...

3 views

অশনি সংকেত
পর্ব ১

হঠাৎ ওঠা কালবৈশাখী ঝড়ের তীব্র দাপটে হঠাৎ সারা প্রকৃতি যেন প্রবল ঝংকারে গর্জে উঠেছে।স্বর্গ মর্ত্য পাতালে সবকিছু ফুঁড়ে যেন বেরিয়ে আসছে বহুদিন ধরে চেপে থাকা প্রকৃতির রোষানলের তীব্র আস্ফালন।মধ্যাহ্নের ভাতঘুমের সময়। সর্বজয়াদেবী ভাঁড়ার ঘরে গিয়ে গতকালের গড়ে রাখা নারকেল নাড়ুর বয়ামটা হাতে নিয়ে নাতনীকে ডাক দিতে যাবেন...এমন সময় হঠাৎ এমন তীব্রবেগে ঝড়টা উঠল যে এখনই দরজা জানলা বন্ধ না করলে ঘরের সব জিনিসপত্র একেবারে ওলটপালট হয়ে যাবে।সর্বজয়াদেবী তাড়াতাড়ি করে বয়ামটা আগের জায়গায় রেখে সবার আগে দোতলা থেকে দৌড়ে তিনতলায় গেলেন কারণ ঝড়বৃষ্টি হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এখানকার সব ঘরগুলো।তিনি তাড়াহুড়ো করে তিনতলায় পৌঁছেই ঝটপট করে সমস্ত ঘরের দরজা জানলা বন্ধ করতে লাগলেন।বাড়ির চাকরগুলো সারাদিনের কাজ সেরে এখন একেবারে নাকে তেল দিয়ে দিবানিদ্রা দিচ্ছে। এখন এদেরকে ডাকাডাকি করতে গিয়ে যে সময় নষ্ট হবে তার থেকে এই বাতের ব্যাথা পা নিয়েও নিজে গিয়ে ঝটপট করে জানলা দরজাগুলো বন্ধ করে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।সব জানলা দরজা বন্ধ করে তিনি একবার লাইব্রেরীর ঘরে ঢুকলেন।লাইব্রেরীর চারপাশে এখন বড় বড় গাছ উঠে গিয়েছে বলে লাইব্রেরীর ভিতরটা বেশ অন্ধকার হয় বলে এখানে বসে বই পড়তে গেলে আজকাল দিনের আলোতেও আলো জ্বালবার দরকার হয়।ঝড়বৃষ্টির দাপট আর প্রভাবও এই ঘরে বেশ কম।কিন্তু এখন এই ভরদুপুরবেলা এখানে আলো জ্বালিয়ে কে বই পড়ছে!নিশ্চয়ই নাতনী তাথৈ।যাক...আর তাহলে নাতনীকে ডাকতে এই বাতে ধরা পা নিয়ে একতলায় নামবার দরকার নেই।ওর বই পড়া শেষ হলে একবার যেন ঠাকুরমার কাছে ঘুরে যায়,সেটা বলার জন্য তিনি লাইব্রেরীর মধ্যে প্রবেশ করলেন।দেখলেন,তাথৈ টেবিলের মধ্যে একেবারে ঝুঁকে পড়ে কি একটা জিনিস খুব মনোযোগ সহকারে নিরীক্ষণ করে চলেছে।সর্বজয়াদেবী ধীরপায়ে এসে নাতনীর মাথায় হাত রাখলেন।সাথে সাথে মুখ ঘুরিয়ে,"এইটা কি ঠাকুমা...দাদুর বইএর আলমারীর লকারের ভিতরে এত যত্ন করে রাখা..."
বলে তাথৈ মাথাটা যেই সরালো সাথে সাথে নাতনীর হাতের তালুতে ওই জিনিসটি দেখে বুকের ভিতরটা একেবারে ছ্যাঁৎ করে উঠল সর্বজয়া দেবীর।