...

3 views

এলমাত্র তুই।।2।।
--ওই ছেলেটা কে ছিল?
--কোন ছেলেটা?
--যার সাথে স্কুল থেকে ফিরছিলি?
--ও ওতো সৌম্য। স্কুলে নতুন এসেছে তো।
--ওর সাথে একদম মিশবি না।
--কেনো?
--কেনো মানে মিশবি না মানে মিশবি না। দেখ তোর অনেক ফ্রেন্ড আছে। ছেলে মেয়ে সব রকম, ওদের সাথে ঘোর কিছু বলব না... কোনো দিনও কিছু বলিনি তো... শুধু ওর সাথে মিশিস না। 
--কিন্তু কেনো?
--কেনো মানে আমি বলছি বলে। ও ভালো না। দেখ না শুনলে কিন্তু খুব খারাপ হবে... আমি কিন্তু
--আচ্ছা বেশ বেশ,কিন্তু ... 
--কোনো কিন্তু না.... ও আমার এক বন্ধুর কাজিন আমি আগেও দেখেছি ওকে... ওর নামে অনেক কিছু শুনেছি, তোর ভালোর জন্যই বলছি... দেখ তুই কিন্তু..
--আচ্ছা বললাম তো আর মিশব না।
--হুমম good... মনে থাকে যেনো...আচ্ছা প্রবলেম গুল হয়েছে, দেখি খাতা টা...

পরের দিন বিকেলে ...
অমু--কি এখানে একা বসে...
তনি--আরে তুমি আমার ঘরে কখন এলো?
--কেনো আসতে পারি না।
--না তা কেনো?
--তোকে যে সকালে যেতে বলেছিলাম, আসিসনি কেনো?
--এমনি
দু জনেই চুপ চাপ দাঁড়িয়ে আছে...
হঠাৎ তনি নীরবতা ভাঙল...
--অমু দা
--হুম
--আবার কবে আসবে
--তিন মাস পর ছুটি থাকবে তখন
.... আমায় মিস করবে (মনে মনে)
অমু--কি হল কাঁদছিস নাকি?
--মোটেও না। কাঁদব কোন দুঃখে, আমার তো খুব মজা। তুমি থাকবে না।
--তাই না...
--...
--আমায় মিস করবি?
--কি বললে?
--কই কিছু না তো...
চলেই যাচ্ছিল পেছন থেকে  ডাকল তনি...
--সাবধানে যেও

তিন মাস পর....
অমু ছুটিতে বাড়ি এসেছে। কি একটা বই পড়ছিল খাটে বসে। হটাৎ তনি ঢুকলো ঘরে...
--অমু দা...
--কি রে? আজ এই সময়।
--হুমম মা বললো তোমার নাকি শরীর খারাপ...
--না রে। সামান্য ঠান্ডা লেগেছে আর কিছু না। তুই বল পড়াশুনা কেমন চলছে?
--ভালো। তুমি সত্যি ঠিক আছ তো? না মানে গলাটা ধরা ধরা লাগছে তো তাই, দেখি তো
না জ্জ্বর তো নেই ( কপালে হাত রেখে )
--আমি ঠিক আছি। শুধু গলাটাই ধরেছে। আমার কথা বাদ দে তুই কিছু বলবি?
-- না সেরম কিছু না।
বই পাশে রেখে তনির দিকে তাকাল অমু।আচ্ছা বল কি খবর।পরীক্ষা তো সামনে।প্রিপারেশন কেমন?
--ভালো
--এবার কি নিয়ে পড়বি?সায়েন্স না আর্টস?
-- সায়েন্স...তারপর বটানি।
--বটানি কেন?
--কারণ life science ভালো লাগে।
--তাহলে zoology কেন নয়।পোকা মাকরের ভয়ে।
--মোটেই না, আমি ভয় করি নাকি।
--তাই ভয় করিস না।ওই দেখ আরশোলা।
--অমু দা খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু।
--দেখ সত্যি সত্যি, ঠিক সেই সময় একটা পোকা উড়ে গেল,ভয়ে ছিটকে সরে গেল তনি।ওদিকে ওকে ভয়ে গুটিয়ে সুটিয়ে থাকতে দেখে অমু হাসতে হাসতে লুটিয়ে পরল।
তনি--ধ্যাৎ ,তুমি হাসতেই থাক,আমি চললাম।
পথ আটকে দাঁড়ালো অমু।
অমু--আচ্ছা আচ্ছা বেশ, রাগ করিস না।ঠিক করে ফেলেছিস তাহলে good. আর বাকিদের কি খবর। আর ওই ছেলেটা কি যেন নাম হ্যাঁ সৌম্য ওর সাথে এখনো কথা বলিস নাকি?

--না তো জানো তুমি ঠিক বলেছিলে সৌম্য একদম ভাল না।
--কেনো? তোকে কিছু করেছে কিছু বলেছে? আমায় বল।
--না না সেরকম কিছু না।
--আমায় মিথ্যে বলছিস, বলবি না তো দাঁড়া কাকিমনি কে বলি...
--না না কি বলবে, সেরকম কিছু না।
--তাহলে বল কি রকম কিছু? কেনো ওরম বললি?
--আসলে ও আমায় প্রোপস করেছে আর কিছু না।
--কি ওর এত বড় সাহস! আর তুই কি বলেছিস?
--তোমার কি মনে হয় obviously না।
--এক মিনিট তোকে না বলে ছিলাম ওর থেকে দূরে থাকতে শুনিসনি আমার কথা! আমি এখানে নেই বলে কি আমার কথার ও কোন দাম নেই।
--না মিশতাম না... শুধু মাঝে মাঝে কথা বলতাম।
--কি?
--আচ্ছা রাগছ কেনো? বলছি তো আর আর মিশব না কথাও বলব না। আমি বুঝতে পারিনি ও ওরম।আরে শোনো তো...

ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতেও গেল না ঘুরে তাকাল তনির দিকে। পায়ে পায়ে এগিয়ে এল তনির কাছে...
--কি হল অমু দা? কি দেখছ অমন করে?
--শোন যে ছেলেরা কোনো মেয়েকে প্রোপস করে তারা সবাই কিন্তু খারাপ হয় না, বলেই একবার ঢোক গিলল অমু।
এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তনি ওর দিকে... আর একটু এগিয়ে এলো অমু। তনি পেছতে পেছতে  ধাক্কা খেলো খাটের কাঠে। আর পেছবার জায়গা নেই। ভয়ে মুখ নামিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল।
কানের কাছে মুখ নামিয়ে অমু বলল শুধু সঠিক সময়ে সঠিক ছেলেটাকে accept করে নিস।
তনি ওর চোখ খুলে ভয় ভয় চোখে ওর দিকে তাকাল। দেখল এক অদ্ভুত হাসি তার ঠোঁটে।
তারপর অমু সোজা হয়ে দাঁড়াল, তারপর বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে।
তনি তাকিয়ে রইলো তার যাওয়ার পথে,

দু বছর পর...

দুবছর পর... পড়াশোনার সূত্রে একই শহরে... তনি botany র স্টুডেন্ট।পড়াশোনায় খুব ভালো।খুব সিরিয়াস স্টুডেন্ট। থাকে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করে ওর এক দূর সম্পর্কের দিদি দীপ্তির সাথে। যদিও সম্পর্ক দূরের তবুও দুই বোন মন থেকে অনেক কাছের। দিদি বেশ ভালই বুঝতে পারে অমু আর তনির বন্ধুত্ব মোড় নিয়েছে অন্য পথে, মেখেছে প্রেমের রং। শুধু ভাষায় প্রকাশ বাকি। আশেপাশে সবাই বোঝে, বোঝে তারাও শুধু বলা বাকি।

সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দুজনের খুউনসুটি  আর অধিকার বোধ। নাম না জানা এক ভালো লাগার সম্পর্ক। আজও ছোট বাচ্চার মতো শাসন করে অমু তনিকে। আজকাল মাঝে মাঝে প্রতিবাদ করে, যদিও বেশির ভাগ হার মানতে হয় তনিকে অমুর ধমকের  কাছে অবশ্য মাঝে মাঝেই আজকাল অমুও হেরে যায় ওর অভিমানী চোখের জলে নিরুপায় হয়ে। তবে আজও ভয় করে তনি ওর অমু দাকে। যদিও অমু কখনও সবার সামনে ওকে ছোট করে না,  ছোটবেলার মত কক্ষনো গায়ে হাত দেয় না,কখনো অপ্রয়োজনে ওকে কোনো কাজে আটকায় না, আর  কখনো মানাতে ভোলে না। তবুও ওরা নাকি প্রেমিক প্রেমিকা নয়। এখনও যে বলা বাকি।
একদিন...সন্ধ্যে বেলায়
দীপ্তি--একি ল্যাপটপ নিয়ে বসে পরলি যে... তনি তোর গায়ে তো ভীষণ জ্বর।
তনি--না না তেমন কিছু না। ওষুধ খেলেই ঠিক হয়ে যাবে।
--বললেই হলো গা যে জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে... খাবারও তো খাসনি দুপুর থেকে...
--খেতে ইচ্ছে করছে না যে,ঘুম ও আসছে না, তাই কলেজের assignment ...
--ও সে পরে হবে, এখন খেয়ে একটু rest নে। doctor কে ফোন করে ওষুধ আনিয়ে নিয়েছি, না খেয়ে কিন্তু খাওয়া যাবে না।
--দিদি বিশ্বাস কর একদম ইচ্ছে করছে না।
--ঠিক আছে আমার কথা শুনবি না তো ঠিক আছে তার কথা তো শুনতেই হবে।
তনি laptop রেখে উঠে পরে।
--কার কথা বলছ?
--কার আবার তোমার অমু দার...
--তুমি ওকে বলে দিয়েছ। কেনো বললে?
--কেনো এখন কেনো ভয় পাচ্ছিস তোর তো কিছু হয়নি, তাহলে?
--ও এমনি এমনি খুব বকে... আজ তো...
টিং টং
--ওই বেলের আওয়াজ। এলো এবার সামলাও।
--দিদি....
দীপ্তি বেরিয়ে যেতেই ল্যাপটপ রেখে ঢাকা গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো তনি আজ কপালে কি আছে কে জানে?


চলবে.....


© All Rights Reserved