...

0 views

গল্প ( সিরিজ ):আমার ভূলের মালিকা (চতুর্থ পর্ব- সিনসিয়ার )
গল্প ( সিরিজ ):আমার ভূলের মালিকা
(চতুর্থ পর্ব- সিনসিয়ার )

আমার জীবনে ভূলের মালিকার প্রতিটি ফুল নিয়েই গল্প করব,কখনো এক একটা আলাদা ভাবে কখনো একসঙ্গে দু তিনটে করে। এগুলো যদিও আমার নিজস্ব তবে অনেকেরই এমনটা হতে পারে। যদিও বেশীর ভাগ লোকজন বলে থাকে বয়সের সঙ্গে ভোলার ঘটনা বাড়তে থাকে তবে এখনো পর্যন্ত আমার কাছে এর উল্টোটাই হয়েছে অর্থাৎ ছোটবেলার ভোলার ঘটনাই বেশী।
আজ 'ভূলে যাওয়ার' চতুর্থ পর্ব লিখতে বসার মুহুর্তে মনে হচ্ছে ছোটব‌েলায় আমার মাথা কি পাগল ছিল নাহলে কি এমন ভূলে যাওয়া বা ভূল করা সম্ভব! যা হোক বলব যখন অঙ্গীকার করেছি বলতেই হচ্ছে।
আজ চতুর্থ পর্ব: সিনসিয়ার :-

আমি দিদির বাড়ি থেকে কলেজে পড়ি, 5- 6 কিমি সাইকেলে করে কলেজে যাই শহরের বাইপাশ রোড ধরে। দিদির বাড়ি থেকে দেড় কিমি দুরে বাইপাশ রোডের সংযোগস্থল যেখানে আমার এক সহপাঠী যে ওর আত্মীয় বাড়িতে থেকে পড়ে, দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে আমি না পৌঁছনো পর্যন্ত। কেননা ওর কাছে সাইকেল ছিলনা। আর ঐ বাইপাশ দিয়ে কোন পাব্লিক বাস বা অন্য কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিলনা। খালি বড় বড় ট্রাক চলত। যাইহোক ওখান থেকে দুজনে একটা সাইকেলে করে আমরা কলেজে পৌঁছাতাম । রাস্তা বিপজ্জনক, এত দুরপাল্লার ট্রাক চলত তার উপর মাঝখানে এক বিশাল আপ। কিন্তু পাব্লিক বাসে করে যেতে হলে শহরের মধ্যে দিয়ে দু তিনবার মিনি বাস পাল্টে কিছুটা হেঁটে পৌঁছাতে হত, সেটা আর এক বিড়ম্বনা। তাই এই ব্যাবস্থায় শ্রেয় ছিল। বন্ধু একটু সচেতন ছিল ,বেশী পরিশ্রমে তার অনীহা ছিল তাই আপ রাস্তাটা এলেই বলত- চল এবার হেঁটে যায়। আর আমার বক্তব্য ছিল সাইকেল কেই যদি হাঁটিয়ে নিয়ে যাব তাহলে আর সাইকেলের মানে কি। সে বলত না ভাই আমি পারবনা ডবলে আপ টানতে। সুতরাং আমি চ্যালেঞ্জ নিয়ে তিন বছর ডবলে সাইকেল রাইড করেছিলাম। মনে পড়ে একদিন বন্ধুকে চ্যালেঞ্জে নামিয়ে ডবল রাইড করিয়েছিলাম। তবে ঐ আপ এ কয়লা ভর্তি ট্রাকগুলোও কাঁদতে কাঁদতেই চড়ত অর্থাৎ খুব ধীর গতিতে। তখন আমার বুদ্ধি মান বন্ধুটি করত কি ট্রাকের পিছনের চেন ধরে নিত ফলে বিনা প্যাডেলে আপটা পার হয়ে যেত নিজের শ্রম নষ্ট না করেই। তখন কোন ভয় ডর ও লাগতনা এখনকার মত। তবে একদিন হল কি দিদিদের এক প্রতিবেশী রাস্তা ধরে যাচ্ছিল এমন সময় একটা চলন্ত ট্রাকের পিছনের চাকা বার্স্ট করে গেলে তার মৃত্যু হয়। তার পরদিন থেকে আমাদের চেন ধরে আপ ওঠাটা পরিত্যাগ করে আমার বীরত্বের উপর ই ভরসা করে চলতাম।
এমনি করেই চতুর্থ সেমিস্টার পরীক্ষা চলছে। একটু আগেই পৌঁছে বাইপাশ সংযোগে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি দুপুর বারোটা থেকে বন্ধুর জন্য , দুপুর দুটো থেকে পরীক্ষা। যেতে কম বশী 40 মিনিট লাগবে, ভয় আছে যদি টায়ার পাংচার হয় !
কিন্তু সে আসছেনা , চিন্তা হচ্ছে ওর শরীর খারাপ হলনাতো । সময় বয়ে যাচ্ছে। এখনকার মত তখন ফোণ ছিলনা। সারে বারোটা নাগাদ আমি হু হু করে সাইকেল চালিয়ে 12.50 এ কলেজ পৌঁছে ক্লাস রুমের দরজার দিকে এগিয়েই চমকে উঠি ,দেখি সব পরীক্ষায় ব্যাস্ত। গার্ডরত ইংরাজি স্যার বল্লেন তুমি এত দেরীতে? না স্যার আসলে আমার মাথায় ছিল সেকেন্ড হাফে পরীক্ষা তাই- - -।
উনি বল্লেন সুশান্ত তোমাকে না দেখে যেতে চাইছিল তোমার ঘরে,সেক্ষেত্রে সে ও সময় মত পরিক্ষায় বসতে পারতনা তাই নিষেধ করলাম । আর কেউ তো তোমার ঠিকানা জানত না।
প্রিন্সিপাল স্যারের সঙ্গে দেখা করতে চেম্বারে ঢুকতেই উনার ঐ ডায়লগ আজ ও ভুলিনি - ছি ছি তুমি একটা সিনসিয়ার ছেলে হয়ে এমন করলে , যদি একটা ঘন্টা আগে ও আসতে তাহলে পরিক্ষায় বসাতাম ,কাগজ পত্র বাঁধা বাঁধিতে আরো ঘন্টাখানেক সময় পেয়ে যেতে, আমি জানি তুমি তাতেই পাশ করে যেতে, কিন্তুু তুমি এলে জাজের মত ঘড়ি ধরে তিন মিনিট আগে।
আমি বল্লাম স্যার আমি তো দুটোয় পরিক্ষা ভেবে একঘন্টা আগে পৌঁছেছি।
উনি বল্লেন - যা হবার হয়েছে মন খারাপ কোরনা, বাকি গুলো ভাল করে দাও ।
আমি নোটিস বোর্ডে রুটিনটা আবার দেখলাম, হ্যাঁ আজ থেকে তো দশটায় পরীক্ষা তাহলে আমি কেন দুটোয় ভাবলাম! মন খারাপ হয়ে গেল এবছরের স্কলারশিপ টাও হাত ছারা হয়ে যাবে। কি আর করা যায় ভূলের মাশুল তো দিতেই হয়। দিদি বা কাউকে বল্লামনা শুধু কলেজের বন্ধুরা জেনেছিল, জেনেছিল শুধু নয় কেউ কেউ বলেছিল সেকেন্ড টাইম পরীক্ষা দিলে নাকি ভাল মার্কস দেয়না, তাই একটা দুশ্চিন্তা বহুদিন ছিল।পরে অবশ্য ঐ বিষয়টা তে 'ও গ্ৰেড' ই পেয়ে ছিলাম। একমাত্র যা ক্ষতি হয়েছিল তা ঐ বছরের স্কলারশিপ টা,যা পুশিয়ে নিয়েছিলাম আরো কয়েকটা টিউশন পড়িয়ে।
আমি আর বন্ধু দুজনে ফিরে এলাম। রাস্তায় বন্ধু বল্ল সে 9.10 নাগাদ মোর এ পৌঁছে আমাকে না দেখতে পেয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আমি নিশ্চয় তার দেরী বুঝে বেড়িয়ে গেছি ভেবে এবং আর দেরী করলে পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে তাই কয়েকটা ট্রাক কে হাত দেখিয়ে একটা ট্রাক পেয়ে কিছুটা হেঁটে কলেজে কোনক্রমে দশটাতেই পৌঁছয়। কিন্তু ক্লাসে ঢুকে বুঝতে পারে কি ভূল হয়েছে। আসলে গতকাল পর্যন্ত দুপুর দুটো থেকে পরীক্ষা ছিল আজ আর আগামীকাল সকাল দশটা থেকে ,কারণ প্রথম বর্ষের পরীক্ষা কাল পর্যন্তই ছিল। কাজেই পরীক্ষা হল সকালে ফাঁকা। ঘরে ফিরে রুটিন লেখা খাতাটা খুলে দেখি প্রথমদিন পরিক্ষার সময়ে 2 পি এম লিখেছি, তার পরের দুদিনের গুলোয় ডট ডট দিয়েছি কিন্তু চতুর্থ পঞ্চম আর ষষ্ঠ দিনে ডট ডট ও দিইনি যেখানে পঞ্চম আর ষষ্ঠ দিনের সময়ের নীচে 10 এ এম লেখা উচিত ছিল সর্বোপরি কলেজের রুটিন টা তো মনে রাখায় উচিৎ ছিল আমার । আমার এই সিরিজের আগের গল্পকটা যারা পড়েছেন বা আগে আরো পড়বেন তারা নিশ্চয় আমাকে আর যাইহোক সিনসিয়ার ভাববেন এমনটা আমি স্বপ্নেও ভাবিনা আর সেজন্য আমি প্রিন্সিপাল স্যারের 'তোমার মত সিনসিয়ার ছেলে- - - ' কথাটা মনে পড়লে আজ ও নিজের কাছেই অস্বস্তি বোধকরি যদিও তাঁর আমাকে সিনসিয়ার ভাবাটা একদিন উনার ক্লাসের ঘটনা সম্বলিত যেটা আমি এখানে বলছিনা তবে আজ ও আমি সিনসিয়ার হয়ে গেছি এমন দাবি করার দুঃসাহস আমার নাই।
আজকাল মোবাইলের সাহায্যে ভূলে যাওয়া বা ভূল করার সংখ্যা কিছুটা কমলেও পুরো বিদায় নেয়নি কারণ চঞ্চলতা থাকলে ভূল কেন যাবে?

**KRN**
21.06.2024.T
Writco: 22.06.2024
© Don't KR