...

12 views

স্মৃতি
স্মৃতির সাগরতীরে ফেলে আসা অমূল্য সময়ের নুড়িপাথর।আরও একটা নতুন বছরের শুরু। অপেক্ষায় আরো অনেক অভিজ্ঞতা। এই ভাবেই বছরের পর বছর ইতিহাসের হাত ধরে এগিয়ে চলে সময়। পুরানো স্মৃতি গুলো মলিন হয়ে যায়, পুরানো কষ্টের তিব্রতা গুলো কেমন যেন ফিকে হয়ে আসে। জীবনের পড়ে ফেলা অধ্যায়ের মত বিদায় নেয় আমাদের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটি।আসা যাওয়ার এ এক নিরন্তর খেলা।

এরাম‌ই এক বছর শুরুর দিনে বিদায় নিয়েছিলেন আমার ঠাকুরদা।জন্মের পর থেকে কোনোদিন ও দেখিনি,বলা যেতে পারে এক কাল্পনিক চরিত্র মাত্র,কিন্ত ভীষণ সজিব। যতই গল্প শুনেছি তত‌ই এক শূন্যতা অনুভব করেছি।
তখনকার দিনে উনি ছিলেন এ-মে পাস ও খুব সৌখিন একজন মানুষ। ওনার হাতের লেখা বর্ণনা করার ভাষা আমার জানা নেই। সেগুলো আজ‌ ও সুরক্ষিত আছে আমার কাছে।পার্ক স্ট্রিটের এক নির্দিষ্ট দোকান থেকে সেলাই করানো কোট-প্যান্ট ছাড়া পড়তেন না, এছাড়া সম্পূর্ণ সাদা বাঙালি পোশাকের বাইরে ওনাকে কেউ দেখেনি,সাথে চোখে সোনালী ফ্রেমের চশমা, চোখ বন্ধ করলেই আজ‌ও দেখা যায়।
একটা গল্প বলি নাহলে স্বাদহীন হয়ে যাবে।
আমার ঠাকুরদা কোনোদিন যে দারিদ্রতার সম্মুখীন হয়ে নি তা নয়। সেরাম‌ই এক সময়ের কথা।
খাদ্যসামগ্রী খেনার জন্য গোনাগুনতি পয়সা নিয়ে বাজারে গেছেন। তখনকার দিনে সেটা পাঁচ আনা বা ছ-আনা,সেটুকুই সম্বল। রাস্তায় একজনের সাথে হঠাৎ দেখা, তিনি ঠাকুরদার কাছে নিজের অর্থ কষ্টের কথা জানিয়ে কিছু টাকা চেয়ে বসলেন। আমার ঠাকুরদা তখন সেই পাঁচ আনা পকেট থেকে বের করে ওনাকে দিয়ে দিলেন।তারপর বাড়ি ফিরে ঠাকুমার সাথে সেই দিনটা উপবাস করেই‌ কাটালেন।
প্রচুর গল্প , বলে শেষ হবে না। শেষের দিকে পার্কিনসা্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। প্রতি ছ-মাসে নার্ভের পরীক্ষা করাতে হত। অজস্র নার্ভের ওষুধ স্মৃতিশক্তি টাকেও নষ্ট করে দিয়েছিল।
আমার ছেলেবেলায় , আমার খেলাঘরের সঙ্গি তুমি ছিলেনা ঠিকিই কিন্তু তোমাকে দেখার ইচ্ছা চিরকাল‌ই রয়ে গেছে।১৬টা বছর তোমায় ছাড়াই কেটে গেল,আরো কাটবে জানি।কেনোদিন আমাদের নিশ্চয়ই দেখা হবে।