...

36 views

ভাইফোঁটা
অনজিষ্ঠা আজ খুব খুশি।বছর চারেক বয়স হবে তার।গতকাল রাতে মা বলেছে আজ নাকি ভাইফোঁটা।খুব মজা হয় ওর এই দিনটায়,যদিও...
ওর মা তো আজ অবাক।বলল-
কিরে আজ কি হলো তোর?
অনজিষ্ঠা কৌতূহলী দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে জিগ্জাসা কেন মা কি হয়েছে?
মা-যে মেয়ে ৮টার আগে ঘুম থেকে ওঠে না সে কিনা আজ ৫টায় উঠেছে!আচ্ছা যা,গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে আয়।
অনজিষ্ঠা একটু হেসে চলে যায় সেখান থেকে।

সকাল ৮টার মধ‍্যে চানটান সেরে তৈরি হয়ে নেয় সে।মা কে চুপিচুপি বলে-মা,জানো আমি দাদার জন‍্য সত‍্যজিত রায়ের বই কিনে এনেছি দাদার সবচেয়ে পছন্দের।
মা বলে,ওমা!তুই টাকা পেলি কোথা থেকে?
কেন মা,টিফিনের টাকা জমিয়ে!দাদা বইটা পেয়ে খুব খুশি হবে আর আমায়ে অনেক আদর করবে,তাই না মা?
মা ওর কপালে সস্নেহে চুম্বন করে বলে -হ‍‍্যাঁ রে করবে।
* * * *
উফ দেখো তো কত বেলা হয়ে গেলো।আর কতক্ষণ লাগবে তোমাদের জোগাড় করতে?আমার বুঝি খিদে পায়ে না?সেই সকাল থেকে না খেয়ে আছি।
মা-এই তো মা হয়ে এসেছে।আর কে বেলেছে তোকে উপোস করে থাকতে?খেলে কি তোর দাদা রাগ করবে?
না না,ওপাড়ার সাজুদি বলে, 'খেলে নাকি দাদার অমঙ্গল হয়ে'। মা অস্ফুটে বলে ফেলে অমঙ্গল?!তারপর মেয়েকে বলে যা তোর দাদাকে নিয়ে আয়,আমার সব হয়ে গেছে।
অনজিষ্ঠা ছুটে যায়।দুমিনিট পরেই ফিরে এসে..কিন্ত ও কিন্তু!াামেয়েটির সাথে তো কেউ নেই।..দাঁড়ান দাঁড়ান!হাতে ওটা কি?ছবি না?
* * * *
ভক্তি ভরে,ভালোবাসা মাখানো এক একটি ফোঁটা এঁকে দেয়ে দাদার কপালে।পাঠক বলবেন দাদা তো নয়ে ছবির কপালে!।
তারপর দাদার খুব পছন্দের সেই উপহারটি..সেই বইটি যেটা সে তার টিফিনের টাকা জমিয়ে কিনেছে সেটি দেয় দাদাকে।
কিন্তু যেটা তার ফেরৎ পাওয়ার কথা ছিল...সেই আদরটুকু তার কি হবে!পাঠকগন দুঃখ পাবেন না,একবার মেয়েটির দিকে তাকিয়ে দেখুন,সে কিন্তু মহাআনন্দে ছবিটাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছে।তারপর বলে উঠলো মা,আমিও বড় হয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেবো, তাহলে সবাই আমাকেও বলবে'শহিদ হয়েছে' কতো সম্মান করবে,তাই না মা?


মা তখন বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল...কি ভাবছিল?হয়ত চার বছরের মেয়েটির
জন‍্য উত্তর খুঁজছিল।