...

5 views

প্রেম যখন সূর্যপূজা (পর্ব-৮)
শারদীয়ার উন্মাদনা উত্তেজনা এখন ম্লান হয়ে গেছে।এবার এক পক্ষকাল পরেই কার্তিকী দীপান্বিতা অমানিশিথে আতসবাজি আর আলোর রোশনাইয়ের মাধ‍্যমে শ‍্যামা মাকে বরণ করার প্রতীক্ষা।

মনের প্রজাপতির পাখায় এখনও ভালোভাবে রঙ ধরেনি ঠিকই কিন্তু ইতিমধ্যে সুয়োপোকার গুটির মতো মনের কঠিন আস্তরণে হালকা একটা ফাটল দেখা দিয়েছে।
সেদিন রাতের আগে অনলাইন হতে পারলনা পূজা।ম‍্যাসেজ ইনবক্সে গতকাল সূর্যের পাঠানো একটা ম‍্যাসেজ পেল।
সূর্য:"আজ মনে হচ্ছে আমার সবটুকু যদি তোমাকে দিতে পারতাম তাহলে হয়তো আমার মূল‍্য অনুভব করা সম্ভব হত।মানে আমার কিডনি,হার্টের মতো মহা মূল‍্যবান অঙ্গগুলো তোমার যদি প্রয়োজন হত তবে সেগুলোকে দান করে দিয়ে এই জীবন থেকে মুক্তি পেতে পারলে ভালো হত।এগুলো ছাড়া এই জীবনে তোমাকে দেওয়ার মতো আর কিই বা আছে বল আমার?
ভালো বন্ধু যদি সত‍্যিই হয়ে থাকো ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা কর যেন আগামী জন্মে ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন‍্য জন্মাতে পারি।ভালো থেকো, সুখী হয়ো।"

ম‍্যাসেজটি পড়ে পূজা বেশ উপলব্ধি করতে পারল যে সূর্যের মনের চাপা একটা তীব্র কষ্ট ম‍্যাসেজটির ভাষাগুলোর মধ‍্যে সুস্পষ্ট।কিন্তু ঠিক কেন সূর্য এরকম ম‍্যাসেজ পাঠালো সেবিষয়ে পূজা নিশ্চিত হতে পারলনা।সূর্যের তরফ থেকে পূজার জ‍্যেঠামশাইকে সূর্য-পূজার বিয়ের প্রস্তাবটি পূজা না ফিরে আসা অবধি স্থগিত রাখার অনুরোধ করে গিয়েছিল পূজা।কিন্তু সূর্যের ম‍্যাসেজটি পড়ে পূজা বেশ আন্দাজ করতে পারল যে সূর্যের পক্ষে সেই অনুরোধ রাখা বোধহয় সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

গত একাদশীর দিন পূজা যখন এগরাতে,তখন কথা প্রসঙ্গে পূজা তার জ‍্যেঠামশাইকে সূর্যের সাথে তার পরিচিতির কথা জানিয়েছিল।সেই সময় সে জ‍্যেঠামশাইয়ের কাছে জানতে পেরেছিল যে বিজয়া দশমীর দিন মোক্ষদাশঙ্কর বাবুর দোকানে সূর্য বিজয়ার প্রণাম জানাতে এসেছিল।সেখানে জ‍্যেঠামশাইকেও বিজয়ার প্রণাম জানিয়ে সূর্য জ‍্যেঠামশাইয়ের কাছে প্রশ্ন করেছিল:"আপনি পূজার জ‍্যেঠামশাই হন?"প্রতু্্যত্তরে সরোসিজ বাবু ইতিবাচক উত্তরই দিয়েছিলেন।সূর্যকে এতদিন সরোসিজ বাবু ভালো ছেলে বলেই জানেন।সরোসিজ বাবু তাঁর আত্মীয়-বন্ধুমহলে সবাইকে পূজার জন‍্য ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার পাত্রের সন্ধান দেওয়ার কথাই জানিয়ে রেখেছিলেন।এমনকি অনেকদিন আগে একবার সূর্যের কাছেও জানতে চেয়েছিলেন সে ইঞ্জিনিয়ার কিনা।সরোসিজবাবুর বধ‍্যমূল ধারণা অনুযায়ী কোনো সৎ ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারই তার সুশিক্ষিতা পূজার জন‍্য সর্বাধিক উপযুক্ত সুপাত্র।কিন্তু সরোসিজবাবুর এই ধারণার সাথে প্রাধান্য ও গুরুত্বের বিচারে পূজার এই বিষয়ে ধারণার তফাৎ অনেকটাই।তাছাড়া পূজার মা-বাবাও এই বিষয়ে কিঞ্চিত অন‍্য অভিমত পোষণ করেন।

পূজা সূর্যের এই ভারাক্রান্ত লেখাটি পড়ে স্থির থাকতে পারলনা।সঙ্গে সঙ্গে ম‍্যাসেজ করল,
"কি হয়েছে তোমার?কেন এরকম একটা লেখা পাঠালে আমাকে?"

সূর্য অনলাইন ছিল না।পূজা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করল।কিন্তু সূর্য অনলাইন হল না।পূজা বিছানায় শুতে গেল।কিন্তু নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারলনা।সারারাত মনের মধ‍্যে উথালপাথাল হতে লাগল এই ভেবে যে সূর্য এরকম একটা ম‍্যাসেজ কেন করেছিল তাকে।যদি তাদের বিবাহপ্রস্তাব অভিভাবক মহলে উঠেও থাকে এবং সেটি কোনো কারণে প্রত‍্যাখিত হয়েও থাকে,সূর্যের তো এতটা ভেঙে পড়ার কথা ছিলনা।সূর্য মনে মনে কি তাহলে এই বিষয়টাকে নিয়ে অনেকটাই আশা করে ফেলেছিল?
মধ‍্যরাত্রে সূর্য অনলাইনে এল।পূজা অফলাইন।পূজার ম‍্যাসেজ দেখেও আজ আর কোনো উত্তর করলনা সূর্য।সূর্যের জীবনীশক্তি র তেজ যেন অনেকটাই ক্ষীণ হয়ে গেছে।বুক ফাটলেও কারো কাছে মুখ ফুটে সূর্য কিছুই বলতে পারছেনা।

পরেরদিন সকালে জ‍্যেঠামশাইয়ের ফোন।ল‍্যান্ড ফোনটা বাজতে পূজা ধরল ফোনটা।পূজার সঙ্গেই ফোনে কথা বলতে চাইছিলেন সরোসিজ বাবু।
পূজা:"হ‍্যালো।"
সরোসিজবাবু:"হ‍্যালো মামনি।কি করছিলে এখন?"
পূজা:"নোটস্ দেখছিলাম।"
সরোসিজ বাবু:"তোমার সঙ্গে কথা আছে।তুমি সূর্য ভূঞ‍্যা কে চেনো?"
পূজা:"হ‍্যাঁ।নেটে একজন বন্ধু।"
সরোসিজ বাবু:"গত দুদিন আগে মোক্ষদাশঙ্করের কাছে সূর্যের মা সূর্যের সঙ্গে তোমার জন‍্য বিয়ের প্রস্তাব রেখেছিলেন।মোক্ষদাশঙ্কর আমাকে এই বিষয়টি নিয়ে বলেছে।যতদূর চিনি সূর্য ছেলেটি ভালো।কিন্তু আমি এই প্রস্তাবে সম্মতি দিই নি।বিয়ের মধ‍্যে দুজনের সম্পর্কে র দিকটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই সামাজিক দিকটাও ভেবে দেখা প্রয়োজন।সূর্য সামান্য সরকারি কর্মচারী।তাছাড়া সূর্য যেখানে বড় হয়েছে সেখানে র পরিবেশ পরিস্থিতি সবটাই অনেকটা অন‍্যরকম।তুমি তোমার মাবাবার এবং আমাদের অত‍্যন্ত আদর যত্নে বড় হয়েছো।সবদিক ভেবে আমি মোক্ষদাশঙ্করকে জানিয়েছি যে এই প্রস্তাবে আমি রাজী নই।আমি তোমার জন‍্য ডাক্তার বা ইন্জিনিয়ার ভালো পাত্রের সন্ধানেই আছি।"
পূজা নিরুত্তর রইল।
সরোসিজ বাবু:"মামনি তোমার কি এই বিষয়ে কিছু বলার আছে?!"
পূজা:"না।এই বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।"
সরোসিজ বাবু:"ঠিক আছে।এখন রাখি তাহলে।বাবা অফিস থেকে ফিরলে পরে একবার সময় করে ফোন করতে বল।"
পূজা:"ঠিক আছে।বলে দেব।তাহলে রাখছি এখন।"

পূজার কাছে এইবার সবটুকু দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে গেল।যে ভয়টা সে পেয়েছিল সেটাই ঘটেছে।পূজা আগেই আন্দাজ করেছিল এরকম একটা কিছু ঘটতেই পারে।সূর্যের মনে এই প্রস্তাবটির প্রত‍্যাখ‍্যান গভীর দাগ কেটেছে।পূজা আগেই সূর্যকে সাবধান হয়ে তাদের বন্ধুত্বকে অভিভাবকদের সিদ্ধান্তের প্রভাব থেকে দূরে রাখতে বলেছিল।কিন্তু বলা যতটা সহজ প্রেমিক মনের পক্ষে এটি করা ততটা সহজ ব‍্যপার নয়।ভালো বন্ধু তারা।পূজার উচিত সূর্যকে এসব থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করা।
পূজা সূর্যের অফিস ফেরার আগে আবারও ম‍্যাসেজ করল,"কোনো উত্তর পাইনি আমার ম‍্যাসেজের।কি কারণে এরকম একটা ম‍্যাসেজ সেদিন পাঠিয়েছো প্লিজ্ বলো।"
মিনিট কুড়ি পর ম‍্যাসেজে সূর্যের উত্তর:
"আমাকে আর ওগুলোর বিষয় জিজ্ঞেস করনা‌।আমার মনের অবস্থা ভালো নয়।কাউকে কিছু বলতে না পেরে আমার প্রিয় বন্ধুকে সেদিন ম‍্যাসেজটা করেছিলাম।কিছু মনে করনা।"
পূজা:"প্রিয় বন্ধু যেটা জানতে চাইছে তার উত্তর সে এখনও সুস্পষ্টভাবে পায়নি।কেন তোমার মনের অবস্থা ভালো নেই?"
সূর্য:"শোনো তাহলে।বোনের শ্বশুরবাড়িতে কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা হয়।আমার না বলা সত্ত্বেও আমার মা মেসোমশাইয়ের কাছে সেদিনই মা আমাদের বিয়ের প্রস্তাব রাখেন।মেসোমশাই মাকে জানান যে তোমার জন‍্যে তাদের এক আত্মীয়ের ইঞ্জিনিয়ার পাত্রের প্রস্তাব তোমার জ‍্যেঠামশাইয়ের কাছে তারা পাঠিয়েছিলেন।এখনও তার উত্তর আসেনি।তিনি এও বলেন যে যতদূর তিনি জানেন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার ছাড়া তোমার জ‍্যেঠামশাই মেয়েকে দিতে চাইবেন না।এই কথা শুনে আমাদের বন্ধুত্ব এবং আমার পছন্দের কথাটা মেসোমশাইকে মা জানিয়েছিলেন।তাই মেসোমশাই মায়ের কথায় তোমার জ‍্যেঠামশাইয়ের কাছে আমাদের জন‍্য বিয়ের প্রস্তাবটি রেখেছিলেন।যথারীতি তোমার জ‍্যেঠামশাই বলেছেন তিনি এই প্রস্তাবে রাজী নন কারণ ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার ছাড়া তিনি তাদের মেয়েকে পাত্রস্থ করতে চাননা।"
পূজা:"প্রস্তাব গ্রহণ বা প্রত‍্যাখ‍্যান কোনোটাই হতে পারে এতো তুমি জানতেই সূর্য।তাহলে এরকম ভেঙে পড়ার মানে কি?"
সূর্য:"সেটা জানতাম।কিন্তু আমি ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার নই বলে আমার কোনো মূল‍্য নেই এটা জানতাম না। ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার ছাড়া তোমার জ‍্যেঠামশাই পাত্রস্থ করতে চাননা এটা তুমি কি আগে জানতে না?তোমার জন‍্য মেসোমশাইরা একজন ইঞ্জিনিয়ার পাত্রের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন এটা জানতে?কেন জানিনা আমি তোমাকে আমার নিজের থেকেও বেশী বিশ্বাস করি।মন তো বলছে তুমি যদি জানতে আমাকে নিশ্চিত জানাতে।"
পূজা:"সেই ইঞ্জিনিয়ার পাত্রের প্রস্তাব আজ দুমাস আগেই আমার দিক থেকে না বলে দিয়েছি মাবাবাকে।আর আমি যতদূর জানি বাবা না বলে দিয়েছিলেন।জ‍্যেঠামশাই কেন সেটা মোক্ষদাশঙ্কর জ‍্যেঠুকে জানাননি আমি জানিনা। আমার বিয়ের পাত্রের ক্ষেত্রে জ‍্যেঠামশাইয়ের expectation ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতেই পারে।কিন্তু এটা ছাড়া তিনি আমাকে পাত্রস্থ করতে চাননা,এটা আমার সত‍্যিই জানা ছিলনা।তাছাড়া মা বাবার ক্ষেত্রেও আমি জানি ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার পাত্রই তাদের জামাইয়ের একমাত্র যোগ্যতা, এরকম একেবারেই নয়। আমার ইচ্ছা বা অনিচ্ছার মূল‍্য আছে আমার পরিবারের সবার কাছে এটাই এতদিন জানতাম।"
সূর্য:"দেখো পূজা আমি সরোসিজবাবুকে মেসোমশাইয়ের বন্ধু বলে জানতাম।তুমি এত বড়লোক বাড়ির মেয়ে বলে জানতাম না।তোমার জ‍্যেঠামশাইকে দেখেও খুব সাদামাটা ভদ্রলোক বলেই মনে হয়।তিনিও আমাকে ভালো ছেলে বলেই জানেন।প্রত‍্যাখ‍্যানের কারণ যদি ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার না হয়ে অন‍্য কোনো যোগ‍্যতার প্রশ্ন হতো আমি নিশ্চিত চেষ্টা করতাম সেই যোগ‍্যতা অর্জন করার জন‍্য।কিন্তু এজন্মে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়া আর সম্ভব নয়।তাই খুব কষ্ট হয়েছিল একথা তোমার কাছে স্বীকার করতে আজ আর দ্বিধা নেই।জানো তো কয়েকজন কন‍্যাদায়গ্রস্থ পিতার তরফ থেকে আমার জন‍্য বিয়ের সম্বন্ধ এসেছিল।আমার ইচ্ছা ছিল আমার স্ত্রী ইংরেজীতে স্নাতক হলে ভালো হয়।কিন্তু মনে মনে এই সুপ্ত ইচ্ছা সবসময় ছিল যে আমার ভাগ্যে যে আছে সে আমাকে ভালোবেসে আমার জীবনে আসুক।মনে মনে ঈশ্বরের কাছে এই প্রার্থনাই করেছি সবসময়।আর যতদূর তোমাকে জেনেছি তুমিও ভালোবাসা ও বিশ্বাসকেই জীবনে প্রাধান্য দাও।তোমার জন‍্য যোগ‍্য হওয়ার সুযোগ পেলে নিশ্চয় চেষ্টা করতাম।যাই হোক এসব কথা বলে আর লাভ নেই।আজ ভীষণ ক্লান্ত লাগছে নিজেকে।পরে কথা হবে।আগমীকাল একটা দরকারে কলকাতা যাব।রাতে হয়তো অনলাইন হতে পারি।তুমি ভালো থেকো।bye।"
পূজা:"bye".

সেদিন প্রায় বিনিদ্র রাত যাপন করে সূর্য পরদিন ভোরে কলকাতা রওনা হল।সূর্যের বাবা গত হওয়ার পর সূর্যের চাকরি না ব‍্যবসা কোন বিষয়ে এগোনো উচিত হবে এই বিষয়ে জানার জন‍্য মোক্ষদাশঙ্করবাবুর স্ত্রী বিপুলাদেবীর সাহচর্যে মোক্ষদাশঙ্করবাবুর পরিচিত এক অত‍্যন্ত গুণী ও পারদর্শী হস্তরেখাবিদ জ‍্যোতিষীর কাছে গিয়েছিল।অভ‍্যর্থ গগণা তাঁর।মোক্ষদাশঙ্করবাবুর ব‍্যবসা,তার ছেলের ব‍্যবসা,ছেলের বিয়ে সবকিছুই এই জ‍্যোতিষবিদের পরামর্শে করেছেন। সূর্যের ক্ষেত্রেও তার চাকরি পাওয়ার সময় তিনি নির্ভূলভাবে বলে দিয়েছিলেন কতদিনের মধ‍্যে কিরকম চাকরি হবে। বেনারসে এক বিখ্যাত গুরুর দীক্ষিত এই হস্তরেখাবিদ জ‍্যেতিষী শ্রীযুক্ত শুধাংশু বসুকে তাই সূর্য খুব বিশ্বাস ও ভরসা করে।শুধাংশুবাবুর প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে নিখুঁত গগণা সূর্যকে অতীতে অনেকটাই মনের জোর দিয়েছিল জীবনে সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়ার জন‍্য।সূর্যর M.B.A নিয়ে উচ্চশিক্ষা করার একটা ইচ্ছা ছিল।আরও কিছু প্রশ্ন তার মনের মধ‍্যে ঘুরছিল।তাই দুদিন আগেই সে স্থির করেছিল যে সে শুধাংশুবাবুর কাছে একবার যাবে।বেলা প্রায় ১২টা।ফোনে appointment করা ছিল।সূর্য শুধাংশুবাবুর কাছে উপস্থিত হল।শুধাংশুবাবুর সাথে প্রায় এক ঘন্টার ভাগ‍্য গগণা ও সাক্ষাতের পর সূর্যের ভাঙা মনে আবার এক নতুন প্রাণশক্তির সঞ্চার হল।তার মনের ভারী ভাবটা এখন অনেকটা কম।মনে অনেকটা বল পেল।সূর্যের মন এখন স্বাভাবিক জীবনে ফেরার জন‍্য প্রস্তুত এক নতুন উদ‍্যোগে।
রাতে ফিরে সূর্য নৈশভোজের পর কম্পিউটার খুলে বসল।পূজার ম‍্যাসেজ পেল।
"যে আমার মন ও আত্মাকে পবিত্র প্রেমে বেঁধে রাখতে পারবে সেই ঈশ্বরপ্রদত্ত জন্ম-জন্মান্তরের চিরসঙ্গীর সাথেই প্রেমপূর্ণ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ রাখার জন‍্য সবসময় মনে মনে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে এসেছি।নতুবা সন্ন‍্যাসধর্ম গ্রহণ করে আত্মিক পবিত্রতা রক্ষা করা আমার কাছে অনেক শ্রেয়।একথা আমার মাবাবা জানেন।আমি বরাবর খুব ঈশ্বরবিশ্বাসী।তাই নিশ্চিন্তে এই বিষয়টা যথাসময় বিচার করার সুযোগ পাব এটা আমার বিশ্বাস আছে।গতকাল অবধি এটাই ভাবতাম যে অভিভাবকদের গন্ডি আগে পেরিয়ে আসার পর যদি করোর প্রতি আমার মনে দৈবক্রমে সুগভীর বিশ্বাসের সঞ্চার হয়,তাহলেই আমার পক্ষে কোনো পুরুষকে স্বামী হিসেবে জীবনে মেনে নেওয়া সম্ভব হবে। গতকাল জ‍্যেঠামশাইয়ের কাছে এসব শোনার পর জ‍্যেঠামশাইয়ের ওপর পুরোপুরি ভরসা রাখা উচিত হবেনা বলেই মনে হচ্ছে কারণ আমার কাঙ্ক্ষিত পুরুষ ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারই হবে তার তো কোনো মানে নেই। ভালো বন্ধু হিসেবে নিরপেক্ষভাবে বলতে পার পূজার এখন ঠিক কোন পথে যাওয়া উচিত?"

সূর্য স্তম্ভিত হল।এই কি সেই পূজা যে এই কদিন আগেও এই বিষয়ে তার সাথে একটি কথাও বলতে চাইছিল না।
পূজার ম‍্যাসেজটায় সূর্যর প্রতি পূজার সরল বিশ্বাসের ছাপ দেখা যাচ্ছে।নিরপেক্ষভাবেই প্রকৃত বন্ধুত্বকে সম্মান করে সূর্য লিখতে শুরু করল:
"তুমি যখন আমার কাছে ভালোবন্ধু হিসেবে নিরপেক্ষভাবে জানতে চেয়েছো অবশ‍্যই উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।
পূজার বাহ‍্যিক রূপ,গুণ ও বংশ দেখে হয়তো তথাকথিত অনেক সুপাত্রই আসতে পারে।সেক্ষেত্রে পূজার সচেতন হওয়া উচিত।পূজার মন যদি কেউ বুঝতে পারে জানতে পারে তাহলে খুবই ভালোবাসবে পূজাকে।কিন্তু কোনো পাত্রের জীবনে পূজার ভূমিকা শুধুমাত্র স্ত্রীর ভূমিকা হবে কিনা যাচাই করা উচিত।আর এমন পাত্রও আছে যার জীবনে চলার পথে প্রকৃত জীবনসঙ্গীনী হয়ে তার সফলতার অনুপ্রেরণা হলে তাকে মাথার মণি করে রাখে।
যেখানে পূজা নিজের অস্তিত্বকে সারাজীবন বাঁচিয়ে রেখে ভালোবাসা ও বিশ্বাস নিয়ে চলতে পারবে পূজার সেই পথেই যাওয়া উচিত।"

রাতে পূজা ম‍্যাসেজটা মনোযোগ সহকারে পড়ল।সূর্য তো একেবারে পূজার মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত ইচ্ছাটাকেই নিজের ভাষায় তুলে ধরেছে।পূজা আজ আর কোনো উত্তর দিলনা।কিন্তু মনের কঠিন আস্তরণের ফাটলটা এবার বেশ বড় আকার ধারণ করল।এর মানে মনের প্রজাপতির পাখায় রঙ ধরেছে কিন্তু সেই রঙীন পাখায় ভর করে কঠিন আস্তরণ থেকে বেরিয়ে আসার সময় হয়নি।
অন্তরযামী বিধাতাপুরুষ দুটি প্রেমপূর্ণ আত্মার পরীক্ষা অহরহ আরও কিছুকাল নিয়ে চললেন।সময়ের নদী সূর্য-পূজার মিলন সাগরের উদ্দেশ্যে প্রবাহিত হতে থাকল।






© বুনানী