...

5 views

কিছু প্রশ্ন
আচ্ছা ধরুন, কেউ যদি আপনাকে প্রশ্ন করে, সারাবছর মুখোশ পরে থাকা লোকগুলো কেন মাস্ক পরে,যেমন আপনি উত্তর দিতে পারবেন না, তেমনই রাজনীতিতে কে মন্ত্রী কে ব্যবসায়ী- তাও আপনি ধরতে পারবেন না । ভারতবর্ষে আক্রান্ত সংখ্যা 1 মিলিয়ন পার হয়ে গেছে । এখনও যদি আপনারা মাস্ক আর মাদুলির মধ্যে তফাত না বোঝেন, তাহলে করার কিছু নেই ।
যাই হোক এবার কাজের কথায় আসা যাক ।এমনিতেই আজ আমার মন ভারাক্রান্ত ।লেখা লেখির খুব একটা ইচ্ছে ও ছিল না, কিন্তু এগুলো না বললেই নয় । আপনাদের কয়েকটি প্রশ্ন করছি, উত্তর পেলে কৃতজ্ঞ থাকব ।

প্রশ্ন 1: সম্প্রতি চন্দননগরের ডেপুটি কালেক্টর মাননীয়া দেবদত্তা রায় মহাশয়া করোনা যুদ্ধে পরাজিত হয়েছে ,মধ্যপ্রদেশে দলিত- দম্পতির ওপর পুলিশের নৃশংস অত্যাচার ও দম্পতির আত্মহননের চেষ্টা সারা গা শিউরে দেওয়ার মতো ।না, খবরগুলো দেশের ফ্রন্ট লাইন মিডিয়ায় ভাইরাল হয় না,কারণ তাদের মধ্যে একজন সরকারের চাকর এবং আর একজন মেথর। কী হবে ভাইরাল করে?TRP বাড়বে? ব্যাপারটা অনেকটা mutual funds এর SIP (systematic investment plan) এর মতো হয়ে গেল না! যেমন ধরুন বচ্চন পরিবারের সবাই আক্রান্ত হলে ও জয়া বচ্চন বাদ গেল কেন,তিনি আগে থেকেই গো-মূত্র পান করছিলেন কি না!(বচ্চন স্যারের পরিবারের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল) ,তৈমুর অনেকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় আসছে না,শরীর টরীর ভালো আছে তো? - আমাদের মিডিয়া এইসব নিয়েই ব্যস্ত ।সীমান্তে শান্তি পূর্ণ অবস্থা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিলেও এরা যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে ছাড়ে।দু-চারজন বিশেষজ্ঞ নিয়ে বসে গুরুগম্ভীর আলোচনা--- দৈনিক সংক্রমণে ভারতের ফের রেকর্ড, মৃত্যুর নিরিখে দেশের 2nd বয় দিল্লি বা করোনা আক্রান্ত ফেব্রুয়ারির মধ্যে দিন প্রতি 3 লক্ষ করে হয়ে যাবে------ আলোচনাগুলো কি যথেষ্ট উদ্বেগের নয়? আপনাদের দায়িত্ব মানুষদের আরো বেশি সচেতন করা,ভয় দেখানো নয়--- তাদের দুশ্চিন্তা, ডিপ্রেশনে ঠেলে দেওয়ার মানে কী!পারলে তাদের মাঝে মাঝে একটু অন্যরকম খবর দিয়ে মনোরঞ্জনের চেষ্টা করুন, আর পারলে আপনারাও বোকা বাক্সে অন্যকিছু দেখতে পারেন,যা আপনাকে প্রশান্তি দেবে ।আর হ্যাঁ, পারলে সরকারি কর্মচারীদের (সবাই নন) অল্প সম্মান দিন,তারাও দেশসেবায় border force বা doctor দের থেকে নিজেদের কম কিছু ভাবেন না ।যদিও আপনারা বলতে পারেন, ঘরে বসে বলাটা অনেক সহজ ।কিন্তু কী করব বলুন, বর্তমানে যা পরিস্থিতি কলম ছাড়া সামনে আর কোনো হাতিয়ার পেলাম না। প্রশ্নটা কি খুবই অপ্রাসঙ্গিক ছিল?

প্রশ্ন 2: আমাদের দেশের জননেতারা রং বদলানোতে গিরগিটিকে ও হার মানায় ।যেমন, 130কোটির সামনে একদম জনদরদী নেতা, কিন্তু South Block এ গেলেই একদম পাক্কা ব্যবসায়ী ।কখন রেল,কখন M.L.A কাকে কেনাবেচা শুরু করবে---আপনি ধরতে পারবেন না ।জীব --নির্জীব কাউকেই ছাড়েন না! একটা কথা বলুন, যেখানে নিজের হাতে গোনা কয়েকজন সাংসদের ঘরে ফেরার জন্য সময় দিলেন 3 দিন, সেখানে কোটি কোটি পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য মাত্র 4 ঘন্টা!! এখনও যদি এটা কে democracy, federalism ভাবেন, তাহলে সারাজীবনের জন্য চোখটা বুজে থাকুন, নাহলে আরও অনেক কিছু দেখতে হবে ।ইতিমধ্যে EIA (Environmental impact assessment) ড্রাফটের মধ্যে সরকার প্রদত্ত এমন কিছু প্রস্তাবনা রয়েছে, যাতে করে, Vizag এর মতো গ্যাস লিক্ বা আসামের তৈলখনির বিস্ফোরণের মতো দুর্ঘটনা গুলো আরো বেশি ত্বরান্বিত হয় ।এবারেও নীরব দর্শকের ভূমিকায় আমাদের "গদি মিডিয়া "।এখনও কি সময় আসেনি যুবসমাজের সরকারের ভুলগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার? নাকি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বললেই আমরা রাষ্টদ্রোহী হয়ে যাব! সত্যি বলছি, আমরা এক নতুন ভারত দেখতে চাই, যেখানে না থাকবে ঘুষ,না থাকবে অচ্ছুত না থাকবে হিংসা-দলাদলি-গোলাগুলি ।

প্রশ্ন 3: চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা নিয়ে কেন্দ্র থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর যেভাবে বোঝা চাপানো হচ্ছে, তা এককথায় নজিরবিহীন ।একটা উত্তর দিন,যেখানে নেতা-মন্ত্রীদের জন্য এতদিন পার্লামেন্ট বন্ধ থাকতে পারে, সেখানে ছাত্র ছাত্রীদের গলা ধাক্কা দিয়ে কলেজে নিয়ে যাওয়ার মানে কী! মনে রাখবেন, কলেজ পড়ুয়ারা অধিকাংশই কিন্তু ভোটাধিকারে স্বাবলম্বী ।বাকিটা আর নাই বা বললাম । এই নিয়েও কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত সপ্তমে।ব্যাপারটা অনেকটা, রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলুখাগড়ার প্রাণ যায় গোছের।আমাদের কথা না হয় নাই ভাবলেন কিন্তু বাড়ির বয়স্ক বাবা মার কথা অল্প ভাবুন, যারা আমাদের জন্যই পথচেয়ে বসে থাকেন ।আর যদি আপনারা ভেবে থাকেন, কলেজ - বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার নামে অক্টোবরে বিহারের বিধানসভা ভোটটা সেরে নেবেন, তাহলে আপনারা মূর্খের রাজ্যে বাস করছেন ।

থাক অনেক ভারী ভারী কথা বলে ফেললাম ।বর্তমান যুবসমাজের নেটদুনিয়ায় আচ্ছন্ন থাকার সুযোগে পুঁজিবাদী শক্তিগুলো আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে ,তা বলাই বাহুল্য ।কিন্তু সময় এসেছে প্রতিবাদ করার,পরিবর্তনের ।আমাদের এদিকে যেভাবে করোনা ছড়াচ্ছে, সেজন্য জীবনানন্দ দাশের শঙ্খচিল কবিতার একটি লাইন খুব মনে পড়ছে--"দেখা হবে আমাদের মহামারী শেষে ।"

সুস্থ থাকবেন ।ভালো থাকবেন ।
ধন্যবাদ ।
© Biswajit