হঠাৎ করে লকডাউন শুরু হওয়ায় সবাই ঘরবন্দি হয়ে গেল। স্কুল কলেজ অফিস-আদালত সবকিছু হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেল। সবাই এখন ঘর বন্দী হয়ে পড়েছে। বাড়িতে থাকতে থাকতে বোর হয়ে যাচ্ছে সবাই, সময় কাটছে না করো । এদিকে নুপুর এবছর উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছে।  অনলাইনের মাধ্যমে কলেজে এডমিশন নিয়েছেন । কিন্তু তাতে কি সেতো কলেজ যেতে পারছে না। নূপুরের মনে মনে অনেক  কষ্ট হচ্ছে সে কত কিনা ভেবেছিল । কলেজে  যাবে বন্ধুদের সাথে ঘুরবে।
কিন্তু সে আর হলো কই। করোনা র জন্য তো সবি বন্ধ হয়ে গেল। নুপুরের এবার অনলাইনে ক্লাস শুরু হবে বলেছে কলেজ থেকে। তাই নুপুরের বাবা নুপুরকে স্মার্ট ফোন কিনে দিয়েছে। এর আগে নুপুরের কাছে পার্সোনাল ফোন ছিল না। নুপুর তার নতুন ফোনে হোয়াটসঅ্যাপ ফেসবুক বিভিন্ন অ্যাপ ডাউনলোড করেছে । ফেসবুকে তার একটা সুন্দর ছবি লাগিয়ে ফেসবুক আইডি বানিয়েছে। নুপুর এর আগে ফেসবুক চালাই নি কোনদিন। ফেসবুকে সম্বন্ধে সে বিশেষ কিছু জানতো ও না।  একদিন নুপুর হটাৎ দেখেছে তার ফোন একটা ফেসবুক নোটিফিকেশন এসেছে ।নুপুর ওই সময় ক্লাস করছিল বলে তখন দেখা হয় নি। 
তারপর ক্লাস শেষ করার পর নুপুর ফেসবুকে গিয়ে নোটিফিকেশনটি দেখল।
দেখল যে অরিত্র মন্ডল নামে একজন ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। নুপুর সাথে সাথে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করে নেয়। কারণ এর আগে পর্যন্ত নূপুরের কোনো ফেসবুক ফ্রেন্ড ছিল না।
নুপুর ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করার সাথে সাথেই তার কাছে একটা মেসেজ আছে। নুপুর দেখে যে ওই অরিত্র মন্ডল নামে ছেলেটার ফ্রেন্ড রকুয়েস্ট একসেপ্ট করেছে,
সেই  হাই পাঠিয়েছে। নুপুর কিছুক্ষণ ভেবে তারপর রিপ্লাই দেয় হ্যালো বলে। তারপর অরিত্র জিজ্ঞাসা করে অরিত্র: এই ডিপি টা কি তোমার?
নুপুর: হ্যাঁ।
অরিত্র: তোমার মধ্যে একটা অদ্ভুত মায়া আছে জানো।
নুপুর: কী জনি?
অরিত্র: তোমরা বাড়ি কি বারাসাত?
নুপুর: হ্যাঁ।  কিন্তু তুমি কি করে জানলে?
অরিত্র: তোমার আইডি তে  তোমার অ্যাড্রেস দেওয়া    আছে সেখান থেকেই জানলাম।
নুপুর: আসলে আমি নতুন ফেসবুক আইডি বানিয়েছি তো তাই কিছু জানিনা । আর তাছাড়াও আমি আগে কোনো দিন ফেসবুক ব্যবহার করিনি।
অরিত্র: আমারও এটা নতুন আইডি। আমিও ফেসবুক নতুন ব্যবহার করছি। এর আগে আমার দাদার ফোনে ফেসবুক দেখেছিলাম তো ওখান থেকে একটু একটু জানি ওই আর কি।
নুপুর: ও ।  (নুপুর মনে মনে ভাবছে একটা ছেলে হয়ে তার ফেসবুক আইডি নেই সত্যি।  কি জানি বাবা?)
নুপুরের যে ফেসবুক আইডি আছে এটা তার বাড়ির লোক বা নুপুরের কোন বন্ধু জানতে না।



অরিত্র ছিল একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, কাজের ব্যস্ততার মাঝে অরিত্র কখনো কখনো করতে যেত। অরিত্র ঘুরতে খুব ভালোবাসে।
অরিত্র এর বাড়ি হলো কলকাতার সল্ট লেক।
সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি অরিত্রের কোন ইন্টারেস্ট নেই।
প্রথমবার অরিত্র ফেসবুক খুলেছে তাও আবার লকডাউন এর জন্য। আর ফেসবুক খোলার সাথে  সাথেই  অরিত্র নুপুরের আইডি দেখতে পাই।
নুপুরের ডিপী দেখে অরিত্রের মনে কেমন একটা যেনো অনুভূতি আসে, তাই সে নুপুরকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়।

অরিত্র আর নুপুর এভাবে দুজন দুজনের সাথে কথা বলতে বলতে তাদের মধ্যে খুব ভালো  একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক  তৈরি হয়। নুপুরের অরিত্রের সাথে কথা বলতে খুব ভালো লাগতো। নুপুর মনে মনে অরিত্র কে লাইক করতো। কিন্তুএটা সোশ্যাল মিডিয়া বলে নুপুরের খুব ভয় লাগতো।

এরপর থেকে তারা ফেসবুকে অডিও কলে কথা বলা শুরু করে। তারপর হঠাৎ একদিন অরিত্র ভিডিও কল করে। নুপুর কিন্তু ফোন রিসিভ করেনি, তারপর অরিত্র আরো কয়েকবার ভিডিও কল করল কিন্তু নুপুর একবারও ভিডিও কল রিসিভ করেনি। নুপুর যখন ভিডিও কল রিসিভ করল না তখন অরিত্র নুপুরকে মেসেজ করে বলছে ভিডিও কলটা রিসিভ করছ না কেন। নুপুর বললো না রিসিভ করব না।
অরিত্র বলল কেন?
আমরা তো এখন ভালো বন্ধু তাই না। তাহলে আমরা একে অপরের সাথে ভিডিও কলে কথা বলতে পারি। নুপুরের ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও নিজেকে কন্ট্রোল করে নেয় তারপর নুপুর বললো না পারি না।
অরিত্র বললো কেন?
পারি না কেনো?
তারপর অরিত্র নিজেই বলল, আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে আমরা একদিন দেখা করি কেমন।
নুপুর কিছুক্ষণ ধরে কি যেন ভাবল, তারপর অরিত্র কে দেখা করার জন্য হ্যাঁ বলে দেয়।
অরিত্র মনে মনে খুব খুশী হয়।
তারপর নুপুর বললো কিন্তু আমি তো বেশি দূরে যেতে পারবো না। অরিত্র বলল তোমাকে আসতে হবে না
বেশি দূরে ,আমি বারাসাতে যাব।
অরিত্র বলল কাল যাই তাহলে। নুপুর বললো ওকে ডান।
সেদিনের রাতটা অরিত্র নুপুর কিভাবে ছটপট করতে কাটিয়েছে সেটা তারাই জানে।

আজ 12 ই আগস্ট অরিত্র খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠেছে আজ।  অরিত্র আজ   খুব টেনশনের মধ্যে আছে, কারণ প্রথমবার সে কোনো মেয়ের  সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। অরিত্র তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লো।
ওদিকে নুপুরুও রেডী হচ্ছে। নুপুর  আজ একটা হলুদ রঙের চুড়িদার ,চোখে একটু কাজল,আইলাইনার আর কানে একজোড়া ঝুমকো ,আর কপালে  কালো রঙের একটা ছোট্ট টিপ পরেছে। নুপুর এবার অরিত্রের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হলো।
নুপুর পায়ের আধা ঘণ্টা আগে সেখানে পৌঁছে গিয়ে দেখে যে অরিত্র তার আগেই এসে গেছে। অরিত্র কে দেখে নুপুর আর ওখানে গেলে না।
নুপুর দূর থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে অরিত্র কে দেখছিল।  নুপুর মনে মনে খুব ভয় পাচ্ছিলো। নুপুর নিজে নিজেই ভাবছে ছবিতে আরিত্রকে যত টা হ্যান্ডসাম লাগছিল তার থেকে এখন বেশি হেন্ডসাম ও স্মার্ট লাগছে। নুপুর থেকে চোখ সরাতে পারছিল না।
এরপর টাইম হয়ে যাওয়ার পর নুপুর ধীরে ধীরে ঘরের দিকে পা বাড়ালো।
নুপুরকে দেখতে পেয়ে অরিত্র যে খুব খুশি হয়েছে তা তার মুখ দেখলেই বোঝা যায়। নুপুরও  যে খুব কম খুশি হয়েছে তা নয় ,নুপুরের খুব খুশি অরিত্রের সাথে দেখা করে। অরিত্র আর নুপুর দুজন দুজনের চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। এর আগে পর্যন্ত নুপুর ও অরিত্রের মধ্যে যতটা ভালো লেগেছিল তাদের দেখা করার পর ভালোলাগাটা যেন আরো দ্বিগুন হয়ে গেল।
এরপর থেকে নুপুর আর অরিত্রের মধ্যে কথা বলার পরিমাণ বেড়ে যায়।
তারপর নুপুর ও অরিত্র দুজনেই তাদের রিলেশনশিপে ব্যাপারটা বাড়িতে জানাই।
দুজনের বাড়িতেই রাজি হয়ে যাই।
সামনের বছর  বাইশে নভেম্বর তাদের বিয়ে।

      ______________  ছায়া✍️



বিয়ে বাড়িতে আপনাদের সকলের জন্য নেমন্তন্ন রইল।
সবাই এসে নবদম্পতিকে আশীর্বাদ করে যাবেন।😁😁
                               🙏🙏🙏


© 🥰😘দুষ্টু মিষ্টি 🥰😘