...

10 views

অচেনা পূজো
ছোটোবেলায় বাবার হাত ধরে দূর্গা পূজার সন্ধ্যা গুলোতে বেরিয়ে পরতাম প্রতিমা দর্শনে।
সাজের মধ্যে ছিল গায়ে নতুন জামা আর পরিপাটি করে আঁচড়ানো মাথার চুল..বাবা বলতেন বাচ্চাদের নাকি বেশি সাজে মানায় না। সরলতাই তাদের সৌন্দর্যের চাবিকাঠি।
গ্রামের সেই এক চালা প্রতিমার সুনিপুণ চক্ষু দান দেখে কতবার আমার শিশু হৃদয় শিহরিত হয়েছে..যেন বারবার অনুভব করেছে তৃনয়নের অপার গভীরতা।
একবার দশমীর রাতে মূর্তি বিসর্জনের পর নদী তীরে বসে বাবার মুখ থেকে, এক রকম জোর করেই শুনেছিলাম বাংলা ভাগের এক ভয়ানক গল্প.. দেখেছিলাম বাবার ছেলেবেলার কয়েকটা দূর্গা পূজার সন্ধ্যার ছবি আকারে স্মৃতি। সেই সব ছবিতে ছিল জন্মভূমির গন্ধ।
আর একটু বড়ো হ‌ওয়ার‌‌ পর শুনেছিলাম সেই আন্দোলনে কত মানুষের নির্মম মৃত্যু কাহিনি..আমার সাথে তাদের জুরে থাকার গল্প।
গাড়ি ছুটে চলেছে ভীষণ গতিতে।ভিতরে বসে ৩৪ বছরের আমি আর আমার পাশেই ১০ বছরের তিতলি। চারপাশের গাছপালাগুলো দ্রুত পা মিলিয়ে চলতে না পেরে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে। গন্তব্য ইছামতি।এবারের পূজোটা একটু যেন ঝিমানো।মনেই হচ্ছে না আজ দশমী।
ঠিক সময়েই পৌঁছানো গেল। সূর্যোদয় হতে আর মিনিট পনেরো বাকি। ইছামতির জলে চোখ রাখতে মনে হলো এ যেন দু'পক্ষের‌ই এক দীর্ঘ অপেক্ষার মহা সমাপন।
পাশে দাঁড়িয়ে তিতলি, দেখছে সূর্যোদয়.. কলকাতার বড়ো বড়ো ফ্ল্যাট আর থিমের পুজো দেখে অভ্যস্ত দুটো চোখ এখন দেখছে এক জাগতিক পূজো.. উৎসব হীন এক পূজো যার পুষ্পাঞ্জলি হিসাবে গৃহিত হয় হৃদয়ের প্রশান্তি ও ব্যাপ্তি।