...

2 views

ভূত বাংলো
সময়টা পড়ন্ত বিকেল।শ্রেয়সী আর আমি দুজনেই বেশ গল্পের আসর জমিয়ে ফেলেছি।এমন সময় হঠাৎ সৌমিলিদির আগমন।



-"আরে সৌমিলি দি তুমি!কেমন আছো? "চেঁচিয়ে উঠলো শ্রেয়সী। আমি বেশ অবাক ও হতভম্ব হয়ে বসে আছি দেখে সৌমিলি দি আমায় এসে জড়িয়ে ধরলো।
আমার বাড়িতে আজ শ্রেয়সী এসেছে।এমন সময় সৌমিলি দি আসবে ভাবতেও পারিনি। ও আসায় আমাদের গল্পের আসর আরো জমে গেলো।

       হঠাৎ সৌমিলি দির মাথায় একটা প্ল্যান এলো। সে বললো -" এই শোন তোরা,এখন আমাদের কলেজ ছুটি।কোথাও বেরিয়ে আসবি?"
আমি: "এই তো! এদ্দিনে তোমার মাথায় ভালো বুদ্ধি এসেছে বল কোথায় যাবে।"
শ্রেয়সী: "চল। দেবকের ঐ দিকে গিয়ে পিকনিক করি"
সৌমিলিদি: "ধুর! পিকনিক! পিকনিকের গুলি মেরেছি! চল। তার থেকে ভুতের দেশে ঘুরে আসি।"


"ভুতের দেশ!" সমস্সরে চেঁচিয়ে উঠলাম আমি আর শ্রেয়সী।

"কোথায় সেই ভুতের দেশ?" - শ্রেয়সী।
"বলছি। বলছি। একটু সবুর কর। ভালো জিনিস পেতে হলে সবুর করতে হয়। শোন,পায়রাডাঙ্গা নেমে অটোয় উঠে বলতে হবে কমলপুর যাবো।তারপর কমলপুর থেকে সোজা হেটে দশ মিনিট গেলে সেই বাংলো,যেই বাংলোয় নাকি ভুত আছে।যদিও আমি অনেক ছোটবেলায় গেছিলাম তখন আমার বয়স ছিলো তিন।মা বাবা আর কাকু কাকিমার সাথে গেছিলাম..কিছুই মনে নেই।"- এতটা বলে সৌমিলি দি থামলো।


   " বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে!"- চেঁচিয়ে উঠলাম আমি।
শ্রেয়সী -"যখন সত্যি সত্যি ভুতে ঘার টা মটকাবে তখন দেখবি আহা!কি ইন্টারেস্টিং! ধেই ধেই করে নাচিস তখন।আর এই সৌমিলিদি তুমি দেশে এতো জায়গা থাকতে শেষে কিনা ধেরধেরে কমলপুর যাচ্ছ!হ্যা?বলিহারি তোমায়!কি বুদ্ধি!"
আমি:" আচ্ছা, সৌমিলি দি..তা বলি,জায়গা টা বেশ নির্জন তো নাকি?বেশ নির্জন এলাকায় ভুতের সাথে বসবাস করার মজাই আলাদা।"

শ্রেয়সী: "কি!কি বললি তুই!ভুতের সাথে বসবাস? মাথা টা কি একেবারেই গেছে নাকি?"
"কাকিমা শিগগির এক কাপ চা খাওয়াও তো!"


           বলতে বলতে চা হাজির।
"ধর ধর চা খা।মাথাটা বেগরবাই করছে তোর, তুই ঠিক আছিস তো অর্চি?"-শ্রেয়সী।
-" শুরু হলো তো আবার,থাম তুই"- বললাম আমি।
-"তা সৌমিলি দি তাহলে চলো যাওয়া যাক।"- আমি বললাম।
-শ্রেয়সী: " মানে?যাওয়া যাক মানে? এখন...কমলপুর...ভুতের দেশ...মানে?"
-আমি(অর্চি): "আরে ধুর!এখন কেন? বলছি,সব রেডি করে নিই।"
-সৌমিলিদি: "হ্যা,হ্যা, সেই ভালো ,কোথায় বলে -'শুভস্য শীঘ্রম'
সমস্সরে: হাঃ হাঃ।




   " প্লিজ,প্লিজ।রাজি হয়ে যাও না প্লিজ"- আমি বোঝাতে লাগলাম,বাবাকে।
"হ্যা,কাকু,প্লিজ"- ওরাও বোঝালো।
শেষে বাবা রাজি হয়ে গেলো।শ্রেয়সী আর সৌমিলিদির ফ্যামিলিও রাজি। ঠিক হলো সামনের সপ্তাহের সোমবার আমরা ভূতবাংলোয় ভুত এক্সপেরিমেন্টে যাবো।
যতই দিন এগিয়ে আসছে ততই যেন মনে জোর পাচ্ছি,ইন্টারেস্ট বাড়ছে। একটা আলাদাই উত্তেজনা হচ্ছে।আমি ,সৌমিলি দি আর শ্রেয়সী তিন জনেই ভুতে বিশ্বাস করিনা,তবে শ্রেয়সী যে একেবারেই করে না তা নয়,একটু একটু করে ,সময় বিশেষে।


         দেখতে দেখতে নির্দিষ্ট দিন চলে এলো।উঠে পড়লাম ঘুম থেকে।সৌমিলিদি কে সময় মতো ফোন করতে যাবো এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো,খুলেই দেখি সৌমিলি দি।কিছুক্ষনের মধ্যেই শ্রেয়সী ও চলে এলো।
সকাল নটা। নটা কুড়িতে ট্রেন।যথারীতি সময়মতো স্টেশন চলে এলাম। ট্রেনে উঠে সিট ও পেয়ে গেলাম। গল্প করতে করতে চলে এলাম পায়রাডাঙ্গা। তারপর অটো তে উঠে কমলপুর।হাটতে হাটতে অদূরে দেখা যায় এক বাংলো।

সৌমিলিদি আনন্দে চিৎকার করে ওঠে " পেয়েছি!খুঁজে পেয়েছি!"
আমি সৌমিলিদি আর শ্রেয়সী তিনজনেই গেলাম বাংলোটাতে।

          সামনে বিশাল বাগান,মাঝখান দিয়ে সানবাধানো রাস্তা,বাগানে অনেক ধরণের গাছ- জুই, চন্দ্রমল্লিকা, চাঁপা, গোলাপ, নয়নতারা, লিলি, রক্তকরবী ইত্যাদি। বাগান পেরোলেই সামনে বিরাট বাংলো।
বাংলো তে ঢুকবো কি ঢুকবো না ভাবছি এমন সময় খাকি পোশাক পরা একজন বাংলো থেকে বেরিয়ে এলো। দেখে মনে হলো চৌকিদার।
লোকটা জিজ্ঞাসা করল- "আপনারা ভুত দেখতে এসেছেন?"
আমি বললাম হ্যা।
চৌকিদার: "বেশ তো। আপনারা একটু দাঁড়ান। বাংলোর ঐ কোনের ঘরে আমি থাকি।বাকি ঘর গুলো তালাবন্ধই থাকে। সপ্তাহে দুদিন পরিষ্কার করি, ঝাড়পোছ করি। আপনারা দাঁড়ান, আমি চাবি নিয়ে এসে আপনাদের ঘরগুলো বরং দেখাই। তারপর যে ঘর ভালো লাগবে সে ঘরেই নাহয় থাকবেন।"
সৌমিলি দি: "বেশ , যান, চাবি নিয়ে আসুন।"
                                       (কিছুক্ষন পর)
চৌকিদার: "আসুন, ভেতরে আসুন।"


                দুটো সিঁড়ি টপকে বাংলোতে ঢুকলাম। দেখলাম এক কোনে চৌকিদারের জন্য একটা ঘর, একটা রান্নাঘর, একটা বাথরুম। এছাড়া নিচের তলায় আরো চারটি ঘর। তার মধ্যে একটা ঘরে প্রচুর আসবাবপত্র- টেবিল, চেয়ার, কলসি, ঘড়া..... ইত্যাদি। অন্যান্য ঘরগুলো পরিষ্কার, শালকাঠের বিছানা,গদি,একটা টেবিল,চেয়ার ,বিছানা, আলমারি, ছোট আলনা ইত্যাদি রয়েছে। কাঠের সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেলাম দোতলায়। ওপরেও পাঁচটা ঘর,একটা ঘর তালাবন্ধ।অন্য চারটি খোলা।এতো সুন্দর ঘরের মধ্যে একটা oil panting দেখে চোখ জুড়িয়ে গেলো। একবার তাকালে যেন আর চোখ সরতে চায়না। ওপরের দুটি ঘরে আমরা থাকবো বলে ঠিক করলাম।ঐ দুটো ঘরের জানালা দিয়েই পেছনের পুকুর দেখা যায়। পুকুরের পাশেই ফলের গাছ রয়েছে, আম,জাম, কাঁঠাল,পেঁপে গাছ। দেখে চোখ ফেরানো যায়না।ঘরে ব্যাগ রেখে নিচে নামলাম আমরা।


            পুরো বাড়ি ঘুরে দেখানো হয়ে গেলে চৌকিদার বললো -" আপনারা বরং একটু ঘরে গিয়ে বসুন।আমি একটু বেরোবো,জরুরি দরকার আছে।"
শ্রেয়সী : "বেশ তো যান। দরকার তো থাকতেই পারে, আমরা বরং একটু পুকুরের ধারে গিয়ে বসি।কিছুক্ষন পর নাহয় ওপরের ঘরে যাবো।আপনি যান।"
চৌকিদার বললো -"আচ্ছা।আমি কিছুক্ষনের মধ্যেই ফিরে আসবো।"

চৌকিদার বেরিয়ে গেলো। আমরা সবাই বাড়িটার প্রশংসায় মত্ত হয়ে পুকুরের শানবাধানো সিঁড়ি তে গিয়ে বসে সবামাত্র গল্প শুরু করেছি , এমন সময় পিছন থেকে একজনের ডাক ভেসে এলো -" কে আপনারা?"

                       

চোখ ফেরাতেই দেখি একজন ভদ্রলোক। আমরা তাকে আদ্যন্ত ঘটনা বললে সে চোখ কপালে তুলে বলল - "দেখুন ,আমি এখনকার চৌকিদার।আর আপনারা যাকে দেখেছেন সে আগের চৌকিদার।কিন্তু...আসলে...মানে...."

আমি: "কি ব্যাপার বলুন তো?আমতা আমতা করছেন কেন? কি বলবেন?  বলুন না!"

চৌকিদার :"আপনারা যাকে দেখেছেন তিনি মানুষ নন...তিনি মারা গেছেন।"
সৌমিলিদি: "দেখুন,ভাট বকবেন না।আমরা তিনজনই খুবই সাহসী প্রকৃতির। আমাদের চোখে ধুলো দেওয়া অত সহজ নয়। আপনারা একজন মানুষ কে দেখিয়ে পরে তাকেই আবার ভুত বানাচ্ছেন।সেটা বুঝতেই পারছি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাড়ির চৌকিদার বাড়িটাকে ইচ্ছে করে ভুতের আস্তানা বলে বেড়ায়। আর আপনিও যেটা সেটাই করছেন সেটা বুঝতে আমাদের কারোর বাকি নেই।"
শ্রেয়সী: "একদম ঠিক বলেছো সৌমিলি দি। মিথ্যে বলে পার পাবেন না ঠিকাছে?"
আমি(অর্চি): "যাইহোক,এবার আসল কথা বলুন তো, আমরা এসেছি এখানে কদিন থাকতে, সত্যিকারের ভুত দেখতে ,কদিন পর চলে যাবো,আর আমাদের খাওয়াদাওয়া আর থাকার জন্য যা টাকা লাগবে ফেরার দিন দেব। এবার বলুন একটু আগে যিনি এসেছিলেন তিনি কে?"

চৌকিদার: "দেখুন, ম্যাডাম, আমি একবর্ণ ও মিথ্যে বলছিনা।উনি সত্যিই মারা গেছেন। আর এর পেছনে একটা ঘটনা আছে.."
আমি: "কি ঘটনা?শুনি।"
চৌকিদার: "আমার এই বাড়িতে চৌকিদার হয়ে আসার আগে আর একজন চৌকিদার কাজ করতো।তার নাম ও আশ্চর্জনক ভাবে আমার নামের সমান - রামলাল। এমনি মানুষটার ব্যবহার ভালো হলেও সে মোটেই সৎ মানুষ ছিলোনা। টাকা চুরি করতো। একদিন সে এই বাড়ির কর্তার টেবিল থেকে টাকা চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে আর কর্তাবাবু ওকে বাড়ি থেকে বের করে দেবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্ত সে অনেক কান্নাকাটি করে এমনকি পা ধরে ক্ষমাও চায় যে সে কখনো আর এমন ভুল করবে না কিন্তু কর্তাবাবু তার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন এবং পরেরদিন ভোরেই তাকে চলে যেতে বলেন। কিন্তু পরের দিন সকালেই ঐ পুকুর থেকে তার মৃত দেহ উদ্ধার হয়। তার নিজস্ব কোনো বাড়ি ছিলো না।ফলে তার যাওয়ার কোনো জায়গাও ছিলোনা। ফলস্বরূপ সে আত্মহত্যা করে।বাংলোর ঐ কোনের ঘরটায়ই ও থাকতো।আর তার পর থেকেই নাকি মাঝে মাঝে অনেকেই ওকে দেখতে পায়।"

     

কিছুক্ষন থেমে তিনি আবার বলা শুরু করেন - "এর পর কর্তাবাবুরা সবাই কলকাতা চলে যান।আমি নতুন চৌকিদার হয়ে কাজ করি।আর এই বাড়ির দায়িত্ব কর্তাবাবু আমায় দিয়ে গেছেন। আর আগের চৌকিদার সত্যিই বেঁচে নেই।উনি সত্যিই মারা গেছেন।"

সৌমিলিদি: "দেখুন আপনি বয়স্ক মানুষ। তাই আপনাকে ছোট করার মতো বাক্যব্যয় করতে আমি চাইছিনা, ভালোয় ভালোয় সত্যিটা বলুন।"

শ্রেয়সী: "আঃ!সৌমিলি দি! এতো চাপ দিচ্ছ কেনো? ছাড়ো।চলো ওপরের ঘরে বসে গল্প করি। আয় তো অর্চি।"
অর্চি: "কিন্তু সত্যিটা তো জানতেই হবে..."
শ্রেয়সী: "পরে হবে চল..."



            আমি,সৌমিলিদি, শ্রেয়সী তিনজনেই দোতলায় উঠে নিজেদের ঘরে ঢুকলাম। একটা ঘরে আমি আর শ্রেয়সী অন্যটায় সৌমিলিদি। তিনজনে একটা ঘরে বসে গল্প করছি এমন সময় নতুন চৌকিদার আমাদের ঘরে ঢুকে খাবারের তিনটে প্লেট দিলো। বললো - " খেয়ে নিন। অল্প জলখাবার আছে।"


খেতে খেতে সবাই মিলে ফানি ভিডিও দেখলাম। কিছুক্ষন পর প্লেট নিয়ে গেলো চৌকিদার। তারপর সবাই স্নান করে উঠে ছাদ থেকে ঘুরে এলাম। দুপুরে ভাত আর গরম মাংসের ঝোল খেয়ে তৃপ্তি পেলাম। তারপর ফোনে তিনজন সিনেমা দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি, কিছুই টের পাইনি। হঠাৎ শ্রেয়সীর ডাকে ঘুম ভাঙলো,দেখি বেলা পরে এসেছে। সৌমিলিদি কে ডেকে তুললাম। তারপর হাত মুখ ধুয়ে চৌকিদারকে তিন কাপ চা বলতে যাবো এমন সময় দেখি চৌকিদার নিজেই তিনকাপ চা নিয়ে এসে হাজির। তিনজনে চা খেতে খেতে বাবাকে ফোন করলাম, বাবাকে বললাম এই সারাদিনের কথা। বাবাও হেসে উড়িয়ে দিলো। সন্ধেবেলায় চা এর কাপ নিচে রাখতে গেলাম।


আমি: "এই নিন।চা এর কাপ নিন। ধন্যবাদ। আমি ভাবছিলাম ই যে চা খেলে মন্দ হবে না আর আপনিও বলার আগেই দিয়ে গেলেন। Thank you so much."

চৌকিদার: "হ্যা?কি বলছেন আপনি? আমি..চা...? আপনারা চা তো চাননি।আর না চাইলে কেনো দিতে যাবো? ভদ্রতার খাতিরে? না, তা দিইনা। কারণ, অনেকেই তো চা খায়না। তাই...তার মানে আবার..."

আমি: "অ্যা!"
চৌকিদার: "আজ্ঞে অ্যা নয় হ্যাঁ। "
আমি: "কিছুই বলার নেই।"
ওপরে উঠে এসে ওদের বললাম ঘটনাটা। বারবার এরকম কেনো ঘটছে এটাই বুঝতে পারছিনা। আগের মৃত চৌকিদার এর দাবি টা কি?কি চায় ও আমাদের থেকে?"

শ্রেয়সী: "আচ্ছা, আমরা কখনোই কিন্তু ওনাকে বিশ্বাস করছিনা। কিন্তু কেনো? ওনার কি দায় পড়েছে এসব মিথ্যে নাটক করতে?"
সৌমিলি দি: "সেটাই তো!"
অর্চি(আমি): ধুর! আমার মাথায় কাজ করছে না। তার থেকে চল আমরা বেরিয়ে আসি একটু।"
শ্রেয়সী: "চল"


         খুব শীঘ্রই রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। আশপাশ ঘুরে একটা দোকানে গিয়ে চপ, সিঙ্গারা খেলাম।
দোকানদারের কাছ থেকে জানতে পারলাম বাড়িটা সত্যিই ভুতুড়ে। যাইহোক,ভুত কি মানুষ, যা হয় হবে।
এক ঘন্টার মধ্যেই বাংলোতে ফিরে এলাম। ফিরে দেখি, নতুন চৌকিদার রামলাল রান্না করছে অবশ্য আসল কি নকল তা কি জানি নাকি! পুরোনো চৌকিদারের আসল রূপে দেখা সেতো একবারই হয়েছিল বাড়িতে প্রথম ঢুকেই। আর তার পর থেকে সে নতুন চৌকিদারের রূপ ধারণ করেই সব করে চলেছে।
এসব ভাবতে ভাবতে ওপরের ঘরে এলাম। হঠাৎ আমার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেলো।

আমি(অর্চি): "হ্যারে, শ্রেয়সী, যতদূর জানি ভুতাদের ছবি নাকি তোলা যায়না। আমরা ভুতের ছবি তুলবো বলেই তো এতো দামি ক্যামেরা নিয়ে এলাম। তাহলে চল আগের মৃত চৌকিদার অর্থাৎ যে নতুন চৌকিদারের রূপ ধরে মাঝে মাঝে দেখা দিচ্ছে তার ছবি তুলি। আর যেই ফটো উঠবে তখনি নতুন রামলাল জেঠু কে বলবো দেখুন, উনি ভুত নন, উনি আর আপনি একই মানুষ। বেকার মিথ্যের জাল ফেলে আমাদের জড়াচ্ছেন আর ভয়ের উদ্বেক সৃষ্টি করার চেষ্টা করে চলেছেন।"

শ্রেয়সী: "কিন্তু বুঝবো কি করে? কে আসল আর কে নকল?"
সৌমিলি দি: " Good Idea! শোন, তোরা সব সময়ই গলায় ক্যামেরাটা ঝুলিয়ে রাখবি। সব সময় তো চৌকিদার পাশে পাশে নেই। তাই যখনি আসবে তখন ই একটা করে ছবি তুলতে থাকবি।আর ওনাকে কিছুতেই বুঝতে দেওয়া চলবে না যে আমরা ওনার ছবি ক্যামেরা বন্দি করছি।"

আমি: "ব্যাস! এটাই হবে!"


চৌকিদার: "পকোড়া খাবেন আপনারা?"

শ্রেয়সী: "কিসের পকোড়া?"
সৌমিলি দি: "আগে ভেতরে আসুন।"
    এই সুযোগে আমি চৌকিদারের ছবি তুলে নিলাম। পকোড়া খাওয়া শেষ হলে ওদের ফটো দেখালাম। ছবি তে চৌকিদারকে দেখা যাচ্ছে।তার মনে ইনি আসল চৌকিদার, ইনি ভুত না।

আমি: "দেখাই যাক না কি হয়!"




         দেখতে দেখতে দশটা বাজলো। খাবার ডাক চলে এলো। চৌকিদার এসে ডেকে চলে গেলো। আমরা নিচে নামছি এমন সময় দেখি চৌকিদার আবার সিঁড়ি দিয়ে ওপরেই উঠছে।

চৌকিদার: " এই তো আপনারা। ভালোই হলো নিচে নামছেন। আমি তো ডাকতেই যাচ্ছিলাম আপনাদের।খাবার তৈরি।"
শ্রেয়সী: "ডাকতেই যাচ্ছিলাম মানে? ডাকলেন বলেই তো নিচে নামলাম আমরা!যাব্বাবা!"
চৌকিদার: "আমি তো আপনাদের ডাকিনি।"
আমি: " Shit! আমার ফটো তোলা হলোনা! Oh! No!"
সৌমিলিদি: "না, এভাবে হবে না। দাঁড়া এক কাজ করি।আমার ফোনে ভিডিও switch on করে রেখে দি বরং।"

    
       খেতে বসলাম।গরম গরম লুচি আর মুরগির মাংস আমরা খাচ্ছি। খেতে খেতে শ্রেয়সীর ফোন থেকে আমরা সেলফি তুললাম।চৌকিদারকে বললাম - "আসুন না একসাথে সবাই আমরা সেলফি তুলি।সেলফি তুলে আবার খাওয়া শুরু করলাম। হঠাৎ চৌকিদার বললো -" আপনারা খান।আমি আসছি।"
চৌকিদার যেতে না যেতেই দেখি বাথরুমের দরজা খুলে উনি বেরোচ্ছেন।
আমরা তো হতভম্ব। এর মাত্র উনি গেলেন বাইরের দরজার দিকে আর সঙ্গে সঙ্গেই বাথরুমের দরজা খুলে উনি কি করে বেরিয়ে এলেন? এ যে অবিশ্বাস্য!

চৌকিদার: " এই যে আমি চলে এসেছি। বলুন কি লাগবে।"
আমি: "আপনি...চলে এসেছেন মানে?আপনি তো বাইরে গেলেন। বাথরুমের মধ্যে থেকে কি করে বেরোলেন আপনি?"
চৌকিদার: "আমি? বাইরে? আমি বাইরে কি করতে যাবো? আমি তো বাথরুমে গেছিলাম আপনাদের বলেই।"
শ্রেয়সী: "মানে! তাহলে এতক্ষন আমাদের সাথে কে ছিলো? আপনি বাথরুমে গেছিলেন সে তো দশ মিনিট আগে। তাহলে এতক্ষন খাবার পরিবেশন কে করলো? কার সাথে সেলফি তুললাম?"


         ততক্ষনে ক্যামেরাতে তোলা ফটো ঘাটতে লেগেছি আমি, সৌমিলিদিও আমার পাশে। কিন্তু একি! একটা ছবিতেও তো চৌকিদারকে দেখা যাচ্ছেনা। খালি আমরা তিনজন।
সৌমিলিদির ফোন টা এতক্ষন দরজার পাশের টেবিলে অন করে রাখা ছিলো, যার ফলে খাবার টেবিলে এতক্ষন কি কি ঘটেছে তার একটা প্রমান পাওয়া গেলো। ক্যামেরায় দেখা গেলো এই চৌকিদার যা বলছে তা সত্যি।আর আগের মৃত চৌকিদারের কোনো ছবিই ওঠেনি কোনো অবয়বই নেই। শুধুমাত্র আমরা তিনজন হওয়ার সাথে কথা বলেছি।


আগের সব ঘটনা, ভুত দেখাকে অবিশ্বাস করলেও খাবার টেবিলের ঘটনা শ্রেয়সীর মনে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ভুত ব্যাপারটা ঢুকিয়ে দিয়েছে, এতদিন যে আমাদের সাথে বিশ্বাস করতো ভুত বলে কিছু হয়না, সেই বিশ্বাসে ভাঙ্গন ধরিয়েছে।

         ফলস্বরূপ, আমরা ঠিক করলাম পরেরদিন ভোরেই আমরা বাড়ি ফিরব, সোজা নৈহাটি। ভোর চারটেয় এলার্ম দিয়ে শুয়ে পড়লাম ঘরে গিয়ে। এইসব ঘটনার জন্য সৌমিলি দি আমাদের সাথে এক ঘরেই শুয়ে পড়ল।
4:03। উঠে পড়লাম। শ্রেয়সী আর সৌমিলি দি কে ডাকলাম। দাঁত ব্রাশ করে ওপরে চলে এলাম। দেখি শ্রেয়সী বসে বসে হাই তুলছে আর সৌমিলিদি বিছানায় নিদ্রাদেবীর আরাধনায় মত্ত।
আমি: "কিরে? বসে আছিস কেনো? ওঠ ওঠ, ফ্রেস হয়ে নে যা।"
শ্রেয়সী কোলগেট আর ব্রাশ নিয়ে নিচে গেলো। সৌমিলিদি কে আবার ডাকলাম। অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ওঠালাম। কিছুতেই উঠতে চায়না,যাইহোক অনেক বলে বলে ওঠালাম। শ্রেয়সী ঘরে ঢুকলো আর সৌমিলি দি নিচে চলে গেলো।

শ্রেয়সী: "বাব্বা! কোন দিকে সূর্য উঠছে রে আজ? "
আমি(অর্চি): "কেনো রে?"
শ্রেয়সী: "না তাই বলছি আর কি"
আমি: "সূর্য তো এখনো ওঠেনি। উঠবে উঠবে করছে।"
শ্রেয়সী: "আজ বোধ হয় পশ্চিম দিকে সূর্যোদয় হবে। "
আমি(অর্চি): "কেনো বলতো? হলোটা কি তোর?"
শ্রেয়সী: "কাল যখন এই ভূতবাংলোয় এলাম তখন এই এখনকার আসল জীবিত চৌকিদার বললেন ওনার নাকি সকাল সাড়ে দশটার আগে ঘুমই ভাঙে না। তাই ভাবছি, আজ হঠাৎ চারটের সময় উঠে জল ভরছে।"
আমি (অর্চি): " তাই তো! ব্যাপারটাতো ভেবে দেখিনি। আশ্চর্য! "
শ্রেয়সী: "আশ্চর্যের কি আছে? হয়ত সকাল সকাল কোথাও যাবে, তাই কাজ মিটিয়ে রাখছে। এতে এতো ভাবার কি আছে রে অর্চি?"
আমি: "এর মধ্যেও ভাবার আছে রে শ্রেয়সী।উনি আসল তো? মৃত চৌকিদার নন তো?"


এমন সময় সৌমিলিদির প্রবেশ।
সৌমিলিদি: "কি ব্যাপার রে তোদের? সকালবেলা ঘুম থেকে উঠতে না উঠতেই কি বকবক শুরু করেছিস? আর এই অর্চি কি আসল নকল বলছিস?"
আমি সৌমিলিদিকে ব্যাপার টা বলতে সৌমিলি দি বললো -"সাত সকালে ইয়ার্কি মারছিস? আমি দাঁত মেজে এলাম। কই নিচে তো কেউ নেই। আর চৌকিদারের ঘরের জানালা দিয়ে দেখলাম উনি ঘুমোচ্ছেন।"

         ব্যাস, ঘটনাটা বুঝতে আমার আর শ্রেয়সীর বাকি রইলোনা। যাকে আমি আর শ্রেয়সী দেখেছি তিনি মানুষ নন, ভুত, মৃত রামলাল। আর মজার বিষয় যে তিনি সৌমিলিদিকে দেখা দেননি।
যাইহোক, এসব কথা বলছি এমন সময় চৌকিদার আমাদের ঘরে হাজির।
- " হে হে। আপনাদের কথা আমি আড়াল থেকে শুনেছি। আমাকে আর ভুত ভাববেন না আমি জীবিত। উঠে পড়েছি, নিন আপনারা তৈরি হয়ে নিন আর আপনাদের বিল হয়েছে  
আমি বরং নিচে অপেক্ষা করছি। আসছি।"

সৌমিলিদি: "যাক, ভালোই হয়েছে উনি উঠে পড়েছেন। নে নে তাড়াতাড়ি সব গুছিয়ে নে।"

                                         (আধ ঘন্টা পর)
আমি (অর্চি): "কিগো সৌমিলি দি,আর কতক্ষন ঠোঁটে লিপস্টিক বোলাবে?"
সৌমিলি দি: "এইতো চল চল।"

     সব ব্যাগ নিয়ে আমরা তিনজন নিচে নামলাম। চৌকিদার নিচে দাঁড়িয়েই ছিলেন। তাই আর ওনার ঘরে যাওয়ার দরকার পড়লোনা। ওনার হাতে টাকাটা দিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম। উনিই অটো ধরিয়ে দিলেন। আবার যেতে বললেন। তারপর আর কি? সোজা বাড়ি।

সবামাত্র বাড়ি ঢুকেছি। চৌকিদারের নাম্বার থেকে ফোন -
- "দিদিভাই, আপনারা কোথায়? আমি চৌকিদার রামলাল বলছি।"
আমি(অর্চি): "আমরা বাড়ি চলে এলাম তো। এই তো সবে ঢুকলাম।
চৌকিদার: " ওমা! সেকি! আমাকে ডাকলেন না? টাকাও দিলেন না?"
আমি: "আপনি তো টাকা নিলেন। অটোতে তুলে দিলেন। আমাদের আবার আসতে বললেন।"
চৌকিদার: "সর্বনাশ! আবার ও আমার রুপ ধরে ঐ ভুতে টাকা নিয়ে নিয়েছে। আবারো একই গোলমাল হয়েছে। কি হবে?"
আমি: "কি আর হবে? ভুতের বাংলোতেই তো আছেন। ভুতের থেকেই বরং টাকাটা ভাগ করে নিন! কি বলেন! হাঃ হাঃ! "



সমাপ্ত
© Bengal Pirate