...

7 views

রঙিন চুড়ি
ভেপু বাজাতে বাজাতে নগেন খুড়ো চলেছে ব্যস্ত রাস্তায়। পথে হাত দেখাল জমিদার মহিমচন্দ্র চ্যাট্টুজ্যে। পরনে ধপধপে সাদা কুচি দেওয়া ধুতি, সিল্কের মখমলে পাঞ্জাবি, গলায় বংশ-পরম্পরার সোনার চেন আর পায়ে চামড়ার জুতো জোড়া এমন চিকচিক করছে; জেনো সদ্য পালিশ করা।
রিক্সা দাড় করিয়ে নগেন খুড়ো বলল,"পেন্নাম হৈ জমিদার মশাই! তা কর্তা এখন কথায় যাবেন?"
জমিদার : হাটে যামু রে নগেন।
নগেন : কর্তা ছোট মুখে বড় কথা বলছি মাফ করবেন। এখন যা অবস্থা তাতে হাটে যাবেন? তার থেকে আমায় বলেন আমি এনে দেব যা লাগবে। আপনি জমিদার মানুষ, আপনার সেবায় আমরা সক্কলে প্রস্তুত।
জমিদার : সেসব বুঝ্সি রে নগেন। তয় আইজ আমারেই জাতি হইব। আইজ আমার নাতি ডাক্তারি পাশ দিসে। ফলাফল বাহির হইসে, আমি তয় ওর লিগ্গাই এহান বিশেষ উপহার কিনতে যাইতাসি।
নগেন : ওহ! ঈশ্বর ছোট কুমার কে অনেক আশীর্বাদ করুক, এই প্রার্থনাই করি।
জমিদার : হ হ হইসে, হেইবার পা সালা দেহি। হেই মহামারির বাইজারে আর খাড়ায়া নিইজো আইর আমারো বিপদ বাড়াসনি।
নগেন : হ্যাঁ হ্যাঁ কর্তা চলেন।
জমিদার বাবু একটা বড় দোকানের সামনে নগেন খুড়ো'কে দাড় করিয়ে, ভিতরে থেকে উপহার কিনে বেরোলেন। বেরিয়ে দেখলেন, নগেন একটা চুড়ির গুমটির সামনে দাড়িয়ে রঙিন চুড়ি দর-দাম করছে। করতে করতে প্রায় ঝগড়াই লেগে যাচ্ছিল।
জমিদার হাক দিল,"ও হে নগেন, কিইডা করস ওহানে?"
নগেন এসে,"কিছু না কর্তা, আজ আমার নাতনি স্বর্ণলতার জন্মদিন। বাপ-মা মরা মেয়েটাকে সারা বছর কিছুই দিতে পারিনা, আমার সে সামর্থ কই।
জমিদার : আহা! হেইডা আমায় আগে কইবি তো। খাড়া, এই টেকা টা ধর দেহি। যা, তর নাতনির লিগ্গা সুড়ি খান কিইনা আয়িন।
নগেন : কর্তা, আপনাকে যে কি বলে.....
থামিয়ে জমিদার বললেন,"সুপ, তর হকের টেকা তরে দিইসি। বেশি কথা না কয়ে জা দেহি, দেরি করিস নি।
নগেন কিনে অনল এক ডজন রঙিন চুড়ি।
জমিদার মশাই'কে বাড়িতে নামিয়ে, প্রণাম ঠুকে নগেন রিক্সা ছোটালো বাড়ির রাস্তায়।
পথে তার এক রিক্সাওয়ালা ভাইয়ের সাথে দেখা। সে জিজ্ঞেস করল," কি হে নগেন খুড়ো, তাড়াহুড়ো করে এই অবেলায় কই যাও? আজ আর চালাবে না?
নগেন: না রে পটলা, আজ আর চালাবো না। নাতনিটার পাঁচ দিন ধরে জর, দেখি আজ ওকে কোবরেজের কাছে নিয়ে যাব। তাছাড়া ওর আজ জন্মদিন।
পটলা : বল কি?
এই নাও ধরো।
নগেন : কি এটা?
পটলা : মা কালির পেসাদ গো! আমার মেয়ের ঘরে নাতি হয়েছে কিনা, তাই। স্বর্ণ'র শরীর খারাপ শুনলাম তাই তোমায় ফূল পেসাদ দিলুম, ওকে দিও। ও ঠিক হয়ে যাবে।
নগেন ওকে বিদায় জানিয়ে চলল বাড়ির দিকে, আর মনে ভাবল পাগলিটা খুব খুশিই হবে।
বাড়ির উঠোনের একটু দূর থেকেই সে দেখতে পেল তার উঠোন ঘিরে বেশ লোকের ভিড়। নগেন ভাবতে লাগল, এত জনবহুল! তাও এই মহামারির আবহাওয়ায়। কাছে গিয়ে দেখল, না, বেশি লোক নেই। সবাই দূরত্ব বজায় রেখে দাড়িয়ে, তাই ভিড় মনে হচ্ছিল।
দু-একজনকে জিজ্ঞেস করল,"কিগো কি ব্যাপার তোমরা?
মুখের কথা শেষ হল না, তার চোখে পড়ল একটা নিথর দেহ; থানার দারোগাবাবু আর কিছু অপরিচিত লোক। তার হাত থেকে চুড়ি আর ঠাকুরের আশীর্বাদী ফুল-প্রসাদ পড়ে গেল।
'স্বর্ণ' বলে চিৎকার করে উঠে, জ্ঞান হারালো নগেন খুড়ো।