শেষ খেয়া
শেষ খেয়া
বিমলের সেদিনটা মোটে ভালো গেলোনা। অফিসে বসের ঝাড়, তারপর রাস্তায় লম্বা জ্যাম। পুরো জেরবার অবস্থা। ঘাটে পৌঁছাতে প্রায় আটটা বেজে গেল। ইস্! কি দেরি না আজ হল। শেষ খেয়াটা যদি মিস্ হয় আর রক্ষে নেই।এসব ভাবতে ভাবতে ঘাটের সামনে এসে দাঁড়াল বিমল। সত্যি শেষ খেয়াটা নেই। হা ঈশ্বর! এবার কি করব আমি? ভাবল বিমল। হঠাৎ সম্মুখে বিদ্যমান এক ছোট্ট নৌকা তার কাতর দৃষ্টিকে আকৃষ্ট করল। যেন মরুপ্রান্তর মাঝে এক চিলতে মরুদ্যান। "ও ভাই, বলি ও মাঝি ভাই, যাবে নাকি?
আমি বংশীতলা ঘাটে যাবো", হাঁক পাড়লো বিমল।
একটু ধরা ধরা গলায় সে উত্তর দিল, আজ্ঞে কত্তা যাবো না কেন, যাবার জন্যি তো খেয়া ঘাটে ভিড়াইচি। আসেন কত্তা, উঠে আসেন। আপনার জন্যি তো অপেক্ষা করতেছিলাম। ভারি অদ্ভূত, লোকটা বলে কি? আমার জন্যে অপেক্ষা? যাকগে, উঠে তো বসি, ভাবলো বিমল। বিমল সন্তরপণে নৌকায়ে উঠে বসলো। কিছু পথ অপার স্রোতোশ্বিনীর বুক বেয়ে নির্বিঘ্নেই ভেসে চললো ছোটো খেয়া খানি। তারপর হঠাৎই শুরু হল এক তাণ্ডব লীলা। কৃষ্ণ বর্নে আচ্ছাদিত হল অনন্ত নীলিমা। চারিদিক যেন তীব্র হাওয়ার স্পর্শে কাতর হয়ে উঠলো। নৌকাটা যেন এবার ক্রমশ এক অন্তহীন গহবরে তলিয়ে যেতে উদ্যত হচ্ছে। বিমল এবার ভীত সন্ত্রস্ত কণ্ঠে বললো, ও মাঝি ভাই, এ কোন ধংস লীলা আরম্ভ হল? কিছু একটা কর ভাই। মাঝি জবাব দিল, কত্তা গো, আপনি ভয় পাবেন না। এটা যে সে ঝড় নয় কত্তা। এ হল তেনাদের কাজ, ভালো ভাষায় যারে কয় প্রেত প্রভাব। এতে কেউ বাচেনা কত্তা। তবে উদ্বেগের কিছুই নেই। এ হল খণিকের পীড়া তারপর দেখবেন সব কেমন শান্ত হয়ে যাচ্ছে। মানে? কিসব বলছো ভাই? প্রেত? মানে ভূত? তারা তোমাকে ছেড়ে দেবে? কৌতূহলি সুরে প্রশ্ন করলো বিমল। হাহাহাহাহাহা!!! অট্টহাস্যে ফেটে পড়লো মাঝি। আজ্ঞে কত্তা, মরা মানুষরে আর কয়বার মারবে কইতে পারেন? তা ছাড়া স্বজাতিকে তারা কিছুই বলবেনা। ক ক ক কি বললে? স্বজাতি? মরা মানুষ? বিস্ফারিত নেত্রে জিজ্ঞেস করল বিমল। আজ্ঞে কত্তা, ঠিকই শোনছেন। আমার নাম ছিল পরান মাঝি। দুই বৎসর আগে এই গেরামে এসে পৌঁছাই। ভাবলাম এই পথেই খেয়া পারাপারা কৈরা জীবন কাটাইয়া দিবো। কিন্ত নদীতে যে তেনাদের বাস ছিল তা তো আমি জানতুম না হুজুর। এক দিন এক সওয়ারি নিয়ে কৈলাশগঞ্জ গিসিলাম। ফিরতে সন্ধে ঘনায়ে গিসিলো কত্তা। এই যে জায়গাটা, এহেনেই আমারে ওরা মেরে দিল হুজুর। সেই থেকেই এই মায়া খেয়াতে লোক পারাপার করি কত্তা। তবে এই নাও বংশীতলা বা কৈলাশগঞ্জ যায়না কত্তা। এই নাও এক্কারে ভবসাগর পার হইয়াই থামবে।
পরদিন সকালে বংশীতলা খেয়া ঘাটে বিমলের মৃতদেহটা আবিস্কার করল গ্রামবাসীরা।
© Dipanjan
বিমলের সেদিনটা মোটে ভালো গেলোনা। অফিসে বসের ঝাড়, তারপর রাস্তায় লম্বা জ্যাম। পুরো জেরবার অবস্থা। ঘাটে পৌঁছাতে প্রায় আটটা বেজে গেল। ইস্! কি দেরি না আজ হল। শেষ খেয়াটা যদি মিস্ হয় আর রক্ষে নেই।এসব ভাবতে ভাবতে ঘাটের সামনে এসে দাঁড়াল বিমল। সত্যি শেষ খেয়াটা নেই। হা ঈশ্বর! এবার কি করব আমি? ভাবল বিমল। হঠাৎ সম্মুখে বিদ্যমান এক ছোট্ট নৌকা তার কাতর দৃষ্টিকে আকৃষ্ট করল। যেন মরুপ্রান্তর মাঝে এক চিলতে মরুদ্যান। "ও ভাই, বলি ও মাঝি ভাই, যাবে নাকি?
আমি বংশীতলা ঘাটে যাবো", হাঁক পাড়লো বিমল।
একটু ধরা ধরা গলায় সে উত্তর দিল, আজ্ঞে কত্তা যাবো না কেন, যাবার জন্যি তো খেয়া ঘাটে ভিড়াইচি। আসেন কত্তা, উঠে আসেন। আপনার জন্যি তো অপেক্ষা করতেছিলাম। ভারি অদ্ভূত, লোকটা বলে কি? আমার জন্যে অপেক্ষা? যাকগে, উঠে তো বসি, ভাবলো বিমল। বিমল সন্তরপণে নৌকায়ে উঠে বসলো। কিছু পথ অপার স্রোতোশ্বিনীর বুক বেয়ে নির্বিঘ্নেই ভেসে চললো ছোটো খেয়া খানি। তারপর হঠাৎই শুরু হল এক তাণ্ডব লীলা। কৃষ্ণ বর্নে আচ্ছাদিত হল অনন্ত নীলিমা। চারিদিক যেন তীব্র হাওয়ার স্পর্শে কাতর হয়ে উঠলো। নৌকাটা যেন এবার ক্রমশ এক অন্তহীন গহবরে তলিয়ে যেতে উদ্যত হচ্ছে। বিমল এবার ভীত সন্ত্রস্ত কণ্ঠে বললো, ও মাঝি ভাই, এ কোন ধংস লীলা আরম্ভ হল? কিছু একটা কর ভাই। মাঝি জবাব দিল, কত্তা গো, আপনি ভয় পাবেন না। এটা যে সে ঝড় নয় কত্তা। এ হল তেনাদের কাজ, ভালো ভাষায় যারে কয় প্রেত প্রভাব। এতে কেউ বাচেনা কত্তা। তবে উদ্বেগের কিছুই নেই। এ হল খণিকের পীড়া তারপর দেখবেন সব কেমন শান্ত হয়ে যাচ্ছে। মানে? কিসব বলছো ভাই? প্রেত? মানে ভূত? তারা তোমাকে ছেড়ে দেবে? কৌতূহলি সুরে প্রশ্ন করলো বিমল। হাহাহাহাহাহা!!! অট্টহাস্যে ফেটে পড়লো মাঝি। আজ্ঞে কত্তা, মরা মানুষরে আর কয়বার মারবে কইতে পারেন? তা ছাড়া স্বজাতিকে তারা কিছুই বলবেনা। ক ক ক কি বললে? স্বজাতি? মরা মানুষ? বিস্ফারিত নেত্রে জিজ্ঞেস করল বিমল। আজ্ঞে কত্তা, ঠিকই শোনছেন। আমার নাম ছিল পরান মাঝি। দুই বৎসর আগে এই গেরামে এসে পৌঁছাই। ভাবলাম এই পথেই খেয়া পারাপারা কৈরা জীবন কাটাইয়া দিবো। কিন্ত নদীতে যে তেনাদের বাস ছিল তা তো আমি জানতুম না হুজুর। এক দিন এক সওয়ারি নিয়ে কৈলাশগঞ্জ গিসিলাম। ফিরতে সন্ধে ঘনায়ে গিসিলো কত্তা। এই যে জায়গাটা, এহেনেই আমারে ওরা মেরে দিল হুজুর। সেই থেকেই এই মায়া খেয়াতে লোক পারাপার করি কত্তা। তবে এই নাও বংশীতলা বা কৈলাশগঞ্জ যায়না কত্তা। এই নাও এক্কারে ভবসাগর পার হইয়াই থামবে।
পরদিন সকালে বংশীতলা খেয়া ঘাটে বিমলের মৃতদেহটা আবিস্কার করল গ্রামবাসীরা।
© Dipanjan