সূর্য-পূজা (পর্ব-১৫)
দেখতে দেখতে আরও ৩মাস পার হয়ে গেল।
প্রায় ৮মাস সম্পূর্ণ হয়ে গেছে সূর্য-পূজার পরিচয় থেকে এই পর্যন্ত। দুজনেই দুজনকে নিশ্চিত ভাবে চিরদিনের জন্য গ্রহণ করে নিয়েছে মনে মনে।পৃথিবীর কোনো শক্তি ওদের একে অপরের প্রতি এই বিশ্বাসে আঘাত করার ক্ষমতা রাখেনা। তাই ওরা সামাজিক বন্ধনে র চেয়ে অনেক বেশি প্রাধান্য দেয় তাদের প্রেমের এই সম্পর্কের বিশ্বাসটুকুকেই।নিজেদের অস্তিত্ব আর মনের জানা অজানা সবটুকুই এক করে এগিয়ে যাওয়ার দায়বদ্ধতাই যেন ওদের সম্পর্কে র বড় সুরক্ষা কবচ। তাই তাদের এই সুগভীর উপলব্ধি দিয়ে গড়ে ওঠা সম্পর্কে র মধ্যে পারিবারিক মতবিরোধ, সামাজিক বৈষম্য কিংবা সাংসারিক চাওয়া-পাওয়ার হিসেব নিকেশ কোনো ছাপ ফেলতে সক্ষম হতে পারেনা।
এরকম একটা মূহুর্তে পূজা সূর্যের কাছেই জানতে পারে সূর্যের পারিবারিক গোপন এক সমস্যার কথা।
শুধাংশু বাবুর কাছে পূজা আর তার সম্পর্কে র ভবিষ্যৎ পরিণতি সম্পর্কে জানার পর থেকেই সূর্য বরাবরই পূজাকে তার নিজের দৈনন্দিন জীবনের ছোট-বড় সবটাই share করে এসেছে। মাস চার এক আগে, সূর্যের সাথে যখন কম্পিউটারে কথোপকথন হত তখন একবার সূর্যের মা অর্থাৎ সুলেখাদেবীর সঙ্গে সূর্যের খুব তর্ক-বিতর্ক হয়েছিল যার ফলে সূর্যের মন ভালো ছিল না একদম। দৃষ্টি শক্তি র চেয়ে মনের গতি অনেক বেশি।মনের সম্পর্ক ওদের গভীর ছিল প্রথম থেকেই।সূর্যের মানসিক অস্থিরতা আ৺চ করতে তাই পূজার খুব একটা অসুবিধা হয়নি কখনো। সেই সময় সূর্য পূজাকে জানিয়েছিল যে তার বিয়ে নিয়ে তাকে জোর করছেন। তা৺র পছন্দের একটি মেয়ের সাথে তিনি তার বিয়ে দিতে ইচ্ছুক। সূর্য এই প্রস্তাবে অসম্মতি প্রকাশ করায় অশান্তির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এতটাই অশান্তি হয়েছিল যে একরাতে সূর্য এবং তার মা, সুলেখাদেবী
না খেয়েও ছিলেন। পূজা তখন সূর্য কে বুঝিয়েছিল যে মায়ের মধ্যে হয়তো insecurity বেড়ে যাচ্ছে। একাকীত্ব অনুভব করছেন। ছেলেরা কাজে ব্যস্ত। তাই এরকম ইচ্ছে হওয়াটা অস্বাভাবিক তো নয়।এই নিয়ে সূর্যের মনের ইচ্ছা মাকে সবটা খুলে বললেই সমস্যার সমাধান হতে পারে। এভাবে ঝগড়া করলে তো মাকে কষ্ট দেওয়া হবে। দুজনের মনই ভালো থাকবে না।
পরেরদিন সূর্য জানিয়েছিল মায়ের সাথে কথা হয়েছে।এখন সব ঠিক আছে।
পূজা যে পরিবেশে বড় হয়েছে সেখানে সে সাংসারিক শিক্ষা র মূলমন্ত্র হিসেবে দেখে এসেছে সম্পর্কে র প্রাধান্য। পরিস্থিতি, পরিবেশ, ভালো মন্দ, মতবিরোধ একদিকে আর সম্পর্কে র মর্যাদা আর একদিকে যা লঙ্ঘন করার ধৃষ্টতা সে কখনো তার মা বা বাবাকে কোনো কারণে করতে দেখেনি আর নিজেও কখনো করতে যায়নি।এই জীবনে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পাওয়া প্রতি টি সম্পর্ক ঠিক যেন উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সাজানো বাগানের মতো। সবটাই পূর্ব জন্মের কর্মফল। এইজন্মে ভালো কর্ম করলে সব কিছু ভালোই হয়---- এইটাই পূজার সংস্কার হয়ে গড়ে উঠেছে। তাই সে সম্পর্ক আর সেই সম্পর্কে থাকা মানূষগুলোর দোষগুণ আলাদা করে খুব সহজেই সম্পর্ক কে প্রাধান্য দিতে পারে। সংসার আর সেই , সমাজ বা লৌকিকতা পূজার অত জানা নেই, তবে নতুন জীবনপথে পরমেশ্বরের পরম কৃপার সাথে জীবনসঙ্গী র নিশ্চিত প্রেমপূর্ণ দায়বদ্ধতা আর মা বাবার প্রাণভরা আশীর্বাদ থাকলে মনের জোরে সবটুকু বাধা, বিপত্তি, প্রতিকূলতাকে জয় করা যায় এটা তার বধ্যমূল জীবনবোধ।
কিছুদিন যাবৎ সূর্য আর সুলেখাদেবীর বিশেষ মতবিরোধ চলছে। পূজাই এখন সূর্যের সবচেয়ে কাছের, মানসিকভাবে পাশে থাকার একমাত্র আপনজন।
কথা প্রসঙ্গে সূর্য জানালো যে কাছেই একটি শিবমন্দিরে যাওয়া নিয়ে সুলেখাদেবীকে বাধা দিয়েছে সূর্য। এই নিয়েই অশান্তি।
এরকম একটি পদক্ষেপ নেওয়া র কারণ জানতে চাওয়ায় সূর্য জানায় যে সেই শিবমন্দিরে র মন্দির কমিটিতে বিপুলা দেবী একজন সদস্যা। সতীশচন্দ্র বাবু গত হওয়ার পর মন ভালো রাখতেই মন্দির কমিটির সদস্যা হিসেবে সুলেখাদেবীর নাম বিপুলা দেবীই নথিভুক্ত করেন এবং তিনিই সুলেখাদেবীকে ওখানে প্রথম প্রথম সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন। সতীশচন্দ্র বাবু গত হয়েছেন আজ প্রায় পাঁচ বছর। সূর্য সুলেখাদেবীর সাজ সজ্জা চালচলনে হঠাৎ করেই বিশেষ পরিবর্তন লক্ষ্য করছে।
মন্দির কমিটির একজন বড় ব্যবসায়ী ভদ্রলোকের সঙ্গে ইদানীং সুলেখাদেবীর ঘনিষ্ঠতা সূর্যকে অস্থির করে তুলেছে। ভদ্রলোক বিবাহিত, স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে এই শহরেই বাস করেন।
বর্তমানে সেই ভদ্রলোকের সঙ্গে সুলেখাদেবীর প্রায়শঃই কারণ ছাড়া যোগাযোগ, ফোনে কথা, ঘুরতে যাওয়া ছাড়াও ঘরে ছেলেরা না থাকলে সেই ভদ্রলোকের আসা যাওয়া অনেকের চোখেই পড়েছে। বিপুলা দেবী বাড়িতে ডেকে নিয়ে এই ব্যাপারটা জানিয়েছেন সূর্যকে। মতবিরোধ যতই থাকুক না কেন, জন্মদাত্রী মায়ের চরিত্রে র কলঙ্ক কোনো সুসন্তানই সহজে মেনে নিতে পারেনা।
সূর্য তাই চায়না প্রতি সোমবার সুলেখাদেবী আর সেই শিবমন্দিরে যান। কিন্তু সুলেখাদেবী শুনতে চাইছেন না কিছুই।
এই নিয়ে তাই চরম অশান্তি চলছে।
সবটা বাক্ রুদ্ধ হয়ে শুনল পূজা। শান্তভাবে বলল মন্দিরে যাওয়া থেকে কাউকে বাধা দেওয়া অন্যায়। মা তো ছোট বাচ্চা নন। মায়ের যদি সত্যি দোষ থাকে তবে শিবমন্দিরে র জায়গায় অন্য জায়গায় দেখা করবেন। সবসময় চোখে যা দেখা যায়,আসলে তা সত্যি হয়না। আগে নিজে যাচাই করে দেখো।তারপর বিচার করে। শুধু শুধু দোষের ভাগীদার হবে কেন?
এবারও পূজার যুক্তি মেনে নিতে বাধ্য হল সূর্য। শিবমন্দিরের বিষয়ে আর অশান্তি করল না।
কিন্তু সুলেখাদেবীর এই বিপথ গমন সূর্য-পূজার জীবনে এক নতুন দুশ্চিন্তার রেখা হয়ে দেখা দিল।
© বুনানী
প্রায় ৮মাস সম্পূর্ণ হয়ে গেছে সূর্য-পূজার পরিচয় থেকে এই পর্যন্ত। দুজনেই দুজনকে নিশ্চিত ভাবে চিরদিনের জন্য গ্রহণ করে নিয়েছে মনে মনে।পৃথিবীর কোনো শক্তি ওদের একে অপরের প্রতি এই বিশ্বাসে আঘাত করার ক্ষমতা রাখেনা। তাই ওরা সামাজিক বন্ধনে র চেয়ে অনেক বেশি প্রাধান্য দেয় তাদের প্রেমের এই সম্পর্কের বিশ্বাসটুকুকেই।নিজেদের অস্তিত্ব আর মনের জানা অজানা সবটুকুই এক করে এগিয়ে যাওয়ার দায়বদ্ধতাই যেন ওদের সম্পর্কে র বড় সুরক্ষা কবচ। তাই তাদের এই সুগভীর উপলব্ধি দিয়ে গড়ে ওঠা সম্পর্কে র মধ্যে পারিবারিক মতবিরোধ, সামাজিক বৈষম্য কিংবা সাংসারিক চাওয়া-পাওয়ার হিসেব নিকেশ কোনো ছাপ ফেলতে সক্ষম হতে পারেনা।
এরকম একটা মূহুর্তে পূজা সূর্যের কাছেই জানতে পারে সূর্যের পারিবারিক গোপন এক সমস্যার কথা।
শুধাংশু বাবুর কাছে পূজা আর তার সম্পর্কে র ভবিষ্যৎ পরিণতি সম্পর্কে জানার পর থেকেই সূর্য বরাবরই পূজাকে তার নিজের দৈনন্দিন জীবনের ছোট-বড় সবটাই share করে এসেছে। মাস চার এক আগে, সূর্যের সাথে যখন কম্পিউটারে কথোপকথন হত তখন একবার সূর্যের মা অর্থাৎ সুলেখাদেবীর সঙ্গে সূর্যের খুব তর্ক-বিতর্ক হয়েছিল যার ফলে সূর্যের মন ভালো ছিল না একদম। দৃষ্টি শক্তি র চেয়ে মনের গতি অনেক বেশি।মনের সম্পর্ক ওদের গভীর ছিল প্রথম থেকেই।সূর্যের মানসিক অস্থিরতা আ৺চ করতে তাই পূজার খুব একটা অসুবিধা হয়নি কখনো। সেই সময় সূর্য পূজাকে জানিয়েছিল যে তার বিয়ে নিয়ে তাকে জোর করছেন। তা৺র পছন্দের একটি মেয়ের সাথে তিনি তার বিয়ে দিতে ইচ্ছুক। সূর্য এই প্রস্তাবে অসম্মতি প্রকাশ করায় অশান্তির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এতটাই অশান্তি হয়েছিল যে একরাতে সূর্য এবং তার মা, সুলেখাদেবী
না খেয়েও ছিলেন। পূজা তখন সূর্য কে বুঝিয়েছিল যে মায়ের মধ্যে হয়তো insecurity বেড়ে যাচ্ছে। একাকীত্ব অনুভব করছেন। ছেলেরা কাজে ব্যস্ত। তাই এরকম ইচ্ছে হওয়াটা অস্বাভাবিক তো নয়।এই নিয়ে সূর্যের মনের ইচ্ছা মাকে সবটা খুলে বললেই সমস্যার সমাধান হতে পারে। এভাবে ঝগড়া করলে তো মাকে কষ্ট দেওয়া হবে। দুজনের মনই ভালো থাকবে না।
পরেরদিন সূর্য জানিয়েছিল মায়ের সাথে কথা হয়েছে।এখন সব ঠিক আছে।
পূজা যে পরিবেশে বড় হয়েছে সেখানে সে সাংসারিক শিক্ষা র মূলমন্ত্র হিসেবে দেখে এসেছে সম্পর্কে র প্রাধান্য। পরিস্থিতি, পরিবেশ, ভালো মন্দ, মতবিরোধ একদিকে আর সম্পর্কে র মর্যাদা আর একদিকে যা লঙ্ঘন করার ধৃষ্টতা সে কখনো তার মা বা বাবাকে কোনো কারণে করতে দেখেনি আর নিজেও কখনো করতে যায়নি।এই জীবনে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পাওয়া প্রতি টি সম্পর্ক ঠিক যেন উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সাজানো বাগানের মতো। সবটাই পূর্ব জন্মের কর্মফল। এইজন্মে ভালো কর্ম করলে সব কিছু ভালোই হয়---- এইটাই পূজার সংস্কার হয়ে গড়ে উঠেছে। তাই সে সম্পর্ক আর সেই সম্পর্কে থাকা মানূষগুলোর দোষগুণ আলাদা করে খুব সহজেই সম্পর্ক কে প্রাধান্য দিতে পারে। সংসার আর সেই , সমাজ বা লৌকিকতা পূজার অত জানা নেই, তবে নতুন জীবনপথে পরমেশ্বরের পরম কৃপার সাথে জীবনসঙ্গী র নিশ্চিত প্রেমপূর্ণ দায়বদ্ধতা আর মা বাবার প্রাণভরা আশীর্বাদ থাকলে মনের জোরে সবটুকু বাধা, বিপত্তি, প্রতিকূলতাকে জয় করা যায় এটা তার বধ্যমূল জীবনবোধ।
কিছুদিন যাবৎ সূর্য আর সুলেখাদেবীর বিশেষ মতবিরোধ চলছে। পূজাই এখন সূর্যের সবচেয়ে কাছের, মানসিকভাবে পাশে থাকার একমাত্র আপনজন।
কথা প্রসঙ্গে সূর্য জানালো যে কাছেই একটি শিবমন্দিরে যাওয়া নিয়ে সুলেখাদেবীকে বাধা দিয়েছে সূর্য। এই নিয়েই অশান্তি।
এরকম একটি পদক্ষেপ নেওয়া র কারণ জানতে চাওয়ায় সূর্য জানায় যে সেই শিবমন্দিরে র মন্দির কমিটিতে বিপুলা দেবী একজন সদস্যা। সতীশচন্দ্র বাবু গত হওয়ার পর মন ভালো রাখতেই মন্দির কমিটির সদস্যা হিসেবে সুলেখাদেবীর নাম বিপুলা দেবীই নথিভুক্ত করেন এবং তিনিই সুলেখাদেবীকে ওখানে প্রথম প্রথম সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন। সতীশচন্দ্র বাবু গত হয়েছেন আজ প্রায় পাঁচ বছর। সূর্য সুলেখাদেবীর সাজ সজ্জা চালচলনে হঠাৎ করেই বিশেষ পরিবর্তন লক্ষ্য করছে।
মন্দির কমিটির একজন বড় ব্যবসায়ী ভদ্রলোকের সঙ্গে ইদানীং সুলেখাদেবীর ঘনিষ্ঠতা সূর্যকে অস্থির করে তুলেছে। ভদ্রলোক বিবাহিত, স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে এই শহরেই বাস করেন।
বর্তমানে সেই ভদ্রলোকের সঙ্গে সুলেখাদেবীর প্রায়শঃই কারণ ছাড়া যোগাযোগ, ফোনে কথা, ঘুরতে যাওয়া ছাড়াও ঘরে ছেলেরা না থাকলে সেই ভদ্রলোকের আসা যাওয়া অনেকের চোখেই পড়েছে। বিপুলা দেবী বাড়িতে ডেকে নিয়ে এই ব্যাপারটা জানিয়েছেন সূর্যকে। মতবিরোধ যতই থাকুক না কেন, জন্মদাত্রী মায়ের চরিত্রে র কলঙ্ক কোনো সুসন্তানই সহজে মেনে নিতে পারেনা।
সূর্য তাই চায়না প্রতি সোমবার সুলেখাদেবী আর সেই শিবমন্দিরে যান। কিন্তু সুলেখাদেবী শুনতে চাইছেন না কিছুই।
এই নিয়ে তাই চরম অশান্তি চলছে।
সবটা বাক্ রুদ্ধ হয়ে শুনল পূজা। শান্তভাবে বলল মন্দিরে যাওয়া থেকে কাউকে বাধা দেওয়া অন্যায়। মা তো ছোট বাচ্চা নন। মায়ের যদি সত্যি দোষ থাকে তবে শিবমন্দিরে র জায়গায় অন্য জায়গায় দেখা করবেন। সবসময় চোখে যা দেখা যায়,আসলে তা সত্যি হয়না। আগে নিজে যাচাই করে দেখো।তারপর বিচার করে। শুধু শুধু দোষের ভাগীদার হবে কেন?
এবারও পূজার যুক্তি মেনে নিতে বাধ্য হল সূর্য। শিবমন্দিরের বিষয়ে আর অশান্তি করল না।
কিন্তু সুলেখাদেবীর এই বিপথ গমন সূর্য-পূজার জীবনে এক নতুন দুশ্চিন্তার রেখা হয়ে দেখা দিল।
© বুনানী
Related Stories