...

6 views

জোঁকার সিন্দুক
জোঁকার সিন্দুক

বিঘা ছয়েক জমির উপর ভিয়ার পুকুর। হলদিয়ার গেঁওয়াডাব গ্রামে একদা ভূঞা নামক কোন এক জমি দারদের নাকি এই পুকুরটি ছিল। আশ্চর্যের বিষয় হল ভূঞা নামের কোন ফ্যামিলি বর্তমানে এই এলাকায় নাই। লোক কথায় পুকুরটির নাম ভিয়ার পুকুর।

একদা এই পুকুরের জল খেয়ে জীবন জাপন করত এলাকার মানুষ। বিশাল ও সুউচু চওড়া পাড় দিয়ে ঘেরা। পুকুরটির এলাকায় নাম ডাকও ছিল প্রচুর। কারন পুকুরে নাকি জোঁকা ছিল। তাই নাকি ঐ পুকুরে স্নান করতে নেবে অনেকের প্রাণ গেছে। এসবের পেছনে ছিল নাকি জোঁকাদের হাত।

তবে এই জোঁকাদের নাকি ছিল প্রচুর সুনাম। এই পুকুরে কেউ না মাছ ছাড়লেও, বছর শেষে বড়ো বড়ো রুই কাতলা আর পোনা মাছের দেখা মিলত। আর ছোট ছোট মাছের তো সীমাই থাকতো না। যাকে এক কথায় বলা হতো চুনা মাছ। প্রচন্ড চুনা মাছ জন্মাতো পুকুরটিতে। এবং সেগুলো ছিল ভীষণ সুস্বাদু। এই পুকুরের মাছের সাদ ও সুগন্ধের সুনাম ছিল। পুকুরটি নাকি কখনো শুকনো হতে দেখা যায়নি। পরিষ্কার স্বচ্ছ জল, পাপিষ্ঠ বা অপরাধিরা এই পুকুরের জলে নামলেই জোঁকা কাদা মাটি চিরে ধেয়ে আসত তার দিকে।

 একদা নাকি, দুটো চোরকে ধাওয়া করেছিল গ্রামবাসীরা। তাদের হাতে চোরেরা যদি ধরা পড়ে তবে তারা মারা পড়বে। তাই তারা পুকুরের উত্তর পূর্ব কোনে বড়ো ঝাঁকড়া একটি কদম গাছের তলায় আশ্রয় নেয়। লোকেদের তাড়া খেয়ে পুকুর পাড়ে আশ্রয় নেওয়া চোরেরা তৃষ্ণার্ত। তারা পুকুরের জল খেতে গেল। তারা যেই পুকুরে নামল তাদের জোঁকা পা ধরে টেনে নিল পুকুরে। তার পর সেই ভোর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত পুকুরের জল উতাল পাতাল করল জোঁকারা। এমন বহু কাহিনী এই পুকুর নিয়ে লোকমুখে শোনা যায়।

আগেকার দিনে বাড়িতে বড়ো কোন অনুষ্ঠান হলে, বাসন কোসন বা রান্নার সরঞ্জাম আজকের মতো ডেকোরেটার্সে পাওয়া যেত না। কিন্তু এই পুকুরের উত্তর পূর্বকণে কদম গাছের তলায়, বাড়ির অনুষ্ঠানে কি কি লাগবে তার একটি তালিকা সাদা কাগজে লিখে দিয়ে এলে, সবকিছু পাওয়া যেত। ওখানে কদম গাছের তলায় অনুষ্ঠানের আগের দিন রাতে দিয়ে এলে, পরের দিন রাতে পুকুরে ঐ উত্তর পূর্বকণ থেকে একটি সিন্দুক পাওয়া যেত। ঐ সিন্দুক সূর্যালোকে খোলা যেতো না। সূর্যাস্তের পর কোন একক ব্যক্তিদারা খুলতে হতো। তবে পাপিষ্ঠ বা আপরাধীরা সিন্দুক খুলতে চাইলে তার মুখ থেকে রক্ত উঠে মারা যেত।

সেই সিন্দুকে থাকত পিতল কাঁসার হাড়ি, কড়া, হাতা, খুন্তি, থালা, বাটি, জগ ইত্যাদি। তবে হ্যাঁ কাজ শেষ হলে আবার তা ভালো করে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে, গোছ গাছ করে, ঠিক যেমনিভাবে সাজানো ছিল, তেমন ভাবে সাজিয়ে সিন্দুকে ভরে সূর্যাস্তের পর অর্থাৎ রাতে আবার সেই স্থানে দিয়ে আসতে হতো।  সিন্দুকে থাকা কোন কিছু হারিয়ে গেলে বা চুরি হয়ে গেলে তো রক্ষে নাই।

পরবর্তীতে নাকি কোন পরিবার সাহস করে জোঁকাদের থেকে এই সরঞ্জাম নিত না। কারন নিজেরাই নিজেদের স্বচ্ছ ও নিস্পাপ কি না তা নিয়ে সংশয়ে থাকত।

তবে হ্যাঁ আমি সেই কাঙ্খিত পুকুরের উত্তর পূর্ব কোনের কদম গাছ না দেখলেও, পুকুরের উত্তর পাসের মাঠে দুটো কদম গাছ দেখেছি। যেখানে আমরা ছেলেবেলায় আব্দুল খেলতাম। যখন ছোট ছিলাম, সন্ধের পর এই বিশাল পুকুরটি খা খা করত। এবং পকুরটার চারিদিকে নীরবতা দেখে শরীরের লোম খাড়া হয়ে যেত।

আজ যতো দ্রুত নতুন দিন চলে আসচ্ছে, যুগের পরিবর্তন তেমনি হচ্ছে। পুকুর সহ এলাকার আমুল পরিবর্তন হয়েছে। পুকুরের চারিদিকে আজ স্কুল, খেলার মাঠ, বাজার, মন্দির, মসজিদ, বসত বাড়ি ক্লাব ইত্যাদি। 

এখনও অজাচিত ভাবে সেই ভিয়ার পুকুরে নামিদামি মাছ জন্মায়। যা খুব সুস্বাদের। তবে হ্যাঁ দুঃখের বিষয় এই পুকুরে আশির দশকের আগে অনেক বাচ্চা ছেলে ডুবে মারা গেছে। আমাদের এই সময় আমার দেখা দুটো শিশু এই পুকুরে ডুবে মারা গেছে, যদিও অনেক শিশুকে বাঁচানো গেছে।

👉 এধরনের পুকুরের ঘটনা হয়তো আপনার এলাকাতেও আছে। এমন টা যদি থাকে, কমেন্ট করে জানাবেন প্লিজ।


আইয়ুব খাঁন
২৬/০৯/২১


© All Rights Reserved