...

1 views

অশনি সংকেত পর্ব ২
---"তুমি এটা কি করে হাতে পেলে দিদিভাই?"

---জানো তো ঠাম্মি...আমি দাদুর একখানা পোট্রেট বানাব ঠিক করেছি।বাবার কাছে দাদুর ছবি চাইলাম,বাবা আমাকে তাঁর বয়সকালের ছবি ধরিয়ে দিলেন।আমি আসলে আঁকতে চাইছি ওনার অল্প বয়সের একটা পোট্রেট।বাবা বললেন,সেরকম ছবি ঘরে কোথাও পাওয়া যাবে না।লাইব্রেরীতে দাদুর নিজস্ব  আলমারিটার চাবি আমাকে দিয়ে বললেন,তোর যা দরকার এই আলমারি খুললেই পেয়ে যাবি।এ নিয়ে মা ঠাম্মিকে জ্বালাস না।

---সে তো বুঝলুম...কিন্তু এ জিনিস তো তাঁর আলমারি খুলেই হাতে পাবার কথা নয়...তোর হাতে এটা এল কি করে?

---আরে ঠাম্মি...এক কান্ড হয়েছে।তিনদিন আগে দাদুর আলমারির দরজা খুলেই আমি একটা অদ্ভুত ধরণের কান্নার আওয়াজ পাচ্ছিলাম।আমার বেশ ভয় ভয় করছিল।তাও ভীষণ সাহসে ভর করে আমি বুঝতে পারলাম,এই শব্দের উৎস আলমারির ভিতরেই রয়েছে আর আমাকে ওটা বার করে জানতেই হবে ব্যাপারটা কি!কান খাড়া করে শব্দের গতি অনুসরণ করে আমি একটা ভীষণ সুন্দর কারুকার্য করা কাঁচের বাক্স হাতে পাই।ওই বাক্সটার কোনো মুখ বা ঢাকনা খোলার ব্যবস্হা ছিল না জানো...অথচ ওর ভিতরেই এই জিনিসটা ছিল আর সেটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল।আমি বুঝতে পারলাম ভিতরের জিনিসটা আমি হাতে নিয়ে দেখতে পারব না।তাই উপর থেকেই নেড়েচেড়ে দেখছিলাম।হঠাৎ জিনিসটা আমার হাত থেকে পড়ে গেল।কাঁচ ভেঙ্গে গিয়ে জিনিসটা আমার হাতে এল।এত সুন্দর কবচ আমি আগে কখনো দেখিনি।জিনিসটা নিয়ে নিতে ইচ্ছা করছিল কিন্তু কাউকে না জানিয়ে দাদুর আলমারি থেকে একটা জিনিস নিয়ে নেওয়াও উচিত নয় তাই সব কাঁচ নিজে পরিষ্কার করে ফেলে দিয়ে কবচটা আলমারিতেই রেখে দিয়েছি।মাঝেমধ্যে দেখতে আসি।দেখো কি সুন্দর...
বলে তাথৈ কবচটা দিতে গেল ঠাম্মির হাতে।
সর্বজয়া দেবী সাংঘাতিক আতঙ্কিত হয়ে দুইহাত দিয়ে মাথা চেপে ধরলেন।তাঁর বিস্ফারিত দুইচোখ দিয়ে নির্গত হতে থাকল কোনো এত অজানা বিপদের অশনিসংকেতের দরুন তীব্র ভীতি।তাথৈ কবচটা টেবিলে রেখে একছুটে এসে ঠাম্মিকে জড়িয়ে ধরল।
---কি হয়েছে ঠাম্মি?কবচটা  দেখে তুমি অমন করছ কেন?ঠিক আছে...এক্ষুনি আমি এটা তুলে রাখছি যেখানে ছিল এটা।তুমি শান্ত হও ঠাম্মি...আর আমি ওটা আলমারি থেকে বার করব না।
সর্বজয়া দেবী কোনোমতে একটা চেয়ার টেনে তাতে বসলেন।ক্ষীণ কন্ঠে স্বর ফুটিয়ে বললেন,"একটু জল দে দিদিভাই..."
তাথৈ লাইব্রেরীর দরজার পাশে রাখা পিতলের কলসি থেকে গ্লাসে জল ঢেলে এনে ঠাম্মিকে দিল।
জলটল খেয়ে একটু দম নিয়ে সর্বজয়া দেবী আকূল কন্ঠে বলে উঠলেন...ওই কবচটা কেন হাতে নিলি দিদিভাই!ও যে বড় সর্বনেশে জিনিস।এক্ষুনি ওটা আলমারির ভিতরে পুরে আলমারি তালা দিয়ে লক করে দে...
---ঠিক আছে ঠাম্মি আমি এটা যেমন ছিল তেমন করে রেখে তালাবন্ধ করে দিচ্ছি আলমারি। তুমি শুধু একটু শান্ত হও।
এরপর তাথৈ কবচটা আলমারীর ভিতরে ঠিক সেইখানে রেখেছিল যেখান থেকে সে ওটা পেয়েছিল।তারপর আলমারি তালাবন্ধ করে দিয়ে সে ঠাম্মির কাছে এসে বসল।কবচ আলমারি বন্দি হয়েছে দেখে একটু হয়তো শান্ত হলেন সর্বজয়া দেবী।তাথৈ ধীর পায়ে এসে বসল ঠাম্মির কাছে।তারপর ঠাম্মির ডানহাতটা নিজের দুইহাতের মধ্যে চেপে ধরে বলে উঠল,"ওই কবচটা দেখে তুমি অমন করে উঠলে কেন ঠাম্মি?ভয় পাওয়ার মতো কি আছে ওই কবচে?"
সর্বজয়া দেবী তাথৈকে জন্ম থেকেই কোলেপিঠে করে বড় করেছেন।উনি জানেন, মাত্র বারো বছরের বালিকা হলে কি হবে!অতটুকু মেয়ের মধ্যে যেমন সাহস আছে...তেমনই রয়েছে অজানাকে জানবার অদম্য কৌতূহল।এই মেয়ের চোখে কিছু যদি পড়ে তো ওর কাছ থেকে কিছু চেপে যাওয়া বা যা হোক কিছু বুঝিয়ে ভুলিয়ে দেওয়ার কোনো চেষ্টাই ওর ক্ষেত্রে অন্তত খাটবে না।তবে বয়সের তুলনায় যথেষ্ট পরিণত তাথৈ।তাই ওর কাছে ভরসা করে কোনো কথা বলার মতো আস্হা যথেষ্টই আছে সর্বজয়া দেবীর।
তিনি নাতনীকে বললেন, "বেশ।আমি তোমাকে বলব এই কবচটার ইতিহাস তবে এখন নয়।কাল দুপুরে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়বে,তখন এসো আমার ঘরে।তখন বলব।তবে খবরদার দিদিভাই।ওই কবচটার ধারেপাশে তুমি আর যাবে না...আমাকে কথা দাও...
---ঠিক আছি ঠাম্মি।আমি তোমায় কথা দিচ্ছি আমি দাদুর ওই আলমারির কাছেই আর যাব না।"
---কোথা থেকে কি যে হয়ে গেল...ঠাকুর তুমি দেখো...কোনো অনর্থ যেন না হয়...বাতের ব্যাথাটা আবার বেড়েছে আমাকে একটু ধরে আমার ঘর পর্যন্ত নিয়ে চলো দিদিভাই...
তাথৈ লাইব্রেরীর আলোটালো সব নিভিয়ে দিয়ে জানলা বন্ধ করে ঠাম্মিকে হাত ধরে নিয়ে দরজার বাইরে পর্যন্ত এল আর তারপর বাইরে থেকে দরজাটা বন্ধ করে ছিটকিনি আটকে দিল।তারপর ঠাম্মিকে ধরে ধরে সে তিনতলা থেকে নামতে লাগল ধীরে ধীরে।তিনতলাটায় থাকে না কেউ। থাকলে লক্ষ্য করত,পুরো অাঁধার নিমজ্জিত তিনতলার জনমানবশুন্য লাইব্রেরীর ঘরের দরজার তলা দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে একটি লাল কম্পমান আলোকতরঙ্গ...।