...

16 views

রেনেসাঁর খোঁজে (পর্ব ০২)
#পর্ব ০১ -এর পর…

…চুল দিয়ে তখনও জল টপাচ্ছে। আমায় দেখে গায়ের গামছাটা আরও শক্ত করে জড়িয়ে মৃদু কন্ঠেই আমার প্রয়োজন জানতে চাইলো। আমি চায়ের ফরমায়েশ দিয়ে বেরিয়ে যাবো - হঠাৎ একটা বেমানান জিনিস আমার চোখ টানলো। কয়লার ঝুড়ির পাশে রাখা সরকারি স্কুলের মাধ্যমিকের অঙ্ক বই। প্রথমে আমল দিই নি, হয়ত বইয়ের পাতা ছিঁড়ে উনুন ধরায়। রাতে মাথায় আসে, পানুর দোকানে বিস্কুট পানু খবরের কাগজে দেয়। পুরনো লোহা লক্করের দোকান থেকে ও একবার একটা বই পেয়েছিল। বইটা ছিল সহজপাঠ, পানু তুলে রেখে দিয়েছিল। বলেছিল, সে বই পড়তে পারেনি তবে বইয়ের কদর সে জানে। তবে কি...

আগামী কয়েকদিন আমার আচরণ যেমন ছিল, তা দেখলে অতি মূর্খ ও আমার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন করত। মানুষটা আমি যাযাবর। কলকাতার বাড়িটা অর্থহীন বললেই চলে। গত কয়েকটা যুগ সারা ভারতে চরকি ঘোরা ঘুরে গত তিনমাস ধরে ভিটের টানে বা তার প্রতি সম্মান দেখাতে আমি শহরে। সেদিন থেকেই আমার নজর ওই মেয়েটির দিক থেকে সরে না। এমনকি জানলা দিয়ে উঁকি দিয়ে ওর ঘর থেকে ওকে দেখার চেষ্টা ও আমি বাদ রাখিনি। এক অদ্ভুত রহস্যময়ী ‌ যেন আমায় গ্রাস করেছে। আর সেই মোহে আমি তাকে খুঁজে চলেছি। মনের মধ্যে একটাই নাম - দেওলা; একটাই ছবি - দেওলার; একটাই চিন্তা - দেওলার।

এমন ভাবেই কাটলো আগামী দিন কয়েক। রহস্য আমায় চোরাবালির মতো গিলছে। এমন সময় একদিন, কয়েকটা ডেঁপো ছেলের মেয়েদের প্রতি পণ্য বিক্রেতা রূপী বক্তব্যের প্রতিবাদে হাসি মাখা উত্তর আর দেবেন্দ্রনাথ বাবুর সাথে ঈশ্বরের বাস্তবতা নিয়ে কয়েকটা কথা - আমায় বুঝিয়ে দিলো ওর গভীরতা।

মনটা আনচান করতে শুরু করেছে আমার। মেয়েটার সান্নিধ্য চাই। নানা ভাবে পানুকে টপকে ওর সাথে কথা বলার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর বাধ্য হয়ে পানুকেই একদিন বৃহস্পতি বার সকালে বললাম, " বিকেলে দোকান বন্ধ তো? দেওলাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিস তো। ঘরগুলোয় ধুলো ভরেছে।"

দেওলা সন্ধেবেলা এলো। বিকেলে আসেনি কেনো সুধোতে সে বললো, কয়লা ভাঙতে দেরী হয়ে গেছে। খানিক সময় পার হতে বুঝলাম দেওলা পালাতে চাইছে। স্বাভাবিক; হাতে হুইস্কির গ্লাস, আমি পাঁচ পেগ ডাউন। আমি জানি আমার চোখ অল্পেই লাল হয়ে যায়। আমার পড়ার ঘরে ওকে ডেকে আনলাম। ঘরে ঢুকছে না দেখে অভয় দিলাম, তবে দেবী ঘরে পদার্পণ করলেন!


#পরবর্তী অংশ আগামী পর্বে…

© জিপ্`সি
১১ই নভেম্বর, ২০১৭