...

2 views

একমাত্র তুই।।6।।
ছুটতে ছুটতে এসে ওয়াশ রুমে ঢুকল। অঝোরে কাঁদতে লাগল। ওর মনে হচ্ছে যেন ওর সবকিছু শেষ হয়ে গেছে।
নিজেকে বারবার বলছে কেন করল অমু দা এরম আমার সাথে,কেন?কেন? সব কি মিথ্যে? সওব? তাহলে পৌলমি ছিল সেই স্পেশাল পারসন।আর এটা ছিল অমু দার সারপ্রাইজ। কিন্তু এটা কিভাবে করতে পারল?তনি নিজেকেই বারবার প্ৰশ্ন করছে...
আচ্ছা অমু দা তো কখনো বলেনি যে ও আমাকে ভালোবাসে।তাহলে কি অমু দার মনে কিছু ছিল না আমাকে নিয়ে।তাহলে এসব কি ছিল এত কেয়ার, এত যত্ন,এত অধিকার বোধ?
তনির মনে হচ্ছে সেকি তনির মনের কথাও বুঝতে পারেনি।যদি বুঝতে পেরে থাকে তাহলে কেন খেললো তনিকে নিয়ে এরম খেলা। ওর অমু দা তো এরম নয়।হাজার প্রশ্নের ভিড় তনির মনে।কতক্ষন ওভাবে দাঁড়িয়ে ছিল তনির জানা নেই।এর মাঝে অমুর ফোন এল।অমুর ছবিটা দেখে ওর আরো কান্না পাচ্ছে।খুব কষ্টে নিজেকে সামলে ফোনটা ধরল।
ফোন টা ধরতেই প্রশ্ন এল ওপার থেকে,
--কোথায় তুই?
--ওয়াশরুমে
--তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আয়।এক্ষুনি।এক্সিটের কাছে চলে আয়।
--নিজেকে সামলে মুখে চোখে জল নিয়ে তনি বেরিয়ে এল।এক্সিটের কাছে গিয়েই দেখতে পেল পৌলমি অমুকে জড়িয়ে আছে, কাছে যেতেই ওর ভীষণ অসস্তি হতে লাগল।অমু ওকে দেখতে পেয়ে ডাক দিল তনি তাড়াতাড়ি আয়।তনি কাছে যেতেই অমু বলল তনি সো সরি, আমাকে পলকে ছাড়তে যেতে হবে। পাশের একটা মেয়েকে দেখিয়ে বলল,ও মৌলি ওর বাবা একটু পরে ওকে নিতে আসবে তুই ওর সাথে চলে যাস প্লিজ। খুব আর্জেন্ট না হলে আমি বলতাম না। ওর অবস্থা তো দেখতেই পাচ্ছিস।
তনি ভালোই বুজতে পারছে, গলা অবধি ড্রিংক করেছে মেয়েটা, ঠিক মত দাঁড়াতেও পারছে না।তাই অমুদা যাবে ওকে ছাড়তে।
--সো সরি ।মৌলি সাবধানে পৌঁছে দিস প্লিজ। আর তনি খেয়ে নিস কিছু।আমি কাল বেরিয়ে যাচ্ছি।এসে তোর সাথে দেখা করব।
বলেই পৌলমিকে একটা ট্যাক্সি তে বসালো, পাশে একটা মেয়ে বসল।অমুও বসল তারপর গাড়ি টা বেরিয়ে গেল। সাবধানে যেও বলার সুযোগটাও এবার পেল না তনি।
মৌলি ওকে নিয়ে ভেতরে নিয়ে গেল, কিছু বলেছিল কিন্তু তনি যেন কিছুই শুনতে পাচ্ছিল না।ওই সময়টা যেন কাটতেই চাইছিল না।খানিক খনের মধ্যেই মৌলির বাবা এল।ওরা তনিকে বাড়িতে ড্রপ করে দিল।ঘরে ঢুকেই দীপ্তি দিকে বলল খুব টায়ার্ড দি, ঘুমোতে যাচ্ছি, বলেই নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।দৌড়ে গিয়ে বিছানার ওপর আছড়ে পরলো,বালিশটা আকড়ে ধরে কাঁদতে লাগল।
কেন করল ওর অমু দা ওর সাথে এরম।নাহয় ওকে ভালোবাসেনি কিন্তু পৌলমির কথাও তো একবার বলতে পারত,ওর ভুলটা তো ভাঙত।হ্যাঁ পৌলমির কথা অমুর মুখে শুনেছে তনি।অমু বলতো খুব সাহসী, স্মার্ট।হ্যাঁ হয়তো খুব স্মার্ট, সাহসী তনির মত ভীতু নয়, চুপচাপ, শান্ত নয়। কিন্তু কখনো অমুর কথায় তনির পৌলমিকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে হয়নি।প্রতিদ্বন্দ্বী! ভালোবাসায় প্রতিযোগিতা হয় নাকি? যে মানুষটাকে ঘিরে সবকিছু সেই যখন নিজের হাতে সবকিছু অন্য কাউকে দিয়ে দিয়েছে তখন আর কি করার।সব তাহলে মিথ্যে?
এরমধ্যে অমুর ফোন এলো।না এবার আর ধরতে পারলো না তনি, আর কান্না চেপে রাখার ক্ষমতা নেই, সাইলেন্ট করে দিল। কল কেটে গেল।ফোন সুইচ অফ করে দিল তনি।একটু পরে দরজায় টোকা পরলো,দীপ্তির গলা...
--তনি শুয়ে পরেছিস?অমু ফোন করেছে।
কোনো আওয়াজ এলো না।
--তনি শুনতে পেল, দীপ্তি বলছে শুয়ে পরেছে বোধয়। আচ্ছা তুই সকালে করিস।চলে গেল দীপ্তি।
আবার বাঁধ ভেঙে জল নেমে এল তনির চোখে।এক এক করে ছোটবেলার সমস্ত দৃশ্য ভেসে উঠছে তনির চোখের সামনে। অমুর চুল টেনে ধরা, সেই ঝগড়া, ঘুড়ি ওড়ানো, ভিডিও গেম, অঙ্ক করা,অমুর শাশন,ওর হাত ধরে রাস্তা পার করানো। মন বারবার বলছে কোথাও একটা ভুল হচ্ছে।কিন্তু তারপর মনে হচ্ছে পৌলমির কথাটা... মাই বয়ফ্রেন্ড অম্বর।
অমু দার কথা, ওর কথায় বলছিলাম তোকে পৌলমি, পল।স্পেশাল পারসন।মনে পরছে অমু দা বলত পল না ভীষণ সাহসী তোর মত ভীতু নয়, ভীতুর ডিম কোথাকার।সত্যিই হয়ত পৌলমিকেই মানায় অমুর পাশে।এসব ভাবতে ভাবতেই সকাল হলো তনির।

পরের দিন সকাল বেলা...

তনি--দীপ্তি দি, আমি বাড়ি যাচ্ছি।
দীপ্তি--সেকি!ক্লাস কামাই করে বাড়ি যাবি?
--না না কলেজ ছুটি আছে কাল থেকে।
--তাহলে আজ যাবি কেন?
--ক্লাস করে চলে যাব।
--আচ্ছা সাবধানে যাস।অমু কে বলেছিস তো?
একবার ভাবল বলবে ওকে বলার কি দরকার,কে ও?কিন্তু বলতে গিয়েও বললো না, দীপ্তি দি কি ভাববে। আবার যদি ওকে ফোন করে বসে তাই আস্তে করে বললো হুমম। সেদিন ক্লাস না করেই তনি চলে গেল।ওর ইচ্ছে করছিল না যেতে। ঠিক করল শুক্র বারই ফিরে আসবে, কারণ শনি বার অমু হয়ত যাবে।ওকে এই মুহূর্তে ফেস করতে চায় না তনি।বাড়িতে তো নয়ই। অমুর সাথে কথা বলতেও ইচ্ছে করছে,কথা বলতে গেলেই চোখ ফেটে জল আসবে তাই ফোনটাও সুইচ অফ করে দিয়েছে, সেদিন বিকেলে বাড়ি ফিরল তনি। ফিরে রাতের বেলায় অনেক ক্ষণ মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে ছিল তনি । মা বুঝল মেয়ের মন খারাপ কিন্তু মন খারাপের কারণ বুঝতে পারল না,অমুর সাথে ঝগড়া হলেও এতটা মন খারাপ থাকে না। মামনির সাথেও দেখা হয়েছে, স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলেছে তনি,কিন্তু যখনই মনে হয়েছে ওর সমস্ত টান, ভালবাসা,অধিকার ক্ষনিকের।একজন এলেই সব ছেড়ে দিতে হবে ছেলেবেলাকার পরিচিত ঘর, সেই ছাদ,পেয়ারা গাছ, এমনকি মামনির ওপর ও অধিকার ছেড়ে দিতে হবে, তখনই ঘরে এসে লুকিয়ে কেঁদেছে মেয়েটা।প্রশ্ন জেগেছে অমু দার পছন্দের খাবার বানানো, ওর টেবিলটা,ঘরটা গুছিয়ে রাখা, মামনির কোলে শুয়ে থাকা,অমু দার বকুনি খেয়ে মামনির পেছনে লুকিয়ে পরা, ওর নামে মামনির কাছে নালিশ করা এগুলোও কি পৌলমি চলে এলে ও আর করতে পারবে না।আবার মেঘ জমেছে মনে।
দু দিন পর...
তনিদের বাড়ির পেছন দিকে একটা বাগান আছে।তনির খুব প্রিয় জায়গা ওটা। সূর্য বিদায় নিচ্ছে তখন, আকাশ টা লাল হয়ে আছে।বাগানের এক কোনে একটা টগর ফুলের গাছ আছে।ওর নিচে তনি দাঁড়িয়ে ছিল, গাছটা তনির খুব প্রিয়। খুব শান্তি অনুভব করছে তার নীচে দাঁড়িয়ে। ও একটা হালকা হলুদ চুড়িদার পরে আছে। একটা দুটো ফুল ওর গায়ে এসে পরছে।তনির মনে হচ্ছে গাছটা যেন ওর না বলা কষ্ট গুলো বুঝতে পারছে। তাই ওকে শান্তনা দিচ্ছে পরম যত্নে।নিজেকে মেলে দিয়েছে তনি।
মাতাল হওয়ায় চুল গুলো উড়ছে, চোখ বন্ধ হয়ে এসেছে তনির।সূর্যের লাল আভা এসে পরছে ওর মুখে। ভীষণ মোহময়ী লাগছে আজ ওকে।
হটাৎ একটা শক্ত হাত ওকে টেনে নিল। চমকে উঠল তনি। সামনে দাঁড়িয়ে অম্বর ওর অমু দা।


চলবে......


© All Rights Reserved