...

1 views

#হঠাৎ দেখা #
আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়তাম টিফিন এর সময়। হঠাৎ একটি মেয়ে এসে আমায় বললো।হেলো শুনছো। তোমার নাম কি, অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম। মেয়ে টি বলো না তোমার নাম কি।তোমাকে এক জন লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে। তোমার খুব খুব ভালো লাগে, আমি চুপটি হয়ে ওই মেয়েটির কথা শুনছি। তারপর মেয়ে টিকে আমার নাম বললাম। মেয়ে টি আমায় ধন্যবাদ জানিয়ে চলে গেল।খবর নেওয়ার পর জানলাম মেয়েটি ক্লাস এইটে পড়ে। তার পরের দিন টিফিন এর সময় মেয়েটি আবার আমাকে ডেকে বললো। তোমার বাড়ি কথায় ।আমি বললাম আচ্ছা গতকাল আমার নাম জানলে,আজ আবার বাড়ি কোথায় কি ব্যাপার বলত। মেয়েটি বলল। আবার পাঠিয়েছে কেউ।আমি বললাম এতকিছু জেনে করবে কি বুঝি। মেয়েটি বললোঃ। একজনের প্রয়োজন,তাই জিগ্যেস করলাম। আমি বললাম একজন টা বুঝি কে বলত। তার পর মেয়েটি বললো, সময় এলে বুঝতে পারবে।এই বলে চলে গেলো।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। কয়েক দিন পর স্কুলের সরস্বতী পূজো। সরস্বতী পুজোর দিন ওই মেয়েটি শাড়ি ব্লাউজ সাজ গুজ করে স্কুলে এসেছে। আমরা বন্ধুরা মিলে সকাল থেকে স্কুলের নানা জায়গায় সাজগোজে ব্যস্ত। তারপর মেয়ে টি এসে আমায় বললো , হেলো শুনছো।একটু আসো তো,কথা আছে । মেয়ে টির কথা শুনে আমি বললাম তুমি যাও আমি আসছি।এই কাজ সেরে। মেয়েটি বলল আমাদের স্কুলের পুকুরপাড়ে আসবে কিন্তু। বন্ধুদের বললাম তোরা কর আমি আসছি।একটু পর আমি পুকুরপাড়ে গেলাম। মেয়েটি বলেছিল আরেক জনের কথা। কিন্তু সে তো একাই আছে।আমি ভাবলাম হয়তো লুকিয়ে টুকিয়ে আছে আরেক জন।আমি ওখানে গিয়ে বললাম, বলো,কি বলছিলে। আর বলছিলে যে আরেক জন কথা তো আরেক জন কই। মেয়েটি বললো, বলবো বসো না তুমি। সব কিছু বলবো। আমি মনে মনে এদিক ওদিক তাকিয়ে বেড়াছি। মেয়েটির নাম অব্দি জানি না।তার পর মেয়ে টি আমায় বলছে, তুমি জানো তোমায় একজন খুব মনে মনে ভালোবাসে। সে প্রতিদিন টিফিন এর সময় তোমরা যখন মাঠের মধ্যে খেলা ধুলা কর। তখন সে তোমায় মিট মিট করে তাকিয়ে থাকে। তোমার হাঁসি কথা বলার স্টাইল ওর খুব পছন্দ। তোমার টানে ফিদা হয়ে গেছে। মেয়েটি বলল আজকে কেমন লাগছে আমাকে, আমি বললাম ভালোই তো সাজ গুজ করে আসছো আজ। মেয়েটি বলল হ্যাঁ আজ তো আমার খুবই শ্পেশাল দিন আমার। আমি বললাম আচ্ছা ঠিক আছে। ওই একজন তো এল না এখনো, কে সেই একজন বল। মেয়েটি বললো বলবো। তার পর মেয়েটি বললো, তুমি বলো আগে তুমি না করবে না।এবং না সয্য করার ক্ষমতা নেই ওর,আমি বললাম আরে বাবা তুমি বলতো আগে সে, কে। তারপর মেয়ে টি বললো সে একজন অন্য কেউ না। শুধু আমি। সত্যি তোমায় আমি ভীষণ ভালোবাসি। তুমি আমায় ভালোবাসো আর নাই বা ভালোবাসো আমি তোমায় খুব ভালোবাসি।আমি তো অবাক চোখে চোখ মিলিয়ে চুপটি হয়ে বসে ওকেই তাকিয়ে রইলাম।আমি বললাম যখন আমায় ভালোবেসে ফেলেছ আমি ও ভালোবাসবো। কিন্তু আমি এক গরীব ঘরের ছেলে, অনেক কষ্টে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছি।আমরা খুব গরিব। হয়তো বা মাধ্যমিক টাও পেরতে পারবো না। ভালোবাসা অপরাধ নয়, ভালোবাসা পূর্ণ করাটাই কষ্টের। মেয়ে টি বললো, আমি গরিব বড়লোক কোনো কিছু বুঝিনা আমি শুধু তোমায় বুঝি, তোমায় ভালোবাসি।আমি বললাম ঠিক আছে। তারপর আমরা স্কুলে এলাম অনেক আনন্দ করলাম পূজো হলো আরতি দিলাম মাইন্ড তো একেবারে চঞ্চল হয়ে আছে।আমাকে যে একজন প্রোপজ করেছে। দেখতে দেখতে নাইন পাশ হল, মেয়ে টি ও পাশ করলো। ঠিক ঠাক চললো প্রেম ভালোবাসা। দেওয়া নেওয়া অনেক কিছু। একদিন মেয়েটি আমায় বললো তুমি আমায় ভালোবাসোনি শুধু আমি তোমায় ভালোবাসি। আমি বললাম আরে মুস্কিল তুমি যেমন আমায় ভালোবাসো আমি ও তোমায় তেমনি ভালোবাসি। মেয়েটি বললো আমার জন্যে কি করতে পারবে।আমি বললাম আমি আবার কি করবো, কিছু করতে হবে না।চল আমার নাম তোমার কাছে সারাক্ষন থাকে যেন।আমাকে নিয়ে গেল খোদাই বাংলার কাছে।ওর নাম আমার হাতে খোদাই করালো।এবং নিজেও খোদাই করে নিল আমার নাম। দেখতে দেখতে মাধ্যমিক টাও পাশ হয়ে গেল আমার । মেয়ে টি ও পাশ হল,ওই স্কুলে মাধ্যমিক অব্দি ছিল। তারপর আমাদের এক স্কুলে থাকার দূরত্ব বেড়ে গেল। আমি অন্য স্কুলে ভর্তি হলাম, কিন্তু স্কুল যাওয়া হল না। পারিবারিক আর্থিক সমস্যার মধ্যে। তারপর আমি কলকাতায় কাজে এলাম। মাঝে মাঝেই যোগাযোগ হতো। STD টেলিফোনের মাধ্যমে তখন মোবাইল ছিল না।দুরত্ত্ব বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে আমাদের সম্পর্ক হয়তো বেয়ে যাওয়ার সম্ভবনা হলো।আমি মেয়েটিকে বললাম বাবা মা কে পাঠাবো তোমায় দেখতে এবং তুমি ও বাড়ির সবাই কে জানাও।তার পর বাবা মা গ্ৰামের কয়েক জন গিয়ে দেখা শোনা কথা বার্তা করে এল।এবং মেয়েটির ওখান থেকে ও বাবা মা মামা মামী আসলো সব কিছু ঠিক ঠিকঠাক হলো। কয়েক দিন পর বাবা মায়ের ঠিক এল। মেয়ে টির বাড়ি থেকে , বাবা মা পাশের বাড়ির কাকা কাকি গেলেন। তারপর কি হলো। বুঝতে পারলাম না। বাবা মা আসার পর জিগ্যেস করলাম কি খবরের জন্য ডাক ছিল।বাবা মা বললো মেয়ে টিকে ভুলে ।ওরা অনেক কিছু জিজ্ঞেস করল, তোমার ছেলে কি করে কত সম্পত্তি।মনে মনে ভাবলাম কি হল । মেয়েটির সাথেও যোগা যোগ হচ্ছিল না। কয়েক দিন পর মেয়েদের ওখানে মেলা বসেছিল । মেলা দেখতে দেখতে মেয়েদের বাড়িতে গেলাম, মেয়ে টি ছিল। কথা বার্তা হলো , কথাবার্তায় মনে হলো। আমাদের সম্পর্কের মধ্যে বদল বদল মনোভাব। আগে যেমন ভাব ছিল আজ তেমন আমার গুরুত্ব নেই।গ্ৰামের মধ্যে জানা জানি হয়ে গেল,যে মেয়েটির প্রেমিক এসেছে। মেয়েটির কাকা কাকি জেঠ্যা জেঠি জড়ও হলো। আমায় জিজ্ঞেস করল কি ব্যাপার।আমি বললাম এলাম আপনাদের মেয়ের সাথে দেখা করতে। মেয়েটির জ্যাঠা বললো না দেখা টেকা করতে হবে না।যা বলার তোমার বাবা মায়েদের বলা হয়েছে। তোমার সাথে কোন কিছু বলার নেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই মেয়েটি কে লুকিয়ে দিল কথায়।আমি বললাম আমরা একে অপরকে ভালোবাসি দুই তিন বৎসর ধরে ,আমাকে আপনাদের মেয়ের সাথে কথা তো বলতে দিন।আমি যদি মনে করতাম আপনাদের না জানিয়ে আপনার মেয়ে কে পালিয়ে বিয়ে করে নিতাম।আমি তো করিনি।এখন বলছেন দেখা করতে দেবেন না।কথা বলতে দেবেন না।একবার তো থাকুন আমার একটু বার কথা বলার আছে, শুধু তাই বলে চলে যাবো। কিন্তু মেয়েটির বাবা মা উনারা কোন কিছু বলছেন না। জেঠ্যা জেঠি কাকা কাকি এনারাই আমাকে দেখা করতে দিচ্ছেন না।আমি ভাবছি এতদিনের সম্পর্ক কি করে ভুলতে পারে মেয়েটি। আমি তো পাগলের মত হয়ে এলাম যেন।হাত জোড় করে অনুরোধ করলাম একটু দেখা করতে দিন।আমি বললাম আমাদের মধ্যে কিছু জিনিস দেওয়া নেওয়া হয়েছে। আমি বললাম আপনাদের মেয়ের নাম আমার হাতে লেখা আছে।আমার নাম ও ওর হাতে লেখা আছে।কি করবো এখন আমরা তো এক সাথে থাকার প্রতিজ্ঞা নিয়েছিলাম । জেঠ্যা বললেন সেটা আমরা বুঝিনা। আপনাদের মেয়ে আমাকে দেবেন না ঠিক আছে। আপনাদের মেয়ের নাম তো থেকেই যাছে।কি করা যায়। জেঠ্যা বললেন সেটা তুমি বুঝবে। ঠিক আছে, আপনাদের মেয়ে যখন দেবেন না তখন ওর নাম আমার হাতে রেখে কি করবো। পাশেই আগুন জ্বলছিল শাল কাঠের চুল্লিতে। আগুন দিয়ে নাম পুড়িয়ে মুছে দিলাম আমার হাতে নাম টি। সবাই তাকিয়ে রইল। তারপর বলে এলাম এখন আমি নিশ্চিৎ আপনাদের মেয়ের নাম নিশানা শেষ হয়ে গেল। কিন্তু একটাই কথা বলে যাছি, আমার থেকে বেশি কেউ আপনার মেয়ে কে ভালোবাসতে পারবেনা।আপনার মেয়ে কে ভালো রাখবেন।এই বলে চলে এলাম। কয়েক বছর পর বাবা মায়ের দেখা মেয়ের সাথে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের আগে মেয়েটি কে সব কিছু বল আমার মধ্যে ঘটে যাওয়া দিন গুলো।তাতে ওর কোনো আপত্তি ছিলো না। শুধু আমায় বলেছিল যদি কোনো দিন কোনো জায়গায় দেখা আমায় দেখাবে আমায়। বিয়ের কয়েক বছর পর এক মেলাতে দেখা হয় মেয়েটির সাথে। তখন আমার স্ত্রী দেখালাম আমার স্ত্রী বললো এই তাহলে সেই । এরই জন্য তুমি এতকিছু করলে। মেয়ে টির ও বিয়ে হয়েছে, মেয়েটি কে দেখে আমার স্ত্রী বললো মেয়ে টি সান্তি তে নেই , আমি বললাম কি করে বুঝলে। আমার স্ত্রী বললো ওর সাজ গজ রং ঢং দেখো ওকে দেখেই মনে হচ্ছে। খোঁজ খবর নেওয়ার পর জানলাম সত্যি ও একটা লম্পট মাতালের সাথে বিয়ে হয়েছে।এখন আমাদের দুই সন্তান হয়েছে একটি মেয়ে একটি ছেলে আমরা এখন অনেক ভালো সূখে সান্তি তে জীবন যাপন করছি।
© All Rights Reserved