...

3 views

গল্প: দান।
গল্প: দান।

কিছুদিন আগে একটা খবর পড়েছিলাম যে কোন এক দেশের এক নামী আন্তর্জাতিক ফুটবলার তার মস্ত আয়ের প্রায় সবটা গরীবদের মধ্যে দান ধ্যানে খরচ করে দেন। নিজে নাকি পুরোন ঘড়ি ,পোশাক পরেই একেবারে সাধামাটা জীবন যাপন করেন। এমন কি মোবাইল টা পর্যন্ত একদম সাধারণ। এরকম দানীর কথা শুনলে কার না ভাল লাগে। আমাদের তো ,দাতা কর্ণ , দানবীর হরিশচন্দ্রের দেশ তাই আরো বেশী উল্লসিত হ‌ওয়ার কারণ রয়েছে বৈকি। তার উপর এখনকার পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতাময়ী ও নাকি মহাদানী ব্যাক্তি, যার গরীব অন্তপ্রাণ, নিজে মাত্র 200 টাকার কলেজ পাড় শাড়ী আর 50 টাকার হাওয়াই চপ্পল পড়েই জীবন কাটাচ্ছেন কিন্তুু গরীবরা কি করে দুধেভাতে থাকবেন তার জন্য কি কি সব ভাঁড় খুলে দিয়েছেন যার মধ্যে একটা হল লক্ষীর ভাঁড়।
এটা মনে আছে কারণ আমাদের ঘরের 'লক্ষী' নামের মেয়েটা কাজ ছেড়ে মেদিনীপুর শ্বশুর বাড়ি ফিরে গেল,উদ্দেশ্য ওখানে গিয়ে বরের দৌলতে আধার কার্ড বানিয়ে লক্ষীর ভান্ড লাভ। যদিও অনুরোধ টা এসেছিল শ্বশুরবাড়ির তরফেই । তা আমি তো মনে করি ভাল‌ই হল ,কেননা বিবাহিতা মেয়ে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে মায়ের কাছে ঝাড়খন্ডে পড়ে থাকবে কেন? তাও যেখানে গতর খাটিয়ে তবেই খেতে পাবে। অর্থাৎ মমতাময়ীর প্রকল্পে লক্ষীর একডিলে দুটি পেঁচা লাভ হল , এক ভাঁড়ভর্তি টাকা, দুই বরের ভালবাসা। আহা এই না হলে দান! তবে হ্যাঁ এতে আমার বৌ এর কপাল পুড়ল। কেননা নতুন 'লক্ষী ঠাকুর' যোগার করতে পাক্কা দুমাস লেগেছিল ফলে আমার দু মণ ওজনের বৌটা একেবারে ষাট কিলোতে নেমে গেছিল। তবে এটাকে আমি নিউটনের তৃতীয় সূত্রের হিসাব মত ন্যায় সঙ্গত ভেবে মমতাময়ী কে বিন্দুমাত্রও দোষারোপ করিনি।
যা হোক আমি ও নিজেকে দানী দানী ভাবতে শুরু করেছিলাম কেননা মাঝে মাঝে কেট্টো ইত্যাদি এন জি ও তে অনলাইন কিছু কিছু টাকা পাঠাই।
এই তো বছরখানেক আগে পুরী ঘুরতে গিয়ে বিকাল বেলায় স্বর্গদ্বার সি- বীচে আমরা দুজন জলকেলি করে অপরকে আলোকিত করার উন্মাদনায় ছুটে চলা সূর্যের পথের আড়ালে চলে যাওয়ার রক্তিম আনন্দপ্রভায় মাছভাজা খেতে খেতে কানে‌ মাইকে ভেসে এলো গান বাজনার সুর আর তাই মাছভাজা খাওয়ার গতি বেড়ে গিয়ে গলায় ফুটল তার অভিশাপ বাণ। যাহোক কোনক্রমে খাওয়া শেষে আমি ঐ শব্দোৎসের কাছে যেতে চাইলে সাথী বল্ল আমি একটু দোকান বাজার গুলো দেখতে দেখতে যাব। সুতরাং পকেটে যা ছিল তা খালি করে দিয়ে বল্লাম আমি তাহলে 'এ টি এম' হয়ে গানের ওখানে যাব, তুমি ফোণ করে জেনে নিও বাজার শেষে।
সেই মত এগোতে এগোতে একটা 'এটিএম' পেয়ে গেলাম , টাকা তুলে আর একটু এগোতেই বীচ বরাবর রাস্তার ধারেই বালুকাবেলায় ছোট্ট স্টেজ টা নজরে পড়ল।
একটা ওদের সংস্থার ব্যানার এবং সামনে একটা টিনের দান পেটি ও রাখা ছিল। তবে আলাদা লাইট দরকার হয়নি রাস্তার পোলের লাইট থেকেই কাজ চলছিল।
কতকগুলো দৃষ্টি দিব্যাঙ্গ ছেলে মেয়ে রা গান গাইছিল ,কোন কোন মেয়ের কোলে শিশু ও ছিল। হাল্কা কিছুটা শ্রোতাদর্শকদের জমায়েত ও ছিল। দু তিনটে গান শোনার পর সদ্য এ টি এম থেকে পাওয়া টাকাগুলো থেকে দান পেটিতে একটা 500 টাকার নোট ভরে খরচের বহুনি করে দিলাম।
একটু পরে ফোণ মারফৎ আমার অবস্থান জেনে এবং আশ্বস্ত হয়েও উপদেশ ভরে বল্লেন - ওখানেই থেকো যেন পায়ে তো আবার তোমার চাকা লাগানো থাকে , আমি দ্বিতীয় বার আস্বস্ত করায় স্ত্রী সেখানে পৌঁছে গেলেন। সঙ্গে একটা বড় প্যাকেট। ওটা হাতবদল করে দাঁড়িয়ে দুজনে গান শুনছি। এমন সময় একটা মেয়ে আমার কাছে 50 টাকার খুচরো চাইল। আমার কাছে না থাকায় স্ত্রী দিল। দেখলাম খুচরো করার পর একটা দশ টাকার নোট দান বাক্সে ভরল। স্ত্রী বল্ল মেয়েটিকে কোন এক দোকানে দেখলাম মনে হচ্ছে।
আরো অনেকেই 10,20,50,100 এমন কি কেউ 200 টাকা ও দিল। স্ত্রী জিজ্ঞেস করল- তুমি দিলেনা! বল্লাম দিয়ে দিয়েছি। কত? পাঁচশ। এ্যাঁ ! এই বিস্ময়সূচক শব্দটি নিজেকে বুঝি বড় দানী ভাবতে সাহায্য করল ,তাই প্রত্যুত্তরে ছিল নীরবতা।
যাহোক রেস্ট হাউসে ফিরলাম।
কিন্তুু ঐ মেয়েটির ওখানে দান করার জন্য 50 টাকা খুচরো করার ব্যাকুলতা আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।
স্ত্রীর কেনা ,জিনিস গুলো দেখা হল, হিসাব ও মেলানো হল ( যদিও গরমিল হলে কিছু করার নেই, কেননা সকালে এখান থেকে বিদায়) 7000টাকা । এই 7000 টাকার মধ্যে নিশ্চয় নীট লাভ 20% অর্থাৎ 1400 টাকা। তাছাড়া 10% অর্থাৎ 700 টাকা নিশ্চয় কর্মচারী ভূকতান আছে। বাকি লাইট ফ্যান ইত্যাদি আরো অন্তত 10% অর্থাৎ 700 টাকা , মোট 2800 টাকা। তার মানে স্ত্রীর দানের পরিমাণ 2800 টাকা যা তাঁর নিজের ও অজানা (তাহলে নিশ্চয় আরো একটু দেরী হত বার্ঘেনিং করার জন্য।) যেগুলো বিভিন্ন হাতে পৌঁছবে যেমন ঐ মেয়েটির। সঙ্গে এনগেজমেন্ট ,কাজ শেখার সুযোগ, আগে বাড়ার সুযোগ, অন্যকে আত্মসম্মানের সঙ্গে ইনকামের সূযোগ দান ও। সুতরাং আমার দানের গর্ব পূরীর সমুদ্রের ঢেউয়ে মিলিয়ে গেল। এতদিনের দান বিষয়ে ধ্যান ধারণা পাল্টে গেল। এখন মনে হচ্ছে খরচা করাটা যেটাকে আমরা বিলাসিতা ও বলে থাকি একপ্রকার দান, খালি দান নয় ভাল দান।

**KRN**
07.12.2023.T
Writco:10.12.2023