...

3 views

সূর্য-পূজা (পর্ব-১৪)

এইভাবে চলতে থাকে সূর্য-পূজার প্রেম-পর্ব।
মনে মনে পূজার সাথে দেখা করার ইচ্ছা হলেও সূর্য সাহস করে আর বলতে যায়না।
ইতিমধ্যে এম. বি. এর ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। সপ্তাহান্তে সূর্য মেদিনীপুরে থাকে এখন। পূজাকে জীবনে সসম্মানে পেতে এম. বি. এর ক্লাস আর পূজার সাথে সারা রাত কথায় সপ্তাহান্ত গুলো এখন সূর্যের কাছে খুব special হয়ে উঠেছে।

ওদিকে পূজার ইংরেজি তে এম.এর ক্লাসও রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় শুরু হয়ে গেছে।

আজকাল আর বেশি কম্পিউটারে যাওয়া হয়না ওদের।বুকভরা নির্মল প্রেম আর ভবিষ্যতে দুজনে একসঙ্গে পথ চলার একরাশ আশা এখন ওদের ধ্যান-জ্ঞান। ফোনে ফোনেই সূর্য আর পূজার প্রশ্ন- উত্তর পর্যায়, মান, অভিমান, ঝগড়া, প্রেম,আত্মপোলব্ধির আদান প্রদান,অনিশ্চিত তবু কাঙ্ক্ষিত বিবাহিত জীবনের পরিকল্পনা সবটুকু নিয়ে ওদের দুজনের একটা প্রানবন্ত নতুন অভিজ্ঞতাপূর্ণ সুন্দর সময়ের সাক্ষী হয়ে রইল শুধুমাত্র দুজনের মনের স্মৃতিকোঠা আর ভুললে চলবেনা অবশ্যই এয়ারটেল্ কল সেন্টার।

সূর্যের সূক্ষ উপলব্ধি,আদর্শ,পূজাকে বোঝার অদম্য চেষ্টা আর ভালোবেসে তার পাশে থেকে তাকে সুখী করার একান্ত ইচ্ছা,দুটি সত্তার একাত্মকরণের মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে একে অপরের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে ওঠার প্রবল প্রয়াস তাদের দৈনন্দিন কথোপকথন আর আলোচনা র মধ্যে সুস্পষ্ট থেকে ক্রমে সুষ্পষ্টতর হয়ে উঠতে থাকল।
মনকে ছাপিয়ে যেন অন্তর আত্মা দুটি এক হয়ে গেল ক্রমশঃ। সূর্য আর পূজা সামাজিক বন্ধন, কারণ আর চাওয়া পাওয়া র ঊর্ধ্বে কেবলমাত্র একে অপরের প্রতি সমর্পণ আর অটুট বিশ্বাসে ভরা চিরবন্ধুত্বপূর্ণ দিব্য সম্পর্কে র বা৺ধনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বা৺ধা পড়ল। যেকোন ভালোমন্দে সারাজীবন একে অপরের পাশে না থাকার আশঙ্কাও যেন ওদের কাছে তীব্র বেদনা র সামিল হয়ে উঠছে এখন। পৃথিবীর সব সুখ শান্তি র চেয়ে মূল্যবান হয়ে উঠল ওদের কাছে ওদের এই সম্পর্ক আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যে গুলোর প্রধান হয়ে হয়ে উঠল এই সম্পর্কের পবিত্রতা আর নিশ্চয়তা রক্ষার লড়াই।

একদিন কথায় কথায় পূজা সূর্যকে বলল,
"আমি শুধু তোমার জীবনসঙ্গী নয়,জন্মান্তরে তোমার সত্যিকারের বন্ধুও। তাই বলছি
একবার ভাল করে ভেবে দেখো সূর্য। আমার প্রতি আবেগ আর মোহে তুমি জীবনের এতবড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছো না তো?
না সত্যিই ভালোবাসা র বা৺ধনে নিজেকে বাধতে চেয়েছো আমার সাথে? "

সূর্যের শান্ত সুস্পষ্ট উত্তর, "আমি শুধু জানি আমি শুধু তোমার আর তুমি আমার। এটাকে হালকাভাবে নিওনা।এরপর আমাদের বিয়ে নিয়ে আর আমি ভাবি না। ঈশ্বর যবে চাইবেন তবে হবে। এটুকু জানি তোমার সাথে আমার এই সম্পর্ক টা ছাড়া স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকা আর আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এটা আমার আবেগ বা মোহ নয় পূজা।আমি তো তোমাকে ঈশ্বরের মতোই বিশ্বাস করি। তুমি কি এখনও আমাকে, আমার ভালোবাসা কে পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছো না? "

পূজা বলল, "আরে না না। তোমাকেই তো শুধু বিশ্বাস করতে পেরেছি আমি। তবু নিজেকে যাচাই করতে দোষ কোথায়? "
সূর্য আশ্বাস দিলেও, "যাই হয়ে যাক মনের এই সম্পর্ক থেকে আমরা কখনো বেরোতে পারবনা পূজা। তাই পরিস্থিতি যাই আসুক ভালোবেসে বন্ধু হয়ে একে অপরকে বুঝে চলবে নিশ্চয়। আমি সবসময় তোমার পাশে থেকে নিশ্চিন্ত রাখব তোমায়, কথা দিলাম। "

পূজা মৃদু হেসে বলল, "নিশ্চিন্ত রাখবে আমাকে সবসময়? মনে থাকবে তো? "

সূর্য বলল, "তুমি দুশ্চিন্তায় থাকলে আমি কি করে ভালো থাকব বলো। ঠিক আছে কাল থেকেই শুরু হোক এর ছোট একটা পদক্ষেপ। আমি যেখানেই যাই না কেন পৌঁছে তোমাকে অবশ্যই জানাবো। রাগ হলেও জানাবো। তোমার চিন্তা হয় আমি বুঝতে পারি। "

দুজনেই একসঙ্গে হেসে উঠল এরকম একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণে। তবে কোথাও এইটুকু সামান্য কথার আদান প্রদান যেন অসামান্য সন্তুষ্টি এনে দিল সুগভীর প্রেমের পথের দুটি নতুন পথিককে। আরও কাছে, আরও নিশ্চিত সম্পর্কে র বন্ধনে সারাজীবনের মতো জড়িয়ে পড়ল ওরা।

বিধাতা পুরুষ এই দুটি প্রাণের নিস্বার্থ নিঃশর্ত সুগভীর প্রেমের সম্পর্কটা গড়ে ওঠা নীরবে দেখলেন। দুটি শুদ্ধ মনের একমাত্র সাক্ষ্য হয়ে ওদের দুজনের মিলনের প্রস্তুতি করার উদ্যোগ নেবেন বলে যেন স্থির করলেন এবার। নিষ্ঠা থাকলে ঈশ্বরকেও পাওয়া যায়। প্রেমও ঠিক সেরকম এক দৈবী আশীর্বাদ।তবে মানুষ পরিস্থিতি র চাপে যাতে এই দিব্য বন্ধনকে অগ্রাহ্য না করে বসে তাই স্বয়ং নারায়ণও মনুষ্য দেহ ধারণ করে এই প্রেমের মাহাত্ম্য বোঝাতে বহু কষ্ট সহ্য করে গেছেন। আমাদের এই গল্পে কবে কি করে পরিপূর্ণতা পেল সূর্য পূজার প্রেমকাহিনী? জানতে হলে আগামী পর্বে চোখ রাখুন।



© বুনানী