...

1 views

''শেষ=মেনে নেওয়া নয়"
-" মন তো চায় অনেক কিছু,
তবু তো নাও আমার পিছু।
কে আমি তাই বলতে পারো?
বুঝতে পারলে সঙ্গো ছাড়ো..."
চায়ের দোকানে বসে থাকা আমি চা-এ হালকা একটা চুমুক দিয়েছি মাত্র,এমন সময় পেছন থেকে কে যেন হঠাৎ আমার চোখ বন্ধ করে কবিতাটা বলতে লাগলো....
হ্যাঁ,এই কণ্ঠস্বর আমার চেনা....তানিয়া ছাড়া আর কেই বা হবে...
বললাম:
-"উফফ, কত বার বলেছি তান্না ,এরম ভাবে হঠাৎ করে চোখ বন্ধ করবি না আমার.... সবে মাত্র চা-এ চুমুক দিয়েছি...এরকম করা কি ঠিক বলতো?"

হ্যাঁ,ঠিকই শুনেছো,তানিয়াকেই আমি ভালোবেসে "তান্না" বলে ডাকি....মানে বুঝতেই পারছো নিশ্চয়ই ও আমার কে হয়.....
-" ধুরর,সবসময় বুঝে যাস যে আমি
এসেছি,আর তুই খালি ওই চায়েই চুমুক দিয়ে যা,আর আমার বানানো এই লাড্ডু আর খেতে হবে না..."- বলে উঠলো তানিয়া।

শোনা মাত্রই এক ঝটকায়,তার হাত থেকে সেই লাড্ডুর কৌটোটা নিয়ে একটা করে লাড্ডু খেতে শুরু করে দিলাম...
-" আরে আরে,কি করছিস টা কি!!! সত্যি এরম পাগলের মত তুইই খালি খেতে পারিস..." - অত্যন্ত রাগের সহিতই বললো তানিয়া।
বললাম:
-"রাগ করছিস কেন বলতো,জানিসই তো তান্না,তোর হাতের লাড্ডু আমার কতটা প্রিয়....আর আমি বুঝতেই পেরেছিলাম ,তুই কিছু একটা আমার জন্য এনেছিস,নাহলে এতো সুন্দর কবিতা প্রথমেই শোনাটিস না আমায়।"

-" থাক,আর মাখন লাগাতে হবে না বুঝলি....বুঝতেই পারছি,শুধু লাড্ডুর জন্যই সুনাম আমার কবিতার!" -বললো তানিয়া।

লাড্ডুর কৌটোটা পাশে বেঞ্চে রেখে উঠে পড়লাম, আর তানিয়ার কাছে গিয়ে বসে,তার হাতটা নিজের হাতে রেখে বললাম:
-" এরকম বলিস না রে.......কি হয়েছে রে, শরীর ঠিক আছে? না মানে,আমার কোনো কথায় খারাপ মানলি নাকি রে!...."

-" না রে,তোর ওপর আমি একদম রেগে নেই...একটা জিনিস ঘটেছে,কিন্তু ছাড় বাদ দে না রে..."- বললো তানিয়া।
-" তাহলে সেই জিনিসটাই বল না...কি হয়েছে...."- বললাম আমি -" কিছু একটা হয়েছে, আমাকেই নিয়েই নিশ্চয়ই, ঠিক বলছি তো??..."

-" আসলে.....আজ দিশার সাথে দেখা হয়েছিল রে....ও তোর নামে উলটপালট কথা বলছিলো ...তাই একটু কথা কাটাকাটি হয়।" -বললো তানিয়া...
কিছুক্ষন দুজনেই চুপ রইলাম...

তারপর তানিয়া আবার বললো:
-" আমার তো এখনও রাগ হয় যে....এরম একজন কিভাবে তোর এক্স হতে পারে....তুই কিভাবে ওকে ভালোবেসে ছিলি...."
সত্যি বলতে আমার কিছু বলার নেই...এই বিষয়....সত্যি, দিশা আমার এক্স ...আমার প্রথম ভালোবাসা...দিশা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর,আমার যা অবস্থা ছিল....তখন তানিয়া না এলে,হয়তো এত তাড়াতাড়ি ঠিক হতে পারতাম না....
কিছু একটা বলতেই যাচ্ছিলাম...তানিয়াকে....তখনই মনে হলো কেউ যেনো আমায় ডাকছে....

হ্যাঁ, সত্যিই তো,পিছনে ঘুরে তাকাতেই দেখতে পেলাম....দুর থেকে একটা ছেলে আমার দিকেই আসছে...আর আমায় ডেকে চলেছে...
কাছে আসতেই চিনতে পারলাম.... এ তো তন্ময়.... আসা মাত্রই বলে উঠলো:
-" কি রে পাগলা...আজও একলা একলা বকে চলেছিস...."
-" পাগলা আমি নই রে....তুই আসল পাগলা....পাশে এত বড় একটা মানুষ বসে আছে,আর তুই বলছিস....আমি একা একাই বকে যাচ্ছি..." -বলে উঠলাম......

-" আচ্ছা...তাই নাকি...একটু ভালো ভাবে দেখে বল দেখি....তুই সত্যি কার সাথে কথা বলছিলি...'' একটু ঠাট্টার স্বরেই বলে উঠলো তন্ময়....
বিশাল রাগ হচ্ছিল আমার তখন...
-" আরে এইতো তান্না মানে তানিয়া বসে....."
পুরো কথাটা সত্যিই পুরো বলতে পারলাম না...সত্যিই আমার পাশে কেউ বসে নেই....সম্পূর্ণ বেঞ্চে আমি একাই বসে আছি....এমন কি কিছুক্ষন আগে যে লাড্ডুর কৌটো টাও বেঞ্চে রেখেছিলাম....সেটাও অবধি নেই...

সত্যিই কিছু বুঝতে পারছি না....সব কিছু তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে....
-" তুই বাড়ি চল...তোকে তোর বাড়ি ছেড়ে দিচ্ছি আমি....চল....প্রতিবার তোর একি নাটক....আর ভালো লাগে না রে...." - বলে উঠলো তন্ময় ।

-" না না,কি বলছিস, তুই....এক্ষুনি তো তান্না এখানে ছিল.....হয়তো এই খানে বাথরুমে গিয়ে থাকবে....ওকে না বলে এরম ছেড়ে চলে যাওয়া ঠিক কি বলতো?" - আমতা আমতা করে বলতে লাগলাম....
-" কোন তান্না,কে সে.... কার কথা বলছিস ..তুই বাড়ি চল এখন....."- এই বলে তন্ময় আমার হাতটা ধরে আমায় নিয়ে যেতে লাগলো....বাড়ির উদ্দেশ্যে....

আমি কোনরকম হাতটা ছারিয়ে বললাম:
-" আরে তানিয়ার কথা বলছি,যাকে আমি তান্না বলে ডাকি...তুই বুঝছিস না কেনো.....আচ্ছা,একটু অপেক্ষা কর....এক্ষুনি ও আসবে রে ।"

-"এখন কেনো....সারাজীবন অপেক্ষা করলেও,আসবে না রে ...তুই সেই তানিয়ার কথা বলছিস তো...যে দুবছর আগেই মারা গেছে....তোর মানুসিক ভারসাম্য ঠিক আছে কি?...তুই ভেবে দেখ একবার....মরা মানুষ কিভাবে এই দিনের বেলা তোর পাশে বসে কথা বলতে পারে.."- চিৎকার করে রাগের সহিত বললো তন্ময়।
সত্যিই কিছু বুঝতে পারছি না....কিছু কিছু জিনিস আমায় মাথায় এসেও আসছে না....সেই রাস্তার মাঝে আমি মাথায় হাত চেপে বসে পড়লাম...
চোখ থেকে জল বেরিয়ে এলো আমার....তানিয়া মারা গেছে...এটা হতে পারে না...মনে মনেই ভাবতে লাগলাম এটা.....
পাশে দাড়িয়ে থাকা তন্ময় আমায় ধরে বাড়ির দিকে নিয়ে যেতে লাগলো...
আর আমি সেই চা-এর দোকানে দিকে পিছন ফিরে তাকাতেই আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো...কিন্তু চোখ থেকে জল পড়তেই থাকলো...আর সেই দিকে তাকিয়ে একটাই কবিতা মাথায় আসলো
- " জানিনা কতটা সত্যি এটা,
পারবো কি আমি বুঝতে সেটা?
হয়তো তুমি নেই এই স্থলে,
তবু যে তুমি থাকছো মনে;
কারণ দেখলাম....তানিয়া সেখানেই বসে একি ভাবে সেই লাড্ডুর কৌটোটা হাতে নিয়ে আমার দিকে চেয়ে হাসছে........