...

7 views

মধুরেণ (তৃতীয় ও শেষ পর্ব)
   দশম দৃশ্য         

(পুলক ও দামিনীর প্রবেশ।)                

পুলক : খবদ্দার বলচি পেঁচি। আমার কানের গোড়ায় একদম ঘ্যান ঘ্যান করবি না। নিজেদের দোষে তোরা গয়নার বাস্কো হাতছাড়া করেচিস। এখন আমি আর কিচু করতে পারবো না। জানিস, মা কে কত কৈফিয়ৎ দিতে হয়েচে?

দামিনী : রাগ কোরোনা পুলুদা। জানি আমাদেরই দোষ। মদনদাকে সব বলা উচিৎ ছিল। আমার bad luck! যাক, যা হবার তা তো হয়েই গেছে। কিন্তু আজ রাতে আমাদের পালাতে সাহায্য করো please!

পুলক : আঃ! সবসময় প্যানোর প্যানোর! নে, তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে। ভ্যান রিস্কো বলে রেকিচি। এখুনি এসে পড়বে। তোদের এখেন থেকে সিধে ইস্টিশনে নিয়ে যাবে। যা যা, দেরি করিসনি।

দামিনী : ভ্যান রিক্সা না বলে ট্যাক্সি ডাকলেই তো পারতে।

পুলক : তুই কিচু বুঝিস না পেঁচি, চুপচাপ থাক। ট্যাস্কি ডাকলে সবার চোকে পড়তো, মা হাজারটা পোসনো করতো। ভ্যান রিস্কায় চুপি চুপি কেটে পড়তে পারবি। এই রে, মা আবার ইদিক পানেই আসছে! চুপ চুপ!

(এলোকেশীর প্রবেশ।)

এলোকেশী : শুনেছিস দামিনী? তোর গয়নার বাক্সটা পাওয়া গেছে রে। ওহ, now I so happy! তা তোরা দুটিতে মিলে কি এত গপ্প করছিস রে?

পুলক : ওসব পেরাইভেট ব্যাপার, তুমি বুঝবে না। এখন এখান থেকে ফোটো তো মাইরি! কি রে দিগে, কি ব্যাপার? কিচু বলবি?

(দিগম্বরের প্রবেশ।)

দিগম্বর : দাদাবাবু! তোমার নামে চিটি আচে গো!

পুলক : কই, দেকি!

এলোকেশী : কার চিঠি রে পুলু?

দিগম্বর : আমি তা'লে যাই?

পুলক : হ্যাঁ যা। ইশ, কি জঘন্য হাতের লেখা! কিসুই তো পড়তে পারছি না। দুত্তেরি! এই পেঁচি, দেখ তো চিঠিটা পড়তে পারিস কিনা? যা হাতের লেখা!

(দিগম্বরের প্রস্থান।)

দামিনী : হাতের লেখার দোষ নয় পুলুদা। কবে থেকে বলছি একটা চশমা নাও।

পুলক : হ্যাঃ! বুড়োদের মত নাকি নাকের ডগায় চশমা লাগাবো! তুই বকবক না করে চিঠিটা পড় দিকি।

এলোকেশী : কার চিঠি রে দামিনী? Who write letter?

দামিনী : (একান্তে) সর্বনাশ! এ যে নারায়ণ লিখেছে। (এলোকেশীকে) ওই পুলুদার বন্ধু পটলার চিঠি।

পুলক : কি লিকেচে পড় না বে!

দামিনী : হুঁ... প্রিয় পুলু...আশা করি ভাল আছিস...আমরা সবাই ভালো আছি...সামনের সপ্তাহে ফিরবো...কাল আমাদের এখানে মোরগের লড়াই হয়েছিল...শ্যাম মল্লিকের কালো মোরগটার সঙ্গে ধলা সরকারের সাদাটার...খুব জমেছিল...সবাই বাজি ফেলেছিল...আমিও একটা বাজি জিতেছি...দূর, যত বাজে কথা! ও আর কি শুনবে? আমি ফেলে দিচ্ছি।

পুলক : ফেলে দিবি? আমার বন্ধুর চিঠি তুই ফেলার কে রে? সাহস তো কম নয়! দে বলছি! পুরোটা তো যত্ন করে পড়লিই না। নাও তো মা, চিঠিটা পড়ে শোনাও। মোরগের লড়াইয়ের গপ্পটা একটু ভালো করে শুনি।

দামিনী : (একান্তে) সাড়ে সর্বনাশ!

এলোকেশী : এ কি! এ তো পটলার চিঠি নয়! এ তো দেখছি নারায়ণের চিঠি। লিখেছে 'প্রিয় বন্ধু পুলক, তোমাকে মোবাইলে না পেয়ে এই চিঠি লিখছি। আমি এখন বাগানের গেটের পাশে দামিনীর জন্যে অপেক্ষা করছি। তোমার ভ্যান রিক্সা এখনো আসেনি। কিন্তু আর দেরি করা উচিত হবে না। পালাতে হলে সেটা চরণকাকা আসার আগেই করতে হবে। দামিনীকে নিয়ে তুমি তাড়াতাড়ি এখানে চলে এসো। আর হ্যাঁ, তোমার মা যেন কোনোমতেই জানতে না পারে। জানতে পারলে বুড়ি কিন্তু ছেড়ে কথা বলবে না। ইতি নারায়ণ।' কি? আমি বুড়ি? I old? আমার বাড়িতে এসে আমার পিঠেই ছুরি মারার ধান্দা! দেখাচ্ছি মজা! I very angry!

দামিনী : রাগ করোনা মামী। নারায়ণকে আমি ভালোবাসি। ওকেই বিয়ে করতে চাই।

এলোকেশী : চুপ কর! নির্লজ্জ, বেহায়া মেয়ে! আর পুলু! তুইও ঘরের শত্তুর বিভীষণ হলি? সবকটাকে শায়েস্তা করবো। আগে এই বজ্জাত মেয়েটাকে শান্তিপিসির বাড়ি রেখে আসি, তারপর ওই হতচ্ছাড়া নারায়ণটার সঙ্গে ফয়সালা করবো। বলে কিনা আমি বুড়ি? দিগে! এই হারামজাদা দিগে! যা, ট্যাক্সি ডেকে আন। আমিও যাই, চটপট সব গুছিয়ে নিই গে।

(এলোকেশীর প্রস্থান।)

দামিনী : (পুলককে) দিলে তো সব গুবলেট করে? (ভেঙিয়ে) 'নাও তো মা, চিঠিটা পড়ে শোনাও। মোরগের লড়াইয়ের গপ্পোটা ভালো করে শুনি!' নাও, এখন তোমার মার ধেই ধেই নেত্য দেখো। তোমার বোকামির জন্য পুরো প্ল্যানটা মাটি হয়ে গেল।

পুলক : ফালতু কথা বলবি না পেঁচি। নিজেকে বড্ড চালাক ভাবিস, না? মোরগের লড়াইয়ের কথা বলতে তোকে কে বলেছিল? তুই জানিস না, এসব গপ্প শুনতে আমি কত ভালোবাসি?

দামিনী : কিন্তু তাই বলে তুমি...আরে, ওই তো নারায়ণ আসছে।

(নারায়ণের প্রবেশ।)

নারায়ণ : একি? তোমরা এখনো তৈরি হওনি? আমি বাগানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বোর হয়ে...

দামিনী : ওঃ, তোমায় দেখে বাঁচলাম। এদিকে কেলেঙ্কারি হয়ে গেছে। পুলুদার বোকামির জন্যে মামী সব জানতে পেরে গেছে। এখন কি হবে?

নারায়ণ : সে কি?

পুলক : আমার কোনো দোষ নেই দোস্ত। তুমি বিস্বাস করো। পেঁচিটা বেশি চালাকি কত্তে...