...

2 views

কালবেলা


*আজও কিছু ইতিহাস শিরায় শিরায় বিঁধে, তীক্ষ্ণ লাঙলের ফলার মতো চিরে চলে আমার কঠিন অস্থির বুক, সহসা দুঃসাহসিক কম্পনে ভেঙে পড়ে পাঁজরের বাঁধ, নৈঃশব্দ্যে বয়ে চলে কালবেলা বামদিক ঘেঁষে! অযাচিত মধ্যরাত যবনিকা ছিঁড়ে আবিস্কার করে এক পুরোনো পরিচয় ... যেখানে থমকে যাওয়া চক্রব্যূহে কেবলই আবর্তিত নিষ্ঠুর সংলাপ, মিথ্যে কলঙ্কের দহন, বর্বরচিত চাতুর্য্য আর বিশ্বাসঘাতকের মসৃণ তরবারি - যারা আঙুল নির্দেশিকায় থামিয়ে ছিল দুরন্ত উত্তরণ... অবরুদ্ধ ঠোঁটের বিবর্ণ পাতায় দিয়ে ছিল অভুক্তের শিলমোহর, নিখুঁত ষড়যন্ত্রে গড়ে ছিল ভিক্ষাবিত্তির এক সুঠাম পথ, আর রঙের প্রাচুর্য হতে ছিনিয়ে নিয়ে ছিল সমস্তটুকু রঙ !! শুধুমাত্র নির্মম কালো আস্তারণে জড়িয়ে নিক্ষিপ্ত করেছিল এই সমাজের আস্তাকুড়ে, সে বেলা আমার কালবেলা .........

আজ একান্ত প্রয়োজনে মায়ের বন্ধ দেরাজটা খুললাম, জমি জমার নথিপত্র সকল খতিয়ে দেখার জন্য, ভেবেছি দুকামড়ার পুরোনো বাড়িটা এবার বিক্রি করে দেবো ... তেমনি কথা হয়েছে office colleague বীরেন বাবুর সাথে, আজও কলকাতা থেকে ফিরে ফিরে আসি শুধুমাত্র এই বাড়িটার টানে । সমস্ত সপ্তাহ ভীষণ ব্যস্ততায় কাটে, কখনও ছেলে মেয়ের আবদার তো কখনও কখনও সহধর্মিণীর হাজারো বায়নাক্কা লেগেই থাকে,তবুও ফুরসৎ পেলেই দৌড়ে আসি আমার গ্রামের বাড়িতে, কিন্তু এখন আর সেই দৌড়াদৌড়ি করতে পারিনা.... শরীর জনান দিচ্ছে বয়েস হয়েছে, ইচ্ছে ছিল যখন অবসর প্রাপ্ত হব তখন বরাবরের মতই এখানে চলে আসব, কিন্তু, তা হবার নয় !! পরিবারের গুরুতর আপত্তি .... তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই এই সিদ্ধান্ত । কাগজ পত্র গুছিয়ে নিয়ে যখন দেরাজ বন্ধ করতে যাচ্ছি, হঠাৎই চোখ গেলো দেরাজের এক কোনে একটি ছোট্ট গয়নার বাক্সের দিকে, বোধ করি সেটা মায়ের । কিন্তু, আগে কখনও দেখেছি বলে মনে পড়ছে না ! আর দেখবই বা কি করে, এই দেরাজে তো গুটিকয়েক পুরোনো জিনিস ব্যতীত আর কিছুই নেই, ছিল কেবল এই বাড়ির পর্চা ও দলিল পত্র ... তাই এটা বিশেষ খোলা হতো না । বাক্সটায় কোনও lock ছিলো না তাই অতিসহজেই খুললাম, দেখলাম বহু যত্নে রাখা কয়েকটি চিঠি, সবকটিই বাবার লেখা মাকে উদ্দেশ্য করে, আর একটি চিঠি যেটা পেলাম সেটা পড়া মাত্রই আমার বুকের ভিতর মরচে পড়া ক্ষতয় তীব্র আঘাত করে সারা শরীর রক্তাক্ত করে গেল, মনে পড়ল প্রথম যেদিন শৈশবের বাগান থেকে সহসা বৃন্তচ্যুত হয়ে পড়েছিলাম এক অন্ধকূপে ।

চারিদিক নিস্তব্ধ, প্রকৃতিও যেন কোনও এক ত্রাসে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে নিজের মাঝে, শুধুমাত্র তার অশ্রু সিঞ্চিত বারিধারা মানেনি কোনও শাষন, মানেনি কোনও নিষেধের বেড়ি, মানেনি কোনও রক্তচক্ষু ... মাটির বুকে যেখানে শেষ চিহ্নটুকু প্রকট ! যেখানে খইয়ের শুভ্রতা লিখেছে চিরবিদায়ী পত্র, কড়ি মিটিয়েছে মাতৃভূমির ঋণ, সেখানে বৃষ্টির শব্দ কেবলই হাহাকার করে ফেরে সন্তান হারা মায়ের মতো, হঠাৎই সে'ই মৌনতায় ব্যাঘাত ঘটল... কোথা থেকে আগন্তুকের মতো এলো একটি গাড়ি, পালিশ করা জুতোর খটমট শব্দে যেন দলিত করে গেল মাতৃভূমির ভগ্ন হৃদয়.....

" আসতে পারি মিসেস মৈত্র "..?
বৃষ্টির ছাঁটে ভিজে যাওয়া বারান্দার এক পাশে দুটি সন্তান কে জড়িয়ে ধরে বসে আছেন এক সিমন্তীনী, তার মাথা ভর্তি সিঁদুর, পা দুটি আলতা রাঙা, বস্ত্র অগোছালো, এলো চুল পিঠের উপর বিন্যাস্ত .... অপলক দৃষ্টিতে তাকালেন সামনের দিকে, আগন্তুক বললেন -
" মিসেস মৈত্র, আপনাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা জানানোর ছিল, it's very urgent ... অরুনাভ বাবুর নামে সরকার থেকে একটি টেলিগ্রাম এসেছে, please take your letter. "
সে'ই সিমন্তীনী বললেন -
"আপনি !! মানে আপনারা ... কেন এসেছেন এখানে ? মজা দেখতে ..... ? কি মনে হচ্ছে বলুন তো আপনাদের এখানে সার্কাস হচ্ছে .... তালি দিতে দিতে আপনারা ব্যালকনি থেকে মজা উপভোগ করছেন" ...?
" মিসেস মৈত্র cool down, আমি জানি এটা উচিত সময় নয় .... তবুও it's our duty, বুঝতেই পারছেন আমরা সরকারের বেতনভুক কর্মচারী" ।
" কি বুঝব বলুন তো ঠিক ....!! ঠিক বেঠিক আজ সব তো আপনাদের হাতে, এখনও অনেক কিছুই তো বোঝার ও জানার বাকি ছিল, আজ কিছুই আর অবশিষ্ট নেই !! সবকিছুই তো বিলীন শূন্যতার অন্তরীক্ষে".....
"মিসেস মৈত্র, please cool down"....
" কি এই অবস্থায় আপনারা আমাকে শান্ত থাকতে বলছেন ....!! আপনারা কি আদৌ মানুষ....!! হ্যাঁ কি যেন বলছিলেন আমার গুরুত্বপূর্ণ চিঠি - শুনুন অফিসার তাও আজ আমার নিস্প্রয়োজন .... আজ অপ্রত্যাশিত ভাবে নতুন ভোরের থেকে যে চিঠি পেলাম তার উত্তর খোঁজাই আজ আমার কাছে এক মাত্র লক্ষ্য .... দয়া করে এবার আমাদের মুক্তি দিন অফিসার । বলি অনেক তো হলো আর কেন.... আর কেন ??? এই মুহূর্তে বেরিয়ে যান আমার বাড়ি থেকে, আমি আপনাদের সহ্য করতে পারছি না.... so gate lost".

অগত্যা পার্শ্বস্থ টেবিলে চিঠিখানা রেখে বেরিয়ে গেলেন পুলিশ আধিকারিক তন্ময় ভট্টাচার্য । কিন্তু তা খুলে পাঠ করার পরিস্থিতিতে ছিলেন না সুচরিতা মৈত্র.... ।

বিধাতা যখন মুখ ফিরিয়ে নেন তখন দুর্ভাগার সাগরও যায় শুকিয়ে, বার বার মনে পড়ে যায় অতীতের সে'ই চেনা ডাকনাম ..... অনন্ত শূন্যের মাঝে প্রতিধ্বনিত হয়ে বলে যায় চুপিসারে - " আমি আছি .... আমি আছি" ... মনেপড়ে সে'ই স্নেহার্দ্র কন্ঠস্বর - " খোকা, খাবি আয় .... বেলা যে অনেক হলো" । হঠাৎই এক তীব্র ঝাঁ ঝাঁ শব্দে আমার সম্বিত ফিরল, দেখলাম প্রতিবেশীনি নীরা কাকিমা কদর্য ভাসায় আমাকে অকথ্য গালিগালাজ করছেন - বলি ওরে মুখপোড়া ছোঁড়া, দিনরাত কি তোদের খাই খাই ..... আর কত খাবি রে বজ্জাতের দল.... জন্মেই তো বাপকে খেলি, তারপর মা কে বলি, এখনও আশ মেটেনি .....!! আরও চাই ...? তার কথার তীক্ষ্ণতা মুহূর্তে যেন আমাকে দ্বিখণ্ডিত করে চিরে ফেলল, সহস্র রক্তের ঢেউ আছড়ে পড়ল আমার চেতনার কিনারে । এদিকে নিত্য অনশনের দিন যাপনে উদরের শ্রমিক তোলে স্লোগান - " অন্ন চাই.... খাদ্য চাই..."। আর স্থির হয়ে থাকতে পারলাম না !! তার কটাক্ষ উপেক্ষা করে বললাম - " কাকিমা গো তোমার পায়ে পড়ি, ঐ-ঐ - যে তোমাদের থালায় এঁটো ভাত গুলো পড়ে আছে দাওনা ... দাওনা গো .... দাওনা আমাকে, ভাই আর আমি কত্তো দিন একমুঠো ভাত খাইনি গো .... দাওনা ...." । প্রতিবেশীনি মেজাজ সপ্তমে চড়িয়ে বললেন - " হতচ্ছাড়া দুটো জ্বালিয়ে মারল দেখছি ... আয় আমার সাথে আয় পেট ভরে ভাত খাবি "....। ছলছল চোখ মুছতে মুছতে মুখে একটা নিরেট হাসি নিয়ে দৌড়ে গেলাম নীরা কাকিমার পিছন পিছন, কিন্তু চোখের সামনে যা দেখলাম তাতে বুক ফেটে গেল আমার ..... নীরা কাকিমা ঐ থালার সকল উচ্ছিষ্ট স্বাদরে নিবেদন করেছেন তার পষ্য সারমেয়টির জন্য, সে-ও পরম তৃপ্তির সাথে সেই খাদ্য গলার্ধকরণ করছে । চোখ ভিজে গেল আমার, আজ এইক্ষণে ভীষণ মনেপড়ছে একদম ছেলেবেলার কথা, মা কত আদর করে কোলে বসিয়ে গল্প বলে আমাদের দুই ভাইকে ভাত মেখে খাইয়ে দিতেন নিজে অভুক্ত থেকে ..... স্নেহের সুরে বলতেন - " খোকা দুষ্টুমি করিস না... খেয়ে নে সবকটা ভাত"....। কিন্তু তখন বুঝিনি এ ক্ষুধার জ্বালা কি ভীষণ ভয়ঙ্কর, আজ ধনীর ঘরে উচ্ছিষ্টেরও মূল্য অনেক.... তার জন্য দশ বৎসরের বালক না হয়ে যদি ধনীর ঘরে মূল্যে কেনা অ্যালসিসিয়ান হতাম তাহলে হয়ত ঐ উচ্ছিষ্টের যোগ্য হতে পারতাম ।

অপরাহ্ণ যেমন দিবসের সবটুকু আলো নিভিয়ে দিয়ে পৃথ্বীকে পর্যবসিত করে এক নিরেট আঁধারে, ক্রমে তা হয়ে ওঠে দুর্ভেদ্য ও নিবিড়, সে অন্তহীন বিদিশায় দিশা পাওয়া হয় মুশকিল .... এও যেন এক দুর্গম বিদিশা, একই বৃত্তে ঘুরি ফিরি বার বার । বাবা চলে যাওয়ার পর নীড়ভাঙা পাখির মতো ছটফট করেছে মা, যতই ছটফট করেছে ততই একটি একটি করে খসে পড়েছে তার জীর্ণ পালক ক্রমে লুপ্ত হয়েছে ওড়ার শক্তি । অতন্দ্র চোখে মিথ্যে দুরাশার স্বপ্ন গেঁথে ধীরে ধীরে মিশে গেছে চরম দীনতার অন্তহীন স্রোতে .... আর বারেকে ধিক্কার সহযোগে অভিযোগ করেছে ভাগ্য দেবতা কে, বলেছে -" এতো যদি দিলে তবে কেন কেড়ে নিলে, এ সবই কি ছিল তোমার ছল "...
"আজ থৈ থৈ ঘর সোনামুখ জুড়ে তবু বুকেতে বিঁধছে শেল,
কম্পিত শিখা নিভু নিভু প্রায় মনে বাজে শঙ্কিত উদ্বেল ।"
কিন্তু বিধাতা বড়োই নিষ্ঠুর নিভিয়ে দিলেন মায়ের জীবনদীপ .... একলা বাঁচি এই স্থবির অন্ধকারে !! নিরন্ন, বস্ত্রহীন, নিদ্রাহীন বারতি পাওয়া ভিক্ষাবিত্তি । কখনও কখনও কারও দয়া দাক্ষিণ্যে জুটত কয়েকটি ছেঁড়া ময়লা জামাকাপড়, চিরতরে হারালাম বাবা মা এর স্নেহাদৃত আশ্রয়.... অনাথ অভাগ্যদ্বয় দুই ভাই রয়ে গেলাম ধূলিধূসরিত পথে অবহেলিত নুড়ি পাথরের মতো । বুকে বয় বেদনার উচ্ছৃঙ্খল ঝর্ণা আর মনে অবিরত কটুক্তির বিষাক্ত দংশন, জীবন সংগ্রামের প্রথম অধ্যায় হলো উন্মোচন ।

তখন বেলা প্রায় সারে তিনটে অথবা চারটে হবে, স্কুল থেকে বাড়ি ফিরলাম । বাড়ি ফিরে দেখলাম মা আজ ভীষণ খুশি .... নিজের মনেই গুন গুন করছে মায়ের খুব প্রিয় সে'ই গানটি, " যখন প্রথম ধরেছে কলি আমার মল্লিকা বনে "। তখনই বুঝলাম আজ মায়ের মন খুব ভালো, মাকে কতকটা চমকে দিয়ে মায়ের গলাটা জড়িয়ে ধরে বললাম - " মা, কি হয়েছে গো .... আজ তুমি এতো খুশি" ...... মা তখন আমার গালে চুম্বন করে বললেন - " জানিস খোকা, একটু আগে তোর বাবা অফিস থেকে ফোন করেছিলেন, তোর বাবার আজ প্রমোশন হয়েছে" ... অতটুকু বয়েসে প্রমোশন কি সেটা বোঝার ক্ষমতা আমার ছিল না, আমার কৌতুক মা দূর করে দিলেন । কয়েকদিন পর আত্মীয় কুটুম্বের জোরাজুরিতে একটি মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করা হলো, অনেক আত্মীয় স্বজন ও বাবার অফিস স্টাফ সকলেই নিমন্ত্রিত । এদিকে তলে তলে তখনই রনসজ্জার প্রস্তুতি শুরু ..... পড়ছে দাবার চাল নৈঃশব্দ্যে, যেমন বেহুলার লোহার বাসর ঘরে ছিল ষড়যন্ত্রকারীর নিপুণ কর্মকুশলতা, এও যেন ঠিক তাই .... শুধু কালসর্প প্রতীক্ষীয়মান সুযোগের অপেক্ষায়, একদিন এক সুক্ষ ছিদ্রপথে প্রবেশ করে বিঁধিয়ে গেল মরন বিষ !! বাবা ছিলেন উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মচারী তাই তার কাঁধে গুরু দায়িত্ব ভার, এদিকে ওঁত পেতে বসে সেই কালসর্প সামান্য ত্রুটির অপেক্ষায় । কিন্তু বাবা ছিলেন নিজ কর্মে একনিষ্ঠ ব্রতী, তাই তার কাজে কোনও ভুল ত্রুট হলো না । তাই ইচ্ছে করেই বিছানো হলো ষড়যন্ত্রের জাল, যে জাল কেটে বেরিয়ে আসা বাবার পক্ষে ছিল দুঃসাধ্য । সেদিন সন্ধ্যার পর বাবার আসতে দেরি হচ্ছিল দেখে মা বার বার ফোন করছিলেন বাবার অফিসে, কিন্তু ফোন কেউ রিসিভ করেননি ..... তারপর বাবা নিজের মুখে মা কে ফোন করে যা জানালেন তা অবিশ্বাস্য এবং তা বাবা নিজেও জানতেন, তবুও বললেন - " সুচরিতা, শুনছো আজ সব শেষ গেল ...... আমার সততা আজ মিথ্যের পদানত, মিথ্যে দূর্নীতির দায়ে আমি অ্যারেস্টেড"...... মুহুর্তের মধ্যে সাজানো শহরে ধস্ নামলো, নিভে গেল বর্ণীল আলোর রোশনাই, ভেঙে গেল তাসের ঘর মূর্ছিত হলেন মা । পুলিশি হেফাজতে চলল বাবার ওপর অকথ্য অত্যাচার মানসিক ও শারীরিক, শুধুমাত্র উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে। তিল তিল করে বাবার জীর্ণ শরীর ভেঙে পড়তে লাগল অবশেষে মাস দেড় পরে মৃত্যু কড়া নারল জীবনের দ্বারে, চিরকলঙ্কের কালোয় আকাশ জুড়ে ঘনিয়ে এলো এক দুর্বার ঝঞ্ঝা....... ।

সকাল থেকে অক্লান্ত বৃষ্টি, মায়ের চোখেও অবাধ্য শ্রাবণ ... আমাদের দুই ভাইকে আঁকড়ে ধরে মায়ের সে বুকফাটা আর্তনাদ, আর তার মাঝে মাঝে বেনো হাওয়ার মতো ভেসে আসে নিদারুণ কটুক্তি । শ্মশানে তখন বাবার দাহকার্য সবে সবে সম্পন্ন হয়েছে আর তখনই এলেন পুলিশ আধিকারিক তন্ময় ভট্টাচার্য বাবার একটি চিঠি নিয়ে, নাঃ মা সে'ই মুহূর্তে সেই চিঠিটি পাঠ করেন নি, ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তন্ময়বাবুকেও..... কিন্তু যেদিন ঐ চিঠি সর্বসমক্ষে খোলা হলো জানা গেল আমার বাবা নির্দোষ, এবং কোটে তা প্রমানিত ও দোষীরাও সাজা প্রাপ্ত হয়েছে, কিন্তু তখন সবটুকুই নিমজ্জিত কালবেলার গহ্বরে ।

কেবল শূন্যতার মাঝে পথ হাতরাই, হোঁচট খেয়ে পড়ি বারবার তবু বুকে আশা নিয়ে ছুটে চলি অনন্ত শূন্য মাঝে ...... এই শূন্যের মাঝেই যে আছে সূচনার বীজ অপ্রকাশিত রূপে, সেদিন বুঝেছিলাম আমাদের অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে একদিন আত্মপ্রকাশ করবেই এই ছায়াময় অদৃষ্ট...... ঘুরবেই ভাগ্যের চাকা মুছিয়ে দিয়ে কলঙ্কের কালিমা, গুঁড়িয়ে দেবে অভুক্তের শিলমোহর, লুপ্ত হয়ে যাবে চিরতরে ভিক্ষাবিত্তির পথ । সময়ের দরবারে সেদিন ফিরবে শুধুই এক গৌরবান্বিত যুদ্ধ জয়ের কাহিনী, এক নিরপরাধ মানুষের উপর পাশবিক নির্যাতনের কাহিনী, এবং এক শেষ থেকে শুরুর গল্প, এক সাম্মানিক মসনদ ফিরে পাওয়ার কাহিনী ..... আজ ঘুরেছে ভাগ্যের চাকা, মস্তকের উষ্ণীষে সততার ও ধৈর্য্যের ঝলমলে কোহিনূর জ্যোতি ..... অতীত সে কালবেলা । তবুও সে ইতিহাস অবচেতনে শিরায় শিরায় অস্থি মজ্জায় নিভৃ--তে নির্জনে ফিসফিসিয়ে কথা বলে ওঠে ..... মধ্যরাতের ঘুম কেড়ে নিয়ে বলে ওঠে - "চিনতে পারছো" .......!!!!

- সমাপ্ত ।

#মৌসুমীচ্যাটার্জী #কালবেলা #জীবনকথা