...

2 views

একমাত্র তুই।।3।।
দীপ্তি--তনি, দেখ... একি! এর মধ্যে তুই শুয়েও পরলি? এতক্ষণ তো আমার কোনো কথা শুনছিলি না! অমু দেখ এতক্ষণ কিন্তু কোনো কথায় শুনছিল না। খাবার ও খায়নি, ওষুধ অনিয়ে রেখেছি ডক্টর কে বলে কিন্তু খালি পেটে কি করে...
তনি--না মানে তুমি এমনি চিন্তা করছো সেরকম কিছুই হয়নি। আর ওষুধ খেয়ে নিচ্ছি এক্ষুনি।
অমু--খালি পেটে...
তনি--না খেয়েছি তো...
দীপ্তি--নারে, মিথ্যে বলছে সকাল থেকে কিছু খায়নি। নেহাতই রবি বার নাহলে কলেজ ও চলে যেতো।
তনি--না না
অমু--তুই চুপ করবি তোকে আমি খুব ভালো করে চিনি, জ্বর এলে তোর পড়ার প্রতি প্রেম জাগে।
দীপ্তি--আমার অফিসের কিছু কাজ আছে, আমি পাশের ঘরেই আছি তুই বোস ওর কাছে... আমি একটু পরে আসছি... আর ওকে খাইয়ে দিস প্লিজ... আমার কথা তো শুনবে না... তোর কথা যদি শোনে।
--আচ্ছা তুমি যাও আমি দেখছি।
তনি--দীপ্তি দি শোনো না... দিদি...দি..
তত ক্ষণে দীপ্তি ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে, তনির আওয়াজ কানে পৌঁছলেও আমল দেয়নি। জানে তার খেয়াল রাখার মানুষ চলে এসেছে এখন তার ছুটি। তাই মনে মনে হেসে চলে গেলো সেখান থেকে।
পায়ে পায়ে এগিয়ে এলো অমু তনির বেডের দিকে। সেই রাগ তার চোখে, যে রাগী চোখ গুলোর দিকে তাকাতে আজও ভয় করে তনির।

অমু--ডেকে লাভ নেই, তোর দি তোকে আমার কাছে  রেখে চলে গেছে। এবার যে কিছু করার নেই...
--মানে?
উত্তর না দিয়েই গায়ে জ্বর দেখবে বলে হাত বাড়ায় অমু। তনি ছিটকে সরে যায়।
--কি হল?
--দেখো আমার কিছু হয়নি। দীপ্তি দি এমনি চিন্তা করছে।
--ঠিক আছে এদিকে আয়।
--সত্যি। আমার গায়ে জ্বর নেই।
--জ্বর নেই তো সরে সরে যাচ্ছিস কেনো? দেখতে দিচ্ছিস না কেনো?
মুখ নামিয়ে জড়ো সরো হয়ে এক কোনায় বসে রইলো তনি । অমু বেডের ধারে দাঁড়িয়ে ছিল এবার বিছানায় উঠে বসলো।
অমু--আচ্ছা বকব না এদিকে সরে আয়।
তনি একই ভাবে বসে আছে।
অমু নিজে সরে এলো, কাছে এসে কপালে হাত রাখল
হাত রাখতেই চিৎকার করে উঠল অমু...
--তনি...দীপ্তি দি মিথ্যে বলছে না। জ্বর নেই তাই না... গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে, আর ম্যাডামের পাকামির শেষ নেই।
--তুমি যে বললে বোক...
--চুপ। একদম চুপ,মারব না তো বলিনি।এত জ্বর বাঁধিয়ে বসে আছেন,আর ওনাকে কিছু বলা চলবে না।সরে আয় এদিকে। এক্ষুনি চল নিয়ে যাব ডক্টরের কাছে। না না ডক্টরকে ফোন করে আসতে বলি। thermometer টা...
-- তুমি অকারণ ব্যাস্ত হচ্ছ, আমি...
--চুপ করবি তুই...
--দীপ্তি দি ডক্টরের সাথে consult করে ওষুধ আনিয়ে নিয়েছে।
--ও হ্যাঁ। ওষুধ গুলো কই।আপাততঃ খেয়েনে। না কমলে তখন নিয়ে যাব। একবার কথা বলে নেবো ডক্টরের সাথে। আগে thermometer দে তো?
--থাক না অমু দা।
পাশের টুল থেকে অমু নিজেই thermometer তুলে নিলো। তনির দিকে নিয়ে যেতেই আটকে ফেললো তনি...
জানে কোনো কাজে আসবে না তাও বললো একশ এক জ্বর ছিল।
কোনো কথা না শুনে মুখের মধ্যে thermometer পুড়ে wrist watch এর দিকে চেয়ে বসে থাকল অমু।

তত ক্ষণ এক মুহূর্তের জন্যও চোখ সরেনি তনির অমুর ওপর থেকে। এটুক তেই কত চিন্তা করছে ও।এক মিনিট হতেই তনির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল তনি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চোখ পড়তেই চোখ নামিয়ে নিলো তনি।
--জ্বর নেই বেশি, মাত্র একশ চার। তোর কি মনে হয় তুই না বললে আমি কিছু জানতে পারব না। আমি খুব ভালো করে জানি কাল পরশু নিশ্চয় বৃষ্টিতে ভিজে ছিলি। তাই না...
--না না
--একদম চুপ। আমি খাবার গরম করে নিয়ে আসছি। তত ক্ষণ চুপচাপ শুয়ে থাক।বলে ওকে শুইয়ে চাদর ঢাকা দিয়ে বেরিয়ে গেল
খানিকখন পর খাবার প্লেট নিয়ে ঢুকল অমু।
তনি-- অমু দা একদম ইচ্ছে করছে না। ওষুধ গুলো নাহয়.....
অমু--আবার কথা বলছিস। চুপ করতে বলেছি তো। তোর কি মনে হয় আমি তোর কথা শুনব? মুখ খোল।
--...
--হা করবি ( ধমকের সুরে)
ছোট্ট করে হা করলো তনি। খাবার খাইয়ে দিতে শুরু করলো অমু ওকে।
--ব্যাস আর না ...
--উমম মুখ খোল।
-- আর পারব না খেতে।please আর জোর করো না।
--আচ্ছা ঠিক আছে দুধ টা খেয়ে নে আর কিছু বলবো না।
--এই সময় দুধ কে খায়....
--যারা এরম জ্বর বাঁধিয়ে বসে থাকে তারা।খাবার ও খেলি না ঠিক মত সো এটা খেতেই হবে।
--না আমার ইচ্ছে করছে না।আর তুমি তো জানো দুধ আমার একদম ভাল লাগে না।
-- জানি তো ,তাই জন্যই তো জানি দীপ্তিদির কাছে খাবি না তাই...
-- আচ্ছা তুমি রেখে দাও আমি পরে খেয়ে নেব।
--অমু কাছে এসে জাপটে ধরে দুধের গ্লাস ঠোঁটের সামনে ধরে।এরকম আচরণে চমকে ওঠে তনি।ওর মাথাটা অমুর বুকের সাথে লেগে আছে। অমুর নিঃশাস টা ওর মুখে পরছে।এত কাছে ও কখনো থাকেনি ওরা।এক অদ্ভুত অনুভূতি।অমু ঝাকিয়ে বললো কি হল খা।ওর কথায় বাস্তবে ফিরে এল তনি।কিছু করার নেই ওর,দুধের গ্লাসে ঠোঁট ঠেকলো।
অনেক টা খাওয়ার পর একটু খানি গড়িয়ে পড়ল।
অমু --আস্তে...
তনি--আস্তে কি করে খাবো?জোর করে খাওয়াচ্ছ যে।
ওই করুণ মুখটা দেখে হেসে ফেলল অমু। তাও বলল আচ্ছা আচ্ছা finish কর।
বাধ্য মেয়ের মতো কথা শুনতে হল তনিকে।
অমু--good girl. এবার আর একটু good girl হয়ে ওষুধ গুলো খেয়েনে।
না বলে কোনো লাভ নেই জেনেও একবার চেষ্টা করল কারণ কখনো কখনো অমুর বকুনি খেতেও খুব ভাল লাগে ওর।
--আবার, ওষুধ নিয়েও... এক্ষুনি তো বললি ওষুধ এমনিই খেয়ে নেব।এখন আবার বাহানা।চল মুখ খোল।
ওষুধ খাইয়ে ওকে শুইয়ে দিল অমু।
--নে এবার চোখ বন্ধ কর।আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
-- থাক লাগবে না।
--কথা বলতে বারণ করেছি কিন্তু...আর শোন কাল কলেজ যাওয়ার দরকার নেই।এই অসুস্থ শরীরে ক্লাস করতে হবে না।
--কিন্তু...
--কোনো কিন্তু না।না মানে না।কাল যেন না দেখি ঘরের বাইরে গেছিস নাহলে খুব খারাপ হবে । নোট পরে collect করে নিস।কেমন?আমার এক friend এর বোন পড়ে ওর কাছে নাহয়...
--না না আমি mannage করে নেব।
-- আচ্ছা বেশ। এখন একটু ঘুমো।এবার চোখ বন্ধ কর।

মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল অমু।আবেশে চোখ জড়িয়ে আসছে তনির। আস্তে আস্তে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।কখন ঘুমিয়ে পরেছে জানে না।ঘুমের মধ্যে নিজের অজান্তেই অমুর হাতটা ধরে ফেলেছে। অমু এক দৃষ্টিতে ঘুমন্ত মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে।খুব ইচ্ছে করছে জড়িয়ে ধরতে, একটু আদর করতে কিন্তু এখনো যে সময় আসেনি।
একটু  পরেই দীপ্তি আসে ঘরে।
দীপ্তির পায়ের আওয়াজে ঘুরে তাকায় অমু।
-- যাক তাহলে পারলি ওকে ঘুম পরাতে।
--হুম
ধীরে ধীরে তনির হাতের মুঠো থেকে নিজের হাত বার করে দীপ্তির সাথে বাইরে এলো।
অমু--রাত হচ্ছে।এবার আমি যায়।তুমি please একটু খেয়াল রেখ।রাতে জ্বর বাড়লে ওষুধ টা...আর আমাকে...
--আরে ব্যাস ব্যাস। তোর কি মনে হয় আমি ওর খেয়াল রাখব না।আমার তো বোন হয় নাকি।
--না না তা নয়।আসলে ওই ওষুধ টোসুদ নিয়ে ওর যত বাহানা তাই।
--চিন্তা করিস না আমি আছি তো।
-- আমি আসি তাহলে।
--dinner টা করে যা না।
--না গো। আজ না। অন্যদিন আসব তখন নাহয় dinner করবো।তুমি খেয়ে নিও।
--আচ্ছা বেশ।
অমু চলে যাচ্ছিল।দীপ্তি পেছন থেকে আবার ডাকল...
অমু...
--হুম কিছু বলবে?
কাছে এসে দীপ্তি বললো আমার বোনটাকে এভাবেই আগলে রাখিস।মেয়েটা বড্ড অবুঝ খুব অভিমানী কিন্তু বড্ড ভালো।
অমু বোঝে এই শব্দগুলোর মানে, হেসে ঘাড় নাড়ল।আজ আসি।
--হুম আয়।

পরের দিন...
অমু--হ্যাঁ দিপ্তি দি বল।
--হাই তুই একবার তনির কলেজ যেতে পারবি?
--এখন। হ্যাঁ কিন্তু কেন?
--দেখনা এই অসুস্থ শরীরে কলেজ চলে গেছে।
--কি?আমি যে কাল বারণ করলাম।সকালেও ফোন করেছিলাম তখনও যাব না বললো।
--হ্যাঁ।কিন্তু তারপর এ ক্লাস করবে বলে বেরিয়ে গেছে।আমিও অফিসের জন্য বেরিয়ে গেছি।আমাকেও বলেনি যে যাচ্ছে।আমি বেরোবার পর বেরিয়েছে।এখন ওর একটা friend ফোন করছে যে ওর খুব জ্জ্বর।আমার একটা important meeting আছে। তাই তোকেই ফোন টা করলাম।meeting শেষ করেই বাড়ি যাব। ও cantten এ থাকবে একটু নিয়ে আসবি? তোর ও তো tiffin time চলছে বোধয়।কি রে শুনতে পাচ্ছিস?
--হুমম। আমি যাচ্ছি ওর কলেজে।
--শোন না বেশি বকিস না যেন।
--হ্যাঁ আমি তো শুধু বকি। আর তোমার বোনের কাজ গুলো তো খুব ভালো।কাল ও ভালো করে কথা বলতে পারছিল না আর আজ কালেজ চলে গেল।আমার কথা টা পর্যন্ত শুনল না।
--জানিস তো ও সত্যি পড়াশুনা নিয়ে খুব সিরিয়াস।আর আজ বোধয় important কিছু ক্লাস ছিল।আমায় ম্যাসেজ করেছিল তোকে যেন না বলি।কিন্তু আমার মিটিং টার জন্য...
-- তুমি চিন্তা করো না,কিছু বলব না। আমি যাচ্ছি...

চলবে.....
© All Rights Reserved