...

2 views

একমাত্র তুই।।4।।
তনি--তুই কেন দীপ্তি দিকে কল করলি বলত?
রিনা(তনির বন্ধু)--আরে একা একা যাবি নাকি?আমাকেও যেতে বারণ করছিস?
--হ্যাঁ শুধু শুধু ক্লাস কামাই করবি কেন?
--তাইতো দীপ্তি দিকে ফোন করলাম...আচ্ছা চল canteen এ গিয়ে বসি।এসি তে এমনিতেও তোর কষ্ট হবে। দীপ্তি দিকেও বলে দিয়েছি canteen এ আসতে।
--আচ্ছা চল।
রিনা--ওই দেখ ওখানে গিয়ে বসি।আমাদের পুরো গ্যাং আছে।
রিনা তনি কাছে যেতেই সবাই তনি কে জিজ্ঞেস করল কি রে এখন কেমন লাগছে? কিছু খাবি?ওষুধ খেয়েছিস?ইত্যাদি।
তনি হেসে হেসে সবার সাথে কথা বলছিল।
হঠাৎ ও সামনে থেকে অমুকে আসতে দেখল।একবার মনে হল জ্বরে ভুল দেখছে না তো।যত ও এগিয়ে এল ও বুঝতে পারল না মিথ্যে না সত্যি সত্যি ও।ব্যাস ভয়ে তো গলা শুকিয়ে গেছে তনির।
-- একি অমু দা তুমি?
--হুম দীপ্তি দির একটা meeting আছে, তাই আমায় নিয়ে যেতে বললো।
রিনা--তুই চিনিস ওনাকে?
--হ্যাঁ ও অমুদা।
--ওই তোর সেই অমু দা
কথাটা শেষ হতেই রিনার মুখের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকাল তনি।
অমু কোনো দিকে ধ্যান না দিয়ে তনির এক্কেবারে সামনে এসে ওর কপালে গালে হাত দিয়ে জ্বর কতটা বোঝার চেষ্টা করল।
তনি কিছু বলতে যাচ্ছিল কিছু বলার আগেই ওর ব্যাগ টা নিজের কাঁধে নিয়ে নিল অমু। তারপর রিনার দিকে তাকিয়ে বলল আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি।thanks...
তনি আবারো কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল অমু কিচ্ছু না শুনে হাত ধরে টানতে টানতে সবার সামনে দিয়ে নিয়ে চলে এল।
সবাই অবাক।তনি ও কিছু বলত হয়ত, কিন্তু সেই মুহূর্তে সেও খানিকটা অবাকই হয়েছিল। ও অমুর কথা শোনেনি তাই সে রেগে আছে সেটা সে ভালই বুঝতে পারছে।
রাস্তায় নিয়ে এসে একটা ট্যাক্সির সামনে দাঁড় করিয়ে অমু বলল নে ওঠ। কিছু না বলে গাড়িতে উঠে পরলো তনি। সারা রাস্তা একটাও কথা বললো না অমু,এমনকি তনির দিকে একবার তাকালোও না। এতক্ষণ যদিও একটু রাগ হচ্ছিল তনির, এবার  কষ্ট হচ্ছ।অমুর বকুনির অভ্যেস হয়ে গেছে ওর কিন্তু ওর এই চুপ করে থাকাটা ও মেনে নিতে পারছে না। কিছুক্ষণ পর গাড়িটা একটা গলির সামনে দাঁড়াল।অমু তনিকে নেমে আসতে বললো। তনি শুধু একবার জিজ্ঞেস করল আমরা এখানে কেন এলাম? অমু আবার একই ভাবে হাত ধরে ভেতরে নিয়ে গেল।
কিছুটা ভেতরে গিয়ে একটা ওষুধের দোকান ভেতরে ডাক্তারের চেম্বার।
ভেতরে গিয়ে অমু একজনকে বললো আমি নাম লিখিয়ে গিয়েছিলাম।ডক্টর আছেন তো।
সামনের লোকটি তনিষ্ঠা নাম চেক করে বললো হ্যাঁ দু জনের পরেই নাম আছে, একটু বসুন। তনি বুজতে পারল অমু ওর জন্য appoirment নিয়েছে। মনে মনে বললো কি এত কষ্ট করার কি দরকার ছিল কিন্তু কিছু বলার সাহস নেই আর তার,ভীষণ রেগে আছে।কিছুক্ষন পর ওদের ডাকা হল। ডাক্তার সব দেখে বললো ঠিক আছে কাল যে ওষুধ গুলো ফোনে বলে দিয়েছিলাম ওগুলোই থাকবে।আর ভয়ের কিছু নেই।
--জ্বর কমছে না তাই ভাবলাম আপনাকে একবার দেখিয়েনি।
--আরে না না আর দুটো দিন ওষুধ খাক না কমলে তখন ব্লাড টেস্ট করতে হবে।আশা করি দরকার পরবে না।শুধু খাওয়া দাওয়া ঠিক মত কর।weight টা একটু কম আছে।
বড় বড় চোখ করে তাকাল অমু তনির দিকে।
ডক্টর-- এর জন্য কোনো ওষুধ লিখছি না। খাওয়া দাওয়া ঠিক মত করলেই ঠিক হয়ে যাব।মামনি তুমি শুধু ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করো তাহলেই হবে কেমন।
তনি--আমি ঠিক মতই খাওয়া দাওয়া করি ব্যাস জ্বরের সময় খেতে ভাল লাগছিলো না, নাহলে...
অমু--হ্যাঁ হ্যাঁ নাহলে ও সারাদিন সারাবছর খাওয়া দাওয়াই করে।
তনি একবার অমুর দিকে তাকাল এখনও চোখে রাগ স্পষ্ট।একবারও তাকায়নি তনির দিকে।
অমু--আচ্ছা ডক্টর, আমরা আসি তাহলে। Thank you.
এরপর অমু ওকে নিয়ে বেরিয়ে এল। বেরোবার সময় রাস্তায় এসে তনি ডাকল পেছন থেকে অমুকে।
-- এখনও রাগ করে আছ?
কোনো উত্তর না দিয়ে অমু হাটতে লাগল।
--অমু দা ,sorry...
বলতে বলতে দাঁড়িয়ে পরলো তনি। অমু পেছন ফিরে দেখল কোনো ঢাকা বা চাদর নেই গায়ে। জড়োসোর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ,বোঝা যাচ্ছে শীত করছে ভীষণ।
অমু তনির কাছে এসে নিজের জ্যাকেট টা খুলে ওর গায়ে জড়িয়ে কিছু না বলে আবার ওকে গাড়ির সামনে নিয়ে গেল।
ওঠ গাড়িতে। তনি কিছু না বলে বসে পড়লো।অমু বসল ড্রাইভারের পাশের সিটে।সারা রাস্তা কিচ্ছু বলল না।তনি দু একবার কিছু বলেছিল অমু কোনো উত্তর দিল না।খানিকক্ষণ পর ওরা বাড়ি পৌঁছলো। দীপ্তি তখনও ফেরেনি অফিস থেকে।তনি কে রুমের মধ্যে রেখে অমু বললো ফ্রেশ হয়েনে। ফল টল রেখে যাচ্ছি খেয়ে নিস,তারপর ওষুধ খেয়ে রেস্ট নে। আমি নীচে আছি দীপ্তি দি এক্ষুনি চলে আসবে।বলেই রুম থেকে বেরোতে যাচ্ছিল...তনি একটু এগিয়ে হাত ধরে ফেলল পেছন থেকে...
--কোথায় যাচ্ছ?
--যা তুই ফ্রেশ হয়েনে।
--আমায় জ্বরে ফেলে রেখে চলে যাবে?
হাত ছাড়িয়ে অমু বলল...
--তাই নাকি! তোর জ্বর? জানি না তো।
--এখনও রাগ করে থাকবে?
--না না রাগ করে থাকব কেন? তুই আমার কে ,যে তোর ওপর রাগ করব
--বিশ্বাস কর ভেবেছিলাম যাব না। কিন্তু দেখলাম জ্বর নেই, আর ক্লাস টাও খুব ইম্পরট্যান্ট ছিল। তার পর practical টাও...
--আমি কি কিছু জিজ্ঞেস করেছি।
--তাহলে জিজ্ঞেস কর। জিজ্ঞেস কর।বকো, ঝগড়া কর,যা ইচ্ছে তাই বল কিচ্ছু বলব না শুধু এরম করো না।
অমু পিছন ফিরে দেখল  চোখ ছলছল করছে তনির।
তনির একদম কাছে চলে এল অমু এসে বলল..
--আমি সবসময় শুধু তোকে বকি তাইনা।
তনি চোখ নামিয়ে রেখেছে ঘাড় নেড়ে জানালো না।
--সবাই বলে আমি তোকে বকি সবসময়। আর তুই নিজে ধোয়া তুলসি পাতা।কই তোর দোষ গুলো তো কেউ দেখতে পায়না।এত বার কাল বললাম তবুও কলেজ চলে গেলি।ঠিক আছে আমি সবসময় বকি তো আর বকব না।কখনো কিচ্ছু বলব না।তোর যা খুশি তাই করিস।
--তুমি এরম কেন বলছ?
--হ্যাঁ ঠিকই বলছি।কটা দিন wait কর,ফাইনাল এক্সাম আর কটা দিন পর, ক্যাম্পাসিং ও চলছে।কোনো না কোনো একটা চাকরি পেয়ে যায়,তারপর দূরে কোথাও posting নিয়ে চলে যাব। অনেক দূরে।আর আসব না তোর কাছে।
--অমু দা....
--কি অমু দা। আর হাজার বার ডাকলেও আসব না।আর কক্ষনো আমায় দেখতে পাবি না। 
এবার তনি কেঁদে ফেলল,কিছুই বলতে পারছে না দুটো হাত মুখে চাপা দিয়ে কাঁদতে শুরু করল।

এবার অমু একটু নরম হল।ওকে কাঁদতে দেখলে এমনিতেই ও থাকতে পারে না, আজ আবার ওর জ্বর, আর ও ভীষণ কাঁদছে।এতক্ষন বেশ জোরে জোরে কথা বলছিল এবার গলা নামিয়ে বলতে শুরু করল।
--আচ্ছা ঠিক আছে কাঁদিস না।
তনি একই ভাবে কেঁদে যাচ্ছে।
অমু কাছে এসে হাত দুটো ধরে মুখ থেকে সরাবার চেষ্টা করল।কোনো লাভ হল না। তারপর উপাই না দেখে ওর দু কাঁধে হাত রেখে ওকে সোফায় বসিয়ে দিল
--আচ্ছা ঠিক আছে।কোথাও যাব না, কান্না থামা।
--তনি কেঁদেই যাচ্ছে।
মাথায় হাত রেখে অদূরে গলায় অমু বলল,
--আচ্ছা sorry ভুল হয়ে গেছে।কোথাও যাচ্ছি না দেখ, তোর কাছেই আছি।কাঁদিস না বাবু।
কাঁদতে কাঁদতে তনি বলল তুমি ওরম কেন বললে?
--আচ্ছা বাবা আর বলব না।এই দেখ কান ধরছি।তাকা আমার দিকে।এভাবে কাঁদলে তো আরো শরীর খারাপ করবে।
--ত তা তাতে তো তোমার কি?তুমি তো...
কাঁদতে কাঁদতে কাশি শুরু হয়েছে তনির।ওকে জল খাওয়াতে গেল অমু, খেল না।আর কিছু ভেবে না পেয়ে অমু ওকে জড়িয়ে ধরলো।মাথায় হাত বোলাতে লাগল...
--চুপ, আর না ব্যাস,ব্যাস কান্না থামা। দেখ তোর কাছেই আছি,কোথাও যায়নি... চুপ আর না।
কান্নার রেশ খানিকটা কমল।অমু জাপটে ধরে আছে।ধীরে ধীরে তনি একটু শান্ত হল বেশ কিছুক্ষণ অমু ওকে ওভাবেই জরিয়ে ধরে ছিল, হটাৎ বেলের আওয়াজ.... তনি চমকে উঠে গেল অমুর বুক থেকে,লজ্জায় নিচের দিকেই তাকিয়ে থাকল। অমু হেসে চুল গুলো কানের পেছনে দিয়ে বললো যা ফ্রেশ হয়েনে আমি দরজা খুলে দিচ্ছি। আর মনে থাকে যেন আমার কথা শুনতে হবে কিন্তু।
সেদিন বেশ কিছুক্ষণ অমু ওর কাছে ছিল দীপ্তি আসার পরেও। সেদিনও খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে বাড়ি ফিরেছে। এরপর অমুর সাথে তনির ফোনে কথা হয়েছে অজস্রবার কিন্তু দেখা হয়নি। কিন্তু তনি অমুর সব কথা শুনেছি।

তার সাত দিন পর....

দীপ্তির বার্থডে ছিল।বেশি কেউ আসেনি। শুধু দীপ্তির হবু বর, অফিসের কিছু বন্ধু,তনির কলেজের দুজন তিন  বন্ধু আর অমু। তনিকে আজ খুব সুন্দর লাগছে একটা খুব সুন্দর সাদা স্কার্ট আর ডিপ পিঙ্ক টপ পরছে ও,চুল খোলা হালকা লিপস্টিক আর লম্বা কানের।খুব মিষ্টি লাগছে। অমুর খুব ইচ্ছে করছে ওর কাছে যেতে কথা বলতে,খুব ইচ্ছে করছে ওর কাছাকাছি থাকতে।কিন্তু অমু যখনই ওর কাছাকাছি যাচ্ছে ও কোনো না কোনো বাহানায় সরে যাচ্ছে।কখনো বন্ধুদের কাছে, কখনো রান্না ঘরে, কখনো দীপ্তির guest দের কাছে।গোটা সন্ধ্যেতে একবারও কথা বলেনি, দীপ্তি ওকে বারবার বলা সত্ত্বেও নিজে গেল না কেকটা দিতে এমনকি তাকাওনি ভাল করে।
কেক কাটা হল,সবাই মিলে ভাল মজা হল, এরপর তনির বন্ধুরা চলে গেল একটু পর, একে একে সবাই চলে গেল। রাত তখন প্রায় দশটা। দীপ্তি আর ওর হবু বর সায়ন অমু আর তনি শুধু আছে। অমু সায়নের জন্য অপেক্ষা করছে একসাথে বেরোবে।ওদের দুজনকে একা সময় দেবে বলে অমু উঠে এল বেলকনিতে । তিনিও একই কারণে উঠে এল একটু পরে রান্নাঘরে। অমু বেলকনিতে একা দাঁড়িয়ে, তনি পেছন থেকে ডাকল
--অমু দা...
ঘুরে তাকিয়ে অমু দেখল একটা কফির মাগ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তনি। হালকা হাওয়ায় চুল গুলো বারবার মুখে এসে পরছে।
তনি--তোমার কফি।
ওর কথায় ঘোর কাটল অমুর..
অমু--হুম, ও হ্যাঁ, thanks. সত্যি এই সময় কফি খেতে খুব ইচ্ছে করছিল।
হেসে কফির কাপটা ধরিয়ে দিয়ে তনি চলে আসছিল পেছন থেকে ওর হাত টা ধরে ফেলল অমু।


চলবে.....


© All Rights Reserved