প্রেম যখন সূর্যপূজা (পর্ব-১১)
প্রতিটা সকাল জীবনের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।রাত্রির নিস্তব্ধতাকে কাটিয়ে শুরু হয় ব্যাস্ত জীবনের আরও একটি নতুন দিন।ঋতু বিশেষে সকালের পরিবেশটা হয় ভিন্ন।
হেমন্তের অন্তে শীতের কোমল ছোয়া লাগে সর্বত্র। পৌষ, মাঘ মাসে কয়েকদিনের জন্য শীতের প্রবল প্রকোপ পড়ে, আর সেটার টের পায় আমরা শীতের সকালে। শীতের সকাল থাকে শীত এবং কুয়াশার চাদরে ঢাকা।
সূর্যরস্মীর তেজে ছিন্ন হয় এই ঘন কূহেলিকা।হিমেল হাওয়ায় অবাঞ্ছিত শুকনো পাতা ঝরে গিয়ে আস্তে আস্তে বসন্তের নবীন পাতায় প্রকৃতি কে সেজে ওঠার সুযোগ করে দেয়।
খ্রীষ্টাব্দ বছরের শেষ মাস ডিসেম্বর এসে হাজির।নতুন আশা ও নতুন সংকল্প নিয়ে আরও উজ্জ্বল একটি সুন্দর নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর পালা।শুভ নববর্ষের আগমনের জন্য অপেক্ষারত বিশ্ব।
১লা ডিসেম্বর আজ।ইতিমধ্যে সূর্য ও পূজার কথোপকথন ইংরেজীতে চ্যাটে প্রতিদিন নিয়ম করে চলছে।সূর্য বেশ লক্ষ্য করল পূজা যেভাবে এই বিষয়টা নিজের থেকেই খুব গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে।চ্যাটে কথায় কথায় আজ হঠাৎ সূর্য পূজাকে M.B.Aর জন্য weekendএ ছুটির জন্য ইংরেজীতে সুন্দর করে একটা আবেদন পত্র লিখে দেওয়ার অনুরোধ জানায়।পূজা সেই আবেদনপত্র কয়েক মিনিট পর সূর্যকে পাঠায়।
সূর্য:"thank you.আচ্ছা তোমার university কি Salt lake এ?"
পূজা:"হ্যাঁ।কেন বলতো?"
সূর্য:"অফিসের বিশেষ একটা কাজে আমাকে আগামীকাল কলকাতার বিদ্যুৎ ভবনে যেতে হবে।তোমার university-র জন্য বাস তো তুমি বিদ্যুৎ ভবনের সামনেই ধর,তাই না?"
পূজা:"হ্যাঁ।কিন্তু কেন?"
সূর্য:"কিছু না।ভাবছিলাম দেখা করব তোমার সঙ্গে।"
পূজা:"খবরদার না।বন্ধুরা থাকবে আমার সঙ্গে।আর আমি এভাবে কেন দেখা করব তোমার সঙ্গে?"
সূর্য:"আবার রেগে গেলে তো?"
পূজা:"আজ একটু কাজ আছে।উঠলাম।"
সূর্য:"ঠিক আছে।তবে রেগে থেকো না।"
পূজা কোনো প্রতু্্যত্তর না দিয়ে অফলাইন হল।
পূজা বেশ অনুভব করতে পারল সূর্যের মনে তার সাথে সাক্ষাৎ করার একটা সুপ্ত অথচ তীব্র ইচ্ছা রয়ে গেছে।পূজার ইচ্ছার মান রাখতে এই ইচ্ছাটা সূর্য প্রকাশ করতে এতদিন পারছিল না।
পরদিন থেকে ইংরেজী চ্যাটে সূর্যকে ইংরেজীতে সাহায্য করা অব্যাহত রাখলেও পূজা একদম কোনো অন্য কথা প্রসঙ্গে একটা উত্তরও দেওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখল।
সূর্য এই ব্যপারটা একদিনেই খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারল।এর কারণ জিজ্ঞাসাও করল পূজাকে।কিন্তু কোনো উত্তর পেলনা।
সূর্য বার বার বোঝাতে চাইল যে তাকে ভুল বুঝে পূজা যেন তাদের বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত না নেয়।পূজা কোনো উত্তর করলনা।
পূজার ব্যবহারে এই আকস্মিক নীরবতা সূর্য কে স্থির থাকতে দিচ্ছিল না।শুধাংশু বাবুর কথাগুলো সূর্য সত্যি বলেই বিশ্বাস করেছিল।পূজাকে একটু যাচাই করবে বলেই সে এতদিন পূজাকে এই বিষয় নিয়ে কিছু বলেনি।
পূজাকে সূর্য সত্যিই খুব ভালোবাসে।নিজের থেকে বেশি বিশ্বাস করে।পূজার প্রতি সূর্যর নির্মল ভালোলাগার অনুভূতি যে গভীর ভালোবাসার উপলব্ধিতে পরিণত হয়েছে সূর্য তা নিজের মধ্যে বেশ অনুভব করতে পারে।
এবার সূর্য মনোস্থির করল পূজাকে তার মনের অবস্থা সে ভালো করে বুঝিয়ে বলবে।কিন্তু পূজার এরকম আচরণ কেন?
ওদিকে পূজা নিজেকে ভালোভাবেই চেনে।একবার মনকে সংযত করে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলে কোনোভাবে তাকে টলানো যায়না।সে মনোস্থির করেই নিয়েছে যে সে সূর্যকে বন্ধুত্বের জায়গা থেকে সাহায্য করবে ঠিকই, কিন্তু সূর্যের সাথে অন্য কোনো প্রসঙ্গে বার্তালাপ থেকে বিরত রাখবে নিজেকে।
এরই মধ্যে সূর্যের লেখা তার খোলামনের একটি ম্যাসেজে সূর্যের মনের আয়নায় স্পষ্টতই নিজেকে দেখার সুযোগ পেল পূজা।
সূর্য:"পূজা,তোমার হঠাৎ এরকম নিস্চুপ হয়ে যাওয়া আমাকে স্থির থাকতে দিলনা।তোমাকে আমি আমার উপলব্ধি ও আত্মোপলব্ধির সবটুকু share করেছি,বলা ভালো share করতে চেয়েছি নির্ধিধায়।কিন্তু বাধ্য হয়ে একটা কথা তোমার ব্যাপারে আমি জানা সত্যেও তোমাকে বলে উঠতে পারিনি।আজ তোমাকে সেই কথা না জানিয়ে উপায় দেখছিনা কারণ আমার জায়গা থেকে এমন কিছু অনুভূতি তোমার প্রতি আমি উপলব্ধি করছি যা আমার কাছে চরম সত্য ও নির্ভুল।কিন্তু তোমার কাছে সেগুলো কোনো কারণে প্রকাশ করা অন্যায় বলে তুমি মানো।
orkut-এ তোমার সঙ্গে পরিচয় ও কথোপকথন-এর পরেই আমার মনে তোমার প্রতি এমন এক ভালো লাগা জন্ম নিয়েছিল যা আগে আমার জীবনে কখনোই উপলব্ধ হয়নি।তোমাকে প্রথম থেকেই খুব আপন মনে হয়েছিল।নির্ধিধায় তোমাকে বিশ্বাস করতে মন চেয়েছিল।তোমাকে নিজের খুব ভালো একজন বন্ধু হিসেবে পাশে পাওয়ার ইচ্ছাটা কখন যে আমার অজান্তেই তোমার প্রতি গভীর ভালোবাসা য় পরিণত হয়ে গেল্ আমি সত্যিই বুঝে উঠিনি।তোমার নীতিবিরুদ্ধ কিছু তোমাকে মানতে বাধ্য করতে আমি কখনো চাইনি।তাই আমাদের বিয়ের প্রস্তাব সরোসিজবাবু অগ্রাহ্য করার পর আমার মনের কষ্টটা একমাত্র তোমাকে বোঝাতে চেয়েছিলাম।তোমার মতো বন্ধু তো আমার আর কেউ নেই।আমার মন খুব ভেঙে গিয়েছিল একথা আজ স্বীকার করতে দ্বিধা নেই।আমি সবসময় চেয়েছিলাম আমার মনে যদি কখনো কারো প্রতি প্রেম আসে,সেই হবে আমার জীবনসঙ্গিনী।কিন্তু তোমার একটা কথা আমাকে ভাবিয়েছিল যে ভালোবাসা একটা স্বতস্ফূর্ত অনুভূতি আর আমি যাকে চাই তাকেই জীবনে পেয়ে যাব এটা আশা করা সহজ,কিন্তু বাস্তবে তা না ঘটলে সহ্য করা কঠিন।তাই মনের জোর পেতেই সেই পরিস্থিতিতে আমি শুধাংশু বাবুর কাছে গিয়েছিলাম।জে্যঠু আমার হাত দেখে নিজের থেকেই বলেছিলেন আমার জীবনে কেউ এসেছে।তার নামের অক্ষরও বলে দিয়েছিলেন।আমি জ্যেঠুকে জানিয়েছিলাম যে তোমার জ্যেঠু আমাদের বিয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করেননি।আর তোমার ইচ্ছা র কথাও বাধ্য হয়ে জ্যেঠুকে জানিয়েছিলাম।এও বলেছিলাম আমি এই নিয়ে আর না ভেবে এম,বি,এ নিয়ে এগোতে চাই।তখন জ্যেঠুই বলেছিলেন যে আমার হাতের রেখা বলছে যে তুমি আমাকে মনে মনে ভালোবাসতে শুরু করেছো।সরোসিজবাবুই এই প্রস্তাব একদিন আবার ফিরিয়ে যাবেন।আমি জ্যেঠুকে খুব বিশ্বাস করি।কিন্তু প্রথমে এইকথাগুলো অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল।
তিনি আরো বলেন যে
আমার পড়াশোনা নিয়ে তুমি আমার চেয়ে বেশী চিন্তা করছো।তোমার মনে কোনো পাপ নেই কিন্তু তুমি খুব চাপা স্বভাবের মেয়ে।মনের কথা সহজে বলে উঠতে পারবেনা।জ্যেঠুর কোনো কথা ফেলে দেওয়ার মতো ছিলনা।তবু আমি চেয়েছিলাম তোমার মনে আমার প্রতি এই বিশেষ অনুভূতিটুকু যাচাই করতে।সেদিন ফিরেই দেখি তুমি ম্যাসেজে আমার কাছেই জানতে চেয়েছো তোমার ঠিক কি করা উচিত।এর পর পরই শুধাংশুবাবুর সঙ্গে তোমার সাক্ষাৎ হয়।এর পর আমি আরো একবার গিয়েছিলাম তাঁর কাছে।জ্যেঠু সেদিন জানতে পারলেন যে আমি তোমাকে দেখিনি।তখন তোমার হাতের লেখাও দেখালেন তিনি।বললেন তুমি খুব ভালো একটি মেয়ে।তিনি চেষ্টা করবেন যাতে সুষ্ঠু ভাবে আমাদের শুভপরিণয় সবার সম্মতি সহকারে হয়ে উঠতে পারে।কিন্তু বিশ্বাস কর আমি জোর করে তোমাকে তোমার নীতিবিরুদ্ধ কিছু করতে বা মেনে নিতে কখনোই বলতে পারিনা।তুমি কিছুতেই অস্বীকার করতে পারনা যে তুমি আমাকে ভালোবাসো না।নাহলে তোমার মতো মেয়ে পারেনা এভাবে আমাকে নিজের প্রিয় বন্ধু ভেবে নিরপেক্ষ সাহায্য চাইতে।তুমি নিজের থেকে কখনো কাউকে সুযোগ দিতে চাওনা।এটা আমি ভালোভাবেই বুঝি।কিন্তু এও বুঝি যে সীমারেখা পেরোতে তুমি চাওনা,সেটা বিধির বিধানে প্রকৃতির নিয়মেই তুমি পেরিয়ে গেছো।নিজের মনকে ভালো করে প্রশ্ন করে দেখো পূজা আমি ঠিক বলছি কিনা?
তুমি যার জন্য সৎ থাকতে চাইছো তাকেও তো তোমার জন্য ততটাই সৎ থাকতে হবে।নাহলে সে তোমার মূল্য কখনো দিতে পারবেনা আর তুমি বোঝালেও সে বুঝতে পারবেনা।সেদিন কিন্তু আমার কথাই তোমার সবচেয়ে আগে মনে পড়বে।
বিধাতা তোমার সাথে পরিচয় ঘটিয়েছিলেন আমার ভাগ্যে তুমি আছো এটা জেনেই।আমি যা চেয়েছি আমাকে ভগবান সবসময় তার থেকে বেশীই দিয়েছেন।আমাদের দুজনের ইচ্ছা ছিল আমাদের জীবনসঙ্গীকে বন্ধু হিসেবে চেনার।তোমার বাহ্যিক রূপের আগে তোমার মনকে বুঝে তোমার জীবনে এসেছি,ঠিক যেমন তুমি মনে মনে চেয়েছিলে।আর আমিও আমার জীবনসঙ্গিনীকে বোঝার ইচ্ছা পূর্ণ করতে পেরেছি।সেই সুযোগ তিনি সুন্দরভাবে দুজনকে দিয়েছেন।এর জন্যে ঈশ্বরের কাছে আমাদের বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।আর ভগবান তো নিজে এসে করেননা।নিমিত্ত হিসেবে শুধাংশু বাবু কে পাঠিয়েছেন যিনি আমাদের মিলনে নিজের থেকেই সাহায্য করছেন।
একটু সূক্ষ্মভাবে উপলব্ধি করে দেখো।সব বুঝতে পারবে।নাহলে শুধু শুধু দুটি শুভ সম্ভাবনাময় জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।
আমাকে ভুল বুঝোনা।"
© বুনানী
হেমন্তের অন্তে শীতের কোমল ছোয়া লাগে সর্বত্র। পৌষ, মাঘ মাসে কয়েকদিনের জন্য শীতের প্রবল প্রকোপ পড়ে, আর সেটার টের পায় আমরা শীতের সকালে। শীতের সকাল থাকে শীত এবং কুয়াশার চাদরে ঢাকা।
সূর্যরস্মীর তেজে ছিন্ন হয় এই ঘন কূহেলিকা।হিমেল হাওয়ায় অবাঞ্ছিত শুকনো পাতা ঝরে গিয়ে আস্তে আস্তে বসন্তের নবীন পাতায় প্রকৃতি কে সেজে ওঠার সুযোগ করে দেয়।
খ্রীষ্টাব্দ বছরের শেষ মাস ডিসেম্বর এসে হাজির।নতুন আশা ও নতুন সংকল্প নিয়ে আরও উজ্জ্বল একটি সুন্দর নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর পালা।শুভ নববর্ষের আগমনের জন্য অপেক্ষারত বিশ্ব।
১লা ডিসেম্বর আজ।ইতিমধ্যে সূর্য ও পূজার কথোপকথন ইংরেজীতে চ্যাটে প্রতিদিন নিয়ম করে চলছে।সূর্য বেশ লক্ষ্য করল পূজা যেভাবে এই বিষয়টা নিজের থেকেই খুব গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে।চ্যাটে কথায় কথায় আজ হঠাৎ সূর্য পূজাকে M.B.Aর জন্য weekendএ ছুটির জন্য ইংরেজীতে সুন্দর করে একটা আবেদন পত্র লিখে দেওয়ার অনুরোধ জানায়।পূজা সেই আবেদনপত্র কয়েক মিনিট পর সূর্যকে পাঠায়।
সূর্য:"thank you.আচ্ছা তোমার university কি Salt lake এ?"
পূজা:"হ্যাঁ।কেন বলতো?"
সূর্য:"অফিসের বিশেষ একটা কাজে আমাকে আগামীকাল কলকাতার বিদ্যুৎ ভবনে যেতে হবে।তোমার university-র জন্য বাস তো তুমি বিদ্যুৎ ভবনের সামনেই ধর,তাই না?"
পূজা:"হ্যাঁ।কিন্তু কেন?"
সূর্য:"কিছু না।ভাবছিলাম দেখা করব তোমার সঙ্গে।"
পূজা:"খবরদার না।বন্ধুরা থাকবে আমার সঙ্গে।আর আমি এভাবে কেন দেখা করব তোমার সঙ্গে?"
সূর্য:"আবার রেগে গেলে তো?"
পূজা:"আজ একটু কাজ আছে।উঠলাম।"
সূর্য:"ঠিক আছে।তবে রেগে থেকো না।"
পূজা কোনো প্রতু্্যত্তর না দিয়ে অফলাইন হল।
পূজা বেশ অনুভব করতে পারল সূর্যের মনে তার সাথে সাক্ষাৎ করার একটা সুপ্ত অথচ তীব্র ইচ্ছা রয়ে গেছে।পূজার ইচ্ছার মান রাখতে এই ইচ্ছাটা সূর্য প্রকাশ করতে এতদিন পারছিল না।
পরদিন থেকে ইংরেজী চ্যাটে সূর্যকে ইংরেজীতে সাহায্য করা অব্যাহত রাখলেও পূজা একদম কোনো অন্য কথা প্রসঙ্গে একটা উত্তরও দেওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখল।
সূর্য এই ব্যপারটা একদিনেই খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারল।এর কারণ জিজ্ঞাসাও করল পূজাকে।কিন্তু কোনো উত্তর পেলনা।
সূর্য বার বার বোঝাতে চাইল যে তাকে ভুল বুঝে পূজা যেন তাদের বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত না নেয়।পূজা কোনো উত্তর করলনা।
পূজার ব্যবহারে এই আকস্মিক নীরবতা সূর্য কে স্থির থাকতে দিচ্ছিল না।শুধাংশু বাবুর কথাগুলো সূর্য সত্যি বলেই বিশ্বাস করেছিল।পূজাকে একটু যাচাই করবে বলেই সে এতদিন পূজাকে এই বিষয় নিয়ে কিছু বলেনি।
পূজাকে সূর্য সত্যিই খুব ভালোবাসে।নিজের থেকে বেশি বিশ্বাস করে।পূজার প্রতি সূর্যর নির্মল ভালোলাগার অনুভূতি যে গভীর ভালোবাসার উপলব্ধিতে পরিণত হয়েছে সূর্য তা নিজের মধ্যে বেশ অনুভব করতে পারে।
এবার সূর্য মনোস্থির করল পূজাকে তার মনের অবস্থা সে ভালো করে বুঝিয়ে বলবে।কিন্তু পূজার এরকম আচরণ কেন?
ওদিকে পূজা নিজেকে ভালোভাবেই চেনে।একবার মনকে সংযত করে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলে কোনোভাবে তাকে টলানো যায়না।সে মনোস্থির করেই নিয়েছে যে সে সূর্যকে বন্ধুত্বের জায়গা থেকে সাহায্য করবে ঠিকই, কিন্তু সূর্যের সাথে অন্য কোনো প্রসঙ্গে বার্তালাপ থেকে বিরত রাখবে নিজেকে।
এরই মধ্যে সূর্যের লেখা তার খোলামনের একটি ম্যাসেজে সূর্যের মনের আয়নায় স্পষ্টতই নিজেকে দেখার সুযোগ পেল পূজা।
সূর্য:"পূজা,তোমার হঠাৎ এরকম নিস্চুপ হয়ে যাওয়া আমাকে স্থির থাকতে দিলনা।তোমাকে আমি আমার উপলব্ধি ও আত্মোপলব্ধির সবটুকু share করেছি,বলা ভালো share করতে চেয়েছি নির্ধিধায়।কিন্তু বাধ্য হয়ে একটা কথা তোমার ব্যাপারে আমি জানা সত্যেও তোমাকে বলে উঠতে পারিনি।আজ তোমাকে সেই কথা না জানিয়ে উপায় দেখছিনা কারণ আমার জায়গা থেকে এমন কিছু অনুভূতি তোমার প্রতি আমি উপলব্ধি করছি যা আমার কাছে চরম সত্য ও নির্ভুল।কিন্তু তোমার কাছে সেগুলো কোনো কারণে প্রকাশ করা অন্যায় বলে তুমি মানো।
orkut-এ তোমার সঙ্গে পরিচয় ও কথোপকথন-এর পরেই আমার মনে তোমার প্রতি এমন এক ভালো লাগা জন্ম নিয়েছিল যা আগে আমার জীবনে কখনোই উপলব্ধ হয়নি।তোমাকে প্রথম থেকেই খুব আপন মনে হয়েছিল।নির্ধিধায় তোমাকে বিশ্বাস করতে মন চেয়েছিল।তোমাকে নিজের খুব ভালো একজন বন্ধু হিসেবে পাশে পাওয়ার ইচ্ছাটা কখন যে আমার অজান্তেই তোমার প্রতি গভীর ভালোবাসা য় পরিণত হয়ে গেল্ আমি সত্যিই বুঝে উঠিনি।তোমার নীতিবিরুদ্ধ কিছু তোমাকে মানতে বাধ্য করতে আমি কখনো চাইনি।তাই আমাদের বিয়ের প্রস্তাব সরোসিজবাবু অগ্রাহ্য করার পর আমার মনের কষ্টটা একমাত্র তোমাকে বোঝাতে চেয়েছিলাম।তোমার মতো বন্ধু তো আমার আর কেউ নেই।আমার মন খুব ভেঙে গিয়েছিল একথা আজ স্বীকার করতে দ্বিধা নেই।আমি সবসময় চেয়েছিলাম আমার মনে যদি কখনো কারো প্রতি প্রেম আসে,সেই হবে আমার জীবনসঙ্গিনী।কিন্তু তোমার একটা কথা আমাকে ভাবিয়েছিল যে ভালোবাসা একটা স্বতস্ফূর্ত অনুভূতি আর আমি যাকে চাই তাকেই জীবনে পেয়ে যাব এটা আশা করা সহজ,কিন্তু বাস্তবে তা না ঘটলে সহ্য করা কঠিন।তাই মনের জোর পেতেই সেই পরিস্থিতিতে আমি শুধাংশু বাবুর কাছে গিয়েছিলাম।জে্যঠু আমার হাত দেখে নিজের থেকেই বলেছিলেন আমার জীবনে কেউ এসেছে।তার নামের অক্ষরও বলে দিয়েছিলেন।আমি জ্যেঠুকে জানিয়েছিলাম যে তোমার জ্যেঠু আমাদের বিয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করেননি।আর তোমার ইচ্ছা র কথাও বাধ্য হয়ে জ্যেঠুকে জানিয়েছিলাম।এও বলেছিলাম আমি এই নিয়ে আর না ভেবে এম,বি,এ নিয়ে এগোতে চাই।তখন জ্যেঠুই বলেছিলেন যে আমার হাতের রেখা বলছে যে তুমি আমাকে মনে মনে ভালোবাসতে শুরু করেছো।সরোসিজবাবুই এই প্রস্তাব একদিন আবার ফিরিয়ে যাবেন।আমি জ্যেঠুকে খুব বিশ্বাস করি।কিন্তু প্রথমে এইকথাগুলো অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল।
তিনি আরো বলেন যে
আমার পড়াশোনা নিয়ে তুমি আমার চেয়ে বেশী চিন্তা করছো।তোমার মনে কোনো পাপ নেই কিন্তু তুমি খুব চাপা স্বভাবের মেয়ে।মনের কথা সহজে বলে উঠতে পারবেনা।জ্যেঠুর কোনো কথা ফেলে দেওয়ার মতো ছিলনা।তবু আমি চেয়েছিলাম তোমার মনে আমার প্রতি এই বিশেষ অনুভূতিটুকু যাচাই করতে।সেদিন ফিরেই দেখি তুমি ম্যাসেজে আমার কাছেই জানতে চেয়েছো তোমার ঠিক কি করা উচিত।এর পর পরই শুধাংশুবাবুর সঙ্গে তোমার সাক্ষাৎ হয়।এর পর আমি আরো একবার গিয়েছিলাম তাঁর কাছে।জ্যেঠু সেদিন জানতে পারলেন যে আমি তোমাকে দেখিনি।তখন তোমার হাতের লেখাও দেখালেন তিনি।বললেন তুমি খুব ভালো একটি মেয়ে।তিনি চেষ্টা করবেন যাতে সুষ্ঠু ভাবে আমাদের শুভপরিণয় সবার সম্মতি সহকারে হয়ে উঠতে পারে।কিন্তু বিশ্বাস কর আমি জোর করে তোমাকে তোমার নীতিবিরুদ্ধ কিছু করতে বা মেনে নিতে কখনোই বলতে পারিনা।তুমি কিছুতেই অস্বীকার করতে পারনা যে তুমি আমাকে ভালোবাসো না।নাহলে তোমার মতো মেয়ে পারেনা এভাবে আমাকে নিজের প্রিয় বন্ধু ভেবে নিরপেক্ষ সাহায্য চাইতে।তুমি নিজের থেকে কখনো কাউকে সুযোগ দিতে চাওনা।এটা আমি ভালোভাবেই বুঝি।কিন্তু এও বুঝি যে সীমারেখা পেরোতে তুমি চাওনা,সেটা বিধির বিধানে প্রকৃতির নিয়মেই তুমি পেরিয়ে গেছো।নিজের মনকে ভালো করে প্রশ্ন করে দেখো পূজা আমি ঠিক বলছি কিনা?
তুমি যার জন্য সৎ থাকতে চাইছো তাকেও তো তোমার জন্য ততটাই সৎ থাকতে হবে।নাহলে সে তোমার মূল্য কখনো দিতে পারবেনা আর তুমি বোঝালেও সে বুঝতে পারবেনা।সেদিন কিন্তু আমার কথাই তোমার সবচেয়ে আগে মনে পড়বে।
বিধাতা তোমার সাথে পরিচয় ঘটিয়েছিলেন আমার ভাগ্যে তুমি আছো এটা জেনেই।আমি যা চেয়েছি আমাকে ভগবান সবসময় তার থেকে বেশীই দিয়েছেন।আমাদের দুজনের ইচ্ছা ছিল আমাদের জীবনসঙ্গীকে বন্ধু হিসেবে চেনার।তোমার বাহ্যিক রূপের আগে তোমার মনকে বুঝে তোমার জীবনে এসেছি,ঠিক যেমন তুমি মনে মনে চেয়েছিলে।আর আমিও আমার জীবনসঙ্গিনীকে বোঝার ইচ্ছা পূর্ণ করতে পেরেছি।সেই সুযোগ তিনি সুন্দরভাবে দুজনকে দিয়েছেন।এর জন্যে ঈশ্বরের কাছে আমাদের বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।আর ভগবান তো নিজে এসে করেননা।নিমিত্ত হিসেবে শুধাংশু বাবু কে পাঠিয়েছেন যিনি আমাদের মিলনে নিজের থেকেই সাহায্য করছেন।
একটু সূক্ষ্মভাবে উপলব্ধি করে দেখো।সব বুঝতে পারবে।নাহলে শুধু শুধু দুটি শুভ সম্ভাবনাময় জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।
আমাকে ভুল বুঝোনা।"
© বুনানী