পিতৃদিবস
(This drama is a Bengali translation of the English play 'Mother's Day' written by JB Priestley.)
পিতৃদিবস
(একাঙ্ক নাটক)
চরিত্র:-
মনোজ সেন - সদ্য অবসরপ্রাপ্ত ভদ্রলোক
কাবেরী সেন - তাঁর স্ত্রী, কলেজের লেকচারার
সহেলি সেন - তাঁর কলেজ পড়ুয়া মেয়ে
সার্থক সেন - তাঁর চাকুরীরত ছেলে
কর্নেল রায়চৌধুরী - তাঁদের প্রতিবেশী, অবসরপ্রাপ্ত
পুঁটির মা - সেন বাবুর বাড়ির কাজের লোক
প্রথম দৃশ্য
(মনোজ সেন একটা চেয়ারে বসে খবরের কাগজ পড়ছেন। তাঁর মেয়ে সহেলি হনহন করে ঘরে ঢুকলো।)
সহেলি - বাবা, দশটা বাজতে চললো আর তুমি এখনো বসে বসে কাগজ পড়ে যাচ্ছ? আমার বইটা xerox করিয়ে আনতে হবে সেটা মনে আছে তো? মনে রেখো, কালকের মধ্যেই কিন্তু বইটা কলেজ লাইব্রেরীতে ফেরত দিতে হবে।
মনোজ - হ্যাঁ হ্যাঁ মনে আছে রে মা। এই তো, চা টা খেয়েই বেরোচ্ছি।
সহেলি - উঃ, এখন আবার চা খাবে? প্রায় দুশো পাতার বই, xerox করাতে সময় লাগবে। আচ্ছা, আমি বেরোলাম।
(সহেলি হনহন করে বেরিয়ে গেল।)
মনোজ - ও পুঁটির মা। বলি তোমার চা হোলো? এক কাপ চা করতে কতক্ষন লাগে?
(চায়ের কাপ হাতে পুঁটির মায়ের প্রবেশ। কাপটা ঠক করে টেবিলের ওপর নামিয়ে রাখে সে।)
পুঁটির মা - এই ন্যাও তোমার চা। বলি দিনের মধ্যি ক কাপ চা লাগে শুনি? ইদিকে রাজ্যির কাজ পড়ে আছে, আর তার মধ্যি এনার খালি চায়ের হুকুম।
মনোজ - আহা রাগ করো কেন বাপু? এই তো সবে দু কাপ হোলো।
পুঁটির মা - ওই ঢের হইসে। আমি আর চা করতি পারবুনি বাপু হ্যাঁ!
(গজগজ করতে করতে পুঁটির মার প্রস্থান। অফিসের পোশাক পরে ছেলে সার্থকের প্রবেশ।)
সার্থক - বেরোচ্ছি বাবা। আজ টেলিফোনের বিলটা অবশ্যই দিয়ে দিও। আজই কিন্তু last date.
মনোজ - ও, আচ্ছা দিয়ে দেবো।
(সার্থকের প্রস্থান। মনোজের স্ত্রী কাবেরীর প্রবেশ।)
কাবেরী - ইশ, দেরি হয়ে গেল। শোনো, আজ রাতে আমার কয়েকজন colleagueকে ডিনারে invite করেছি। একটু বাজারে যেও দিকি। ভালো ভেটকি মাছ আর খাসির মাংস নিয়ে আসবে। তার সঙ্গে দই-মিষ্টি। পুঁটির মা কে বলা আছে। ও বিকেলে তাড়াতাড়ি এসে রান্নাটা করে দিয়ে যাবে।
মনোজ - আচ্ছা, যাবো নাহয়।
(কাবেরীর প্রস্থান।)
মনোজ - নাঃ, চা টা খেয়েই বেরোতে হবে দেখছি। অনেক কাজ।
(বাইরে থেকে কর্নেল রায়চৌধুরীর গলা শোনা যায়। "সেন, বাড়িতে আছো নাকি হে?" কর্নেলের প্রবেশ)
কর্নেল - বাঃ, দিব্বি একা একা চা খাচ্ছ দেখছি। আমার জন্যেও এক কাপ বলো দেখি।
মনোজ (আমতা আমতা করে) - তু-তুমি বরং এটাই খাও। আমার সকাল থেকে অনেকবার হয়ে গিয়েছে।
কর্নেল - বাজে কথা বলার অভ্যেসটা ছাড়ো হে সেন। ভুলে যেওনা যে আমি তোমার পাশের বাড়িতেই থাকি। সব কথা কানে আসে।
মনোজ - কি, কি কথা?
কর্নেল - আজকাল তোমার বাড়ির লোকজন তোমার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করে তা দেখতেও পাই, শুনতেও পাই। তুমি যেন সংসারে ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো হয়ে গেছ। কে বলবে যে এই সেদিন অবধি তুমি নামকরা কোম্পানির দাপুটে অফিসার ছিলে।
মনোজ - না না তেমন কিছু নয়। আসলে আমি তো এখন বাড়িতেই থাকি, তাই...
কর্নেল - তাই তোমাকে সকলের খিদমত খাটতে হয়, তাই তো?
মনোজ - না, মানে...
কর্নেল - মানেটা আর কষ্ট করে বোঝানোর দরকার নেই। আমি সবই জানি, সবই বুঝি। আচ্ছা, তুমি তো তোমার নিজের বাড়িতে থাকো, আর নিজের গ্যাঁটের পয়সায় খাও পরো, না কি?
মনোজ - হ্যাঁ, তা ঠিক, তবে...
কর্নেল - তবে তোমার উচিত যে পরিবারের সব্বাইকে বেশ ভালো করে বুঝিয়ে দেওয়া দরকার যে তুমি এ বাড়ির কর্তা, তাদের চাকর নও।
মনোজ - ওরেব্বাবা, এসব কথা বলতে গেলে বাড়িতে কুরুক্ষেত্র বেঁধে যাবে। ওসবের মধ্যে আমি নেই।
কর্নেল - নেই মানে? তোমাকে পারতেই হবে। আজকাল তো দেখি পুঁটির মা অবধি তোমার ওপর চোটপাট করে। বলি সহ্য করো কিকরে?
মনোজ - ওরে বাবা, চুপ করো। পুঁটির মা শুনতে পেলে আর রক্ষে থাকবে না। আমাকে এখনই বেরোতে হবে। অনেক কাজ আছে।
কর্নেল - এখন কোত্থাও বেরোনোর দরকার নেই। চুপচাপ বসে আমার কথাগুলো শোনো।
মনোজ - তাড়াতাড়ি বলো কি বলবে? হাতে সময় নেই একদম।
কর্নেল - ঠিক বলেছো। হাতে সময় নেই একদম। বেড়াল কাটতে হলে এখনই কাটতে হবে।
মনোজ - বেড়াল কাটবে কেন?
কর্নেল - আঃ! যা বলছি শোনো। আমার যখন বসিরহাটে পোস্টিং ছিল তখন এক তান্ত্রিক বাবাজীর সঙ্গে পরিচয় হয়। পাঁচ বছর তাঁর শিষ্য ছিলাম। সেই সময় তাঁর কাছ থেকে আমি অনেক তন্ত্র মন্ত্র শিখেছি।
মনোজ - তাই নাকি?
কর্নেল - হ্যাঁ। আমার সেই তান্ত্রিক গুরু আমাকে আত্মা বদলের মন্ত্র শিখিয়েছিলেন; যাকে বলে soul exchange, বুঝলে? এই মন্ত্রের শক্তিতে আমি কিছুক্ষণের জন্যে অন্য কারুর সঙ্গে soul exchange করতে পারি। তার মানে সেই সময়ের...
পিতৃদিবস
(একাঙ্ক নাটক)
চরিত্র:-
মনোজ সেন - সদ্য অবসরপ্রাপ্ত ভদ্রলোক
কাবেরী সেন - তাঁর স্ত্রী, কলেজের লেকচারার
সহেলি সেন - তাঁর কলেজ পড়ুয়া মেয়ে
সার্থক সেন - তাঁর চাকুরীরত ছেলে
কর্নেল রায়চৌধুরী - তাঁদের প্রতিবেশী, অবসরপ্রাপ্ত
পুঁটির মা - সেন বাবুর বাড়ির কাজের লোক
প্রথম দৃশ্য
(মনোজ সেন একটা চেয়ারে বসে খবরের কাগজ পড়ছেন। তাঁর মেয়ে সহেলি হনহন করে ঘরে ঢুকলো।)
সহেলি - বাবা, দশটা বাজতে চললো আর তুমি এখনো বসে বসে কাগজ পড়ে যাচ্ছ? আমার বইটা xerox করিয়ে আনতে হবে সেটা মনে আছে তো? মনে রেখো, কালকের মধ্যেই কিন্তু বইটা কলেজ লাইব্রেরীতে ফেরত দিতে হবে।
মনোজ - হ্যাঁ হ্যাঁ মনে আছে রে মা। এই তো, চা টা খেয়েই বেরোচ্ছি।
সহেলি - উঃ, এখন আবার চা খাবে? প্রায় দুশো পাতার বই, xerox করাতে সময় লাগবে। আচ্ছা, আমি বেরোলাম।
(সহেলি হনহন করে বেরিয়ে গেল।)
মনোজ - ও পুঁটির মা। বলি তোমার চা হোলো? এক কাপ চা করতে কতক্ষন লাগে?
(চায়ের কাপ হাতে পুঁটির মায়ের প্রবেশ। কাপটা ঠক করে টেবিলের ওপর নামিয়ে রাখে সে।)
পুঁটির মা - এই ন্যাও তোমার চা। বলি দিনের মধ্যি ক কাপ চা লাগে শুনি? ইদিকে রাজ্যির কাজ পড়ে আছে, আর তার মধ্যি এনার খালি চায়ের হুকুম।
মনোজ - আহা রাগ করো কেন বাপু? এই তো সবে দু কাপ হোলো।
পুঁটির মা - ওই ঢের হইসে। আমি আর চা করতি পারবুনি বাপু হ্যাঁ!
(গজগজ করতে করতে পুঁটির মার প্রস্থান। অফিসের পোশাক পরে ছেলে সার্থকের প্রবেশ।)
সার্থক - বেরোচ্ছি বাবা। আজ টেলিফোনের বিলটা অবশ্যই দিয়ে দিও। আজই কিন্তু last date.
মনোজ - ও, আচ্ছা দিয়ে দেবো।
(সার্থকের প্রস্থান। মনোজের স্ত্রী কাবেরীর প্রবেশ।)
কাবেরী - ইশ, দেরি হয়ে গেল। শোনো, আজ রাতে আমার কয়েকজন colleagueকে ডিনারে invite করেছি। একটু বাজারে যেও দিকি। ভালো ভেটকি মাছ আর খাসির মাংস নিয়ে আসবে। তার সঙ্গে দই-মিষ্টি। পুঁটির মা কে বলা আছে। ও বিকেলে তাড়াতাড়ি এসে রান্নাটা করে দিয়ে যাবে।
মনোজ - আচ্ছা, যাবো নাহয়।
(কাবেরীর প্রস্থান।)
মনোজ - নাঃ, চা টা খেয়েই বেরোতে হবে দেখছি। অনেক কাজ।
(বাইরে থেকে কর্নেল রায়চৌধুরীর গলা শোনা যায়। "সেন, বাড়িতে আছো নাকি হে?" কর্নেলের প্রবেশ)
কর্নেল - বাঃ, দিব্বি একা একা চা খাচ্ছ দেখছি। আমার জন্যেও এক কাপ বলো দেখি।
মনোজ (আমতা আমতা করে) - তু-তুমি বরং এটাই খাও। আমার সকাল থেকে অনেকবার হয়ে গিয়েছে।
কর্নেল - বাজে কথা বলার অভ্যেসটা ছাড়ো হে সেন। ভুলে যেওনা যে আমি তোমার পাশের বাড়িতেই থাকি। সব কথা কানে আসে।
মনোজ - কি, কি কথা?
কর্নেল - আজকাল তোমার বাড়ির লোকজন তোমার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করে তা দেখতেও পাই, শুনতেও পাই। তুমি যেন সংসারে ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো হয়ে গেছ। কে বলবে যে এই সেদিন অবধি তুমি নামকরা কোম্পানির দাপুটে অফিসার ছিলে।
মনোজ - না না তেমন কিছু নয়। আসলে আমি তো এখন বাড়িতেই থাকি, তাই...
কর্নেল - তাই তোমাকে সকলের খিদমত খাটতে হয়, তাই তো?
মনোজ - না, মানে...
কর্নেল - মানেটা আর কষ্ট করে বোঝানোর দরকার নেই। আমি সবই জানি, সবই বুঝি। আচ্ছা, তুমি তো তোমার নিজের বাড়িতে থাকো, আর নিজের গ্যাঁটের পয়সায় খাও পরো, না কি?
মনোজ - হ্যাঁ, তা ঠিক, তবে...
কর্নেল - তবে তোমার উচিত যে পরিবারের সব্বাইকে বেশ ভালো করে বুঝিয়ে দেওয়া দরকার যে তুমি এ বাড়ির কর্তা, তাদের চাকর নও।
মনোজ - ওরেব্বাবা, এসব কথা বলতে গেলে বাড়িতে কুরুক্ষেত্র বেঁধে যাবে। ওসবের মধ্যে আমি নেই।
কর্নেল - নেই মানে? তোমাকে পারতেই হবে। আজকাল তো দেখি পুঁটির মা অবধি তোমার ওপর চোটপাট করে। বলি সহ্য করো কিকরে?
মনোজ - ওরে বাবা, চুপ করো। পুঁটির মা শুনতে পেলে আর রক্ষে থাকবে না। আমাকে এখনই বেরোতে হবে। অনেক কাজ আছে।
কর্নেল - এখন কোত্থাও বেরোনোর দরকার নেই। চুপচাপ বসে আমার কথাগুলো শোনো।
মনোজ - তাড়াতাড়ি বলো কি বলবে? হাতে সময় নেই একদম।
কর্নেল - ঠিক বলেছো। হাতে সময় নেই একদম। বেড়াল কাটতে হলে এখনই কাটতে হবে।
মনোজ - বেড়াল কাটবে কেন?
কর্নেল - আঃ! যা বলছি শোনো। আমার যখন বসিরহাটে পোস্টিং ছিল তখন এক তান্ত্রিক বাবাজীর সঙ্গে পরিচয় হয়। পাঁচ বছর তাঁর শিষ্য ছিলাম। সেই সময় তাঁর কাছ থেকে আমি অনেক তন্ত্র মন্ত্র শিখেছি।
মনোজ - তাই নাকি?
কর্নেল - হ্যাঁ। আমার সেই তান্ত্রিক গুরু আমাকে আত্মা বদলের মন্ত্র শিখিয়েছিলেন; যাকে বলে soul exchange, বুঝলে? এই মন্ত্রের শক্তিতে আমি কিছুক্ষণের জন্যে অন্য কারুর সঙ্গে soul exchange করতে পারি। তার মানে সেই সময়ের...