...

1 views

দুঃস্বপ্নের পথে
**"দুঃস্বপ্নের পথে"**


শীতের হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশার চাদর মুড়িয়ে মফস্বলের এই ছোট্ট শহরে যেন সারা বিশ্ব থেমে গেছে। শহরের প্রান্তে নির্জন এক বাড়িতে বসবাস করেন রেহান। ছেলেটির জীবন ছিল স্বাভাবিক, তবে তার গভীরে এক অদ্ভুত শূন্যতা। ছোটবেলা থেকেই রেহানের স্বপ্নগুলো ছিল বিশাল, কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু দুঃস্বপ্ন তার মনকে একদম ধ্বংস করে দিয়েছিল। একটি স্বপ্ন বারবার ফিরে আসে—রেহান দেখতে পায়, অন্ধকার এক পথ ধরে সে দৌড়াচ্ছে, চারপাশের সবকিছু ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে, তার পেছনে কিছু বা কেউ তাকে তাড়া করছে।

রেহান জানে, এ কেবল দুঃস্বপ্ন নয়। কিছু অদৃশ্য শক্তি যেন তাকে টানছে, তাকে মুখোমুখি হতে বলছে এমন এক বাস্তবতার, যা সে বুঝতে পারছে না।



দুঃস্বপ্নের জন্ম

সবকিছু শুরু হয়েছিল কয়েক মাস আগে, যখন রেহানের মা এক আকস্মিক দুর্ঘটনায় মারা যান। তার মা ছিলেন একমাত্র মানুষ, যিনি রেহানের সব দুঃখ কষ্ট দূর করতেন। কিন্তু তার মৃত্যু যেন রেহানের জীবনের সব আলো নিভিয়ে দেয়। এরপর থেকেই রেহান প্রায় প্রতিরাতেই একই দুঃস্বপ্ন দেখতে থাকে।

এক রাতে, সেই দুঃস্বপ্ন আবারও আসে। রেহান দেখতে পায়, সে এক অচেনা শহরের রাস্তায় হাঁটছে, আর তার পেছনে ছায়ামূর্তি তাড়া করছে। সে যত দ্রুত হাঁটে, ততই ছায়াটি তার কাছে আসে। হঠাৎ, সামনে এক পুরোনো বাড়ি দেখা যায়। রেহান বাড়িটিতে ঢুকতেই তার আশেপাশের সবকিছু এক অদ্ভুত নীরবতায় মুড়ে যায়। সেই নীরবতার মধ্যে এক ভয়ঙ্কর আওয়াজ শুনতে পায় সে—যেন কেউ তাকে ডাকছে, তার নাম ধরে চিৎকার করছে।

দ্বিতীয় অধ্যায়: বাস্তবতা ও স্বপ্নের দ্বন্দ্ব

রেহানের বন্ধু আদিত্য তাকে অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করে যে, এগুলো কেবল স্বপ্ন, এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। কিন্তু রেহানের মনে হয়, এ স্বপ্ন নয়, বরং কোনো ইঙ্গিত। একদিন সকালে, রেহান আদিত্যকে বলল, “তুই জানিস না, এ স্বপ্ন নয়। এ যেন কোনো অদৃশ্য শক্তির ডাক, যেন কিছু একটার মুখোমুখি আমাকে হতেই হবে।”

আদিত্য এসব কথায় মাথা ঘামাতে চায়নি, কিন্তু রেহান ভাবতে লাগল, যদি সত্যিই এর কোনো অর্থ থাকে? সে সিদ্ধান্ত নিল, সে তার দুঃস্বপ্নের উৎস খুঁজে বের করবে।



তৃতীয় অধ্যায়: অচেনা পথে যাত্রা

রেহান তার মায়ের মৃত্যুর স্থান থেকে কিছু তথ্য সংগ্রহ করার জন্য ছোট্ট সেই গ্রামে ফিরে যায়। সেখানে পৌঁছানোর পর, সে জানতে পারে তার মায়ের মৃত্যুটা ছিল অস্বাভাবিক। দুর্ঘটনার পরেও তার মা নাকি কয়েকটি অদ্ভুত বাক্য বলেছিলেন, যা স্থানীয়রা আজও ভুলতে পারেনি। তারা বলে, “এমন কিছু কাছাকাছি আছে যা আমাদের বুঝতে দেয় না যে আমরা কিসের মুখোমুখি হতে যাচ্ছি।”

রেহান হতবাক হয়ে যায়। সে উপলব্ধি করে, তার দুঃস্বপ্নের সঙ্গে এই গ্রামের কোনো না কোনো সম্পর্ক আছে।



চতুর্থ অধ্যায়: অতীতের ছায়া

রেহান খুঁজতে খুঁজতে পৌঁছায় এক পুরোনো রেকর্ডস অফিসে, যেখানে সে খুঁজে পায় তার মায়ের অতীত সম্পর্কে কিছু গোপন তথ্য। তার মা একসময় এই গ্রামের একজন জাদুকরী ছিলেন বলে বিশ্বাস করা হত, এবং তার মা মৃত্যুর আগমুহূর্তে কিছু গুপ্তশক্তির মুখোমুখি হয়েছিলেন।

তথ্যগুলো পড়ে রেহান বুঝতে পারে যে তার দুঃস্বপ্নের পেছনে সেই গুপ্তশক্তির কোনো হাত আছে। কিন্তু সে এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত নয়, কি ঘটতে যাচ্ছে তার সাথে।



পঞ্চম অধ্যায়: দুঃস্বপ্নের সত্যতা

এক রাতে, রেহান আবার সেই দুঃস্বপ্নের মুখোমুখি হয়। কিন্তু এবার সে আর পালানোর চেষ্টা করে না। বরং, সে সেই ছায়ামূর্তির দিকে এগিয়ে যায়। ছায়াটি এবার স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকে—এটা তার মায়ের মতো দেখতে! মায়ের সেই করুণ মুখ আর গভীর চোখ যেন কিছু বলতে চায়। রেহান ভয়ে কাঁপতে থাকে, কিন্তু সে বুঝতে পারে, পালানোর আর কোনো উপায় নেই।

হঠাৎ তার মা তাকে বললেন, “তুমি এই রহস্যের সমাধান করো। আমার মৃত্যু ছিল কেবল ঘটনার শুরু।”

রেহান অনুভব করে, তার দুঃস্বপ্ন আর শুধুই স্বপ্ন নয়। এটা হলো এমন এক বাস্তবতা যা সে উপেক্ষা করতে পারেনি। তার মায়ের মৃত্যু, সেই অজানা শক্তি, সবকিছু মিলিয়ে একটি গভীর রহস্য সৃষ্টি করেছে।


ষষ্ঠ অধ্যায়: ভয়ের মুখোমুখি

রেহান তার ভয়ের মুখোমুখি হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সে সেই পুরোনো বাড়িতে ফিরে যায়, যা তার স্বপ্নে বারবার আসে। সেখানে গিয়ে, সে একটি রহস্যময় চিঠি খুঁজে পায়, যা তার মা তাকে রেখে গেছেন। চিঠিতে তার মায়ের লেখা ছিল, “আমার মৃত্যু ছিল পরিকল্পিত। তোমাকে এর সমাধান করতে হবে, নয়তো তোমার জীবনও ধ্বংস হবে।”

রেহান সবকিছু মেলাতে থাকে। সেই ছায়ামূর্তি, তার মায়ের রহস্যময় কথা, সেই অদ্ভুত স্বপ্ন—সবকিছুই একে একে সামনে এসে দাঁড়ায়।



সপ্তম অধ্যায়: মুক্তি

শেষমেষ, রেহান সেই অদ্ভুত শক্তির মুখোমুখি হয়। সেই শক্তি তাকে ধ্বংস করতে চায়, কিন্তু রেহান তার মায়ের উপদেশ অনুসরণ করে। সে তার মনের গভীরতম ভয়কে জয় করে। যখন সে নিজেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়, তখন বুঝতে পারে, সেই শক্তি ছিল তার মায়ের মৃত্যুর পেছনে থাকা একজন পুরোনো শত্রু।

রেহান সেই শক্তিকে পরাজিত করে নিজের মুক্তি লাভ করে। সে তার মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে সক্ষম হয়, এবং তার দুঃস্বপ্নও চিরতরে শেষ হয়ে যায়।



**শেষ**



গল্পের সারমর্ম:
গল্পটি মানুষের ভয়ের সঙ্গে লড়াইয়ের প্রতীক। এটি দেখায়, কিভাবে আমরা আমাদের দুঃস্বপ্নের মুখোমুখি হয়ে তাদের জয় করতে পারি। রেহানের দুঃস্বপ্ন তার জীবনের একটি গভীর সত্যকে প্রকাশ করে, এবং সে সেই ভয়কে মোকাবেলা করে জীবনের নতুন আলো খুঁজে পায়।

✍️✍️✍️
© Indrani Palit Karmakar