...

0 views

গল্প ( সিরিজ ):আমার ভূলের মালিকা (পঞ্চম পর্ব- ভূলো চোর )
গল্প ( সিরিজ ):আমার ভূলের মালিকা
(পঞ্চম পর্ব- ভূলো চোর )

আমার জীবনে ভূলের মালিকার প্রতিটি ফুল নিয়েই গল্প করব,কখনো এক একটা আলাদা ভাবে কখনো একসঙ্গে দু তিনটে করে। এগুলো যদিও আমার নিজস্ব তবে অনেকেরই এমনটা হতে পারে। যদিও বেশীর ভাগ লোকজন বলে থাকে বয়সের সঙ্গে ভোলার ঘটনা বাড়তে থাকে তবে এখনো পর্যন্ত আমার কাছে এর উল্টোটাই হয়েছে অর্থাৎ ছোটবেলার ভোলার ঘটনাই বেশী।
আজ 'ভূলে যাওয়ার' পঞ্চম পর্ব লিখতে বসার মুহুর্তে মনে হচ্ছে ছোটব‌েলায় আমার মাথা কি পাগল ছিল নাহলে কি এমন ভূলে যাওয়া বা ভূল করা সম্ভব! যা হোক বলব যখন অঙ্গীকার করেছি বলতেই হচ্ছে।
পঞ্চম পর্ব- চোরের ভূল।
তখন কলেজে পড়ি। 1982 -85 র মধ্যে কোন একটা সময়। আগের পর্বে জানিয়েছি আমি দিদির ঘরে থেকে পড়তাম, সাইকেলে কলেজ যেতাম। যেদিন দরকার হত বই এর সঙ্গে থলে ও নিয়ে যেতাম। কলেজের ক্লাস শেষে বিকেল বেলায় বাজার হয়ে তবে ঘরে ফিরতাম। বাজারের ভেতর টা খুব কনজেস্টেড ছিল তাই সাধারণত সাইকেল ভেতরে নিয়ে যেতাম না। জি টি রোড শহরের মাঝখান দিয়ে গেছে যার বাইপাশ ধরে কলেজ যাওয়া আসা করি। ঐ জিটি রোড আর বাজারের মাঝে যে ফুটপাথ তাও দোকান ,হকারে ভরা অর্থাৎ ওটাকে ও বাজার বলা যায়। তবে সেখানে ফল মুল, হকারদের খেলনা, জামাকাপড় ইত্যাদি পাওয়া যেত। আর বড় দোকান তো ছিলই। তবে উল্টো সাইডে মেন পোষ্ট অফিস, রেলের স্কুল, মন্দির এসব ছিল, এখনো আছে।
তা ঐ ফুটপাতের ফলমার্কেটেই সাইকেল টা তালা দিয়ে রেখে বাজার করতাম।পোষ্ট‌অফিসের দিকটায় সাইকেল স্ট্যান্ড ছিল কিন্তু ওখান থেকে বাজারের ভেতরটা দুর হত। সর্বোপরি পয়সা ও লাগত, টোকেন ও সামলে রাখার ঝক্কি। একবার ঐ রকম টোকেন হারিয়ে ও নাজেহাল হয়েছিলাম । পরে বলব নাহয় গল্পটা আলাদা ভাবে।
আজকের গল্পটা শেষ করা যাক এখন।

ঐরকম একদিন বাজার করে সাইকেলের কাছে এসে পকেটে দেখছি চাবি নাই। এবার কি করি! থলে গুলোতে হাত ভরে সবজির মধ্যে থেকে দেখলাম, পেলাম না। আবার প্যান্ট জামার পকেট গুলো খুঁজলাম, না
পাওয়া গেলনা। বাধ্য হয়ে কপি, লাউ জাতীয় বড় সব্জি গুলো থলে থেকে বাড় করে ফুটপাতে নামাচ্ছি যাতে থলে ভালভাবে চেক করা যায়।
এমন সময় পাশের ফল ওলা জিজ্ঞেস করে- কি হয়েছে?
আমি বল্লাম, সাইকেলের চাবিটা পাওয়া যাচ্ছেনা তাই থলেতে খুঁজছি ।
সে মুহুর্তে সাইকেলের দিকে তাকিয়ে বল্ল আরে ভাই ঐতো! আমি তাকিয়ে দেখি সাইকেলে তালা লাগাতেই ভূলে গেছি।চাবিটা সাইকেলেই ঝুলছে। আর এই অভ্যাস টা যেন যাচ্ছেই না। 2024 এ ও মার্চ মাসেই মনে হয়
বাজারের সামনে রাস্তার ধারে স্কুটার রেখে বাইক শো রুমে ঢুকেছি। দেখে বেড়িয়ে স্কুটির কাছে এসে পকেটে হাত রাখলাম, চাবি নেই। মিসেস বল্ল তোমার পাউচ টা দেখ। ততক্ষণে মিউনিসিপ্যালিটির টোকেন বালা কাছে চলে এসেছে। আমি বল্লাম পয়সা দিয়ে দিয়েছি তো। সে পাশে দাঁড়িয়ে ই থাকল দেখছি। আমি গাড়ী তে ও দেখলাম । আমি জামা প্যান্টের সব পকেট চেক করে ও পেলাম না। মিসেস কে বল্লাম তোমার ব্যাগে রাখতে দেই নি তো? বল্ল- না। তখন ঐ লোকটি চাবিটা হাতে নিয়ে দেখাল। আমি সততাকে উৎসাহিত করতে 50 টাকা বখশিশ (ভূলের মাশুল ও বলা যেতে পারে) দিয়ে বাড়ী ফিরলাম।
পুরনো ঘটনায় ফিরে আসি,
যা হোক থলিতে সব্জি ভরে ওখান থেকে বাজার নিয়ে রওনা দিলাম।
রাস্তায় ঐ বন্ধু যেখানে থাকে তাদের ঘর। বন্ধু যেহেতু আজ কলেজ যায়নি তাই খবর নিতে ঢুকলাম।
ওর আত্মীয়ের ঘরে কাকা কাকিমা দুই ভাই দুই বোন । সবাই দেখি মন মরা। অন্যদিনের চাঞ্চল্য নজরে এলনা। কাকিমা বিষন্নতার সঙ্গেই বল্ল- আয়, বোস।
আমি বল্লাম সুশান্ত( বন্ধু) আর মনু ( কাকিমার বড় ছেলে) কে দেখছিনা!
আর বলিশ কেন আমাদের সাইকেল টা চুরি হয়ে গেছে কাল তাই খোঁজ খবর করতে গেছে, না পেলে এফ আই আর করবে তো।
আমি কোথায়, কিভাবে চুরি গেল জানতে চাওয়ায় ছোট মেয়ে বেলু বল্ল- জান দাদা গতকাল বিকালে দাদা পোষ্টাল অর্ডার কিনতে মেন পোষ্ট অফিসে গেছিল । বাইরে সাইকেল টা তালা দিয়ে রেখেছিল। ফিরে দেখে নেই। 20 মিনিটের মধ্যেই। ততক্ষণে কাকা ও বারান্দায় এসে সব শুনছিলেন। আসলে কি হয়েছে জানিনা তবে মনু এই রকম ই বল্ল। আমরা ও তো পোষ্ট‌অফিসে যায় কখনও তো এমনটা হয়নি। অর্থাৎ ছেলের প্রতি একটা অবিশ্বাসের সুর যেন।
আমি বল্লাম আজ তো আমার টা ও যাচ্ছিল নেহাত চোর ও আমার মত ভূলো।
সবাই অতি আগ্ৰহে বিষন্নতা থেকে বেড়িয়ে একসঙ্গে বলে উঠল কি হয়েছিল, কি হয়েছিল?
আমি চাবি লাগাতে ভূলে গেছিলাম, বাজার থেকে আধঘন্টা পর ফিরে এসে দেখি সাইকেল টা যথাস্থানেই রয়েছে । বেলু বল্ল এমন তো নয় কাল একটা পেয়ে গেছে তাই আনন্দ করছে। আমি বল্লাম দেখ আমার কিন্তু অন্যমত , মনে হচ্ছে আমি চাবি দিতে ভূলে গেছি , চোর হয়ত আমার মতই ভুলো , তাই সে ও আজ চুরি করতে ভূলে গেছে।
সবাই হো হো করে হেসে উঠল। ।
(পঞ্চম পর্বের ইতি)

**KRN**
23.06.2024 .T
Writco: 24.06.2024
© Don't KR