কন্যাসন্তান
কন্যাসন্তান
ধূম জ্বরে আপনমনে বিড়বিড় করে চলেছেন পরিমলবাবু।
---তোমার কষ্ট হচ্ছে বাবা?
পরিমলবাবুর মাথাটা নিজের কোলে তুলে নিল চিন্তিত মেয়েটি।মাথায় জলপট্টি আস্তে আস্তে চেপে চেপে দিতে থাকল।
---মা রে...একটু জল দিবি?
---হ্যাঁ বাবা,দিচ্ছি।
জগ থেকে কাঁচের গ্লাসে জল ঢেলে নিয়ে বাবার ঠোঁটের কাছে পরম যত্নে ধরল সে।
কয়েক মণ বোঝা সমান ভারে ক্লিষ্ট মাথাটা অতি কষ্টে একটু একটু করে উচু করে গোগ্রাসে জলটা ঢকঢক করে খেয়ে নিলেন পরিমলবাবু ছোট শিশুর মতো।বিপত্নীক পরিমলবাবু এই এতবড় তিনতলা বাড়িটিতে একাই থাকেন ছেলে তার স্ত্রী পুত্র নিয়ে আমেরিকাকে কর্পোরেট জগতে গুছিয়ে বসেছে।বৃদ্ধ বাবার খবর নেবার সময় এখন তার কোথায়!
পুত্রসন্তান হলেই যে পিতার শক্তি হয়ে দাঁড়াবে আর মেয়ে সন্তান মানেই সে ঘাড় থেকে নামানোর বস্তু ভিন্ন আর কিছুই নয়-এইসব বাঁধাগতের থিওরি যে সবসময় খাটে না আজ তা নিজের জীবন দিয়ে উপলব্ধি করছেন তিনি।মনঃকষ্টে মূহ্যমান মানুষটা শরীরের কষ্টে এতটাই কাহিল হয়ে পড়েছেন যে ভোরের আলো ফোটার উপক্রম হতেই ক্রাচহীন প্রতিবন্ধীর ন্যায়ে কাতর কন্ঠে মেয়ের হাতটা ধরে অস্ফুটে বলে উঠলেন..."আর কিছুক্ষণ থেকে যা না মা...তুই চলে গেলে তো আবার আমি একা হয়ে যাব।"
---আলো ফোটার আগেই আমাকে যেতে হবে বাবা।নিয়মের বিরুদ্ধে আমি যেতে পারব না যে...
---ছাই নিয়ম।বাপের কাছে মেয়ে থাকবে,অত নিয়ম মেনে কি হবে?
---"মেয়ে সন্তান বাবার বোঝা"-এই বস্তাপচা নিয়মের বাইরে তো বিশ বছর আগে তুমিও বেরোতে পারোনি বাবা...যদি পারতে,আমি মায়ের পেটে থাকতে আমায় নষ্ট করে দিতে না।আর আমিও ঠিকভাবে তোমার সেবাযত্ন করতে পারতাম। এখন আর আপশোস করে কি লাভ!
অভিমান ভরা কন্ঠে মেয়ে বলে উঠল।
অনুশোচনায় পূর্ণ ছলোছলো চোখ নিয়ে মেয়ের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকলেন পরিমলবাবু।দেখতে থাকলেন, ভোরের আলো ফুটে ওঠার সাথে সাথে মেয়ের অবয়ব বাতাসের সাথে মিলিয়ে যাওয়ার অশ্রুসিক্ত দৃশ্য।
রশ্মিতা দাস
ধূম জ্বরে আপনমনে বিড়বিড় করে চলেছেন পরিমলবাবু।
---তোমার কষ্ট হচ্ছে বাবা?
পরিমলবাবুর মাথাটা নিজের কোলে তুলে নিল চিন্তিত মেয়েটি।মাথায় জলপট্টি আস্তে আস্তে চেপে চেপে দিতে থাকল।
---মা রে...একটু জল দিবি?
---হ্যাঁ বাবা,দিচ্ছি।
জগ থেকে কাঁচের গ্লাসে জল ঢেলে নিয়ে বাবার ঠোঁটের কাছে পরম যত্নে ধরল সে।
কয়েক মণ বোঝা সমান ভারে ক্লিষ্ট মাথাটা অতি কষ্টে একটু একটু করে উচু করে গোগ্রাসে জলটা ঢকঢক করে খেয়ে নিলেন পরিমলবাবু ছোট শিশুর মতো।বিপত্নীক পরিমলবাবু এই এতবড় তিনতলা বাড়িটিতে একাই থাকেন ছেলে তার স্ত্রী পুত্র নিয়ে আমেরিকাকে কর্পোরেট জগতে গুছিয়ে বসেছে।বৃদ্ধ বাবার খবর নেবার সময় এখন তার কোথায়!
পুত্রসন্তান হলেই যে পিতার শক্তি হয়ে দাঁড়াবে আর মেয়ে সন্তান মানেই সে ঘাড় থেকে নামানোর বস্তু ভিন্ন আর কিছুই নয়-এইসব বাঁধাগতের থিওরি যে সবসময় খাটে না আজ তা নিজের জীবন দিয়ে উপলব্ধি করছেন তিনি।মনঃকষ্টে মূহ্যমান মানুষটা শরীরের কষ্টে এতটাই কাহিল হয়ে পড়েছেন যে ভোরের আলো ফোটার উপক্রম হতেই ক্রাচহীন প্রতিবন্ধীর ন্যায়ে কাতর কন্ঠে মেয়ের হাতটা ধরে অস্ফুটে বলে উঠলেন..."আর কিছুক্ষণ থেকে যা না মা...তুই চলে গেলে তো আবার আমি একা হয়ে যাব।"
---আলো ফোটার আগেই আমাকে যেতে হবে বাবা।নিয়মের বিরুদ্ধে আমি যেতে পারব না যে...
---ছাই নিয়ম।বাপের কাছে মেয়ে থাকবে,অত নিয়ম মেনে কি হবে?
---"মেয়ে সন্তান বাবার বোঝা"-এই বস্তাপচা নিয়মের বাইরে তো বিশ বছর আগে তুমিও বেরোতে পারোনি বাবা...যদি পারতে,আমি মায়ের পেটে থাকতে আমায় নষ্ট করে দিতে না।আর আমিও ঠিকভাবে তোমার সেবাযত্ন করতে পারতাম। এখন আর আপশোস করে কি লাভ!
অভিমান ভরা কন্ঠে মেয়ে বলে উঠল।
অনুশোচনায় পূর্ণ ছলোছলো চোখ নিয়ে মেয়ের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকলেন পরিমলবাবু।দেখতে থাকলেন, ভোরের আলো ফুটে ওঠার সাথে সাথে মেয়ের অবয়ব বাতাসের সাথে মিলিয়ে যাওয়ার অশ্রুসিক্ত দৃশ্য।
রশ্মিতা দাস