাছের ওপর। দাঁত কিটিমিটি করে কী যে করছে।
বনের মধ্যে সরু রাস্তা চলে যাওয়ার কারণেই বুঝতে অসুবিধা হলো না যে এদিকেই গ্ৰাম রয়েছে। একটু ঘুরতে ঘুরতে জলের কুলুকুলু আওয়াজ শুনে দূরে গিয়ে দেখলাম নদী নয় তবে বড়ো ও সরু একটা খাড়ি । তবেএই খাড়িটি কে জঙ্গলের মধ্যে বেশ লাগছে দেখতে। খাড়ি টি কোনাচে হয়ে বেকে গিয়ে নদীতে মিশেছে। খাড়ির ওপারের জঙ্গল আর যেখানে কোনাচে হয়েছে সেখানে বৃদ্ধ মরা একটা গাছ। গাছটা প্রথমে চিনতে না পারলেও পরে নিশান বাবু বললেন যে ওটা বট গাছ। ওখানে আগে লোকে পূজো করতো তবে গাছটা মরে যাওয়ার পর নাকি কেউ আর পুজো করে না এমনি নাকি শূনেছেন তিনি। হ্যারি পাশে একটা পাকুড় গাছ দেখতে পেলাম বইকি। তবে খাড়ির এপারেও একটা বড় পাকুরগাছ রয়েছে তবে সেখানে কোনো বট গাছ নেয়। গাছ টা বেশ পুরনো এর শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে পড়েছে সম্পূর্ণ বনে। সবচেয়ে সুন্দর হলো এর গাছ মধ্যে হা করা একটি কুঠোর।। এখানে ঘোরার পরে আমরা পাঁচটা নাগাদ এখানকার আদিবাসী পাড়ায় গেলাম ।সেখানে তাদের পরবর্তী, সন্ধ্যা হতে না হতেই শুরু হল মাদলের টান ও মন শান্ত করা বাসির আওয়াজ। সঙ্গে আদিবাসী মেয়ে দের নৃত্য যেন মনের মধ্যে ছন্দ তুলে দেয়। অন্ধকার হওয়ার পর যেন তাদের সৌন্দর্য আরও ফুটে উঠেছে। মাঝখানে আগুন জ্বলছে আর তার উপর জ্বলছে একটি মৃত পশুর ঝুলন্ত দেহ।বুঝলাম অনুষ্ঠান শেষে এর ভক্ষণ হইবে। অন্ধকারে কে কোথায় তা বোঝা মুশকিল। তবে আমার পাশে যে কীলূ স্যার ও সমড় আছে তা বুঝতে পারছি। কারণ কথায় কথায় স্যরের পীঠে চড় মারার অভ্যাসটা আমার ওপরই পতিত হচ্ছে। আগুনের ওপারে একবার দেখতে পেলাম অপুদাকে। ও কোনো একজন আদিবাসীর সঙ্গে কথা বলছিলেন তবে কি যে বলছিলেন তা বোঝা মুশকিল। তবে সবাই কে দেখলেও নিশান বাবু কে দেখতে পেলাম অনেকক্ষণ পর। উনি বোধহয় সব ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছিলেন। তাই চোখে পড়ে নি এতক্ষণ। এবার যা হল তা অপ্রত্যাশিত কীলূস্যার নাচতে আরম্ভ করেছেন মাদলের তালে। তাই আমরাই বা বাদ যায় কেন। রাত্রি আটটা নাগাদ হঠাৎ জঙ্গলের মধ্যে থেকে শুনতে পেলাম কারো ভয়ংকর চিৎকার। আতঙ্কে আমাদের গা শিউরে উঠছিল। আমরা দৌড়ে সেখানে গিয়ে দেখি একজন কালো কোট পরা ভদ্রলোক উপর হয়ে নিথর ভাবে পরে আছে। পাশে একজন আদিবাসী ছোকরা।পড়ে থাকা লোকটির শরীর সম্পূর্ণ ভীজে গেছে রক্তে। পায়ে জরিয়ে আছে অনেক কাঁদা। অপুদা প্রথম উপর হয়ে থাকা লোকটা কে সোজা করায় যেন আমাদের মাথায় বজ্রপাত করল! আমাদের গাইড রমেশবাবু! আমরা নিজেদের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না। রমেশ বাবুর দেহটা নিথর ভাবে শুয়ে আছে। ওনার মুখে ভয়ের প্রবাশ, আর গালে পেটে হাতে বাঘের আচড়!দেখে আমার ভয়ে অবস্থা খুব খারাপ। শেষে ঘুরতে এসে বাঘের মুখে। তারপর কীলূস্যার কে দেখলাম উনি লাফিয়ে গিয়ে রমেশ বাবুর নারি স্পন্দন দেখে নিরুৎসাহ ভাবে বসে রয়েছেন, চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ। আমাদের বুঝতে আর বাকি রইলো না যে রমেশ বাবু মৃত। হঠাৎ দেখি নিশান বাবু ফরেস্ট অফিসার রঞ্জিত যাদবকে সঙ্গে করে এনেছেন। হয়তো উনি ব্যপার টা টের পেয়েই ওনাকে ফোন করেছিলেন। রঞ্জিত বাবু আমাদের বললেন এখন আমাদের এখানে থাকাটা...