...

3 views

মায়ের মন( Read in caption)
মা শব্দটা শুনতে অথবা বলতে যতটা ভালো লাগে তার থেকে সেই মা মানুষটাকে শ্রদ্ধা করতে খুব ইচ্ছা করে।
আর যাই হোক না কেন ঈশ্বরের সৃষ্ট দুটি জিনিস সবচেয়ে সুন্দর,এক হলো এই বিশ্ব বা জগৎ আর দুই হলো মা।তবু সবার কপালে এই 'মা' শব্দটা ডাকার সুযোগ থাকে না, আর যাদের থাকে তারা এই মানুষটাকে অসম্মান,অশ্রদ্ধা করে।দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরে থাকা প্রভাবতী দেবীর জীবনেও একই অবস্থা।বয়স ৬০ বছরের বেশি।তবু মনটা বড্ডো সরল,মিসুকে ও নরম স্বভাবের মানুষ তিনি।প্রভাবতী দেবীর দুই ছেলে।বড় ছেলে একজন নামকরা উকিল আর ছোট ছেলে একটু খামখেয়ালি,মনে যা আসে তাই করে।কখনো মাছের ব্যাবসা করছে তো কখনো ঘরে বসে আছে।তবে সে আঁকতে বড় ভালোবাসত।কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সে এখন বিবাগী হয়ে গেছে।তার সাথে এ বাড়ির লোকের কোনো যোগাযোগ নেই।যদিও সে বাড়ি ফিরলেও প্রভাবতী দেবী তা জানতে পারবেন না।কারণ এত কষ্ট করে মানুষ করার পরও বড়ছেলে অমানুষের মতো মাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।তাই এখন তিনি কলকাতাই তার খুড়তুতো বোনঝির বাড়িতে থাকেন।আগে তিনি খুব কষ্ট পেতেন,খাবার টেবিলে বসে ছেলের কথা মনে করে কষ্ট পেতেন।কিন্তু এখন বোনঝির ভালোবাসায় তিনি একটু হলেও আগের কথা ভুলতে পেড়েছেন।অতীতের কথা তিনি আর মনে করেন না,মনে পড়লো আর কষ্ট পান না।তবু মায়ের মন তো ভেতরে ভেতরে কষ্ট পেলেও এখন বাইরে প্রকাশ করেন না।এভাবেই দুই-তিন বসিজকর কেটে যায়।প্রত্যেক দিনের মতোই প্রভাবতী দেবী বাড়ির কাজ করছিলেন আর বাকিরা নিজেদের কাজে বাইরে ছিল।হঠাৎ কলিং বেলটা বেজে ওঠে।দরজা খুলতেই কে যেন তাঁর পায়ে পড়ে বারবার ক্ষমা চাইতে থাকে।মাথা তুলতেই তিনি দেখেন ও যে তার গুণধর বড়ছেলে,যে নিজের বৃদ্ধা মায়ের হাত ধরে টেনে হিচড়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল।আশেপাশের লোকেরা সেই নির্মম দৃশ্য দেখে কোনো প্রতিবাদ করেনি,কেউ বাধা দেয়নি।সেই লজ্জা,অপমান আজ তাকে আবার দুর্বল করে দিচ্ছে।কিন্তু দুর্বল হলে চলবে না।মন শক্ত করে তিনি বললেন ,"কে আপনি"? সৌমক(বড়ছেলে)বলে,"মা,তুমি আমায় চিনতে পারছো না,আমি তোমার বড়ছেলে"।প্রভাবতী দেবী বলেন,"বড়ছেলে!সে তো আজ দুবছর হয়ে গেল মারা গেছে"।সৌমক হেসে বলে,"বুঝেছি তুমি আমাই শাস্তি দিচ্ছ না?আর পারবে না কারণ আমি তোমায় নিজে যেতে এসেছি তো"।প্রভাবতী দেবী মৃদু হেসে বলেন,"কোনো বলুন তো এতদিন শাস্তি দিয়েও মন ভরেনি"!সৌমক একটু থেমে বলে,"মা এ তুমি কি বলছ,আমি তোমার ছেলে হয়ে এটুকু অধিকার ফলাতে পারবো না"?প্রভাবতী দেবী বলেন,"অধিকার!আমি মনে মনে যখন ভেবেই নিয়েছি যে আমার বড়ছেলে মৃত তখন অধিকার কোথা থেকে আসবে বলুন তো"সৌমক বলে,"সেদিন যা হচ্ছে তারপর আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম,তুমিই বলো আমরা এইসব ভুলে আবার নতুন ভাবে থাকতে পারি না"?প্রভাবতী দেবী বলেন,"না কখনোই না,সেদিন যা হয়েছিল তা কোনো ভোলাম বিষয় নয়,আসলে কি বলুন তো যাকে নয়মাস গর্ভে ধারণ করলাম সেই আমার পায়ে কিরুল মারলো,যাক আপনি এবার আসুন"।সৌমক আর কিছু বলে না,শুধু বলে,"আমি আসছি,ভালো থেকো মা"।সৌমক চলে যায়।পরিভাবতী দেবী দরজা বন্ধ করেন।তারপর সব যেন নিস্তব্ধ হয়ে যায়।পাখার ব্লেডের আওয়াজ শোনা যায়।প্রভাবতী দেবী মাটিতে বসে পড়েন,চোখ যে ভরে যায়।আসলে উলি নিজের ছেলেকে এভাবে কষ্ট দিতে চাইনি,মনে পাথর রেখে এতদিন থেকেছেন।তবু মায়ের মনে তো,তাই এত কষ্টের পরেও তিনি নিজের ছেলেকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।কিন্তু ওই যে,মা-বাবার কর্তব্য শুধু সন্তানকে জন্ম দিয়ে আদর,ভালোবাসা দিয়ে বড় করলেই শেষ হয় না।তাকে শাসনও করতে হয়।তাই মন শক্ত করে উনি তার ছেলের কুকর্মের যোগ্য শাস্তি দিয়েছেন।এরপর বহু সময় কেটে যায়।সেদিনের পর প্রভাবতী দেবীর বাড়ি থেকে আর কেউ কোনোদিন তার খোঁজ নিতে আসেনি।উনি ছেলেদের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো মনে করে যবন কাটিয়ে দেবেন বলে ভেবেছেন।কিন্তু যতই হোক,মায়ের মন তো শেষবার ছেলের মুখে শোনা মা ডাকটা আজ তার এখনো মনে পড়ে।
© Everyone has a creativity, So let's grow up

#WritcoQuote #story #mother #lifestyle #bengali