...

0 views

গল্প ( সিরিজ ):আমার ভূলের মালিকা (তৃতীয় পর্ব- এডমিট কার্ড )
গল্প ( সিরিজ ):আমার ভূলের মালিকা
(তৃতীয় পর্ব- এডমিট কার্ড )

আমার জীবনে ভূলের মালিকার প্রতিটি ফুল নিয়েই গল্প করব,কখনো এক একটা আলাদা ভাবে কখনো একসঙ্গে দু তিনটে করে। এগুলো যদিও আমার নিজস্ব তবে অনেকেরই এমনটা হতে পারে। যদিও বেশীর ভাগ লোকজন বলে থাকে বয়সের সঙ্গে ভোলার ঘটনা বাড়তে থাকে তবে এখনো পর্যন্ত আমার কাছে এর উল্টোটাই হয়েছে অর্থাৎ ছোটবেলার ভোলার ঘটনাই বেশী।
আজ 'ভূলে যাওয়ার' তৃতীয় পর্ব লিখতে বসার মুহুর্তে মনে হচ্ছে ছোটব‌েলায় আমার মাথা কি পাগল ছিল নাহলে কি এমন ভূলে যাওয়া বা ভূল করা সম্ভব! যা হোক বলব যখন অঙ্গীকার করেছি বলতেই হচ্ছে।

আমি ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিলাম 1980 তে, লেখা পরীক্ষা এক বিষয়ে 80, মৌখিক 20। আমাদের সিট পরেছিল 14 কিমি দুরে এক ছোট শহরে, রাস্তা এবং রেল দুয়ের ই সংযোগকারী জায়গাটা। আমাদের গ্ৰাম থেকে বাসে চরে প্রায়‌ এক ঘন্টা লাগত সেসময়, তার উপর দেড় দু কিমি হাঁটা বা রিক্স। ইস্কুলটার দুটো ক্যাম্পাস, একটা ছেলেদের একটা মেয়েদের ।
ছেলেদেরটার গা ঘেঁষে একটা ঐ অঞ্চলের বিখ্যাত লেডি ঠাকুরের মন্দির ছিল ( আজ ও আছে), সংলগ্ন একটা পাহাড় মত যেখানে পৌরসভার জলের ট্যাংক , কিছু ঘরবাড়ি ছিল, সব চেয়ে মজার, ওখানের একটা নিম গাছ, যার পাতা নাকি মিষ্টি ! এই ক্যাম্পাসেই আমাদের মৌখিক পরিক্ষা,পদার্থ বিদ্যার। অনেক আগেই পৌঁছে গেছি বাসের লভ্যতা হিসাবে। ভক্ত বন্ধু কজন পাহাড়ে ওঠার মুখে মন্দিরটায় ঢুকল, কজন গেলাম পাহাড়ের নিম গাছ তলায় । পড়ে থাকা পাতা কুড়িয়ে মুখে দিচ্ছি আর ওয়াক- থু করছি।
এমন সময় একজনের পকেট থেকে পেন, এডমিট কার্ড পড়ে গেল। সবাই নিজের পকেট চেক করতে লাগলাম ,দেখি আমার এডমিট কার্ড নেই। এখানে পড়ে ও নেই অর্থাৎ ঘরেই ছেড়ে এসেছি। অথচ গ্ৰামে বাসে উঠে আমিই সবকে বলেছিলাম- এই সবাই এডমিট কার্ড নিয়েছিস তো? এখন কি করা যায়? ইতি মধ্যে ইস্কুলে প্রথম ঘন্টা বাজল। জলদি নামছি। আমাদের ইস্কুল ড্রেস দেখেই মনে হয় এক ভদ্রলোক বল্লেন তোমাদের পরীক্ষা না, এখানে কি করছ? আমরা নিম পাতার কাহিনী বল্লাম, উনি হেসে বল্লেন পাতাটা মাটিতে পড়ার আগেই ধরতে হবে। কিন্তু ঘন্টা বেজে গেছে, প্রায় দৌড়তে হচ্ছে, তার উপর আমার এডমিট কার্ড নেই তাই যথেষ্ট চিন্তিত সুতরাং পাতার অদ্ভুত্বত্ত চেক করতে পারলাম না।
পরীক্ষা শুরু। আমার নাম আসতেই মনমরা হয়ে রুমে ঢুকেই স্যার কে বল্লাম। উনি বল্লেন
এডমিট কার্ড ছাড়া আমি তো পরিক্ষা নিতে পারবনা। তবে তুমি হেড স্যারের সঙ্গে দেখা করতে পার।
আমি হেডস্যারের রুমের সামনে বোর্ডে উনার নাম দেখে মনে মনে হেসে ফেলেছি। নামটা ছিল খুবই সুন্দর কিন্তু পদবিটা অদ্ভুত। কাঁঠাল , শব্দটা যদিও খুব পরিচিত কিন্তুু পদবী হতে পারে এটা আমার কাছে অভাবনীয় ছিল সেসময়।
যাহোক ভয়ে ভয়ে ঢুকে দেখি ঐ পাহাড়ে দেখা হওয়া ভদ্রলোক।
আমার একটু হলেও ভরসা হল। সব শুনে উনি বল্লেন কাল কি পরীক্ষা আছে? আমি বল্লাম বায়োলজি স্যার। উনি বল্লেন ঠিক আছে বায়োলজি শুরু হওয়ার আগে এখানে এসে আমাকে এডমিট কার্ড দেখিয়ে যাবে, কেমন?
আমি তখন ধন্যবাদ দেওয়া পর্যন্ত শিখিনি, কেবল 'ঠিক আছে স্যার' বলে উনার একটা সই করা চিরকুট নিয়ে ফিজিক্স পরীক্ষকের কাছে দিয়ে পরীক্ষাটা দিয়ে যন্ত্রনা মুক্ত হলাম। মনে মনে ভাবছিলাম টাইটেল কাঁঠাল বলেই হয়তো বা উনি নরম মনের মানুষ! এঁচোর হলে হয়ত শক্ত মনের হত এবং সেক্ষেত্রে আমার কম্পার্টমেন্টাল হওয়া কেউ রুখতে পারতনা।

(তৃতীয় পর্বের ইতি)

**KRN**
18.06.2024 T
Writco: 21.06.2024.
© Don't KR