...

4 views

পাপস্খলন পর্ব ৩
আমি মোবাইলটা কুড়োতে যাব,এমন সময় শুনি ঘরের ঘরের শব্দ।কুঠুরির দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ।আমি সমস্ত চেতনার উর্দ্ধে উঠে গিয়ে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললাম।কি হচ্ছে...কেন হচ্ছে...এসব প্রশ্ন যে আসা বৃথা সে কথা নতুন করে বোঝার বাকি নেই।আমি আমার জীবনের এমনই এক ফায়ার ব্রিগেডের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছি যেখানে আমার ভাগ্য বিনা বিচারে নির্বিচারে আমার বুকে গুলি করে মৃত্যুদন্ড দেবে আর আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মরব।আমার সব চেতনা...সব বোধ যেন মহাশুন্যের সাথে মিলিয়ে যেতে থাকল।আমি ধপ করে বসে পড়লাম।হঠাৎ চারপাশে আরম্ভ হল বিরাট আর্তচিৎকার।মনে হল যেন ধরিত্রী জুড়ে কাটারির কোপে নিধনযজ্ঞ শুরু হয়েছে। চারপাশে পৈশাচিক কান্না আর আকুতি দিয়ে যেন নরকের দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে একটু একটু করে,আর চতুর্দিকে শুধু পিচকিরির হোলিখেলার ন্যায়ে ফোয়ারা ছুটছে।আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না।এখান থেকে পালাব যে,সে রাস্তাও বন্ধ।আমি দুইহাতের তালুতে মাথাটা ধরে টলতে শুরু করলাম।হঠাৎ দেখলাম,সামনে মোহরের ঘোড়ার চিহ্নমাত্র নেই।বরং চতুর্দিকে পড়ে আছে রক্ত ও মাংসপিন্ড লেগে থাকা অসংখ্য নরকঙ্কাল।আমি ধীরে ধীরে জ্ঞান হারাতে শুরু করলাম।
চোখ মেলতে আমি দেখতে পেলাম,আমি হাসপাতালের বিছানায় শায়িত আর আমার বেড ঘিরে রয়েছে বন্ধুরা।সকলের চোখেমুখে স্বস্তির নিঃশ্বাস। কৌশানি বলে উঠল,"তুই যে একটা গেছো বাঁদর তা আমরা সবাই জানি।কিন্তু তাই বলে গাছের মগডালে না উঠে সোজা মাটির তলায় ঢুকে গেলি গুপ্তধনের খোঁজে?আর তাও আমাদের কিচ্ছুটি না জানিয়ে!সবার দুশ্চিন্তা কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কোন রাজার ধন হাসিল করলি তুই নিজেই বুঝে দেখ"...
অভিমানী মুখটা কৌশানি ঘুরিয়ে নিল জানলার দিকে।বন্ধুরা আমাকে খুঁজতে খুঁজতে সংজ্ঞাহীন অবস্হায় ওই কুঠুরির বন্ধ দরজার পাশে আবিষ্কার করে।কিভাবে আমি কুঠুরির দরজার বাইরে এলাম তা সত্যিই রহস্য।ক্রমে আমি হাসপাতাল থেকে সুস্হ হয়ে চলে আসলাম আমাদের হোটেলে। পরে স্হানীয় মানুষের কাছে জানতে পারি সেই এলাকার ইতিহাস।প্রায় চারশো বছর আগে সেখানে এক অত্যাচারী রাজা ছিল।সাধারণ প্রজাদের নিষ্ঠুর শোষণ ও পাশবিক নির্যাতনেরই আরেক নাম ছিল রাজতন্ত্র। রাজকর তখন এতটাই অধিক ছিল যে মানুষ উপোস করে চিতায় গিয়ে উঠলেও সেই রাজকর নিয়মিত দেওয়া প্রজাদের পক্ষে অসম্ভব ছিল।উপযুক্ত কর প্রদানে যে প্রজারা ব্যর্থ হত তাদের জন্য রাজা নির্ধারণ করেন এক অভিনব শাস্তি।রাজপথের কিছুটা দূর অন্তর অন্তর মাটির তলায় একটা করে কুঠুরি খনন করা হয়েছিল। কুঠুরিতে করপ্রদানে ব্যর্থ প্রজা ও তার পরিবারকে ধরে এনে পোষা লেপার্ডদের দ্বারা জ্যান্ত ভক্ষণ করানো হত।
সব বন্ধুরা আমায় নিয়ে রসিকতায় মশগুল।আমি সেই হাসির মহলে কিছুক্ষণ নীরব থেকে শেষে আমিও হাসিতে যোগ দিলাম।হঠাৎ একটা জিনিস লক্ষ করে আমার বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠল।শিড়দাঁড়া বেয়ে নেমে এল শীতল ঠান্ডা স্রোত।জ্যাকেটের ভিতরে ঢাকা পড়া টিশার্ট যেটি পরে আমি রওনা দিয়েছিলাম ট্যুরে সেই টিশার্টের একটা কোণায় এখনো যেন টাটকা হয়ে রয়েছে তীক্ষ্ণভাবে ছিটকে আসা রক্তের একটি দাগ।আমি ধীরে ধীরে বন্ধুদের মাঝখান থেকে সরে এলাম নির্জন নিরালায়। আমার এই শ্বাসরোধ করা কাহিনী যদি আমি ঘুণাক্ষরেও কাউকে বলি তাহলে হাসির পারদ যে আরও একধাপ উঠে যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
তাই খোলা খাতায় তুলে রাখলাম এই পাপস্খলনের শব্দ ও আকুতি।পৃথিবীর বুকে হয়তো এভাবেই এক একটি পাপ সংঘটিত হয় আর জলে পাথরে বা মাটি ফুঁড়ে এভাবেই হয়তো সেই পাপের অশ্রু আর রক্তের স্খলন হয় যুগের পর যুগ ধরে...