প্রেম যখন সূর্যপূজা (পর্ব-১০)
দীপান্বিতা অমাবস্যার অন্ধকার পেরিয়ে শুক্লপক্ষের সূচনা হল।সরোসিজবাবু পার্বণকে নিয়ে বেলা ১০টার মধ্যেই কলকাতায় কমলবাবুর বাসায় পৌঁছে গেলেন। সকালে পূজা একবারের জন্যও আজ কম্পিউটার খোলেনি।মনে মনে ইচ্ছা জাগেনি তা কিন্তু নয়।সেই ইচ্ছাকে প্রশ্রয় দেয়নি পূজা।আজ রাগে নয়,গভীর অভিমানে পূজার এই প্রতিক্রিয়া।
সরোসিজবাবু মধ্যাহ্ন ভোজের সময় কলকাতা আসার প্রসঙ্গ নিয়ে কথা তুললেন।
সরোসিজ বাবু:"ভাইফোঁটা র দিন সকাল সকাল ফোঁটার বিষয়টা মিটে গেলে আমি বাবুকে নিয়ে একবার কলকাতার আর্মহার্ট স্ট্রিটের এক খুব ভালো জ্যোতিষীর কাছে যাব ভাবছি।তুই তো জানিস আমি জ্যোতিষ একদম মানতাম না।নিজেও আমি সারাজীবনে কখনও এসব নিয়ে মাথা ঘামাইনি।কিন্তু বাবু(পার্বণ)-র কেরিয়ারের বিষয়টা আমাকে দুশ্চিন্তায় ফেলছে।মোক্ষদাশঙ্করের স্ত্রী মানে বিপুলা আমাকে এই জ্যোতিষীর কাছে যাওয়ার জন্য অনেকদিন আগে থেকেই বলেছিল কারণ মোক্ষদাশঙ্করের জীবনে উন্নতির পিছনে ওনার বড় অবদান আছে।উনি জন্মছক দেখেননা।হাত দেখে আগে সবটাই নাকি নিজের থেকে বলেন।তারপর কারো প্রশ্নের উত্তর দেন।অনেকের ক্ষেত্রেই ওনার কথা নাকি খুব মিলেছে।এগরার অনেক সফল মানুষ ওনার কাছে যান।কিন্তু গুরুর আদেশ থাকায় উনি নিজের প্রচার কখনও করেননি।মানুষটিও নাকি খুব ভালো।তাই ভাবলাম বাবুকে নিয়ে একবার ওনার কাছে যাই।দেখি কি বলেন।"
কমলবাবু:"ভালো হলেই ভালো।তবে জ্যোতিষ তো আর কারোর হয়ে কর্ম করে দিতে পারবেনা,নিজেকেই চেষ্টা করতে হবে সফল হওয়ার জন্য।ভালো জ্যোতিষ শুধুমাত্র সঠিক পথটা বলতে পারেন।বড়জোর বাধাগুলো দূর করতে সাহায্য করতে পারেন।"
যাঞ্জসেনীদেবী:"সেতো নিশ্চয়।দাদা,আমি একটা কথা বলছিলাম।যদিও বুড়ি(পূজা)র জন্মছক অনেক জ্যোতিষ ই বিচার করেছেন।ইনি যেহেতু খুব ভালো হস্তবিদ বলছেন,আপনি যদি ওকেও নিয়ে একবার দেখিয়ে আনতেন ভালো হত।"
সরোসিজ বাবু:"সে তো ভালো কথা।ভাই-বোন দুজনেরটাই একসঙ্গে দেখে দেবেন।আমার কোনো অসুবিধা নেই।"
কমলবাবু:"আবার একজন জ্যোতিষ!বাবুকে দেখিয়ে আসার পর নাহয় ভাবা যাবে।"
যাঞ্জসেনীদেবী:"পরে আবার কবে কখন সুবিধা হয়।দাদা যখন যাচ্ছেন ওকে নিয়ে দেখিয়ে আনুন।কি বলেন দেখা যাক।"
কমলবাবু:"ঠিক আছে।তবে তাই হোক।"
সরোসিজ বাবু:"সেটাই ভালো।উনি তো শুনেছি নিজের থেকেই সব বলেন।তবু মামনির বিষয়ে বিশেষ কিছু জানার থাকলে বোলো।"
যাঞ্জসেনীদেবী:"বিশেষ কিছু প্রশ্ন বলতে শরীর স্বাস্থ্য,কেরিয়ার আর ওর বিয়ের বিষয়টা কেমন কি আছে সেইবিষয়ে ভালো করে জেনে নেওয়া আরকি।তাছাড়া উনি তো নিজের থেকে সবটাই বলেন বলছেন।"
সরোসিজ বাবু:"ঠিক আছে।প্রথমবার তো।দেখি কেমন এই ভদ্রলোক।তবে মোক্ষদাশঙ্কর আর তার পরিবার কিন্তু সত্যিই ওনার কাছে খুব উপকৃত হয়েছে।এগরাতে আমার পরিচিত আরও তিন-চারজন নিজে মুখে ওনার অভ্যর্থ গগণা ও সহায়তার কথা বলেছে আমাকে।"
কমলবাবু:"আরে বাবা!সিদ্ধান্ত তো হয়ে গেল।তোর ছেলে আর মেয়ে দুজনকে নিয়েই আগামী মঙ্গলবার ওনার কাছে যাবি।তারপর দেখা যাবে।ভদ্রলোকের নাম কি?"
সরোসিজ বাবু:"শ্রীযুক্ত শুধাংশু বসু।"
এদিকে সূর্য পূজাকে অনলাইন হতে দেখছেনা।কালকের ম্যাসেজটাও পূজা যে দেখেনি সেটা বোঝা যাচ্ছে। সারাদিনে দুইতিনবার অনলাইনে এসে পূজাকে অনলাইনে না পেয়ে ভিতরে ভিতরে সূর্যের মন ক্রমে অস্থির হয়ে উঠতে লাগল।
পরেরদিন সকাল সকাল ভাইফোঁটার আচার পালণ করল পূজা আর পার্বণ।
বেলা ১১টা নাগাদ সরোসিজবাবু পূজা আর পার্বণকে নিয়ে শুধাংশুবাবুর ঠিকানায় উপস্থিত হলেন।প্রথমেই তারা দেখা করার সুযোগ পেলেন শুধাংশু বাবুর সঙ্গে।৬৫ বছরের একজন অমায়িক ভদ্রলোক শুধাংশুবাবু।ভদ্রলোককে দেখে বোঝার উপায় নেই তিনি একজন এত গুণী মানুষ।সাদামাটা পোশাক-কালো প্যান্ট আর সাদা সার্ট।শুধাংশুবাবু তিনজনকেই একসঙ্গে বসতে বললেন।
সরোসিজ বাবু:"আমাকে মোক্ষদাশঙ্কর আপনার কথা বলেছিল।"
শুধাংশুবাবু:"আপনিই তো গতকাল আমাকে ফোন করেছিলেন?"
সরোসিজ বাবু:"হ্যাঁ।এই আমার ভাইপো আর ভাইঝি।"
শুধাংশুবাবু:"গুরুর আদেশ নিয়ে তবেই আমি কারো হাত দেখি।ওনার আদেশ না পেলে কিন্তু দেখিনা।কার হাত আগে দেখাতে চান তাকে আমার সামনে বসতে বলুন।"
সরোসিজ বাবু:"কারোরটা তো আগে দেখতে হবেই।আমার ভাইপোরটা নাহয় আগে দেখুন।"
পার্বণ শুধাংশুবাবুর সামনে এসে বসলেন।শুধাংশুবাবু চোখ বন্ধ করে মন্ত্রোচ্চারণ করতে শুরু করলেন।কিছুক্ষণ পর শুধাংশুবাবু পার্বণকে বললেন:-
"আমি তোমার নামটা জিজ্ঞাসা করলে আগে শ্রী দিয়ে বলবে।তারপর হাত দেখব তোমার।"
আবার চোখ বন্ধ করে মন্ত্রোচ্চারণ করলেন শুধাংশুবাবু।চোখ খুলে পার্বকে জিজ্ঞাসা করলেন:-
"তোমার নাম কি?"
পার্বণ একটু থেমে বলল,"শ্রী পার্বণ মাইতি।"
শুধাংশুবাবু হাত বাড়িয়ে পার্বণের দুই হাতের রেখাগুলো খুব ভালো করে মিনিট দশেক দেখলেন।তারপর একটি খাতায় তার নাম নিজের হাতে লিখতে বললেন।পার্বণের নাম লেখা হয়ে গেলে সেই নামটির ঘ্রাণ নিয়ে আবার magnifying glass দিয়ে পার্বণের হাতের আঙ্গুল গুলোর রেখা ভালোভাবে দেখার পর বলতে শুরু করলেন।পার্বণ কেমন প্রকৃতির ছেলে,কোথায় তার সমস্যা,ভবিষ্যতে কি করলে ভালো হবে---এইসব।সবটাই অক্ষরে অক্ষরে সঠিক বলেছেন।সরোসিজ বাবু ও পার্বণ দুজনেই খুব আপ্লুত হয়ে পড়ল।সমস্যা নিবারণের জন্য আত্মবিশ্বাসী শুধাংশুবাবু সঠিক পরামর্শও দিলেন।
এতক্ষণ বিস্ময়ে নিয়ে এইসব দেখছিল আর শুনছিল পূজা।এবার শুধাংশুবাবু পূজাকে সামনে এসে বসতে বললেন।শুধাংশুবাবু পূজাকে যেভাবে দেখছিলেন এবং কথা বলছিলেন তাঁর চোখ-মুখে কোথাও যেন মনে হচ্ছিল শুধাংশুবাবু পূজার নাম আগে থেকেই শুনেছেন।পূজাকেও একই পদ্ধতিতে নিজের নাম বলতে হল।খুব ভালো করে পূজার দুটি হাতের রেখা দেখার পর একইভাবে নাম সই করতে বললেন শুধাংশুবাবু।তারপর আবার ভালো করে হাতের আঙ্গুল, হাতের চেটোর সোজা ও উল্টো ভাগ দেখে শুধাংশুবাবু সরোসিজবাবুকে বলা শুরু করলেন,
"পূজা খুব চাপা স্বভাবের মেয়ে।এদের বুক ফাটে কিন্তু মুখ খুব সহজে খোলেনা।সহজ,সরল ও কোমল মন পূজার।ওর আত্মসম্মান জ্ঞান প্রবল।এরা কেমন মেয়ে হয় জানেন?বাড়িতে যদি চাল না থাকে তবে হাঁড়িতে জল গরম করে বোঝাবে ভাত রান্না হচ্ছে।
আপনার ভাইপোর চেয়ে আপনার ভাইঝির হাত কিন্তু অনেক সম্ভাবনাময়। যদি দশটি বছর আগে আসতেন আমার কাছে তবে পড়াশোনার ক্ষেত্রে বেশ নামকরা ছাত্রী হতে পারত আপনার ভাইঝি।সসম্মানে নিজস্ব আয়ের যোগ ভালোই আছে আপনার ভাইঝি।যদি সঠিকভাবে এগোতে পারে তবে নিজের আয়ে কেনা গাড়ি করে মাবাবাকে ঘোরাতে পারবে এই মেয়ে।আমি সেদিন হয়তো পৃথিবীতে থাকবনা,কিন্তু সেদিন আমার এই কথাটি তোমার নিশ্চয় মনে পড়বে পূজা।"পূজার দিকে হাসিমুখে দৃষ্টিপাত করে কথাটা বললেন শুধাংশুবাবু।
সরোসিজ বাবু এবং শুধাংশুবাবুর কথোপকথন শুরু হল।
শুধাংশুবাবু:"আর কি জানতে চাইছেন বলুন সরোসিজবাবু?"
সরোসিজবাবু:"পূজার মা ওর কেরিয়ার আর বিয়ের ব্যাপারে একটু সবিস্তারে জানতে চেয়েছে।সেই ব্যাপারে যদি একটু বলেন ভালো হয়।"
শুধাংশুবাবু:"পূজার জন্মকালীন বৃহস্পতি এবং শনি হাতে খুব ভালো আছে।বুধ ভালো আছে।হাত বলছে পূজার নিজস্ব আয় হবেই।বিদেশ ভ্রমণের যোগ আছে।শরীর স্বাস্হ্য নিয়ে সমস্যা আসতে পারে।পূজার নিজস্ব পছন্দের বিয়ে হবে।পূজার ভাগ্যে বিয়ের পাঁচ বছরের মধ্যে পূজার স্বামীর উন্নতি নিশ্চিত।ওর বিবাহিত জীবন ভালো।কিন্তু পূজার জন্মকালীন চন্দ্র ও শুক্র দুর্বল থাকায় ওর বিবাহোত্তর সাংসারিক জীবনে কিছু সমস্যা আসতে পারে এবং গোপন শত্রুর সমস্যাও থাকবে।তাই বিয়ের দিন-ক্ষণ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত পূজার বিয়ের ব্যাপারে আত্মীয়-বন্ধুদের মধ্যে বেশী আলোচনা করতে যাবেনা।পূজার স্বামী প্রথম গর্ভের সন্তান হবে।চাকুরিজীবী হবে।বংশানুক্রমে বা পারিবারিক ব্যবসা থাকতে পারে।Technical line -এ চাকুরীরত হবে পূজার স্বামী।"
সরোসিজ বাবু:"তাহলে পূজার জন্য ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার উপযুক্ত হতে পারে?"
শুধাংশুবাবু:"ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার যদিও Technical line-এর।কিন্তু পূজার হাত বলছে পূজার মতো মেয়েরা রাজরাণী হলেও সুখী নাও হতে পারে,আবার সামান্য চাকুরিজীবী কারো কাছে সুখী হতে পারে।তবে আমি মানি এখানে যারা আসে তারা বাবা বিশ্বনাথ ও মাকালীর কৃপায় এখানে আসে।হাত দেখে বলার সময় কিন্তু আমি আমার স্ত্রীকেও চিনিনা।হাতের রেখায় শেষ কথা।পূজার ব্যাপারে আপনাকে একটা কথা আমার বলার আছে।তারপর আপনারা যা ভালো মনে করবেন করতে পারেন।"
সরোসিজ বাবু:"কি কথা বলুন তো?"
শুধাংশুবাবু:"পূজা আর পার্বণ একটু বাইরে গিয়ে বসো।তোমাদের জ্যেঠামশাইয়ের সাথে আমি একান্তে একটু কথা বলতে চাই।"
পূজা আর পার্বণ বাইরে এসে বসল।বেলা প্রায় ১টা বাজে।
সরোসিজ বাবু আর শুধাংশুবাবু প্রায় দশ মিনিট একান্তে কথাবার্তা বললেন।
সরোসিজ বাবু বেরিয়ে এসে পূজার দিকে জিঞ্জাসু দৃষ্টিতে তাকালেন।কিন্তু কিছু বললেন না।শুধাংশুবাবু পার্বণের জন্য দুটি পাথর ধারণের পরামর্শ দিয়েছিলেন।তিনি সেগুলির অর্ডার দিলেন।পূজার জন্যও দুটি পাথর ধারণের পরামর্শ দিয়েছেন শুধাংশুবাবু।পূজার মাবাবাকে জানিয়ে এগুলো পরে অর্ডার দেওয়া হবে বলে শুধাংশুবাবুর চেম্বার ছেড়ে বেরিয়ে এলেন।বাড়ি ফেরার পথে সরোসিজ বাবু সস্নেহে পূজাকে একবার শুধু জিজ্ঞেস করলেন, "তোমাকে কি এর মধ্যে কোনো ছেলে প্রপোজ করেছিল মামণি?তুমি না বলেছো?"
পূজা খুব অবাক হল এই প্রশ্নে।তবে আন্দাজ করল এই কথাটাই একান্তে শুধাংশুবাবু বলেছেন জ্যেঠামশাইকে।একটু নিজেকে সামলে উত্তর দিল,"হ্যাঁ।"
সরোসিজ বাবু আর কিছু বললেন না।
কমলবাবুর বাসায় ফিরে পূজার বাবামাকে সবিস্তারে সবটা খুলে বললেন সরোসিজবাবু।শুধাংশুবাবুর ভবিষ্যৎ বাণীর সঙ্গে অতীতে পূজার জন্মছক বিচার করা জ্যোতিষবিদদের মতামতের সঙ্গে বেশীরভাগটাই মিলে গেছে।পূজার মা ঠিক করলেন শুধাংশুবাবুর পরামর্শ মতো পূজার জন্য দুটি পাথর নেবেন তিনি।দাদার কাছে সবটা শুনে কমলবাবু একবার নিজে শুধাংশুবাবুর সঙ্গে সাক্ষাতের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন।
এদিকে।আজও সকাল থেকে পূজা অফলাইন দেখে সূর্য আর স্থির থাকতে পারলনা।ম্যাসেজ করল পূজাকে।
"কি হয়েছে তোমার?ভালো আছো তো?অনলাইন হচ্ছো না কেন?নাকি যোগাযোগ আর রাখবে না?কিছু তো বল?"
আজ রাতের বেলায় পূজা অনলাইন হল।সূর্যের দুটি ম্যাসেজ inbox-এ আছে দেখতে পেল।গতকাল আর আজকের ম্যাসেজটা পড়ে পূজা এটুকু নিশ্চিত হল সূর্য পূজার সাথে কথা বলতে পারলে আর আগের মতো ধৈর্য্য ধরে স্থির থাকতে পারছে না।পূজার অন্তরের কঠিন বরফটা সূর্যের উষ্ণ তেজে কখন যে তার অজান্তেই ধীরে ধীরে গলতে শুরু করে দিয়েছে সেটুকু এখনও টের পায়নি পূজা।
গত পরশুর ম্যাসেজটা য় সূর্যের মনোভাব স্পষ্ট করেই জানিয়েছে সূর্য।পূজা সেইসব প্রসঙ্গে না গিয়ে সহজ সরল ভাষায় স্বাভাবিক ভাবে ম্যাসেজ লেখা শুরু করল,
"গতকাল তোমার ম্যাসেজ পড়ার ইচ্ছা আমার হয়নি আর আজকে ভাইফোঁটার বিষয়ে সকাল থেকে ব্যস্ত ছিলাম। জ্যেঠামশাইয়ের সঙ্গে আজকে আমি আর দাদা একজন জ্যোতিষীর কাছে গিয়েছিলাম।উনি খুব ভালো হাত দেখতে পারেন।জ্যোঠামশাই এমনি এসব মানতেন না।আমার ক্ষেত্রেও নিখুঁত বিচার করেছেন।মোক্ষদাশঙ্কর জ্যেঠুরাও নাকি ওনাকে খুব ভরসা করেন।তাই আমাদের দুজনকে নিয়ে গিয়েছিলেন।এইসবে ব্যস্ত থাকায় কম্পিউটার খোলার সময় পাইনি।"
সূর্য অনলাইন ছিল।একটা শূন্যতাঘেরা চাপা মনকষ্টে পুরো একটা দিন কেটেছে সূর্যর।পূজা কেন অনলাইনে আসছেনা এই দুশ্চিন্তায় স্বাভাবিক কাজ-কর্মেও অরুচি অনুভব করছিল সূর্য।পূজার ম্যাসেজটা যেন তপ্ত মরুভূমিতে বারিবর্ষনের মতো কাজ করল।সঙ্গে সঙ্গে সদ্য উজ্জীবিত সূর্যের প্রেমিক মন পূজার সাথে কথোপকথনে ব্যস্ত হতে চাইল।
সূর্য:"কথায় কথায় এতো রাগ ভালো নয়।আমি তো ভাবলাম কি না কি।তোমার নীতিবিরুদ্ধ কিছু আমি কি তোমাকে মানতে বাধ্য করার চেষ্টা কখনো করতে পারি?এই চিনলে তুমি আমাকে?"
সূর্য:"আচ্ছা আজকে যে হস্তরেখাবিদের কাছে তুমি গিয়েছিলে সেই ভদ্রলোকের নাম কি শুধাংশু বসু?তিনি কি আর্মহার্ট স্ট্রিটের একটি চেম্বারে বসেন?"
পূজা:"হ্যাঁ।একদম তাই।কিন্তু তুমি কি করে জানলে?"
সূর্য:"বাবা গত হওয়ার পর আমাদের আর্থিক অবস্থা যখন কিছুটা বিপন্ন,সেই সময় বোনের শ্বাশুড়ীর কথায় শুধাংশুবাবুর কাছে গিয়েছিলাম আমি।মেসোমশাই যেদিন প্রথম ওনাকে দেখাতে গিয়েছিলেন মেসোমশাইকে দেখার আগেই ওনার ডাক নাম ধরে ডেকেছিলেন।মাসিমা যখন আমার বোনের সম্বন্ধের বিষয় ওনাকে বলেছিলেন, তখন উনি নিজের থেকেই বলেছিলেন আমার বোন দ্বিতীয় গর্ভের সন্তান এবং এই বিয়ে ভালো হবে।আর আমার চাকরি কবে হবে সবকিছু বলে দিয়েছিলেন।ব্যবসার বিষয়ে বলেছিলেন কোনো সাদা জিনিসের ব্যবসা করলে ভালো হবে।তাই কাগজ সম্বন্ধীয় ব্যবসাই তখন শুরু করি।ওনার উল্লেখিত সময়ের মধ্যে চাকরি পেয়েছি আর ব্যবসায় উন্নতিও হয়েছে।এই তো কয়েকদিন আগে ওনার কাছে গিয়েছিলাম আমি বলেছেন M.B.A হবে আমার।আমার বিয়ে যার সঙ্গে হবে তার নামের অক্ষর বলে দিয়েছেন।কার সঙ্গে হবে তাও বলেছেন।গত তিনবছরে যা বুঝেছি একটা পুকুরে ক'টা মাছ আছে এটুকু ছাড়া শুধাংশু জ্যেঠু সবকিছুই নিখুঁত বলতে পারেন।"
পূজা:"তাই নাকি!তাহলে শুধু শুধু এত চিন্তা করছো কেন?তোমার তো তোমার বিয়ে নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকার কথা!"
সূর্য:"হ্যাঁ।এগুলো শোনার পর একটু নিশ্চিন্ত হয়েছি ঠিকই।কিন্তু এইসব বিষয়ে কিছু বাধা আসতে পারে।তাই জ্যেঠু আরেকবার পরের মাসে যেতে বলেছেন আমাকে।"
পূজা:"ওহ্।ওনাকে দেখে খুব ভালো লাগল।এমনিতে মানুষটাকেও খুব ভালো মনে হল।"
সূর্য:"হ্যাঁ।উনি সত্যিই খুব ভালো ও গুণী মানুষ।"
পূজা:"তুমিও তাহলে ওনাকে খুব বিশ্বাস কর?"
সূর্য:"হ্যাঁ।আর শুধাংশু জ্যেঠু এত আত্মবিশ্বাস নিয়ে গগণা করেন যে নিজের মনের জোরটাও যেন অনেকটা বেড়ে যায়।"
পূজা:"ঠকমলবাবলেছো।এখন উঠতে হবে।goodnight."
সূর্য:"ভালো থেকো।কালকে কথা হবে।goodnight."
সত্যিকারের প্রেম কোনো পার্থিব মোহ বা মায়ার বাঁধন নয়;বরং অভিন্ন দুটি হৃদয়ে একে অপরকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে চিরসঙ্গীরূপে বরণ করে নেওয়ার নামই প্রকৃত প্রেম।একনিষ্ঠ ও অবিচ্ছেদ্য প্রেমই বেদানুসারে প্রকৃত বিবাহ যে সম্পর্কের মধ্যে জন্ম-জন্মান্তরের চিরবন্ধুত্বের এক অটুট পবিত্র বন্ধন বহন করার নিশ্চয়তা দুটি শুদ্ধ প্রেমপূর্ণ আত্মার মধ্যে বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয়।বৈদিক বিবাহে যেমন পার্থিব সংসার ধর্ম পালনের ভূমিকা সমাজ ও সৃষ্টির ক্ষেত্রে অপরিসীম তেমনই যে কোনো পরিস্থিতির উর্ধ্বে উঠে ধর্মত দুটি প্রাণের আত্মিক বন্ধনের পবিত্রতা ও বিশ্বাস রক্ষার প্রতিজ্ঞা পালন করা এর প্রথম
কর্তব্য। নিষ্ঠাসহকারে আধ্যাত্বিক ও পার্থিব এই কর্তব্য পালনেই একজন নর-নারীর বিবাহের প্রকৃত সাফল্য, সার্থকতা ও সম্মান প্রতিষ্ঠিত হয়।
শুধাংশুবাবুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কমলবাবু ২দিন পরেই পূজার জন্য পাথর অর্ডার দিয়ে এলেন।নিজেও শুধাংশুবাবুর কাছে হাত দেখিয়ে কমলবাবু শুধাংশুবাবুর গুণমুগ্ধ ভক্ত হয়ে উঠলেন।
এভাবেই এক সপ্তাহ কেটে গেল।আজ পূজার জন্মদিন।হেমন্তের রৌদ্রকরোজ্জ্বল সুন্দর সকালে পূজা মন্দিরে পূজা দিয়ে বাড়ি ফিরে মায়ের হাতে তৈরী লুচি,ছোলার ডাল আর পায়েস খেয়ে কম্পিউটার খুলে বসতেই ইন্ বক্সে সূর্যের একটা E-card পেল।
E-card টা পূজার birthday wish করতেই সূর্য পাঠিয়েছে।পূজা "thank you" লিখে পাঠানোর পর হঠাৎ সূর্যের এই জন্মদিনে র শুভেচ্ছা কার্ডটা পাঠানোর সময়টা লক্ষ্য করল;ভোর ৪:৪৫।আজ শনিবার।ইতিমধ্যে সূর্যকেও অনলাইন হতে দেখা গেল।
সূর্য:"Happy Birthday,Puja."
পূজা:"thank you..."
সূর্য:"সকালে একটা কার্ড পাঠিয়েছিলাম।"
পূজা:"সকালে তো নয়,বল ভোরে।"
সূর্য:"তোমাকে সবার প্রথমে শুভেচ্ছা জানানোর ইচ্ছা ছিল,তাই...
ঈশ্বর করুন তুমি সারাজীবন হাসিখুশি থাকো আর এই জীবনে আসার উদ্দেশ্যগুলোকেও সঠিক সময় সঠিকভাবে বুঝতে পার।"
পূজা:"আজ অফিস নেই তোমার?"
সূর্য:"ছিল।আজ ছুটি নিয়েছি।আজ M.B.Aতে ভর্তির বিষয় জানার জন্য মেদিনীপুরে যাব।অফিস থেকে study leave তো দেবে না।মনে হয় weekend-এই ক্লাস করতে হবে ওখানে গিয়ে।দেখি কি হয়।বলছিলাম তুমি যদি আমাকে ইংরেজীটায় strong হতে একটু সাহায্য করবে?মানে যদি চ্যাটে ইংরেজীতে কথোপকথন হয় আমাদের ভালো হয়।"
পূজা:"আমি কিন্তু চ্যাটে বেশী কথা বলতে পছন্দ করিনা।আর আমার পড়াশোনাও থাকবে।তবে চেষ্টা করব।"
সূর্য:"ধন্যবাদ দিয়ে তোমাকে ছোট করতে চাইনা।আচ্ছা, ইংরেজী থেকে বাংলা অনুবাদেরর কোন ডিকশনারি ভালো হবে বল তো?"
পূজা:"আমার মতে ইংরেজি শেখার ক্ষেত্রে Samsadডিকশনারি খুব ভালো।"
সূর্য:"ঠিক আছে।আজই কিনে আনব।"
সূর্য:"পূজা:"কখন বেরোবে তুমি?"
সূর্য:"এই তো দশটা নাগাদ।"
পূজা:"all the best."
সূর্য:'thank you.এখন উঠতে হবে।bye."
পূজা:"bye."
সূর্য-পূজা এবার থেকে প্রতিদিনই সন্ধ্যায় একটা নির্দিষ্ট সময় চ্যাটে ঘন্টা খানেক ইংরেজীতেই কথোপকথনে অভ্যস্ত হতে লাগল।নভেম্বর মাসের আরও ১০টা দিন এইভাবেই অতিক্রান্ত হতে লাগল।এবার সেই সময় এসে উপস্থিত যখন পূজার মনের প্রজাপতি কঠিন আস্তরণের সেই বড় ফাটলটি সজ্ঞানে ভেদ করে সুগভীর প্রেমের রঙীন পাখায় ভর করে বেরিয়ে আসতে পারবে।ক্রমে সূর্য-পূজার জীবন কাননে শীত পেরিয়ে যথাসময় ঋতুরাজ বসন্তের দক্ষিণ হাওয়ার দোলে দুটি প্রেমপূর্ণ সত্তা 'চিরজনম সঙ্গ পণে' অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে উঠবে।পরমাত্মা পরমেশ্বর আর দুটি নির্মল প্রেমে পরিপূর্ণ হৃদয় এই পবিত্র মিলনের চিরসাক্ষী হয়ে থাকবে আজীবন।
© বুনানী
সরোসিজবাবু মধ্যাহ্ন ভোজের সময় কলকাতা আসার প্রসঙ্গ নিয়ে কথা তুললেন।
সরোসিজ বাবু:"ভাইফোঁটা র দিন সকাল সকাল ফোঁটার বিষয়টা মিটে গেলে আমি বাবুকে নিয়ে একবার কলকাতার আর্মহার্ট স্ট্রিটের এক খুব ভালো জ্যোতিষীর কাছে যাব ভাবছি।তুই তো জানিস আমি জ্যোতিষ একদম মানতাম না।নিজেও আমি সারাজীবনে কখনও এসব নিয়ে মাথা ঘামাইনি।কিন্তু বাবু(পার্বণ)-র কেরিয়ারের বিষয়টা আমাকে দুশ্চিন্তায় ফেলছে।মোক্ষদাশঙ্করের স্ত্রী মানে বিপুলা আমাকে এই জ্যোতিষীর কাছে যাওয়ার জন্য অনেকদিন আগে থেকেই বলেছিল কারণ মোক্ষদাশঙ্করের জীবনে উন্নতির পিছনে ওনার বড় অবদান আছে।উনি জন্মছক দেখেননা।হাত দেখে আগে সবটাই নাকি নিজের থেকে বলেন।তারপর কারো প্রশ্নের উত্তর দেন।অনেকের ক্ষেত্রেই ওনার কথা নাকি খুব মিলেছে।এগরার অনেক সফল মানুষ ওনার কাছে যান।কিন্তু গুরুর আদেশ থাকায় উনি নিজের প্রচার কখনও করেননি।মানুষটিও নাকি খুব ভালো।তাই ভাবলাম বাবুকে নিয়ে একবার ওনার কাছে যাই।দেখি কি বলেন।"
কমলবাবু:"ভালো হলেই ভালো।তবে জ্যোতিষ তো আর কারোর হয়ে কর্ম করে দিতে পারবেনা,নিজেকেই চেষ্টা করতে হবে সফল হওয়ার জন্য।ভালো জ্যোতিষ শুধুমাত্র সঠিক পথটা বলতে পারেন।বড়জোর বাধাগুলো দূর করতে সাহায্য করতে পারেন।"
যাঞ্জসেনীদেবী:"সেতো নিশ্চয়।দাদা,আমি একটা কথা বলছিলাম।যদিও বুড়ি(পূজা)র জন্মছক অনেক জ্যোতিষ ই বিচার করেছেন।ইনি যেহেতু খুব ভালো হস্তবিদ বলছেন,আপনি যদি ওকেও নিয়ে একবার দেখিয়ে আনতেন ভালো হত।"
সরোসিজ বাবু:"সে তো ভালো কথা।ভাই-বোন দুজনেরটাই একসঙ্গে দেখে দেবেন।আমার কোনো অসুবিধা নেই।"
কমলবাবু:"আবার একজন জ্যোতিষ!বাবুকে দেখিয়ে আসার পর নাহয় ভাবা যাবে।"
যাঞ্জসেনীদেবী:"পরে আবার কবে কখন সুবিধা হয়।দাদা যখন যাচ্ছেন ওকে নিয়ে দেখিয়ে আনুন।কি বলেন দেখা যাক।"
কমলবাবু:"ঠিক আছে।তবে তাই হোক।"
সরোসিজ বাবু:"সেটাই ভালো।উনি তো শুনেছি নিজের থেকেই সব বলেন।তবু মামনির বিষয়ে বিশেষ কিছু জানার থাকলে বোলো।"
যাঞ্জসেনীদেবী:"বিশেষ কিছু প্রশ্ন বলতে শরীর স্বাস্থ্য,কেরিয়ার আর ওর বিয়ের বিষয়টা কেমন কি আছে সেইবিষয়ে ভালো করে জেনে নেওয়া আরকি।তাছাড়া উনি তো নিজের থেকে সবটাই বলেন বলছেন।"
সরোসিজ বাবু:"ঠিক আছে।প্রথমবার তো।দেখি কেমন এই ভদ্রলোক।তবে মোক্ষদাশঙ্কর আর তার পরিবার কিন্তু সত্যিই ওনার কাছে খুব উপকৃত হয়েছে।এগরাতে আমার পরিচিত আরও তিন-চারজন নিজে মুখে ওনার অভ্যর্থ গগণা ও সহায়তার কথা বলেছে আমাকে।"
কমলবাবু:"আরে বাবা!সিদ্ধান্ত তো হয়ে গেল।তোর ছেলে আর মেয়ে দুজনকে নিয়েই আগামী মঙ্গলবার ওনার কাছে যাবি।তারপর দেখা যাবে।ভদ্রলোকের নাম কি?"
সরোসিজ বাবু:"শ্রীযুক্ত শুধাংশু বসু।"
এদিকে সূর্য পূজাকে অনলাইন হতে দেখছেনা।কালকের ম্যাসেজটাও পূজা যে দেখেনি সেটা বোঝা যাচ্ছে। সারাদিনে দুইতিনবার অনলাইনে এসে পূজাকে অনলাইনে না পেয়ে ভিতরে ভিতরে সূর্যের মন ক্রমে অস্থির হয়ে উঠতে লাগল।
পরেরদিন সকাল সকাল ভাইফোঁটার আচার পালণ করল পূজা আর পার্বণ।
বেলা ১১টা নাগাদ সরোসিজবাবু পূজা আর পার্বণকে নিয়ে শুধাংশুবাবুর ঠিকানায় উপস্থিত হলেন।প্রথমেই তারা দেখা করার সুযোগ পেলেন শুধাংশু বাবুর সঙ্গে।৬৫ বছরের একজন অমায়িক ভদ্রলোক শুধাংশুবাবু।ভদ্রলোককে দেখে বোঝার উপায় নেই তিনি একজন এত গুণী মানুষ।সাদামাটা পোশাক-কালো প্যান্ট আর সাদা সার্ট।শুধাংশুবাবু তিনজনকেই একসঙ্গে বসতে বললেন।
সরোসিজ বাবু:"আমাকে মোক্ষদাশঙ্কর আপনার কথা বলেছিল।"
শুধাংশুবাবু:"আপনিই তো গতকাল আমাকে ফোন করেছিলেন?"
সরোসিজ বাবু:"হ্যাঁ।এই আমার ভাইপো আর ভাইঝি।"
শুধাংশুবাবু:"গুরুর আদেশ নিয়ে তবেই আমি কারো হাত দেখি।ওনার আদেশ না পেলে কিন্তু দেখিনা।কার হাত আগে দেখাতে চান তাকে আমার সামনে বসতে বলুন।"
সরোসিজ বাবু:"কারোরটা তো আগে দেখতে হবেই।আমার ভাইপোরটা নাহয় আগে দেখুন।"
পার্বণ শুধাংশুবাবুর সামনে এসে বসলেন।শুধাংশুবাবু চোখ বন্ধ করে মন্ত্রোচ্চারণ করতে শুরু করলেন।কিছুক্ষণ পর শুধাংশুবাবু পার্বণকে বললেন:-
"আমি তোমার নামটা জিজ্ঞাসা করলে আগে শ্রী দিয়ে বলবে।তারপর হাত দেখব তোমার।"
আবার চোখ বন্ধ করে মন্ত্রোচ্চারণ করলেন শুধাংশুবাবু।চোখ খুলে পার্বকে জিজ্ঞাসা করলেন:-
"তোমার নাম কি?"
পার্বণ একটু থেমে বলল,"শ্রী পার্বণ মাইতি।"
শুধাংশুবাবু হাত বাড়িয়ে পার্বণের দুই হাতের রেখাগুলো খুব ভালো করে মিনিট দশেক দেখলেন।তারপর একটি খাতায় তার নাম নিজের হাতে লিখতে বললেন।পার্বণের নাম লেখা হয়ে গেলে সেই নামটির ঘ্রাণ নিয়ে আবার magnifying glass দিয়ে পার্বণের হাতের আঙ্গুল গুলোর রেখা ভালোভাবে দেখার পর বলতে শুরু করলেন।পার্বণ কেমন প্রকৃতির ছেলে,কোথায় তার সমস্যা,ভবিষ্যতে কি করলে ভালো হবে---এইসব।সবটাই অক্ষরে অক্ষরে সঠিক বলেছেন।সরোসিজ বাবু ও পার্বণ দুজনেই খুব আপ্লুত হয়ে পড়ল।সমস্যা নিবারণের জন্য আত্মবিশ্বাসী শুধাংশুবাবু সঠিক পরামর্শও দিলেন।
এতক্ষণ বিস্ময়ে নিয়ে এইসব দেখছিল আর শুনছিল পূজা।এবার শুধাংশুবাবু পূজাকে সামনে এসে বসতে বললেন।শুধাংশুবাবু পূজাকে যেভাবে দেখছিলেন এবং কথা বলছিলেন তাঁর চোখ-মুখে কোথাও যেন মনে হচ্ছিল শুধাংশুবাবু পূজার নাম আগে থেকেই শুনেছেন।পূজাকেও একই পদ্ধতিতে নিজের নাম বলতে হল।খুব ভালো করে পূজার দুটি হাতের রেখা দেখার পর একইভাবে নাম সই করতে বললেন শুধাংশুবাবু।তারপর আবার ভালো করে হাতের আঙ্গুল, হাতের চেটোর সোজা ও উল্টো ভাগ দেখে শুধাংশুবাবু সরোসিজবাবুকে বলা শুরু করলেন,
"পূজা খুব চাপা স্বভাবের মেয়ে।এদের বুক ফাটে কিন্তু মুখ খুব সহজে খোলেনা।সহজ,সরল ও কোমল মন পূজার।ওর আত্মসম্মান জ্ঞান প্রবল।এরা কেমন মেয়ে হয় জানেন?বাড়িতে যদি চাল না থাকে তবে হাঁড়িতে জল গরম করে বোঝাবে ভাত রান্না হচ্ছে।
আপনার ভাইপোর চেয়ে আপনার ভাইঝির হাত কিন্তু অনেক সম্ভাবনাময়। যদি দশটি বছর আগে আসতেন আমার কাছে তবে পড়াশোনার ক্ষেত্রে বেশ নামকরা ছাত্রী হতে পারত আপনার ভাইঝি।সসম্মানে নিজস্ব আয়ের যোগ ভালোই আছে আপনার ভাইঝি।যদি সঠিকভাবে এগোতে পারে তবে নিজের আয়ে কেনা গাড়ি করে মাবাবাকে ঘোরাতে পারবে এই মেয়ে।আমি সেদিন হয়তো পৃথিবীতে থাকবনা,কিন্তু সেদিন আমার এই কথাটি তোমার নিশ্চয় মনে পড়বে পূজা।"পূজার দিকে হাসিমুখে দৃষ্টিপাত করে কথাটা বললেন শুধাংশুবাবু।
সরোসিজ বাবু এবং শুধাংশুবাবুর কথোপকথন শুরু হল।
শুধাংশুবাবু:"আর কি জানতে চাইছেন বলুন সরোসিজবাবু?"
সরোসিজবাবু:"পূজার মা ওর কেরিয়ার আর বিয়ের ব্যাপারে একটু সবিস্তারে জানতে চেয়েছে।সেই ব্যাপারে যদি একটু বলেন ভালো হয়।"
শুধাংশুবাবু:"পূজার জন্মকালীন বৃহস্পতি এবং শনি হাতে খুব ভালো আছে।বুধ ভালো আছে।হাত বলছে পূজার নিজস্ব আয় হবেই।বিদেশ ভ্রমণের যোগ আছে।শরীর স্বাস্হ্য নিয়ে সমস্যা আসতে পারে।পূজার নিজস্ব পছন্দের বিয়ে হবে।পূজার ভাগ্যে বিয়ের পাঁচ বছরের মধ্যে পূজার স্বামীর উন্নতি নিশ্চিত।ওর বিবাহিত জীবন ভালো।কিন্তু পূজার জন্মকালীন চন্দ্র ও শুক্র দুর্বল থাকায় ওর বিবাহোত্তর সাংসারিক জীবনে কিছু সমস্যা আসতে পারে এবং গোপন শত্রুর সমস্যাও থাকবে।তাই বিয়ের দিন-ক্ষণ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত পূজার বিয়ের ব্যাপারে আত্মীয়-বন্ধুদের মধ্যে বেশী আলোচনা করতে যাবেনা।পূজার স্বামী প্রথম গর্ভের সন্তান হবে।চাকুরিজীবী হবে।বংশানুক্রমে বা পারিবারিক ব্যবসা থাকতে পারে।Technical line -এ চাকুরীরত হবে পূজার স্বামী।"
সরোসিজ বাবু:"তাহলে পূজার জন্য ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার উপযুক্ত হতে পারে?"
শুধাংশুবাবু:"ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার যদিও Technical line-এর।কিন্তু পূজার হাত বলছে পূজার মতো মেয়েরা রাজরাণী হলেও সুখী নাও হতে পারে,আবার সামান্য চাকুরিজীবী কারো কাছে সুখী হতে পারে।তবে আমি মানি এখানে যারা আসে তারা বাবা বিশ্বনাথ ও মাকালীর কৃপায় এখানে আসে।হাত দেখে বলার সময় কিন্তু আমি আমার স্ত্রীকেও চিনিনা।হাতের রেখায় শেষ কথা।পূজার ব্যাপারে আপনাকে একটা কথা আমার বলার আছে।তারপর আপনারা যা ভালো মনে করবেন করতে পারেন।"
সরোসিজ বাবু:"কি কথা বলুন তো?"
শুধাংশুবাবু:"পূজা আর পার্বণ একটু বাইরে গিয়ে বসো।তোমাদের জ্যেঠামশাইয়ের সাথে আমি একান্তে একটু কথা বলতে চাই।"
পূজা আর পার্বণ বাইরে এসে বসল।বেলা প্রায় ১টা বাজে।
সরোসিজ বাবু আর শুধাংশুবাবু প্রায় দশ মিনিট একান্তে কথাবার্তা বললেন।
সরোসিজ বাবু বেরিয়ে এসে পূজার দিকে জিঞ্জাসু দৃষ্টিতে তাকালেন।কিন্তু কিছু বললেন না।শুধাংশুবাবু পার্বণের জন্য দুটি পাথর ধারণের পরামর্শ দিয়েছিলেন।তিনি সেগুলির অর্ডার দিলেন।পূজার জন্যও দুটি পাথর ধারণের পরামর্শ দিয়েছেন শুধাংশুবাবু।পূজার মাবাবাকে জানিয়ে এগুলো পরে অর্ডার দেওয়া হবে বলে শুধাংশুবাবুর চেম্বার ছেড়ে বেরিয়ে এলেন।বাড়ি ফেরার পথে সরোসিজ বাবু সস্নেহে পূজাকে একবার শুধু জিজ্ঞেস করলেন, "তোমাকে কি এর মধ্যে কোনো ছেলে প্রপোজ করেছিল মামণি?তুমি না বলেছো?"
পূজা খুব অবাক হল এই প্রশ্নে।তবে আন্দাজ করল এই কথাটাই একান্তে শুধাংশুবাবু বলেছেন জ্যেঠামশাইকে।একটু নিজেকে সামলে উত্তর দিল,"হ্যাঁ।"
সরোসিজ বাবু আর কিছু বললেন না।
কমলবাবুর বাসায় ফিরে পূজার বাবামাকে সবিস্তারে সবটা খুলে বললেন সরোসিজবাবু।শুধাংশুবাবুর ভবিষ্যৎ বাণীর সঙ্গে অতীতে পূজার জন্মছক বিচার করা জ্যোতিষবিদদের মতামতের সঙ্গে বেশীরভাগটাই মিলে গেছে।পূজার মা ঠিক করলেন শুধাংশুবাবুর পরামর্শ মতো পূজার জন্য দুটি পাথর নেবেন তিনি।দাদার কাছে সবটা শুনে কমলবাবু একবার নিজে শুধাংশুবাবুর সঙ্গে সাক্ষাতের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন।
এদিকে।আজও সকাল থেকে পূজা অফলাইন দেখে সূর্য আর স্থির থাকতে পারলনা।ম্যাসেজ করল পূজাকে।
"কি হয়েছে তোমার?ভালো আছো তো?অনলাইন হচ্ছো না কেন?নাকি যোগাযোগ আর রাখবে না?কিছু তো বল?"
আজ রাতের বেলায় পূজা অনলাইন হল।সূর্যের দুটি ম্যাসেজ inbox-এ আছে দেখতে পেল।গতকাল আর আজকের ম্যাসেজটা পড়ে পূজা এটুকু নিশ্চিত হল সূর্য পূজার সাথে কথা বলতে পারলে আর আগের মতো ধৈর্য্য ধরে স্থির থাকতে পারছে না।পূজার অন্তরের কঠিন বরফটা সূর্যের উষ্ণ তেজে কখন যে তার অজান্তেই ধীরে ধীরে গলতে শুরু করে দিয়েছে সেটুকু এখনও টের পায়নি পূজা।
গত পরশুর ম্যাসেজটা য় সূর্যের মনোভাব স্পষ্ট করেই জানিয়েছে সূর্য।পূজা সেইসব প্রসঙ্গে না গিয়ে সহজ সরল ভাষায় স্বাভাবিক ভাবে ম্যাসেজ লেখা শুরু করল,
"গতকাল তোমার ম্যাসেজ পড়ার ইচ্ছা আমার হয়নি আর আজকে ভাইফোঁটার বিষয়ে সকাল থেকে ব্যস্ত ছিলাম। জ্যেঠামশাইয়ের সঙ্গে আজকে আমি আর দাদা একজন জ্যোতিষীর কাছে গিয়েছিলাম।উনি খুব ভালো হাত দেখতে পারেন।জ্যোঠামশাই এমনি এসব মানতেন না।আমার ক্ষেত্রেও নিখুঁত বিচার করেছেন।মোক্ষদাশঙ্কর জ্যেঠুরাও নাকি ওনাকে খুব ভরসা করেন।তাই আমাদের দুজনকে নিয়ে গিয়েছিলেন।এইসবে ব্যস্ত থাকায় কম্পিউটার খোলার সময় পাইনি।"
সূর্য অনলাইন ছিল।একটা শূন্যতাঘেরা চাপা মনকষ্টে পুরো একটা দিন কেটেছে সূর্যর।পূজা কেন অনলাইনে আসছেনা এই দুশ্চিন্তায় স্বাভাবিক কাজ-কর্মেও অরুচি অনুভব করছিল সূর্য।পূজার ম্যাসেজটা যেন তপ্ত মরুভূমিতে বারিবর্ষনের মতো কাজ করল।সঙ্গে সঙ্গে সদ্য উজ্জীবিত সূর্যের প্রেমিক মন পূজার সাথে কথোপকথনে ব্যস্ত হতে চাইল।
সূর্য:"কথায় কথায় এতো রাগ ভালো নয়।আমি তো ভাবলাম কি না কি।তোমার নীতিবিরুদ্ধ কিছু আমি কি তোমাকে মানতে বাধ্য করার চেষ্টা কখনো করতে পারি?এই চিনলে তুমি আমাকে?"
সূর্য:"আচ্ছা আজকে যে হস্তরেখাবিদের কাছে তুমি গিয়েছিলে সেই ভদ্রলোকের নাম কি শুধাংশু বসু?তিনি কি আর্মহার্ট স্ট্রিটের একটি চেম্বারে বসেন?"
পূজা:"হ্যাঁ।একদম তাই।কিন্তু তুমি কি করে জানলে?"
সূর্য:"বাবা গত হওয়ার পর আমাদের আর্থিক অবস্থা যখন কিছুটা বিপন্ন,সেই সময় বোনের শ্বাশুড়ীর কথায় শুধাংশুবাবুর কাছে গিয়েছিলাম আমি।মেসোমশাই যেদিন প্রথম ওনাকে দেখাতে গিয়েছিলেন মেসোমশাইকে দেখার আগেই ওনার ডাক নাম ধরে ডেকেছিলেন।মাসিমা যখন আমার বোনের সম্বন্ধের বিষয় ওনাকে বলেছিলেন, তখন উনি নিজের থেকেই বলেছিলেন আমার বোন দ্বিতীয় গর্ভের সন্তান এবং এই বিয়ে ভালো হবে।আর আমার চাকরি কবে হবে সবকিছু বলে দিয়েছিলেন।ব্যবসার বিষয়ে বলেছিলেন কোনো সাদা জিনিসের ব্যবসা করলে ভালো হবে।তাই কাগজ সম্বন্ধীয় ব্যবসাই তখন শুরু করি।ওনার উল্লেখিত সময়ের মধ্যে চাকরি পেয়েছি আর ব্যবসায় উন্নতিও হয়েছে।এই তো কয়েকদিন আগে ওনার কাছে গিয়েছিলাম আমি বলেছেন M.B.A হবে আমার।আমার বিয়ে যার সঙ্গে হবে তার নামের অক্ষর বলে দিয়েছেন।কার সঙ্গে হবে তাও বলেছেন।গত তিনবছরে যা বুঝেছি একটা পুকুরে ক'টা মাছ আছে এটুকু ছাড়া শুধাংশু জ্যেঠু সবকিছুই নিখুঁত বলতে পারেন।"
পূজা:"তাই নাকি!তাহলে শুধু শুধু এত চিন্তা করছো কেন?তোমার তো তোমার বিয়ে নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকার কথা!"
সূর্য:"হ্যাঁ।এগুলো শোনার পর একটু নিশ্চিন্ত হয়েছি ঠিকই।কিন্তু এইসব বিষয়ে কিছু বাধা আসতে পারে।তাই জ্যেঠু আরেকবার পরের মাসে যেতে বলেছেন আমাকে।"
পূজা:"ওহ্।ওনাকে দেখে খুব ভালো লাগল।এমনিতে মানুষটাকেও খুব ভালো মনে হল।"
সূর্য:"হ্যাঁ।উনি সত্যিই খুব ভালো ও গুণী মানুষ।"
পূজা:"তুমিও তাহলে ওনাকে খুব বিশ্বাস কর?"
সূর্য:"হ্যাঁ।আর শুধাংশু জ্যেঠু এত আত্মবিশ্বাস নিয়ে গগণা করেন যে নিজের মনের জোরটাও যেন অনেকটা বেড়ে যায়।"
পূজা:"ঠকমলবাবলেছো।এখন উঠতে হবে।goodnight."
সূর্য:"ভালো থেকো।কালকে কথা হবে।goodnight."
সত্যিকারের প্রেম কোনো পার্থিব মোহ বা মায়ার বাঁধন নয়;বরং অভিন্ন দুটি হৃদয়ে একে অপরকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে চিরসঙ্গীরূপে বরণ করে নেওয়ার নামই প্রকৃত প্রেম।একনিষ্ঠ ও অবিচ্ছেদ্য প্রেমই বেদানুসারে প্রকৃত বিবাহ যে সম্পর্কের মধ্যে জন্ম-জন্মান্তরের চিরবন্ধুত্বের এক অটুট পবিত্র বন্ধন বহন করার নিশ্চয়তা দুটি শুদ্ধ প্রেমপূর্ণ আত্মার মধ্যে বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয়।বৈদিক বিবাহে যেমন পার্থিব সংসার ধর্ম পালনের ভূমিকা সমাজ ও সৃষ্টির ক্ষেত্রে অপরিসীম তেমনই যে কোনো পরিস্থিতির উর্ধ্বে উঠে ধর্মত দুটি প্রাণের আত্মিক বন্ধনের পবিত্রতা ও বিশ্বাস রক্ষার প্রতিজ্ঞা পালন করা এর প্রথম
কর্তব্য। নিষ্ঠাসহকারে আধ্যাত্বিক ও পার্থিব এই কর্তব্য পালনেই একজন নর-নারীর বিবাহের প্রকৃত সাফল্য, সার্থকতা ও সম্মান প্রতিষ্ঠিত হয়।
শুধাংশুবাবুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কমলবাবু ২দিন পরেই পূজার জন্য পাথর অর্ডার দিয়ে এলেন।নিজেও শুধাংশুবাবুর কাছে হাত দেখিয়ে কমলবাবু শুধাংশুবাবুর গুণমুগ্ধ ভক্ত হয়ে উঠলেন।
এভাবেই এক সপ্তাহ কেটে গেল।আজ পূজার জন্মদিন।হেমন্তের রৌদ্রকরোজ্জ্বল সুন্দর সকালে পূজা মন্দিরে পূজা দিয়ে বাড়ি ফিরে মায়ের হাতে তৈরী লুচি,ছোলার ডাল আর পায়েস খেয়ে কম্পিউটার খুলে বসতেই ইন্ বক্সে সূর্যের একটা E-card পেল।
E-card টা পূজার birthday wish করতেই সূর্য পাঠিয়েছে।পূজা "thank you" লিখে পাঠানোর পর হঠাৎ সূর্যের এই জন্মদিনে র শুভেচ্ছা কার্ডটা পাঠানোর সময়টা লক্ষ্য করল;ভোর ৪:৪৫।আজ শনিবার।ইতিমধ্যে সূর্যকেও অনলাইন হতে দেখা গেল।
সূর্য:"Happy Birthday,Puja."
পূজা:"thank you..."
সূর্য:"সকালে একটা কার্ড পাঠিয়েছিলাম।"
পূজা:"সকালে তো নয়,বল ভোরে।"
সূর্য:"তোমাকে সবার প্রথমে শুভেচ্ছা জানানোর ইচ্ছা ছিল,তাই...
ঈশ্বর করুন তুমি সারাজীবন হাসিখুশি থাকো আর এই জীবনে আসার উদ্দেশ্যগুলোকেও সঠিক সময় সঠিকভাবে বুঝতে পার।"
পূজা:"আজ অফিস নেই তোমার?"
সূর্য:"ছিল।আজ ছুটি নিয়েছি।আজ M.B.Aতে ভর্তির বিষয় জানার জন্য মেদিনীপুরে যাব।অফিস থেকে study leave তো দেবে না।মনে হয় weekend-এই ক্লাস করতে হবে ওখানে গিয়ে।দেখি কি হয়।বলছিলাম তুমি যদি আমাকে ইংরেজীটায় strong হতে একটু সাহায্য করবে?মানে যদি চ্যাটে ইংরেজীতে কথোপকথন হয় আমাদের ভালো হয়।"
পূজা:"আমি কিন্তু চ্যাটে বেশী কথা বলতে পছন্দ করিনা।আর আমার পড়াশোনাও থাকবে।তবে চেষ্টা করব।"
সূর্য:"ধন্যবাদ দিয়ে তোমাকে ছোট করতে চাইনা।আচ্ছা, ইংরেজী থেকে বাংলা অনুবাদেরর কোন ডিকশনারি ভালো হবে বল তো?"
পূজা:"আমার মতে ইংরেজি শেখার ক্ষেত্রে Samsadডিকশনারি খুব ভালো।"
সূর্য:"ঠিক আছে।আজই কিনে আনব।"
সূর্য:"পূজা:"কখন বেরোবে তুমি?"
সূর্য:"এই তো দশটা নাগাদ।"
পূজা:"all the best."
সূর্য:'thank you.এখন উঠতে হবে।bye."
পূজা:"bye."
সূর্য-পূজা এবার থেকে প্রতিদিনই সন্ধ্যায় একটা নির্দিষ্ট সময় চ্যাটে ঘন্টা খানেক ইংরেজীতেই কথোপকথনে অভ্যস্ত হতে লাগল।নভেম্বর মাসের আরও ১০টা দিন এইভাবেই অতিক্রান্ত হতে লাগল।এবার সেই সময় এসে উপস্থিত যখন পূজার মনের প্রজাপতি কঠিন আস্তরণের সেই বড় ফাটলটি সজ্ঞানে ভেদ করে সুগভীর প্রেমের রঙীন পাখায় ভর করে বেরিয়ে আসতে পারবে।ক্রমে সূর্য-পূজার জীবন কাননে শীত পেরিয়ে যথাসময় ঋতুরাজ বসন্তের দক্ষিণ হাওয়ার দোলে দুটি প্রেমপূর্ণ সত্তা 'চিরজনম সঙ্গ পণে' অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে উঠবে।পরমাত্মা পরমেশ্বর আর দুটি নির্মল প্রেমে পরিপূর্ণ হৃদয় এই পবিত্র মিলনের চিরসাক্ষী হয়ে থাকবে আজীবন।
© বুনানী