...

5 views

স্বপ্ন..
।।সিংহ।।

অদ্ভূত একটা প্রতিযোগিতা চলছে। সেখানে প্রতিযোগীরা রোজ একটা বন্য বা হিংস্র কোনো পশুর সঙ্গে মুখোমুখি হচ্ছে। বাঘ, সিংহ, কুমীর, নেকড়ে, হায়না, আজগর সবই আছে। তা আমার এবারের পশু পড়ল সিংহ।

এক্ষণ সিংহ সম্পর্কে ভাবছি তো শরীরের হাড়গোড় সব ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। এইতো সেদিন একটা ছেলে গেল সিংহর কাছে, সিংহ ব্যাটা ওকে ছিঁড়ে একেবারে আছড়ে কামড়ে মেরেই ফেললো। অবশ্য পরের দিন সেই একটা মেয়ে সিংহ কে সামনে দেখেই অজ্ঞান হয়ে গেলো, কিন্তু সিংহ মেয়েটাকে কোনো ক্ষতি করলনা। বরং খুব যত্ন সহকারে মেয়েটার পরনে সাদা ট্রান্সপারেন্ট ড্রেস টা মুখে কামড়ে ঝুলিয়ে মেয়েটাকে নিয়ে গেলো ত্রিশ গজ মত দূরে তারপর মাটিতে রেখে চলে গেল কোথায় কে জানে।

সে যাইহোক সিংহের রেপুটেশন খুব একটা ভালো নয় যে সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই, সিংহ যে বড় ভয়ঙ্কর সে সবাই জানে। তো ছাদে উঠে পায়চারী করতে করতে পাশের বাড়ির দিকে তাকালাম। বাড়িটাও অদ্ভূত সেই অনেক টা মনুমেন্ট এর মত দেখতে, যেমন নজরমিনার দেখতে হয় সেইরকম। তার আবার দোতলায় দরজাটা হাল্কা খোলা আর তার ভিতর দিয়েই দেখতে পাচ্ছি আগামী কাল যে ছেলেটা সিংহের সামনে যাবে সে খাটে উল্টে শুয়ে আছে হয়তো ঘুমোচ্ছে। আমি মনে মনে ভাবছি ভয়ে আমার রক্ত হিম হয়ে যাচ্ছে এদিকে এ ব্যটার কোনো ভ্রূক্ষেপ বা হেলদোল নেই। ব্যাটা দিব্যি ঘুমোচ্ছে।
কাল কিযে করবে এ কে জানে।

হঠাৎ দেখছি আমাকেই সিংহ তাড়া করেছে আমি প্রাণপণে ছুটছি, ছুটতে ছুটতে জলে এসে ঝাঁপ মেরেছি, আর পিছনে সিংহটা ও ঝাপিয়েছে। কিছুতেই পিছু ছাড়ছেনা আমার, আমাকে তাড়াই করে যাচ্ছে সে। বুক কাপছে আমার ভয়ে আর আমি প্রাণপণে সাঁতার কেটে যাচ্ছি। অনেক কষ্টে কোনো মতে পরি মরি করে সাঁতরে পাড়ে উঠে পড়েছি, সিংহ টা এইবারে এতক্ষনে এসে থেমেছে, বোধ হয় হাল ছেড়ে দিল সে।
পাড়ে এদিকে দেখি এক ভুটিয়া দাড়িয়ে আমাকে দেখে হাসছে আর বলছে আমিও গতবার এইভাবেই সিংহের হাত থেকে বেঁচে ছিলাম। সে আমাকে হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে।


।। নীল পাঞ্জাবি।।

কোনো এক অনুষ্ঠান বাড়ীর ছাদে দাঁড়িয়ে আছি। আশে পাশে সব লোকজন সেজে গুঁজে দাড়িয়ে আছে।আমি তখনও রেডি হইনি। বাড়ির নীচের দিকে মুখটা বাড়িয়ে দেখছি চেয়ার পাতা অনেক। সেখানে অনেক লোকজন বসে আছে। একেবারে লাস্ট রো তে আমার মা দেখি বসে আছে। আমাকে দেখতে পেয়ে সে মাথা নাড়ল।
কি যেন একটা পারফরম্যান্স আছে আজ আমাদের মনে হচ্ছে।

যাইহোক, আর 30 মিনিট পরেই অনুষ্ঠান তাই সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আমার ড্রেস টা পড়বো বলে যাচ্ছি।নিচে গিয়ে দেখি কে একজন আমারই দুঃসম্পর্কের আত্মীয় আমার পাঞ্জাবি টা যেটা দড়িতে মেলা ছিল সেটা পড়ছে। আমি গিয়ে তাকে বলতেই সে নাছোড় বান্দা, কিছুতেই পাঞ্জাবি সে আমায় দিতে চায়না। ভারী বিপদে পড়া গেলো দেখছি। এমন সময় দেখি আমাদের সকলেরই প্রায় পরিচিত এককালের দুদে ডাকাত এই অঞ্চলেরই যে ব্যাটা বহুদিন আগেই মৃত তার ভুত এসে হাজির। দাড়ী আলা সে খুনী ডাকাত ভুত সেই আমার দুঃসম্পর্কের আত্মীয় কে এমন সাসালো যে সে ভয়ে পড়িমরি করে আমার পাঞ্জাবি টা খুলে আমায় দিয়েই পালালো। ভুত ও তারপর গায়েব হয়ে গেল। আমি বেজায় আনন্দিত হলাম। আজ আমার ড্রেস টা এত সুন্দর যে আমার কনফিডেন্স একদম হাই লেভেল আজ সবাইকে আমার পারফরম্যান্স দেখিয়ে চমকে দেবো। আমার সেই প্রিয় সিল্ক এর নীল রঙের পাঞ্জাবি আর তাতে বর্ডার এর দিকে খয়েরী লাউ এর মত নকশা কাটা।


।। বেতাল ।।

গ্রামে খুবই ভূতের উপদ্রব হচ্ছে আজকাল। সকলেই খুব বিরক্ত। একদিন কারও গরু ছাগল চুরি করে নিয়ে যায় তো আরেকদিন জেলের থেকে মাছ কেরে নিয়ে জেলের ঘাড় মটকে দেয়। সবাই মিলে গ্রামের মোড়ল কে নালিশ করল। মোড়ল মশাই একসাথে অনেক লোক একত্র করে বাঁশ বাগানের জঙ্গলে মশাল নিয়ে হানা দেবার প্রস্তাব দিলে। তো আমি আর আমার সঙ্গে কে একজন লোক যাচ্ছি বাঁশবাগানের ভিতর দিয়ে হাতে মশাল ফসাল নিয়ে। একটু এগিয়ে আচমকা সামনে তাকিয়ে আমার চোখ ছানা বড়া। দেখি একেবারে সামনে দাড়িয়ে আছে আমার বেতাল ভুত। বেতাল ভুত হল সাধারণ পাতি ভূতের থেকে বিশগুন ডেঞ্জারাস। আজ অবধি কেউ তার হাত থেকে নিস্তার পায়নি। সকলেই প্রায় অক্কা গেছে মানে সকলেরই বেঘোরে প্রাণ গেছে। সেকি চেহারা বেতাল ভূতের। ইংরেজি Y এর আকারে তার গলা আর সেই গলার দুটো আগায় দুটো মাথা। একটা মাথা কুমড়োর মত মোটা করে তাতে আবার ইয়া বড় চোখ রক্তে যেন লাল হয়ে আছে। দাঁত গুলো খোঁচা খোঁচা আর বাইরের দুটো দাঁত আবার তাতে বেরিয়ে আছে, জিভ দিয়ে তার লাল পড়ছে। কুলোর মত দুটো বিশাল কান আর মুখে বিরাপ্পান এর মত গোঁফ। আরেকটা মাথা আবার ছোট্ট কাঠবিড়ালির মত। দুটো মাথা একটাই ধড় থেকে আলাদা ভাবে বেরিয়ে অথচ তার শরীর একটাই। লম্বায় প্রায় 22 ফুট। বেতাল আমার দিকে প্রায় তেড়ে আসবে আসবে মনে হচ্ছে ভেবে ভয়ে আমার আত্মারাম তো খাঁচা ছাড়া হয়ে যাচ্ছে।

ঠিক তক্ষুনি দেখি পিছনে এক বাঁশ গাছের উপড় থেকে আমার সঙ্গী সেই লোকটা একটা কাটারি নিয়ে লাফিয়ে এক কোপে বেতাল ভূতের বড় মাথাটা কেটে ফেললো। আর সে বেতাল যন্ত্রণায় দেখি লাফা লাফি শুরু করে দিয়েছে। এই সুযোগে আমিও এগিয়ে গিয়ে কোমরে গোঁজা দা খানা বের করে ছোট মাথাটাকে দিলাম কেটে। সারা শরীর আমার রক্তাক্ত হয়ে গেছে। অবশেষে আশে পাশে থেকে ততক্ষনে বাকি লোকজন ছুটে এসে আমাদের কাণ্ড দেখে প্রায় অবাক। শেষ মেশ গোটা বাঁশ বাগানে আগুন লাগিয়ে আমরা ভূতেদের কে তারালাম। কিন্তু আজও রাতে স্বপ্নে বেতাল ভুত তার বিশাল চেহারা নিয়ে আমায় তাড়িয়ে বেড়ায়

- ডিঙি নৌকা
© dinghinouka