...

1 views

গল্প: টি আই প্যারেড/ Story: TI parade .
গল্প: টি আই প্যারেড/ Story: TI parade .

‌অমিত বিয়ে বাড়ীর নেমন্ত্রন সেরে সপরিবার বাড়ি ফিরছে, মাড়োয়ারি পরিবার, স্ত্রী ভাই,ভাতৃবধু ,ভাইঝি ইত্যাদি 6-7 জনের দল,অন্যান্ন লাগেজের সঙ্গে দেহে গহনা পত্র ও আছে, বিয়ে বাড়ি বলে কথা। ট্রেন থেকে নেমেছে, হোম স্টেশন, তার উপর অমিত আর ওর দাদা ঐ স্টেশনেই কাজ করে, সুতরাং একটু ক্যাজুয়াল চলাফেরা। লাগেজ নিয়ে ফুট‌ওভার ব্রীজে সব উঠে গেছে, অমিত দু তিনটে সিঁড়ি উঠেছে এমন সময় একটা লোক আরো দু তিনটে সিঁড়ি উপর থেকে ওর ভাতৃবধুর গলার চেনটা টেনে ছিঁড়ে লাফ দিয়ে দিল দৌড়। অমিত কিছু না ভেবেই ওর পিছু নিল। ছিনতাই বাজ দাঁড়িয়ে থাকা ট্টেন গুলোর নীচ দিয়ে কুকুরের মত দ্রুতগতিতে পার হচ্ছে। অমিত তেল ঘিয়ে তৈরী চেহারা নিয়েও গোটা দুই লাইন পার করতেই ছেলেটা 4/ 5 টা লাইন পেরিয়ে অদৃশ্য।
অগত্যা RPF OC 'র শরণাপন্ন। স্টেসনে ড্যুটি, তাই চেনা শোনা ও আছে। উনি সব শুনে বল্লেন - দেখছি।
দুদিন পর ডাক পড়ল , স্টেশনের RPF থানায়। বৌ বা ভাইয়ের বৌ কেউ রাজী হচ্ছিলনা যেতে তবু অমিতের অনেক বোঝাবুঝির পর গেল।
অমিত ছেলেটাকে চিনতে পারল। ওসি বল্ল ভাল করে দেখে নিন এখন, আবার ,TI প্যারেডে চিনতে হবে। তখন হয়তো দেখবেন অন্যরকম।
ততদিনে অমিতের বড়দা মেজদা সবাই জেনে গেছে, ওঁরা বকলেন অমিতকে ,বাড়ির বৌদের নিয়ে থানায় থানায় ঘোরার জন্য।
দিন সাতেক পর ডাক পড়ল ,TI ,প্যারেডে সনাক্ত করার জন্য। বৌরা যাবেনা ,দাদারা ও নিষেধ করল। অমিত যুক্তি দিয়ে বল্ল তোমাদের মত লোকের জন্য অপরাধ চলতে থাকে। সবচেয়ে বড় কথা সমন দিতে আসা সিপাই টা ও‌ বল্ল- আরে বাবু ভদ্রঘরের লোক হয়ে কেন চোর চুয়ারদের পাল্লায় পড়তে যাচ্ছেন? ওরা ও তো আপনাদের চিনে রাখবে, রাত বিরাতে ড্যুটি যাবেন, বদমাসদের কি কোন ঠিক ঠিকানা আছে কখন কি করে বসে ? অমিত মনে মনে ভাবছে সব শালা বদমাসের দল , এরাই যদি এমন বলে তাহলে আর কি হবে! যা হোক পুলিশের কথা শুনে বৌরা আরো বেঁকে বসল।
কিন্তু অমিতের মাথায় জেদ চেপে গেছে ,জোর করে নিয়ে গেল। বৌরা বল্ল - চিনেছ বলবেনা,
মাথার দিব্যি।
TI প্যারেড শুরু, প্রথমে ভাইএর স্ত্রী যার হার ছিনতাই হয়েছে, চিনতে পারলনা, অমিতের স্ত্রী ,উনিও চিনতে পারলেন না। অবশেষে অমিত ,যদিও ও ন্যাড়া হয়ে গেছে কিন্তু অমিতকে দেখেই মুখ ঘুরিয়ে ফেলে। আর অমিত ও সনাক্ত করে ফেলে মাথার দিব্যির পরোয়া না করেই।

যা হোক কদিন পরে এক পুলিশ এল ফাইল পত্র সহ ,কোর্টে যেতে হবে। একটা কাগজ ধরিয়ে দিল। এগারোটায় টাইম। পুলিশ টাকা চাইল কোর্ট এটেন্ড করবে বলে। অমিত নিজের গাড়ি করে নিয়ে যাওয়ার কথাতে ও রাজী হলনা, বল্ল আমি একা যাব ফাইল নিয়ে। 150 টাকা ঝেড়ে দিল।
আবার ঝামেলা বৌরা যাবেনা। অমিত নিজের চাকরি চলে যাবার ভয় দেখিয়ে এগারোটায় পৌঁছাল। দুপুর দুটো বেজে গেল, সেই সিপাই এসে বল্ল খাবারের টাকা দিন। এরা অবাক, নিজেরা ও অভুক্ত। সিপাই বল্ল আমরা পার্টির থেকেই খাবারের টাকা নিই, এটাই নিয়ম। অগত্যা আবার 150 টাকা গেল। তবে টাকাটা চোরের হাতে না গিয়ে পুলিশের হাতে গেছে এটাই একটা স্বান্তনা। বেলা সাড়ে তিনটায় আবার সিপাইটা এসে বল্ল আজ ম্যাজিস্ট্রেট আসবেনা ,ফিরে যান।বৌয়েদের গালি শুনতে
শুনতে অমিত ঘরে ফিরল।

আরো মাস খানেক পর ডাক পড়ল কোর্টৈ, শুনল ও জামিন পেয়ে গেছে, কেস চলছে। এখন অমিত ও একটু ভয় পেতে শুরু করেছে ,বৌরা তো বটেই।
মাস তিন চার পর খবর পেল কেস ডিসমিস হয়ে গেছে কেননা জামিনে থাকতেই আবার ছিনতাই করে পালানোর সময় RPSF এর গুলি খেয়ে মারা যায়।
অমিতের দীর্ঘশ্বাস পড়ে, ভাবে হয়তো লোকটার সত্যিই টাকা পয়সার দরকার ছিল, হয় সংসার চালাতে নয় মা বাবা বা কারুর অসুখ বিসুখের জন্য নয়ত বোন বা মেয়ের বিয়ে কিছুতো একটা হবে নাহলে জামিনে- - - - - -। আবার এও হতে পারে বাজে সব নেশায় আক্রান্ত ছিল।
যা হোক ঘটনাটায় অমিত হারানো পুরোন জিনিস না ফিরে পেলেও অনেকগুলো নতুন জিনিষ পেল যেমন শিক্ষা ও সক্।
1. যা গেছে যেতে দাও , ঝামেলায় যেওনা, যেমন অভিজ্ঞ পুলিশ টা বলেছিল।
2) ঘরের মেয়েদের সম্মান জিনিষের চেয়ে বেশী যেমন দাদারা বলেছিলেন। অর্থাৎ
গুরুজনদের কথা অমান্য করতে নেই।
3) ঘরের মেয়েদের মূর্খ না ভাবা বা তাদের কথার মূল্য রাখা।
4) সব ক্ষেত্রে সঠিক বিচার প্রাপ্তি সহজলভ্য নয় ।
5) বেচারার মৃত্যু শোক, যখন সে জামিনে থাকতেও চুরি করে তখন তার মজবুরি ছিল।
যেটা কিছুটা সমাজ ব্যাবস্থার ও দায় ।

**KRN**
16.04.2024 .R
Writco:15.05.2024