...

10 views

জিবন্ত এনিমেশন |Jibonto Animation|
লেখিকার নাম ঃ নাজিয়া তুল ফাতাহ।
প্রবন্ধঃ ওরা বাবার অপেক্ষায়।

এবারের শীতের প্রকোপ এতোটা বেশি ছিল যে, বাইরের কনকনে ঠান্ডা হাওয়া কিছুতেই, সহ্য করার মতো না। তবুও, হাটতে হাটতে স্টেশনে ছেড়ে গ্রামের মেঠোপথ ধরে হাটছি। এখন ঘড়িতে নটা বেজে পচিশ মিনিট। আমি তো রীতিমতো অবাক, পৌছানোর কথা ছয়টায়, কিন্তু এতোটা দেরি হয়ে গেছে। এদিকে শশুরবাড়ি থেকে আমাকে কেউ রিসিভ করতে এলো না।আমি তো আগেই চিঠিটা দিয়েছি ওদেরকে। ক্ষুধায় পেটে ইদুর দৌরাচ্ছে। হাতে শশুরবাড়ির জন্য দু হাড়ি মিষ্টি।এইতো একটা ভ্যান, পেয়েছি। যাক ভাগ্যটা ভালো। অনেক্ষন পর মনে আনন্দ লাগছে৷ ভ্যানওয়ালার সাথে আমার কথাকোপনঃ
ভ্যানওয়ালাঃ স্যার, উঠে পরুন। এতো শীতে মারা পরবেন যে। বেশি লাগবে না, ভাড়া ত্রিশ টাকা।
আমিঃ টাকা নিয়ে চিন্তা নেই। আমি শুধু তারাতারি বাড়িতে পৌছুতে চাই।
এই বলে উঠে পরলাম ভ্যানে। কিছুদূর এগিয়ে যেতেই চারটা বাচ্চা ভ্যান থামিয়ে পথ আটকে দারালো। তারা বলছিল ঃ "বড়দাদা, বড়দাদা ,
, ভ্যান থামান, ভ্যান থামান, দাদাভাই। ওদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম ঃ" কারা তোমরা?"
বাচ্চা তিনটের মধ্যে মাঝারি সাইজের একজন বলল, "আমরা আপনার শশুরবাড়ির লোক, আপনাকে নিতে এসেছি, বড়দাদা"
আমি বললামঃ আচ্ছা, আচ্ছা, তো স্টেশনে আনতে যাওনি কেনো?
বাচ্চাঃ হাটতে হাটতে এসেছি তো অনেকটা পথ, তাই একটু দেরি হয়ে গেলো৷ ও আপনি কিছু মনে করবেন না।
আমি ঃ না না একদম ঠিক আছে, তোমরা শীঘ্রই উঠে পরো ভ্যানে। বেশ রাত হয়েছে। এখন দেরি না করাই ভালো।
বাচ্চাঃ ঠিক বলেছেন, বড়দাদা।
আমি, ভ্যান ওয়ালা, আর বাকি চারজন একই ভ্যানে চরে যাচ্ছি।
রাত তখন দশটা বেজে পাচ মিনিট। আমাদের ভ্যান চলছে। নিশি রাত বাকা চাঁদ আকাশে। জোতস্না মাখা রাত আমাদের ভ্যান চলছে। হঠাত কেমন একটা চপচপ কিছু খাওয়ার শব্দ। চাদের আলোতে স্পষ্ট আমি দেখতে পেলাম, এখানে চারটা বাচ্চা আমার মিষ্টির হারি থেকে মিষ্টি বের করে চপাচপ খেয়ে চলেছে। জোতস্নার আলোতে কি বিভৎস রকমের চেহারা, কেউ লম্বা হা করে খাচ্ছে, কেউ আবার মুখের মধ্যে ডপাডপ দিয়েই চলেছে। কারো কান বড় কুলোর মতো, কারো নাক লম্বা, কারো চোখ ঠিকরে বাইরে বেরিয়ে আসছে, কারো জিভ যেনো ভেতোরেই ঢুকছে না। আমি এটা দেখে ওখানেই বেহুশ। পরের দিন নিজেকে দেখতে পেলাম শশুরবাড়িতে। সব কিছু তখন সবাইকে খুলে বললাম। তখন তারা বললে, বৃষ্টির কারোনে চিঠি পোউছুতে পারেনি, নাহলে ঠিক আমাকে তারা আনতে যেতো স্টেশন থেকে। পরে অবশ্যি জানতে পারলাম,
আর বাচ্চা চারটে ছিল বাবার অপেক্ষায়, তাদের বাবা ট্রেনে করে আসবে ভেবে তারা রোজ অপেক্ষা করে। তাদের বাবা আসার পথে ট্রেন এক্সিডেন্ট এ মারা যায়, বাবার মৃত্যু শোকে মা পাগল হয়ে যায়, আর চারটে বাচ্চাকেই মেরে ফেলে এরপরে নিজেই আত্মহত্যা করে। তাই তারা আজো অপেক্ষা করে বাবার জন্য। বাবা কবে আসবে।