...

5 views

উপহার
#WritcoStory Challenge
সেটিং নিখুঁত ছিল. প্রতিটি টেবিলে একটি সূক্ষ্ম ফুলদানিতে মোমবাতির আলো, পালিশ করা কাটলারি এবং একটি একক গোলাপ সেট।পরিপাটি করে সযত্নে সাজানো ছিল সব কিছু।আজ যে তাদের বিবাহ বার্ষিকী।সারাদিন অনেক পরিশ্রম করে একটা লাল ভেলবেট কেক তৈরি করেছিল শ্রীতমা।ভেবেছিল অংশু এলে দুজনে মিলে আগে কেক কাটবে।তারপর নরম মোমের আলোয় দুজনে তাদের নৈশ আহার সম্পন্ন করবে।অংশু যা যা খেতে ভালোবাসে সেই খাবারগুলি পরম যত্নে শ্রীতমা রান্না করেছিল। এই একটি দিনের জন্য শ্রীতমা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে।

পরিচয় করিয়ে দিই এই অংশু হলেন অংশুমান চ্যাটার্জী।একটি বড় কোম্পানির ম্যানেজার তিনি।কাজের বাইরে কোন কথাই তিনি বলে উঠতে পারেন না,এমনকি বলতে জানেন ও না।দুই বছর হয়েছে তার ও শ্রীতমার বিবাহ হয়েছে।শ্রীতমা তার বাবা মায়ের একমাত্র কন্যা।যখন যা চেয়েছেন তাই পেয়েছেন।বিয়ের পর অংশুকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছিলেন শ্রীতমা।অংশু তাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিক খুব জাকজমক করে পালন করেছিল।অফিস ছুটি নিয়েছিল।সেদিন শ্রীতমা নিজেকে রানী মনে করেছিল।এক বছরে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে তাদের জীবনেও। শ্রীতমার একা লাগতো বলে সে কেকের ব্যবসা শুরু করে।সে নিয়েও অংশুর আপত্তি ছিল,তার বক্তব্য ছিল তাদের তো স্বচ্ছল পরিবার তাহলে শ্রীতমার কাজ করার কি আছে।অনেক বুঝিয়ে তবে শ্রীতমা কাজটা শুরু করতে পেরেছিল।ভালো কাটছিল তাদের দিন।কিন্তু আজ খানিক আগে অংশু শ্রীতমাকে ফোন করে জানায় তার ফিরতে দেরি হবে,শ্রীতমা যেন অংশুর জন্য অপেক্ষা না করে খেয়ে শুয়ে পড়ে।একথা শোনার পর থেকে অংশুর উপর শ্রীতমার ভিষন অভিমান হয়।

অংশু শ্রীতমাকে ফোন করার পর একটি বড় গয়নার দোকানে ঢোকে।অংশুর এক দূর সম্পর্কের ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে তারা এই দোকানে এসেছিল, এবং নতুন কনের জন্য কিছু গয়না পছন্দ করে কিনেছিল।সেসময় শ্রীতমা একটি হার বার বার দেখছিল,সেটা অংশুর চোখ এড়ায়নি। সে বুঝেছিলাম ওই হারটা শ্রীতমার পছন্দ হয়েছে।আজ অংশু ঐ গয়নাটি কিনে বাড়ি এলো।এসে দেখে মোমবাতি আর প্রদীপ দিয়ে পুরো বাড়ি সাজানো।শ্রীতমার এ এক সুন্দর গুণ।ও সব কিছু নিখুঁত করে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখে।শ্রীতমা অংশুর জন্য অপেক্ষা করতে করতে টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিল। অংশু ধীরে ধীরে শ্রীতমার কাছে এগিয়ে যায়,দেখে শ্রীতমা অপরূপ সেজেছে।একটা লাল শিফন শাড়ি পরেছে,হাতে,কানে, গলায় মানানসই গয়না।চুলে খোঁপা করে গোলাপ দিয়ে সাজিয়েছে চুলটা।ও বাড়িতে এমনিতেই পরিপাটি থাকে।আর আজ তার জীবনের এক বিশেষ দিন আজ তো সে সাজবেই।মুগ্ধ হয়ে অংশু দেখছিল শ্রীতমাকে।আলো আঁধারীর এক মায়া তৈরি হয়েছে চারদিকে।

অংশু শ্রীতমার কপালে চুমু দেয়।তাতে শ্রীতমার ঘুম ভেঙে যায়।অভিমানের সুরে বলে,"এই তোমার আসার সময় হলো,আমি সারাদিন ধরে তোমার পছন্দের সব রান্না করে"............অংশুর তর্জনী শ্রীতমার ঠোঁট স্পর্শ করে বাকি কথা থামিয়ে দেয়।অংশু শ্রীতমাকে নিয়ে তাদের ঘরের ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে তার গলায় সদ্য কিনে আনা হারটা পরিয়ে দেয়।শ্রীতমা অবাক হয়ে অংশুর দিকে তাঁকায়।অংশু বলে,"আমি জানতাম এই হারটা তোমার পছন্দ হয়েছিল, তাই আজ কিনতে গেছিলাম। তুমি ভাবো আমি তোমাকে লক্ষ্য করিনা,তা নয় আমার প্রকাশটা কম।তাই তুমি আমাকে ভুল বোঝো।আমি বুঝি তোমার একা লাগে এখানে থাকতে।আমি ব্যবস্থা করবো সেটারও।"একটানা এতো কথা বলে অংশু একটু চুপ করে।শ্রীতমা বলে,"আমি তোমার উপর সত্যিই খুব অভিমান করেছিলাম ।কিন্তু আজকে এই উপহারটা না দিলেও হোতো,তোমার জন্য একটা উপহার আমি রেখেছি।"এ কথা বলে শ্রীতমা একটা খাম অংশুর হাতে দেয়।অংশু সেটা পড়ে আনন্দে লাফিয়ে উঠে বলে,"শ্রীতমা তোমার এই উপহারের থেকে আমার উপহারটা ফিকে হয়ে গেছে।তুমি দেখো এবার থেকে আমি তোমার খুব যত্ন নেব,খুব খেয়াল রাখবো যাতে আমাদের নতুন জীবনটা আরো আনন্দের হয়।" দুজন মানুষ পরস্পরের হাতটা আরো শক্ত করে ধরে যাতে তাদের জীবনটা আরো আনন্দের হয়।


© Indrani Palit Karmakar