আমরা দুজন ♡
কোপাইয়ের পাড়ে এসে বসেছে সুরঙ্গনা আর সুমেধা। সবে বিকেল,খোয়াইয়ের হাটে ভীড় বাড়তে শুরু করেছে। বৈশাখের তীব্র গরমটা যদিও নেই,ঈশাণ কোণে মেঘ জমছে। গতকাল বিকেলেই সুরঙ্গনা শান্তিনিকেতন এসে পৌঁছেছে , সোনাঝুরী টুরিস্ট লজেই উঠৈছে, প্রতিবার যেমন উঠে। রোজকারের অফিস,অ্যাসাইনমেন্ট,ক্লায়েন্টমিটের একঘেয়ে রুটিনে হাফিয়ে উঠলেই সুরঙ্গনা পালিয়ে চলে আসে এখানে। দুম করেই ডুব মারে অফিসে। নেহাৎ বস ভদ্রলোকটি ভালো আর তাছাড়া সুরঙ্গনার ক্রিয়েটিভ রাইটিংএর এফিসিয়েন্সি, চাকরিটা তাই বেঁচে আছে। আর একজন আছে যে এখনও তাকে প্যাম্পার করে—সুমেধা। সুমেধা বোলপুর কলেজে ইতিহাস পড়ায়। বছর তিনেক আগে পৌষমেলায় সুরঙ্গমার সাথে আলাপ হয়। তারপর বন্ধুত্ব। সম্পর্কটা ক্রমে গভীর হয়েছে। সুরঙ্গমা শান্তিনিকেতনে আসলে সুমেধাও কলেজ ছুটি নেয়। সময়টুকু একসাথেই কাটায়। কাল একসাথে উত্তরায়ণ, শ্যামলী সব ঘুরেছে। রাতেও সুমেধাকে হোস্টেলে ফিরতে দেয়নি সুরঙ্গনা। আজ হাটে ঘুরবে,বাউল শুনবে,কতকিছু কিনবে।
ততক্ষণে একটু হাওয়া উঠেছে। সুমেধার চুল উড়ে এসে পড়ছে সুরঙ্গনার মুখে। সুমেধা মাথাটা হেলিয়ে দিল সুরঙ্গনার কাঁধে।
— রবি ঠাকুর এই কোপাই নদী নিয়েই লিখেছিলেন “আমাদের ছোটনদী চলে আঁকে বাঁকে”। তাই না রে সুমেধা?
—তেমনই অনেকে বলে। কিন্তু অনেকে যেটা বলেনা সেটা হল,রবি ঠাকুর আমাদের না দেখেও যেটা লিখেছিলেন।
—কোনটা?
—ওই যে,আমাদের সেই গাঁয়ের নামটি অঞ্জনা।
—কিন্তু আমরা দুজন যে এক গাঁয়ে থাকি না।
— সেই আমাদের একটিমাত্র দুঃখ ।
—তুই,পারিসও। চলে আয় না কোলকাতায়। আমরা একসাথে থাকব। হোম লোন নেব,ছোট্ট একটা ফ্ল্যাট হবে। একসাথে অগোছালো করে রাখবো। নন্দনে মুভি দেখব,প্যারামাউন্টে ডাবের সরবৎ খাবো, প্রিস্সেপঘাটে নৌকা চড়ব।
—আর খোয়াইয়ের অন্য দিনের হাট, তার কি হবে?
—কেন হবে না। উইকএন্ডে চলে আসব। পৌষমেলায় আসবো,২৫শে বৈশাখ আর বসন্ত মেলাতেও আসব। কোলকাতায় থাকলে নাইট ক্লাবেও যাবো কিন্তু।
—ওতে আমি নেই। আমার কাছে সব উঠোনই বাঁকা। তোর ওসব বাঁদরামির জন্য আমি কোলকাতা যাবো না।
—ওরম বলে না বেবি। তোর ওই সেক্সি কোমরের ঠুমকা,নিওনের আলোয় দেখার জন্য হা পিত্যেস করে থাকি।
—তুই দিন দিন অসভ্য হয়ে যাচ্ছিস।
—লোভী হয়ে গেছি। তোর ক্লিভেজ, স্পষ্ট
ন্যাভাল আমাকে পাগল করে দেয়।
—কাল সারারাত তুই জ্বালিয়েছিস। আজ হোস্টেলে ফিরে যাব।
—এই দুদিন আমার।
—আবদার!
—তোর কি বয়ফ্রেন্ড জুটেছে?সাবধান বলছি। হেব্বি ক্যালাবো।
—আমায় পরে ক্যালাবি,বৃষ্টি শুরু হয়েছে। চল উঠে পড়ি।
—রেস্ট হাউস অবধি যেতে যেতে পুরো ভিজে যাবো।
বিদ্যুৎ চমকালো হঠাৎ । মেঘ ডাকার আওয়াজে চমকে উঠে সুমেধা। ঝড়ও শুরু হয়েছে। দৌড়ে একটা বন্ধ দোকানের ছাওনির তলায় ঢোকে দুজনে। বৃষ্টি বেড়েই চলেছে। বাড়ছে ঝড়ের দাপটও। ছাওনির তলায় থাকলেও ঝাপটায় পুরো ভিজে গেছে দুজনেই। সুরঙ্গনা জিন্সের পকেট থেকে মোবাইলটা বের করল।
—সাতটা বাজতে যায়।
—আমরা হাট থেকেও বেশ খানিকটা দূরে।
—উঃ তোকে ভিজে কি দারুন লাগছে।
সুমেধাকে জাপটে ধরে সুরঙ্গনা। ভিজে টি-শার্টের তলায় সুরঙ্গনার বুক উত্তেজনায় কাঁপছে। সুরঙ্গনার আঙুল খেলা করছে সুমেধার খোলা পিঠে। সুরঙ্গনার গরম নিঃশ্বাস এসে পড়ছে সুমেধার মুখে। আবেগে সুমেধার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে । সুরঙ্গনার ঠোট ছুঁয়েছে সুমেধাকে। তীব্র বিদ্যুতের ঝলকানিতে চমকে উঠলো দুজনেই। ছাওনির কিছুটা ভেঙে পড়ল হুড়মুড় করে। জলের স্রোত বয়ে চলেছে মাটির পথ কেটে। কি যেন একটা গায়ের এসে পড়ল।আৎকে উঠল সুমেধা।
—কি এটা ?
একটা প্যাকেট। ব্রাউন পেপারের খাম,তবে ভিজে গেছে। প্যাকেটের ভেতর কিছু কাগজপত্র আছে। সুরঙ্গনা নিচু হয় প্যাকেটটা কুড়োতে।
—ছাড় না কি না কি আছে।
—ছেড়ে দেব মানে?ওই তো কালপ্রিট,মুডটা নষ্ট করে দিল। আর হতেও তো পারে দারুন কিছু পেলাম!
—কবির লুকোনো চিঠি নাকি গুপ্তধের দলিল?
—তুই না ইতিহাস পড়াস। হতেও তো পারে অমূল্য কিছু।
— আলবাৎ পারে। গোয়াল ঘরের মাচা থেকে যদি শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন কাব্য আবিষ্কার হতে পারে তবে ভাঙা দোকান থেকেও কোন মহাকাব্য আবিষ্কার হতে দোষ কোথায়।
সুমেধার ঠাট্টায় পাত্তা না দিয়ে প্যাকেট টা কুড়িয়ে নেয় সুরঙ্গনা। বৃষ্টি কমতে সন্ধ্যে...