সূর্য-পূজা(পর্ব-১৭)
দেখতে দেখতে শারদোৎসব আবার এসে উপস্থিত। কাশ, শিউলি, শালুকের বাড়বাড়ন্ত আবার চোখে পড়ছে।সাদা মেঘের ভেলার আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে সুনীল আকাশ জুড়ে। আবার মহালয়ার পুণ্যক্ষণে কলকাতা য় দেখা হল সূর্য-পূজার দুজনেরই পূর্বনির্ধারিত স্থানে।সূর্যের ঐকান্তিক ইচ্ছা সে পূজাকে এই পূজায় একখানা শাড়ি দেয়। পূজার পছন্দমত শাড়ি কিনে দিতে সে তাকে সঙ্গে নিতে চেয়েছে। প্রতি পূজায় মা আর ভাইয়ের জন্যও সূর্য কাপড়জামা কেনে। সে চেয়েছিল এবার সেটা পূজার পছন্দেরই হোক। গড়িয়াহাটের প্রসিদ্ধ বস্ত্র বিপণী থেকে পূজা আর সূর্য সুলেখাদেবীর জন্য শাড়ি কিনল। সূর্যের অনেক অনুরোধে পূজা নিজের পছন্দমত একটা শাড়ি নিল। বারিদ আর সূর্যের জন্য দুটি শার্ট ও পূজা পছন্দ করে দিল। এরপর একটু খাওয়া দাওয়া করে যে যার বাসস্থানে ফিরে গেল। পূজার পছন্দ পছন্দ হল সবার। এতে সূর্যেরই মন ভরে গেল এক অনাবিল আনন্দে।
ঘরে ঘরেই এবার পূজা কাটছে ওদের। সূর্যের দেওয়া পেনড্রাইভ থেকেই সূর্যের বিশেষ অনুরোধে সূর্যের জন্য পূজা প্রতিদিন তার ছবি পাঠাতে থাকে নেটে।
দূর্গাষ্টমীর পুণ্য সকালে সূর্য আর পূজা দুজনেই যে যার জায়গায় মা দূর্গার রাতুল চরণে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে আগামী পূজার আগে নিজেদের সম্পর্কে র শুভ পার্থিব পরিণতির জন্য প্রার্থনা করল।নবমীতে প্রথমবার সুলেখাদেবীর সঙ্গে যাজ্ঞসেনীদেবীরও সৌজন্যমূলক কথোপকথন হল। বিজয়া দশমীতে সরোসিজবাবু বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় করতে ফোন করলেন। কমলবাবু র সাথে কথা হওয়ার পর পূজার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা প্রকাশ করলেন।
পূজা:"হ্যালো।বিজয়ার প্রণাম নিও। "
সরোসিজবাবু:"তুমিও আমার আশীর্বাদ নিও মামণি। তোমার থেকে একটা কথা জানার ছিল।"
পূজা:"কি কথা বলই না। "
সরোসিজবাবু:"তোমার বাবার সঙ্গে কথা হল। মোক্ষদাশঙ্করকে আমি তোমার আর সূর্যের বিয়ের প্রস্তাবটির বিষয় সম্মতি জানাতে হবে। আমি যেতে রাজি। কিন্তু তুমি সবদিক ভালো করে ভেবে মনস্থির করেছো তো মামণি? "
পূজা:"হ্যাঁ। "
সরোসিজবাবু:"তাহলে আগামী কাল আমি মোক্ষদাশঙ্করকে সূর্যের বাড়িতে এই বিষয় আমাদের সদর্থক মতামত জানাতে বলে আসছি। ভালো থেকো মামণি। এটুকু জেনো তোমরা সুখি হলে আমরাও সুখে থাকবে। "
এভাবেই শুধাংশুবাবুর গত বছর করা ভবিষ্যৎবাণী কোজাগরী লক্ষ্মী পূর্ণিমা র আগেই সূর্য-পূজার জীবনে সত্যতা লাভ করল।
মা লক্ষ্মীকে এবছর ধন্যবাদ জানিয়ে পূজা আগামী বছর জোড়ে এসে শাড়ি-এয়োসাজ সহ পুজো দেবে মানত করল।
এবছর কালী পূজায় পূজা তাদের এগরার বাড়িতে হওয়া বার্ষিক কলীপূজায় সঙ্কল্প থাকার সিদ্ধান্ত নিল। সূর্য কালীপূজা র বারও রাখে। এবছর দুজনেই এগরায় থেকে কালীপূজা র রাতে তাদের প্রেমকাহিনী র দীপাবলি উদ্যাপন করল যেন। সারারাত ফোনে কথাও হল। প্রতীক্ষা শুরু হল বিবাহ বাসরের। দীপাবলি র দীপশিখা র মতো দীপ্ত দুটি মন ও আত্মার পূর্ণ মিলনের প্রতীক্ষায় প্রকৃতিও দিন গুনতে থাকল ক্রমাগত।
© বুনানী