...

2 views

সময়ের খেলা
জীবন একটা সত্যি খেলা, তবে জয় হোক পরাজয় হোক, জীবন কিন্তু থেমে থাকে না চলতে থাকে নিজের মতো করে। সব চেয়ে বড়ো পরাজিত হবো জেনেও এ খেলা আমরা ছেড়ে যেতে পারিনা।  জীবনের সবচেয়ে মুল্যবান সম্পদ বোধহয় সময়।  আমরা ভবিষ্যতে দেখতে পারি না। কিন্তু পরিবর্তন করতে না পারা অতীত সবসময় চোখের সামনে দেখতে পাই, তাকে ভুলবার চেষ্টা করলেও ভুলতে পারি না।
ফুটবলটা আমাদের সামনে এসে পড়লো।আলি ইচ্ছে করলে পা দিয়ে লাথি মারে ফিরিয়ে দিতে পারতো বলটা কিন্তু ও করলো না। আমি ওকে বললাম" বিকাল করে ওদের সাথে তুমি খেলা ধুলা করতেই তো পাড়ো।"
ও হাসলো " জীবন আমাদের নিয়ে ফুটবল মতো খেলছে , আর আমার দ্বারা কোন দিন খেলা ধুলা হবে না।"
মনে পড়ে গেলো কুড়ি বছর আগের একটা গল্পের কিছু ছবি। আলি অন্ত স্কুলের প্রতিযোগিতায় ভালো  খেলে ময়দানের একটা ক্লাবের হয়ে খেলার সুযোগ পেলো। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেও , বাড়ি থেকে খেলার জন্য তেমন উৎসাহ পেলো না। ময়দানে প্রথম দিন খেলতে গিয়ে ও পরলো বাঁধার মুখে কোঁচ জানিয়ে দিলো, খেলার জন্য ওকে কিনতে হবে বুট নয়তো, অনুশীলনে যোগ দিতে দেবে না।
একমাত্র ওর ভরসা তখন ওর পিসি। বাজার এনে দেওয়া, দুধ এনে দেওয়া, জল তুলে দেওয়া সব কাজ করে দেওয়ার বদলে, রোজ দশ টাকা করে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলো কিন্তু বিপদ হলো পিসির আজমির ট্রেনের টিকিট কাটাছিলো। তাই হাওড়া স্টেশনে যখন ও পিসিকে ছেড়ে দিলো তখন পিসি ওকে মাত্র পঞ্চাশ টাকা দিলো। ও বড়ো হতাশা হয়েছিল। কিন্তু ও জীবনে একটা মিরাক্কেল  হয়ে গেলো ও পথের মধ্যে পঞ্চাশ টাকা কুড়িয়ে পেলো। ১৫০-২০০ টাকা নীচে জুতো পাওয়া যায় না। কিন্তু ওর কাছে মাত্র ১০০ টাকা। একটু রাত হয়ে গেছে, এদিকে ও কাছে জুতো কেনার পয়সা তো নেই।ও হাওড়া থেকে ছুঁটে ছুটে এলো ময়দান মার্কেট। প্রায় সব দোকান বন্ধ। শেষ ওর ঘামে ভেজা টি সার্টটা দেখে ওকে দয়া করে , এক দোকানদার ওকে, সেফ গার্ড সহ একটা বুট দিলো ওকে ঐ একশ টাকা নিয়ে।ঐদিন ও সারা রাত ঘুমোতে পারিনি। ভোরে উঠে ও গিয়েছিল ময়দানে।

খেলা পাগল ছেলেটাকে পাল্টে দিলো জীবনের খেলা। বাবা মারা যেতেই ঝাপিয়ে পড়তো হলো জীবনের সংগ্রামে। নিজের শহরে ভালো কাজ না পেয়ে আজ প্রবাসী। আজ দশটা ভালো বুট কেনার ক্ষমতা আছে। কিন্তু জীবনের খেলাটা এমন আজ খেলাধুলার প্রতি ওর আগ্রহটাই মরে গেছে।




© Manab Mondal