বিশ্রী
উশ্রী রায়কে আড়ালে অনেকেই 'বিশ্রী' বলে ডাকে। তার গায়ের রংটা ফর্সা হলেও সে বেঁটে আর মোটা, মুখখানা চৌকোপানা, হাসলে মনে হয় মুলোর দোকান খুলে বসেছে। লোকে বলে যে তার মুখের মধ্যে নাকি চৌষট্টিটা দাঁত আছে। হতেও পারে! তার ওপর আবার তার মাথায় চুল খুবই কম; সেটাও স্টাইল করে কেটে টাক ঢাকার নিষ্ফল চেষ্টা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে তাকে মোটেই সুশ্রী বলা চলে না।
অবশ্য লোকে চেহারার জন্য উশ্রীকে 'বিশ্রী' বলে না; বলে তার কুশ্রী, হিংসুটে স্বভাবের জন্য। সুযোগ পেলেই সে লোকের পেছনে লাগে আর সবার নামে কুৎসা রটিয়ে বেড়ায়। তার কুৎসিত সমালোচনার হাত থেকে তার নিকট বান্ধবীরাও রেহাই পায় না। এমন জঘন্য স্বভাবের মহিলাকে যে লোকে 'বিশ্রী' বলবে এ আর আশ্চর্য কি!
যথাসময়ে উশ্রীর বাবা-মা তার বিয়ে দিলেন। তার একটি মেয়েও হলো। কিন্তু বেশিদিন বিয়েটা টিঁকলো না। স্ত্রীর ইমোশনাল অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতেই বোধ করি স্বামী বেচারা সাত তাড়াতাড়ি ইহলোকের মায়া ত্যাগ করলো।
এই ঘটনায় উশ্রী কতটা ভেঙে পড়লো তা বলা মুশকিল। তবে অভিনয়টা সে ভালোই করতে পারতো। কিছুদিন সে বিষাদের প্রতিমা সেজে রইলো। সাদা শাড়ি পরিহিতা নিরাভরণ উশ্রীকে দেখে তার আত্মীয়বন্ধুরা বললো,
"এটা তুই কি করছিস? যে যাবার সে তো চলেই গেছে। তুইও কি এবার নিজেকে শেষ করতে চাস? বাচ্ছা মেয়েটার কথা তো একবার ভাব!"
নিজেকে শেষ করতে উশ্রীর বয়ে গেছে। সে তার বরের যাবতীয় স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়ে মেয়েসহ শ্বশুরবাড়ি থেকে কেটে পড়লো। এর কিছুদিন পর সে রজত রায় নামে এক বিপত্নীক ভদ্রলোককে বিয়ে করলো। তার মুখটা খরগোশের মতো হলেও মানুষটা খারাপ ছিল না।
রজতের প্রথম পক্ষের একটি ছেলে ছিল। সে ভেবেছিল যে বিয়ের পর স্বামী স্ত্রী দুজনেই তাদের প্রথম পক্ষের সন্তানকে আপন করে নিতে পারবে। কিন্তু বাস্তবে সেটা হলো না। উশ্রী পরের ছেলেকে আপন করে নেওয়ার পাত্রী নয়। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই তার মুখোশ খুলে গেল। তার ভয়ঙ্কর রূপ দেখে আঁতকে উঠে রজত ছেলেকে একটা বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি করে দিল। মনে মনে বললো, 'বাপরে, সাক্ষাৎ কেউটে সাপ! এই বিষাক্ত মহিলার থেকে দূরে থাকলেই আমার ছেলের মঙ্গল হবে।'
কিন্তু এর ফলে উশ্রীর মেয়েকেও রজত আপন করে নিতে পারলো না। একই পরিবার দুটো দলে বিভক্ত হয়ে গেল, যার একদিকে উশ্রী আর তার মেয়ে আর অন্যদিকে রজত আর তার ছেলে।
মেয়ে একটু বড় হবার পর উশ্রী একটা স্কুলে চাকরী নিলো। সেই স্কুলের টিচারদের প্রাইভেট টিউশনি করা বারণ ছিল। কিন্তু নিয়মকানুন সব জেনেও উশ্রী গোপনে কোচিং ক্লাস খুলে বসলো। কিছুদিন পর ছাত্রদের মাধ্যমে কথাটা প্রচার হয়ে গেল। স্কুল কতৃপক্ষ উশ্রীকে ডেকে সাবধান করে দিলো। কিন্তু তারপরেও সে কথা না শোনায় স্কুল থেকে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হলো।
অতি লোভে তাঁতী নষ্ট। স্কুল থেকে ঘাড় ধাক্কা খাওয়ার ফলে উশ্রীর প্রাইভেট টিউশনিও জোর ধাক্কা খেলো, কারণ স্কুল থেকেই তার ছাত্র ছাত্রী জোগাড় হতো। কিন্তু তাতেও কি তার শিক্ষা হলো? মোটেই না।
উশ্রীর স্কুলের এক বান্ধবী ছিল অনুরাধা। বিয়ের আগে সে নিহাতই ছাপোষা মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে ছিল। কিন্তু তার বর বিদেশে চাকরী করে কিছু টাকা জমিয়েছিলো। সেই টাকার গরমে তার শরীরে পোশাক কমেছে আর স্বভাবে ন্যাকামি বেড়েছে।
একদিন অনুরাধা উশ্রীকে ফোন করলো। উশ্রী "হ্যালো" বলতেই ওদিক থেকে হই হই করে উচ্ছ্বসিত গলা ভেসে এলো,
"কেমন আছিস শ্রী? ভীষণ, ভীষণ মিস করছি তোকে। কদ্দিন তোর সঙ্গে দেখা হয়নি বল তো? শোন, এই রোববার দুপুর বারোটা...
অবশ্য লোকে চেহারার জন্য উশ্রীকে 'বিশ্রী' বলে না; বলে তার কুশ্রী, হিংসুটে স্বভাবের জন্য। সুযোগ পেলেই সে লোকের পেছনে লাগে আর সবার নামে কুৎসা রটিয়ে বেড়ায়। তার কুৎসিত সমালোচনার হাত থেকে তার নিকট বান্ধবীরাও রেহাই পায় না। এমন জঘন্য স্বভাবের মহিলাকে যে লোকে 'বিশ্রী' বলবে এ আর আশ্চর্য কি!
যথাসময়ে উশ্রীর বাবা-মা তার বিয়ে দিলেন। তার একটি মেয়েও হলো। কিন্তু বেশিদিন বিয়েটা টিঁকলো না। স্ত্রীর ইমোশনাল অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতেই বোধ করি স্বামী বেচারা সাত তাড়াতাড়ি ইহলোকের মায়া ত্যাগ করলো।
এই ঘটনায় উশ্রী কতটা ভেঙে পড়লো তা বলা মুশকিল। তবে অভিনয়টা সে ভালোই করতে পারতো। কিছুদিন সে বিষাদের প্রতিমা সেজে রইলো। সাদা শাড়ি পরিহিতা নিরাভরণ উশ্রীকে দেখে তার আত্মীয়বন্ধুরা বললো,
"এটা তুই কি করছিস? যে যাবার সে তো চলেই গেছে। তুইও কি এবার নিজেকে শেষ করতে চাস? বাচ্ছা মেয়েটার কথা তো একবার ভাব!"
নিজেকে শেষ করতে উশ্রীর বয়ে গেছে। সে তার বরের যাবতীয় স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়ে মেয়েসহ শ্বশুরবাড়ি থেকে কেটে পড়লো। এর কিছুদিন পর সে রজত রায় নামে এক বিপত্নীক ভদ্রলোককে বিয়ে করলো। তার মুখটা খরগোশের মতো হলেও মানুষটা খারাপ ছিল না।
রজতের প্রথম পক্ষের একটি ছেলে ছিল। সে ভেবেছিল যে বিয়ের পর স্বামী স্ত্রী দুজনেই তাদের প্রথম পক্ষের সন্তানকে আপন করে নিতে পারবে। কিন্তু বাস্তবে সেটা হলো না। উশ্রী পরের ছেলেকে আপন করে নেওয়ার পাত্রী নয়। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই তার মুখোশ খুলে গেল। তার ভয়ঙ্কর রূপ দেখে আঁতকে উঠে রজত ছেলেকে একটা বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি করে দিল। মনে মনে বললো, 'বাপরে, সাক্ষাৎ কেউটে সাপ! এই বিষাক্ত মহিলার থেকে দূরে থাকলেই আমার ছেলের মঙ্গল হবে।'
কিন্তু এর ফলে উশ্রীর মেয়েকেও রজত আপন করে নিতে পারলো না। একই পরিবার দুটো দলে বিভক্ত হয়ে গেল, যার একদিকে উশ্রী আর তার মেয়ে আর অন্যদিকে রজত আর তার ছেলে।
মেয়ে একটু বড় হবার পর উশ্রী একটা স্কুলে চাকরী নিলো। সেই স্কুলের টিচারদের প্রাইভেট টিউশনি করা বারণ ছিল। কিন্তু নিয়মকানুন সব জেনেও উশ্রী গোপনে কোচিং ক্লাস খুলে বসলো। কিছুদিন পর ছাত্রদের মাধ্যমে কথাটা প্রচার হয়ে গেল। স্কুল কতৃপক্ষ উশ্রীকে ডেকে সাবধান করে দিলো। কিন্তু তারপরেও সে কথা না শোনায় স্কুল থেকে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হলো।
অতি লোভে তাঁতী নষ্ট। স্কুল থেকে ঘাড় ধাক্কা খাওয়ার ফলে উশ্রীর প্রাইভেট টিউশনিও জোর ধাক্কা খেলো, কারণ স্কুল থেকেই তার ছাত্র ছাত্রী জোগাড় হতো। কিন্তু তাতেও কি তার শিক্ষা হলো? মোটেই না।
উশ্রীর স্কুলের এক বান্ধবী ছিল অনুরাধা। বিয়ের আগে সে নিহাতই ছাপোষা মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে ছিল। কিন্তু তার বর বিদেশে চাকরী করে কিছু টাকা জমিয়েছিলো। সেই টাকার গরমে তার শরীরে পোশাক কমেছে আর স্বভাবে ন্যাকামি বেড়েছে।
একদিন অনুরাধা উশ্রীকে ফোন করলো। উশ্রী "হ্যালো" বলতেই ওদিক থেকে হই হই করে উচ্ছ্বসিত গলা ভেসে এলো,
"কেমন আছিস শ্রী? ভীষণ, ভীষণ মিস করছি তোকে। কদ্দিন তোর সঙ্গে দেখা হয়নি বল তো? শোন, এই রোববার দুপুর বারোটা...