...

2 views

দূর্বল

গত আধাঘন্টা যাবৎ এখানে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে রাকীম। একটা গলির অন্ধকারাচ্ছন্ন প্রান্তে। সাধারণত মজনু এত দেরি করে না৷ তবে আজকে প্রচুর লেট হচ্ছে। কে জানে রাস্তায় পুলিশের হাতে ধরা পড়লো কিনা! তাই বেশ চিন্তিত রাকীম।

তবে গলির ওই মাথা থেকে ভাঙাচোরা নীল ফিনিক্স সাইকেলের খটরমটর শব্দ শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো সে৷ মজনুর সাইকেল ওটা কোনো সন্দেহ'ই নেই। সাইকেল থেকে নেমেই রাকীমের উদ্দেশ্যে ময়লা দাঁতগুলো বের করে চওড়া হাসি দিয়ে নিজের প্রফুল্লতার জানান দিলো সে। রাকীম হাসির প্রতুত্তর না দিয়ে বললো
-“কিরে! এত দেরি করলি কেনো? ”

মজনু মাথা চুলকে বললো
“আরে রাকিম্বাই! গলা খুশখুশ করতে আছিলো। হের লাইগা নাইমা একটু চা খাইলাম। ”

-“মাল আনছোস নাকি তাও না? ”

-“হে হে! কী যে কন রাকীম্বাই। আপনে ডাকপেন আর মাল আনমু না হেইডা হয় নাকি। এই লন…” বলে চাদরের ফাঁক দিয়ে চিকন হাত দিয়ে একটা পলিথিন ভর্তি গাঁজা রাকীমের হাতে ধরিয়ে দিলো। রাকীম পলিথিন দেখক যারাপরনাই খুশি হয়ে নিয়ে নিলো।

“আবার ড্যাম পড়ছে নাকি। স্যাতস্যাতে হইলে খামু ক্যামনে? ” জিজ্ঞেস করলো রাকীম।

“না ভাই! এক্কেরে কড়কড়া শুকনা। কাইটা কুইটা আনছি আপনের লাইগা। আপনে খালি ডইলা স্টিকে ভরবেন আর খালি পিনিক। ” উত্তর দিলো মজনু।

“আচ্ছা আচ্ছা এই নে পাঁচশো রাখ তোর। এখন আমি আসি। ভার্সিটির ক্লাস শেষ মেবি। রিয়ার সাথে দেখা করা লাগবে৷ ” বলে তাড়াহুড়ো করে চলে যাওয়া ধরলো রাকীম৷

“খাড়ান ভাই… হুনেন। ” ডাকলো মজনু।

“কী? জলদি বল.. সময় নাই৷ ” কন্ঠে তাড়াহুড়োর ভাব অতি স্পষ্ট।

-“একটা খাঁটি মাল আছে। এক্কেরে কড়া… এই লন। পিনিক না হইলে কসম আপনের! মাটি খাইতাম৷ ” হাসতে হাসতে পকেট থেকে একটা কৌটা বের করলো। দেখতে সাধারণ জর্দার কৌটার মতো। ঢাকনা খুলে ফেললো মজনু। ভেতরে জেলির মতো স্বচ্ছ কিছু একটা৷

“কী এইটা? আর আমার কাছে টাকা নাই। এখন নিতে পারবো না৷ ” বললো রাকীম৷

“এইডার নাম ওয়ান ইকুয়াল সিক্স। বিদেশী মাল। পেস্টের মতো আঙ্গুলে নিয়া দাঁতে ডলবেন। আলাদা ফিলিংস.. আর আপনের লাইগা ট্রায়াল। এহন টাকা নিমু না৷ ভাল্লাগলে পরে আবার নিবেন.. তহন নাইলে দাম দিয়েন। ” একটানা বলে গেলো মজনু।

ওয়ান ইকুয়াল সিক্স! অদ্ভুত নাম। নামটা অদ্ভুত হলেও মনে ধরলো রাকীমের। তাই মজনুর হাত থেকে কৌটা নিয়ে হনহন করে হেঁটে চলে গেলো রাকীম। মজনু তখনো মুখের চওড়া হাসিটা বিদ্যমান। ছোট বেলায় মজনু ডাব কেটে খাওয়ার সময় হাতের উপর কোপ পড়েছিলো। তখন থেকেই ডান হাতের একটা আঙ্গুল কম। এত কথার মাঝে রাকীম একবারও খেয়াল করলো না যে মজনুর ডানহাতের আঙ্গুল পাচঁটার বদলে চারটা।

Survival of the fittest.

রাত ২টা…

একটা সময় ছিলো যখন রাত ২টা বলতে মাথায় আসতো শুধু নিকষ আঁধার আর সুনশান নিরবতা। এখন রাত দু'টো বললে মাথায় আসে বার্সা- পিএসজি ফুটবল ম্যাচ তো কারো কাছে ফেসবুকিং এর আদর্শ সময়। আর রাকীমের কাছে রাত দু'টো মানে গাঁজার স্টিক ধরানোর টাইম। রাত দু'টোর সময়ে রাকীমের পঞ্চাশোর্ধ বাবা-মা দুজনেই থাকে গভীর ঘুমে। বাসায় আর কেউ নেই। এসময় খোলা বারান্দায় বসে মনের সুখে গাঁজা টানা যায়। অন্য দিন হলে এতক্ষণে রাকীমের স্টিকে দু তিনটে সুখটান দিয়ে কয়েকবার মহাকাশ ভ্রমণ সম্পূর্ণ হয়ে যেতো। তবে আজকের দিনটা কিছুটা ভিন্ন। কারণ রাকীমের কাছে আজকে নতুন জাতের মাল আছে। ওয়ান ইকুয়াল সিক্স… জর্দার কৌটা'টা হাতে রাকীমের। ঢাকনা...