...

1 views

অশনি সংকেত পর্ব ৩
পরদিন দুপুর হতে না হতেই আর যেন তর সইল না তাথৈএর।গরমের ছুটির এই নির্জন দুপুরটা আজ আর লাইব্রেরী নয়,তাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে এসে বসাল ঠাম্মির ঘরে।আর সর্বজয়াদেবীও এক কথার মানুষ।নাতনিকে দেওয়া কথা তিনি রাখবেন না এও তো হয় না।নাড়ুর বয়াম পাশে নিয়ে নাতনীরই আসবার অপেক্ষায় দুই হাতে খবরের কাগজের পাতা মেলে ধরে চোখ বোলাচ্ছেন।তাকেও যে জানতে হবে...তার বিয়ের পরবর্তীকাল থেকে আরম্ভ করে এত বছর কেটে গেল,তার নিজের পুত্রকন্যা,পুত্রবধূ,জামাতা,
নাতি নাতনী কেউ আজ পর্যন্ত যে কবচের উপস্থিতির খবরই জানে না,হঠাৎ দীর্ঘ এত বছর বাদে তার এই দ্বাদশবর্ষীয়া নাতনীর হাতে এইভাবে পড়ে গিয়ে একেবারে পৃথিবীর বাতাসের সংস্পর্শে এভাবে চলে আসাটা কি নিছক কাকতালীয় ব্যাপার নাকি এর পিছনে রয়েছে গূঢ় কোনো রহস্য!নাতনীর সাথে কথা বলা আর গল্প বলার ফাঁকে তাকে জানতে হবে অনেক কিছু অস্হির মনটা তার কিছুতেই সায় দিচ্ছে না।আবার মনের অস্হিরতা কাটাতে কারোর সাথে এ নিয়ে কথা বলবেন সে উপায়ও নেই।বার বার তার মনে পড়ে যাচ্ছে জীবদ্দশায় তাঁর স্বামীর দেওয়া ভবিষ্যৎদ্বানীর কথাগুলো।সবই তো দেখছি মিলে যাচ্ছে।সামনে খবরের কাগজের পৃষ্ঠা মেলে ধরে তিনি আপ্রাণ গোপন করার চেষ্টা করে চলেছেন তার মনের কোণে জমে ওঠা মহাপ্রলয়ের অশনিসংকেতের কালো মেঘের তীব্র গর্জনধ্বনি।যথা সময়ে চঞ্চল ভ্রমরের মতো সর্বজয়া দেবীর ঘরে লাফিয়ে ঢুকে এসে পিছন থেকে তাঁকে জড়িয়ে ধরে ব্যগ্রচিত্তে বলে উঠল তাথৈ..."ঠাম্মি...সবাই যে যার ঘরে ঘুম নয় সেলাই ফোঁড়াই নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেছে।এবার তুমি আমায় গল্প শোনাবে।কালকের ওই কবচটার গল্প।বলো না ঠাম্মি...আমার যে আর তর সইছে না।"
মুখের সামনে থেকে খবরের কাগজটা সরিয়ে টেবিলের ওপর নামিয়ে রাখলেন সর্বজয়া দেবী।নাতনীর দুকাঁধে হাত রেখে তাকে সামনে বসিয়ে বললেন,"দিদিভাই...আজ তোমাকে যা যা বলব সেগুলো কোনোটাই কিন্তু গল্প নয়।আমি তোমার সামনে যেমন দাঁড়িয়ে রয়েছি তুমি দেখছ,ঠিক ততটাই বাস্তব সত্যি ঘটনার কথা বলতে যাচ্ছি তোমায়।কিন্তু তার আগে তুমি আমাকে বলো তোমার হঠাৎ দাদুর অল্পবয়সের প্রতিকৃতি আঁকবার ইচ্ছা হল কেন?আঁকাজোকার প্রতি আগ্রহ কবে থেকে তোমার এসেছে দিদিভাই?"
---আসলে ঠাম্মি...একটা কথা সেভাবে কাউকেই বলিনি...দিন চারেক আগে আমি ভোররাতে একটা খুব অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছি।দাদু অল্পবয়সে কেমন দেখতে ছিলেন সে সম্বন্ধে আমার কোনো আইডিয়া নেই।কিন্তু স্বপ্নে আসা ওই বছর পঁচিশের ভদ্রলোক যে দাদুই ছিলেন সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।উনি নির্জন অন্ধকারে একটা গর্তের ভিতরে আটকা পড়ে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন বেরিয়ে আসতে,কিন্তু পারছেন না।আমি তাঁকে এভাবে আটকা পড়া অবস্হায় দেখতে পেয়ে দুহাত দিয়ে তাঁকে ওপরে টেনে তোলার চেষ্টা করছি কিন্তু কিছুতেই পেরে উঠছি না।দাদু তখন আমাকে কাতর স্বরে বলছেন,"দিদিভাই,তুমি আমাকে এই গর্ত থেকে যদি বার করতে চাও তো হাতে তুলি নাও তুলির মাধ্যমে আমার প্রতিকৃতি আঁকো।আমি একমাত্র সেখান দিয়েই বেরিয়ে আসতে পারব।মুক্তি দাও দিদিভাই...আমাকে মুক্তি দাও...
দাদুর অমন আর্তনাদ কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা ভয়ংকর অট্টহাসিতে রূপান্তরিত হল।আর দাদুর চেহারাটাও ক্রমশ বিকৃত হতে হতে একটা ভয়ংকর পিশাচ জাতীয় একটা কিছুর চেহারা নিতে থাকল।এরপর হঠাৎই আমার ঘুমটা ভেঙ্গে গেল।আমি বুঝতে পারছি যে এরকম একটা স্বপ্নের কোনো মাথামুন্ডুই নেই।তাও তারপর থেকে আমার দাদুর অল্পবয়সের একটা প্রতিকৃতি আঁকবার ইচ্ছাটা চাগাড় দিয়ে উঠল।