...

5 views

প্রেম যখন সূর্যপূজা (পর্ব-৫)
আজ শুভমহালয়া। সূর্যোদয়ের সাথে দেবীপক্ষের সূচনা হয়ে গেছে।বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চন্ডিপাঠ ও মহালয়ার গানে প্রতিবছরের মতো মহালয়ার পুণ‍্য প্রভাতে জেগে উঠেছে বঙ্গভূমি।এখন সকাল প্রায় ১০টা।রেডিওতে আগমনী গানের পর রবিঠাকুরের গান শুরু হয়েছে।

"শরৎ, তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি।

ছড়িয়ে গেল ছাপিয়ে মোহন অঙ্গুলি॥

শরৎ, তোমার শিশির-ধোওয়া কুন্তলে

বনের-পথে-লুটিয়ে-পড়া অঞ্চলে

আজ প্রভাতের হৃদয় ওঠে চঞ্চলি॥

মানিক-গাঁথা ওই-যে তোমার কঙ্কণে

ঝিলিক লাগায় তোমার শ্যামল অঙ্গনে।

কুঞ্জছায়া গুঞ্জরণের সঙ্গীতে

ওড়না ওড়ায় একি নাচের ভঙ্গীতে,

শিউলিবনের বুক যে ওঠে আন্দোলি।।"


"শুভ মহালয়া।"
পূজা অনলাইন হতেই সূর্যের শুভেচ্ছা ম‍্যাসেজ।ঘন্টা দুয়েক আগে পূজাকে একটা অনলাইন শুভেচ্ছা কার্ডও পাঠিয়েছে সূর্য।কার্ডটা খুব সুন্দর।মা দূর্গার শ্রীমুখটি নীলদিগন্ত জূড়ে বিস্তৃত।নীচে নদীর ধারে কাশবনের শোভা।গ্রামের সবুজ মাঠের সীমান্ত থেকে নতুন রাঙা সূর্যোদয় হচ্ছে।রাঙা হয়ে উঠেছে আকাশ।আর তার সাথে রবিঠাকুরের সেই চেনা গানের দুটি পংক্তি লেখা:-"'শরৎ তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি।'শুভ মহালয়া।"

পূজা:"শুভ মহালয়া"।
সূর্য:"আজ সকালবেলা আমি জীবনে প্রথমবার টেলিভিশনে মহালয়ার অনুষ্ঠান দেখলাম।প্রতি বছর সপরিবারে তুমি এই অনুষ্ঠানটি দেখো তুমি গতকাল বলেছিলে।আজ খুব ভালো লাগল অনুষ্ঠানটা।তোমার কেমন লেগেছে?"
পূজা:"ভালো লেগেছে।"
সূর্য:"একটা সমস‍্যা হয়েছে।তোমাকে বলা প্রয়োজন।কিন্তু কিভাবে বলব বুঝতে পারছিনা।তুমি যদি রেগে যাও সেইটাই ভাবছি।"
পূজা:"একবার বলছ এমন একটা সমস‍্যা যেটা আমাকে বলা প্রয়োজন।মানে তোমার এই সমস‍্যাটার সাথে আমি কোথাও জড়িত।আবার সমস‍্যাটা জানলে বলছ যে রাগ হতে পারে আমার।ঠিক বুঝতে পারলাম না আমি,কি বলতে চাইছো?"
সূর্য:"বলছি আগে মন দিয়ে বন্ধু হিসেবে আরেক বন্ধুর সমস‍্যাটা শোনো।রাগ করবেনা কথা দাও।তাহলে সমস‍্যাটা বলা যাবে নিশ্চিন্ত হয়ে।"
পূজা:"মনে হচ্ছে খুব জটিল সমস‍্যা।বেশ রাগ করব না।এবার বল কি সমস্যা।"
সূর্য:"আমার মা আমার চাকরি পাওয়ার পর থেকেই আমার বিয়ের জন‍্য উঠে পড়ে লেগেছেন।প্রথমে মাকেই আমার জীবনসঙ্গী খোঁজার দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চেয়েছিলাম।মায়ের অনুরোধে তার পছন্দসই একটি মেয়েকে দেখতেও গিয়েছিলাম।ঠিক পাত্রী দেখার মতো করে নয়।মায়ের চেনাজানা একজনের মেয়ে।গাড়িতে দেখা।একদম পছন্দ হয়নি আমার।মায়ের পছন্দের সঙ্গে নিজের পছন্দের তুলনা করতে গিয়ে পরে ভেবে দেখলাম মায়ের পছন্দের মেয়ের মধ‍্যে আমার মনের মানুষের কোনো গুণ মিলছেই না।মা একটি গন্ডিবধ‍্য সংসার জীবনকেই সুখী জীবন বলে মনে করেন।প্রকৃত শান্তি বা সম্পর্কের গভীরতার প্রতি দৃষ্টিপাত করতে চাননা। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম নিজে একবার চেষ্টা করে দেখব নিজের জীবনের সেই বিশেষ মানুষটিকে খুঁজে পাই কিনা।মনের মিল নেই এরকম যাকে তাকে বিয়ে করে এই সম্পর্কের অপমান করতে চাইনা আমি।ভেবেছিলাম আমার ভাগ‍্যে থাকলে আর ঈশ্বর সহায় হলে ঠিক সময়ে নিশ্চিতরূপে খুঁজে পাব তাকে।সেদিন তুমি ঠিকই ধরেছিলে যে আমি সত‍্যিই কাউকে খুঁজে বেড়াচ্ছি।কিন্তু তুমি যখন বোঝালে সেদিন আমি বোঝার চেষ্টা করেছিলাম।তোমার জীবনদর্শন আমার চেয়ে অনেক বেশী গভীর।সত‍্যিই তো,যাকে আমি জীবনে চাইব তাকে সহজেই পেয়ে যাব এটা তো অতো সহজ নয়।আর তাছাড়া প্রকৃত প্রেম প্রকৃত বন্ধুত্ব ছাড়া সম্ভবও নয়।ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করা প্রয়োজন।
কয়েকদিন আগে মায়ের সাথে আমার বিয়ের প্রসঙ্গ নিয়ে একটু কথাকাটাকাটি হয়েছিল।গত কয়েকদিন মা আমার বিয়ে নিয়ে ভীষণ অধৈর্য্য হয়ে পড়েছেন।আমার আত্মীয় বন্ধু আমার ইচ্ছার ব‍্যপারে আর কিছু জানুক বা না জানুক সবাই জানে যে আমার ইচ্ছা আমার জীবনসঙ্গী ইংরেজী স্নাতক হলে ভালো হয়।
কোনো এক কথাপ্রসঙ্গে আমি তোমার-আমার বন্ধুত্বের কথা মাকে বলেছিলাম।
গতকাল সরোসিজবাবু তোমার জ‍্যেঠামশাই এইটা জানার পর মা মেসোমশাইকে আমাদের বিয়ের সম্বন্ধ তোমার জ‍্যেঠামশাইয়ের কাছে পাঠাতে চাইছেন।আমি মাকে আটকাবার জন‍্য বুঝিয়েছিলাম যে তুমি অন‍্যরকম মেয়ে।বন্ধুদের মধ‍্যে কারো সম্পর্কে এরকম কিছু জ্ঞানত ভাবতে চাও না।তাছাড়া এটাও বললাম তুমি তোমার পরিবারের বিশ্বাস ভাঙতে চাওনা।কিন্তু মা বুঝতে চাইছেন না।
এতে মা আমার মেজো মামার কথা টেনে আনলেন।আমার মেজো মামার একসময় একটি মেয়েকে ভালো লেগেছিল।কোনো কারণে তাদের সম্পর্কের শুভ পরিণতি হতে পারেনি।আমার মেজো মামা আর বিয়েই করেননি।মা আমার ক্ষেত্রেও সেরকম ভয় পাচ্ছেন।ঈশ্বরের ইচ্ছা কি আমরা তো জানিনা।তিনি তাঁর দিক থেকে তাই একবার চেষ্টা করে দেখতে চাইছেন।আমি বুঝতে পারছিনা আমার ঠিক কি করা উচিত।"

বর্ষাকালের মেঘে ঢাকা অস্পষ্ট সূর্য আজ শরৎকালে সুগভীর নীল আকাশে সুস্পষ্ট হয়ে দেখা দিয়েছে।
পূজা ম‍্যাসেজটা ধৈর্য্য ধরে মন দিয়ে পড়ল।একেবারেই অপ্রত্যাশিত সমস্যা।কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে কোনো প্রতিক্রিয়া করল না।শ্রাবণী পূর্ণিমার সকালে যে অচেনা সূর্য ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিল পূজাকে, তার প্রেম প্রস্তাবকে যত সহজে উপেক্ষা করে স্বভাবতই নির্লিপ্ত থাকতে পেরেছিল পূজা,আজ মহালয়ার সকালে সেই সূর্যের পক্ষ থেকে আসন্ন বিবাহ প্রস্তাবকে তত সহজে উপেক্ষা করা পূজার পক্ষে সম্ভব ছিলনা।অতীতে কখনও কোনো বন্ধুর মস্তিষ্কে বা মনে নিজের প্রতি এতটুকু দুর্বলতা দেখা দিলে যে সীমারেখা কখনও কাউকে পূজা পেরোতে দেয়নি,নিজের অজান্তেই সূর্যকে সেই সীমারেখা পেরিয়ে তার সাথে যোগাযোগ রাখার সুযোগ সে এতদিন দিয়েছে।আজ পূজার কাছে সূর্য শুধুমাত্র কোনো সোসাল সাইটের একজন অচেনা বন্ধু নয়,এখন সূর্য তার ভালো বন্ধু।চরম অবিশ্বাস কখন গভীর বিশ্বাসে পরিণত হয়েছে,পূজা ভেবে দেখেনি।তাছাড়া সূর্য পূজার নিজের জ‍্যেঠামশাইয়ের বন্ধুর নিকট আত্মীয়ও বটে।সূর্য-পূজার বিষয়টা এখন অভিভাবক মহলে বিবাহপ্রস্তাব প্রেরণ এবং সেই প্রস্তাব গ্রহণ কিংবা প্রত‍্যাখ‍্যানের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেবীপক্ষের সূচনার প্রাক্কালে এ কোন নতুন অধ‍্যায়ের সূচনা হল সূর্য-পূজার জীবনে?পরিস্থিতি অনুযায়ী সমস্যাটা পূজার কাছে সত‍্যিই জটিল।একটু ভেবে পূজা সূর্যের ম‍্যাসেজের উত্তর পাঠালো।
পূজা:-"কি করবে এখন আমাকে জিজ্ঞেস করে কি হবে?আমি কি মাকে আমাদের বন্ধুত্ব নিয়ে জানাতে বলেছিলাম।মাকে আটকাও সূর্য।সবার মন তো সমান হয়না,মানসিকতাও এক হয়না।জ‍্যেঠামশাইয়ের কাছে এই প্রস্তাব এলে তোমার-আমার বন্ধুত্ব নিয়ে অনেকেই অনেক কিছু অযথা মন্তব্য করতে পারে,যা আমি একদম মেনে নিতে পারবনা।আর তাছাড়া নেটে আমি আমার সব বন্ধুদের ব‍্যপারে যেমন বলি তোমার ব‍্যাপারেও মাকে অনেক আগেই বলেছিলাম।কিন্তু তাঁর মনে তো এই নিয়ে কোনো সন্দেহ জাগেনি।তুমি কিভাবে মাকে কি বলেছো তুমিই জানো।তুমি তাহলে কি পুরোপুরি বেরোতে পারনি আমার প্রতি সেদিনের সেই দূর্বলতা থেকে?আমি জানতাম।আমি মানি যে একজন ছেলে বা মেয়ে বন্ধুত্ব থেকে প্রেমপর্যায় একবার চলে গেলে,আবার নিখাদ বন্ধুত্বে ফিরে আসতে পারেনা।একটা দূর্বলতা কাজ করেই।সেইজন্যই আমি এই বিষয়টায় বরাবর সচেতন থেকে এসেছি আর ছিলামও।কিন্তু কি করে কেন যে তোমার ক্ষেত্রে পারলাম না জানি না।আজ ঘটনাচক্রে কোথাকার জল কোথায় গড়িয়ে গেল দেখো।এটুকু বলব মাকে আটকাতে হবেই তোমাকে যাতে মায়ের কথায় এই প্রস্তাব মোক্ষদাশঙ্কর জ‍্যেঠু জ‍্যেঠামশাইয়ের কাছে না রাখেন।"
সূর্য:"বিশ্বাস কর আমি তো সাধ‍্যমতো মাকে আটকাবার চেষ্টা করেছিলাম।কিন্তু তুমি বোঝানোর পর সত‍্যিই কোনো স্বার্থ বা উদ্দেশ্য ছাড়াই শুধুমাত্র প্রকৃত বন্ধুত্বের পথেই এগিয়েছিলাম।তবে আজ তোমার কাছে স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে একজন মানুষ হিসেবে,বন্ধু হিসেবে তোমার প্রতি ভালোলাগাটা আমি আটকাতে পারিনি।সেটা কি আটকানো যায়?না সম্ভব বল?
ঠিক আছে,আবার একবার চেষ্টা করে দেখব।কিন্তু এতে মায়ের কাছে আমি কত ছোট হব তুমি বুঝতে পারছোনা।তবু তুমি যখন বলছো,আমি নিশ্চয় আরেকবার চেষ্টা করব যাতে এই প্রস্তাবের বিষয়টা মেসোমশাইয়ের কাছে না যায়।রাত্রে জানাব এই সমস্যার কোনো সমাধান করতে পারলাম কিনা।"
পূজা:"এই প্রস্তাব এভাবে আসার থেকে যদি না আটকানো সম্ভব হয় তাহলে আমাদের যোগাযোগ এখানেই স্থগিত করে দিতে হবে সূর্য।তুমি আমার ভালো বন্ধু।এরকম একটা প্রস্তাব এভাবে আসা মানে অযথা বিভিন্ন জনের মনে বিভিন্ন রকম ধারণার সৃষ্টি হবে আমাদের বন্ধুত্বকে নিয়ে।ভেবে চিন্তে কথা না বললে এরকমই হয়।দেখো কি করতে পার।আমাকেও একটু ভাবার সময় দাও।ঠিক আছে।এখন উঠি।"
সূর্য:"bye."

অমাবস্যার রাতের ঘন কালো এই অন্ধকার কাটলে উষা পেরলেই আগামীকাল থেকে আদিশক্তি স্বরূপিণী দেবীদূর্গার নবরাত্রিক পূজা প্রারম্ভ হবে। কলকাতা শহর আর শহরতলি শারদীয়া দূর্গোৎসবে মেতে ওঠার জন‍্য পুরোপুরি প্রস্তুত।
আজ সকালে সূর্যের সঙ্গে কথা বলার পর থেকেই কোনো কাজেই ভালো করে পূজার মন বসছেনা।ব‍্যাপারটা খুব হালকাভাবে নেওয়ার নয়।মাকে এই সমস‍্যা নিয়ে এখনও কিছু বলেনি পূজা।নৈশভোজের পর পূজা নিজের ঘরে এসে কম্পিউটার খুলল।অনলাইন হল।দেখল সূর্য অনলাইন আছে।
আজ প্রথমবার পূজা প্রথমে ম‍্যাসেজ করল সূর্যকে।

পূজা:"সমস্যার সমাধান কিছু পাওয়া গেল?কথা হতে পেরেছে মায়ের সঙ্গে?"
সূর্য:"হ‍্যাঁ।হয়েছে।বোঝানোর চেষ্টা করেছি।তবে বুঝতে চাইছেন না।মা বলছেন বড়রা বড়দের মতো চেষ্টা করলে তোমার আপত্তি হবে কেন?যদি জ‍্যেঠামশাই প্রস্তাব নিয়ে ভাবনা চিন্তা করেন তখন তুমি তোমার মতামত জানিও।"
পূজা:"বিষয়টা যদি শুধুমাত্র বড়দের মধ‍্যেই সীমাবধ‍্য থাকে তাহলে আমার আপত্তি থাকলেও বিষয়টা অযথা জটিল হবে না বোধহয়।আর মা যেন আমাদের বন্ধুত্বের ভিত্তিতে এই প্রস্তাব না রাখেন।আমি জানি না এই প্রস্তাব জ‍্যেঠামশাইয়ের কাছে এলে সেটা হ‍্যাঁ হবে কিংবা না হবে, কিন্তু আমাদের বন্ধুত্বের দিকে কেউ আঙ্গুল তুললে আমি তোমার সাথে আর কোনোভাবেই যোগাযোগ রাখতে পারবনা।আমাকে একটা কথা দাও তুমি কোনোভাবেই এই প্রস্তাব গ্রহণ কিংবা প্রত‍্যাখ‍্যান নিয়ে আমাদের বন্ধুত্বে কোনো আঁচ আসতে দেবেনা।এই বিষয়ে যাই হোক সেটার প্রভাব আমাদের বন্ধুত্বকে স্পর্শ করবেনা।"
সূর্য:বেশ তাই হবে।কথা দিলাম।তবে তোমার একটা ছবি পেলে ভালো হত।"
পূজা:"কেন বলতো?"
সূর্য:"বোনের বাড়িতে দেখতে চাইতে পারে"।
পূজা:"সেটা বড়দের বিষয়।বড়দেরই ভাবতে দাও।ছবি লাগলে বড়রা চাইবেন।বুঝেছো।কথা দিয়েছো।অন‍্যথা হতে দিওনা।"
সূর্য:"নিশ্চিন্তে থাক।তোমায় দেওয়া কথার অন‍্যথা আমি করবনা।পূজার সময় কি এগরা আসছো এবছর?"
পূজা:"হ‍্যাঁ।দেশের বাড়িতে প্রতি বছর বড় করে কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা হয় আমাদের।তাই যেতেই হয়।মিশনে দূর্গাষ্টমী কাটিয়ে আগামী সপ্তাহেই যাব।"
সূর্য:"ঠিক আছে।এগরা থেকে ফিরে এলে কথা হবে।"
পূজা:"আরেকটা কথা।আমি না ফেরা অবধি অন্তত এই প্রস্তাব যেন জ‍্যেঠামশাই অবধি না আসে সেটা অবশ‍্যই চেষ্টা কর।জ‍্যেঠামশাই আমাকে খুব ভালোবাসেন।আমার বিয়ে নিয়ে বরাবরই তাঁর উদ‍্যোগই বেশী।আমি চাই আমাদের বন্ধুত্বের বিষয়ে আমার মুখ থেকেই প্রথমে আমার জ‍্যেঠামশাই সবটা সঠিকভাবে আগে শুনুন,জানুন এবং বুঝুন।তিনি কোনো কারণে আমাকে ভুল বুঝে কষ্ট পান এটা আমি চাইনা।তাই এটুকু দেখো।"
সূর্য:"আমি কখনও চাইবনা তোমার নীতিবিরুদ্ধ কিছু আমার জন‍্য তোমাকে বাধ‍্য হয়ে মানতে হোক।এই বিষয়ে আমাদের মধ‍্যে কোনো কথা আর তুলবনা এখন।বড়দের বিষয় বড়রা বুঝলেই হবে।তুমি যখন বলছো কোজাগরীর পূর্ণিমার মধ‍্যে এই প্রস্তাব যাতে না যায় তোমার জ‍্যেঠামশাইয়ের কাছে সে চেষ্টা তো আমি অবশ্যই করব।শুভ শারদীয়া।শুভরাত্রি।ভালো থেকো।"
পূজা:"শুভ শারদীয়া।শুভরাত্রি।"

পূজা অফলাইন হল।সূর্য কিন্তু অফলাইন হল না।পূজার সঙ্গে আজকের কথোপকথন আবার একবার পড়ার ইচ্ছে হল তার।পূজাকে যত জানছে,সূর্য ততই অবাক হচ্ছে।আর ততই কোনো এক অজানা অটুট মানসিক বাঁধনে জড়িয়ে পড়ছে দিনে দিনে।আজকালকার একজন যুবতীর এরকম নিজের কাছে সৎ থাকার তাগিদে নিজের মনকে ধরে রাখার ক্ষমতা সচরাচর ভাবাই যায়না।সত‍্যিই সৌভাগ্যবান হবে সেই পুরুষ যে পূজার মতো এত সৎ সুউন্নত মনের জীবনসঙ্গীকে নিজের জীবনে পাবে।কিন্তু পূজা যার জন‍্য সৎ থাকতে চাইছে তাকেও তো পূজার জন‍্য ততটাই সৎ থাকতে হবে।নাহলে কি মূল‍্য থাকবে পূজার এরকম একটা সদ্গুণের? আজকালকার দিনে টাকা পয়সা বৈভব সহজে দেওয়া যায়,কিন্তু পূজার এই সততার দাম তো সবাই দিতে পারবেনা।এইসব ভাবতে ভাবতেই কোথায় যেন অনেকটা আনন্দ আর একটু দুশ্চিন্তা নিয়ে সূর্যের চোখে ঘুম নেমে এল।শুধু রাতজাগা দুটি পাখী তারাদের সঙ্গে সঙ্গে কোথায় যেন নিভৃতে জেগে রইল।আর নিষ্পাপ দুটি মনের সুগভীর বন্ধুত্বের একমাত্র সাক্ষ্মী হয়ে জেগে রইলেন স্বয়ং অন্তরযামী।

© বুনানী