সহোদরা
সহোদরা
দিনের আলো ফুটল।প্রাসাদতুল্য বাংলোবাড়ির অন্দরমহলের প্রতিটি কামরা বহুমূল্য আসবাব প্রাতঃকিরণের উষ্ণ আদর গায়ে মাখতে শুরু করল।ক্রমে অ্যাড্রিয়ান শোবার ঘরের গালিচাকে
রাঙিয়ে,দুধসাদা মখমলে পরদার গায়ে মাখামাখি করে একটি নতুন দিনের উষ্ণ আমন্ত্রণে আধোঘুমে নিমজ্জিত অ্যাড্রিয়ানকে যেন হাতছানি দিয়ে বলতে থাকল...জাগো...
হঠাৎ তার ঘরের অ্যালার্ম ঘড়িটি সশব্দে ঢং ঢং করে তাকে জানান দিল,ভোর ছটা বেজে গেছে। এরপর আর বিছানা আঁকড়ে আহ্লাদী শিশুর মতো গড়াগড়ি খাওয়া চলে না...
অগত্যা...আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে পড়ল সে।হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল।মেরী এসে চা আর ব্রেকফাস্ট দিয়ে গেল।সে তাড়াহুড়ো করে সেটা শেষ করে স্নান সেরে নিল।তারপর ধীর পায়ে এসে দাঁড়াল সর্বজন নন্দিত তৈলচিত্রটির সামনে।রংতুলির অপূর্ব ভাস্কর্যের লাবণ্য মেখে যে আবক্ষ নারীমূর্তিটি সহাস্যে রাজ করছে ক্যানভাস জুড়ে তার সামনাসামনি একবার দাঁড়াল অ্যাড্রিয়ান।বিশ্ববন্দিত চিত্রশিল্পী অ্যাড্রিয়ানের আজ বিশেষ দিন।দীর্ঘদিন পর আজ সে নিজের দেশের কোনো মানুষের সামনাসামনি হতে যাচ্ছে এই ভাবনাটাই তাকে বিহ্বলিত করে তুলল।ক্যানভাস বন্দিনীর কাছে এই খুশির বহিঃপ্রকাশ করার সময় আলগোছে কিঞ্চিৎ জল ভিজিয়ে দিল অ্যাড্রিয়ানের চোখের কোল।মনে ভেসে উঠতে লাগল সূদুরে ফেলে আসা স্মৃতি...কথা...
হঠাৎ মোহভঙ্গ হল।মেরী এসে জানাল,অতিথি চলে এসেছে।তাকে বৈঠকখানায় বসানো হয়েছে। শুনে অ্যাড্রিয়ান মেরীকে অতিথির জন্য চা জলখাবার আনার নির্দেশ দিয়ে শশব্যস্ত হয়ে নীচে নেমে এল।আগত অতিথির সাথে করমর্দন ও সৌজন্য বিনিময় করে তাকে আসন গ্রহণ করতে বলল অ্যাড্রিয়ান।
---বাড়ি চিনে নিতে অসুবিধা হয়নি তো?
---না না কোনো অসুবিধা হয়নি।আপনার মতো খ্যাতনামা মানুষের বাড়ি চিনে আসা টা এমন কিছু শক্ত ব্যাপার নয়।
---এতদিন বাদে নিজের দেশের কোনো একজন মানুষকে সামনে থেকে দেখার আনন্দটাই আলাদা।বাই দ্য ওয়ে...আপনি বাঙালি তাই তো?
---হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন।আমি কলকাতার ছেলে। চাকুরীসূত্রে আমেরিকায় প্রবাসী।
---একজন প্রবাসী যখন আরেকজন প্রবাসীর সাথে বিদেশবিঁভুইতে একসাথে হয়,তখন আর আলাদা কোনো ইন্টারভিউএর দরকার হয় না।ভিতরের কথা আপনা থেকেই বেরিয়ে আসে।
---একদম খাঁটি কথা বলেছেন।আপনার মতো শিল্পী মানুষের সামনে দেখা পাওয়াটাই আসলে সৌভাগ্যের ব্যাপার।ইন্টারভিউটা তাহলে শুরু করা যাক...কি বলেন?
---হ্যাঁ একদম।ইন্টারভিউ শুরু করুন।
সাংবাদিক ছেলেটি ব্যাগ থেকে একটা রেকর্ডার বার করে সেটা অন করল।তারপর জিজ্ঞাসা করল,
---ছবি আঁকার প্রতি আপনার আগ্রহটা ছেলেবেলা থেকেই ছিল?
---একদমই না।বরং উল্টোটাই।ছেলেবেলায় আমি আঁকাটাকা একেবারেই পছন্দ করতাম না।গ্রামের ছেলেদের সাথে ডাংগুলি খেলা,মাছ ধরা এইসব নিয়ে থাকতাম।
---তাহলে আঁকার প্রতি আগ্রহ এল কিভাবে?
---ছবি আঁকার প্রতি আমার সেদিন কেন,আজও কোনো আগ্রহ নেই।
---পৃথিবীর সনামধন্য চিত্রশিল্পীর মুখে এমন কৌতুকের অর্থ জানতে পারি কি?
---কৌতুক নয়।এটাই বাস্তব।ছবি আঁকার প্রতি আমার যে কোনো কোনোরকম আগ্রহ নেই তাই শুধু নয়,আমি ছবি আঁকতে পারি না।
একটা অদ্ভুত...
দিনের আলো ফুটল।প্রাসাদতুল্য বাংলোবাড়ির অন্দরমহলের প্রতিটি কামরা বহুমূল্য আসবাব প্রাতঃকিরণের উষ্ণ আদর গায়ে মাখতে শুরু করল।ক্রমে অ্যাড্রিয়ান শোবার ঘরের গালিচাকে
রাঙিয়ে,দুধসাদা মখমলে পরদার গায়ে মাখামাখি করে একটি নতুন দিনের উষ্ণ আমন্ত্রণে আধোঘুমে নিমজ্জিত অ্যাড্রিয়ানকে যেন হাতছানি দিয়ে বলতে থাকল...জাগো...
হঠাৎ তার ঘরের অ্যালার্ম ঘড়িটি সশব্দে ঢং ঢং করে তাকে জানান দিল,ভোর ছটা বেজে গেছে। এরপর আর বিছানা আঁকড়ে আহ্লাদী শিশুর মতো গড়াগড়ি খাওয়া চলে না...
অগত্যা...আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে পড়ল সে।হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল।মেরী এসে চা আর ব্রেকফাস্ট দিয়ে গেল।সে তাড়াহুড়ো করে সেটা শেষ করে স্নান সেরে নিল।তারপর ধীর পায়ে এসে দাঁড়াল সর্বজন নন্দিত তৈলচিত্রটির সামনে।রংতুলির অপূর্ব ভাস্কর্যের লাবণ্য মেখে যে আবক্ষ নারীমূর্তিটি সহাস্যে রাজ করছে ক্যানভাস জুড়ে তার সামনাসামনি একবার দাঁড়াল অ্যাড্রিয়ান।বিশ্ববন্দিত চিত্রশিল্পী অ্যাড্রিয়ানের আজ বিশেষ দিন।দীর্ঘদিন পর আজ সে নিজের দেশের কোনো মানুষের সামনাসামনি হতে যাচ্ছে এই ভাবনাটাই তাকে বিহ্বলিত করে তুলল।ক্যানভাস বন্দিনীর কাছে এই খুশির বহিঃপ্রকাশ করার সময় আলগোছে কিঞ্চিৎ জল ভিজিয়ে দিল অ্যাড্রিয়ানের চোখের কোল।মনে ভেসে উঠতে লাগল সূদুরে ফেলে আসা স্মৃতি...কথা...
হঠাৎ মোহভঙ্গ হল।মেরী এসে জানাল,অতিথি চলে এসেছে।তাকে বৈঠকখানায় বসানো হয়েছে। শুনে অ্যাড্রিয়ান মেরীকে অতিথির জন্য চা জলখাবার আনার নির্দেশ দিয়ে শশব্যস্ত হয়ে নীচে নেমে এল।আগত অতিথির সাথে করমর্দন ও সৌজন্য বিনিময় করে তাকে আসন গ্রহণ করতে বলল অ্যাড্রিয়ান।
---বাড়ি চিনে নিতে অসুবিধা হয়নি তো?
---না না কোনো অসুবিধা হয়নি।আপনার মতো খ্যাতনামা মানুষের বাড়ি চিনে আসা টা এমন কিছু শক্ত ব্যাপার নয়।
---এতদিন বাদে নিজের দেশের কোনো একজন মানুষকে সামনে থেকে দেখার আনন্দটাই আলাদা।বাই দ্য ওয়ে...আপনি বাঙালি তাই তো?
---হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন।আমি কলকাতার ছেলে। চাকুরীসূত্রে আমেরিকায় প্রবাসী।
---একজন প্রবাসী যখন আরেকজন প্রবাসীর সাথে বিদেশবিঁভুইতে একসাথে হয়,তখন আর আলাদা কোনো ইন্টারভিউএর দরকার হয় না।ভিতরের কথা আপনা থেকেই বেরিয়ে আসে।
---একদম খাঁটি কথা বলেছেন।আপনার মতো শিল্পী মানুষের সামনে দেখা পাওয়াটাই আসলে সৌভাগ্যের ব্যাপার।ইন্টারভিউটা তাহলে শুরু করা যাক...কি বলেন?
---হ্যাঁ একদম।ইন্টারভিউ শুরু করুন।
সাংবাদিক ছেলেটি ব্যাগ থেকে একটা রেকর্ডার বার করে সেটা অন করল।তারপর জিজ্ঞাসা করল,
---ছবি আঁকার প্রতি আপনার আগ্রহটা ছেলেবেলা থেকেই ছিল?
---একদমই না।বরং উল্টোটাই।ছেলেবেলায় আমি আঁকাটাকা একেবারেই পছন্দ করতাম না।গ্রামের ছেলেদের সাথে ডাংগুলি খেলা,মাছ ধরা এইসব নিয়ে থাকতাম।
---তাহলে আঁকার প্রতি আগ্রহ এল কিভাবে?
---ছবি আঁকার প্রতি আমার সেদিন কেন,আজও কোনো আগ্রহ নেই।
---পৃথিবীর সনামধন্য চিত্রশিল্পীর মুখে এমন কৌতুকের অর্থ জানতে পারি কি?
---কৌতুক নয়।এটাই বাস্তব।ছবি আঁকার প্রতি আমার যে কোনো কোনোরকম আগ্রহ নেই তাই শুধু নয়,আমি ছবি আঁকতে পারি না।
একটা অদ্ভুত...