...

15 views

রহস্যময় সুন্দরবন (অংশ 3)
আমার রাগ হচ্ছে অপুদাকে এমন আগ্ৰহহীন ভাবে বসে থাকতে দেখে। ও কী ব্যপারটাকে ইন্টারেস্টেড মনে করছে না। না বিপ্লব এর আগে শান্ত পরিবেশের লক্ষন এটা, কী জানি বাবা! ব্যপারটা হল সেদিন বনে ঘুরে ফেরার সময় একজন কে খুজে পাওয়া যাচ্চে না। যে কী না দিলীপ স্যার এর আন্ডারে ছিল।এদিকে বিকেল হয়ে গেছে বনের ভেতরে অন্ধকার নেমে আসছে তাই আমাদের লজে পৌছে দিয়ে অপুদা, রমেশ বাবুর আরও দুজন স্যর এবং নিশান বাবু মানে আরেক জন গাইট মিলে সমড়কে খুঁজতে। অভ্যুত্থান আমরা হোটেলে ফিরে যে যার ঘরে এসে বসেছি। এদিকে আমর টেনশন হচ্ছে, আর আমি আমার নখ খাই। সাধারণত এটা মেয়েদের অভ্যাস তবে এটা আমার ক্ষেত্রেও হয়। এই জন্য অবশ্য অপুদার কাছে অনেক ঝার খেয়েছি। ইতিমধ্যে দেখি কীলুবাবু এসেছেন আমাদের ঘরে, তবে স্টুডেন্ট নিখোঁজ হওয়ার জন্য বোধহয় কীলুবাবু নামটা ব্যর্থ হয়ে যাচ্চে। ওনার মুখে দুশ্চিন্তার ছবি স্পষ্ট লক্ষ করা যাচ্ছে। উনি এসে বিছানায় আমার পাশে বসলেন , বললেন কী কান্ড! বলোতো বাপন তোমার দাদারা সেই যে গেলেন এখনও এলো না। এদিকে সন্ধ্যা হয়ে গেল। আর দিলীপ এরই বা কী কান্ড ছয় জন মাত্র স্টুডেন্ট তাই দেখে রাখতে পারে না, যতোসব ইরেসপনসিবেল। এই কথা বলে কীলুস্যার দুহাত তুলে জোড় করে জোরে জোরে বলতে লাগল হে মা দূর্গা হে মা কালী মাগো মা রক্ষা করো। সত্যিই কীলুবাবু স্যারের এই আকস্মিক মানত দেখে এই দুশ্চিন্তার মধ্যেও হাসি পাচ্ছিল। হঠাৎ দরজায় নখ করল এবারে যিনি আসলেন তিনি হোটেলের এক স্টাফ, সেন্টার টেবিলে করে আমাদের জন্য চা এনেছেন। আমরা দুশ্চিন্তাটাকে এক সাইটে রেখে চা আর বাটারফ্লাই ডিজাইনের কুকিসে মন দিলাম। খাওয়ার সময় স্যার বললেন বেশ খেতে কিন্তু যাওয়ার সময় কীছু নিয়ে যেতে হবে।
এর প্রায় দশ পনেরো মিনিট পরে বাইরে বেশ হুলস্থুল এর শব্দ পেলাম। তবে বাইরে যাওয়ার অনুমতি না থাকায় আমরা জানালার সামনে গিয়ে ভীর করে দিয়ে আছি। জানালার বাইরে যা ঘটছে তা এখান বোঝা বেশ কষ্টদায়ক। অতঃপর বিরক্তি হয়ে চলে এলাম। প্রায় দেড় ঘণ্টা মধ্যে এই হুলস্থুল মিশে গেল এই নিরব বনভুমি তে। এখন শুধু ঘরের মধ্যে কার কথায় শুনতে পারছি, একমাত্র ঝী ঝী এর আওয়াজ ছাড়া। ইতিমধ্যে জানতে পারলাম সমড়কে পাওয়া গেছে তবে অচেতন অবস্থায়!জ্ঞান ফেরার পর থেকেই ও বেশ ভয় পেয়ে আছে। যেন ভয় ওর মনকে শক্ত করে আকরে ধরে আছে। ওকে আমাদের পাশের ঘরেই বিছানায় রাখা হয়েছে। তবে লোকাল একজন ডাক্তার এসে ওকে একটু চেকআপ করে যাওয়ায় ও এখন অনেকটাই ভালো আছে। ও শুস্থ হওয়ার পর বলল যে ও জঙ্গলে ঘোরার সময় ফটোগ্রাফি করতে গিয়ে দল ছুট হয়ে পরে। ফলে ও প্রথমে ই বেশ ঘাবড়ে যায়, এবং রাস্তাও হারিয়ে ফেলে। তবে সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যপারটি হলো এই অবস্থারমধ্যে বাঘের সম্মুখীন হতে হয়েছে ওকে। কথাটি শোনা মাত্রই আমার মন উত্তেজিত হয়ে পড়ল এক অজানা ভয়ে।তবে প্রশ্ন টা হল বাঘ ওকে পেয়ে ছেড়ে কেন দিল, আর এই কথা শোনা মাত্রই পুরো হুলস্থুল পরে গেল পুরো অন্যান্য টুরিষ্ট দের মধ্যে। হ্যাঁ সুন্দরবনে শুধু বাঘই নয় এছাড়াও আরও অনেক হিংস্র প্রাণীও রয়েছে। তবে সে তো নদীর ওপারে। আমরা যেখানে উঠেছি মানে নদীর এপারের বন গুলিতে সাধারণত কোনো হিংস্র পশু নেই, আরও একটা ব্যাপার হলো এই যে এই জায়গা গুলি বন বিভাগ থেকে ঘেরা দেওয়া হয়েছে। কারণ এই জায়গা গুলিতে টুরিস্ট হোটেল ছাড়াও বনের আশেপাশে কয়েকটা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর দল রয়েছে।
তবে এই ঘটনার পর শুধু আমারই নয় হোটেলের ম্যনেজার কেউ কিন্তু বেশ চিন্তিত দেখছি। তাই বোধহয় উনি সকালে ফরেষ্ট অফিসার ঘনশ্যাম মিশ্রকে আসতে বলেছিলেন। এত কিছু পর পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠতে উঠতে সূর্যী মাথার উপর উঠে গিয়ে ছিল। তবে শুধু আমিই নয় অনেকেই এখনও ঘুম থেকে উঠেনি বলতে পারি, কিন্তু অপুদাকে কিন্তু কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। ইতিমধ্যে আমরা আমাদের চা কিন্তুু পেয়ে গেছি। আমি আর সুবির দা হোটেলের পুবের ব্যবকলনীয় টাতে গিয়ে সুন্দর সকালের আনন্দ নিচ্ছীলাম। সত্যি এমন সুন্দর প্রকৃতিময় সকাল আগে দেখেছি বললে মিথ্যে বলা হবে। ইতিমধ্যে একটা জীপগাড়ী এসে থামলো হোটেলের সামনে খোয়া ঢালা রাস্তায়। গাড়ি থেকে যারা নেমে এলেন তাদের দুজন ব্যক্তিকে আমি চিনি , কিন্তু তৃতীয় বৃহত্তম আকারের ব্যক্তি টি যে কে তা বুঝতে পারছি না। প্রথম দুজন হলেন অপুদা ও নিশান বাবু আর তৃতীয় জনের পরিচয় অপুদা দিয়ে দিলেন উনি হলেন ফরেস্ট অফিসার রঞ্জিত যাদব, এবং এটাও বললেন যে রঞ্জিত বাবু নাকি ওর কলেজের বন্ধু তবে সিনিয়র ছিল।এবার বুঝলাম অপুদা অত সকালে কোথায় গিয়ে ছিল কিন্তুু আমাকে একবার ও ডাকলো না, এটা ভেবেই রাগ হচ্ছিল। আমারা সবাই হোটেলের পাশে ক্যন্টিনে বসে ছিলাম । অপুদা আরও এক কাপ করে চায়ের অডার দিল। ইতিমধ্যে ম্যনেজার দিনবন্ধু মিত্র এসে এখানে উপস্থিত হয়েছেন। ওনার ভয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত ওনার ব্যবসা না জলে ডোবে এবার। তবে ফরেস্ট অফিসার রঞ্জিত যাদব কথায় শান্ত হলেন। উনি বললেন যে এ অঞ্চলে বাঘ আসাটা খুব একটা অস্বাভাবিক না হলেও বাঘ আসার কোনো রকম চিন্থ কিন্তুু পাওয়া যায় নি। তবে কাল যে খানে ছেলেটাকে পাওয়া গেছে হয়তো তার আসে পাশে পাওয়া যেত কিন্তুু কাল রাতের বৃষ্টি মনেহয় সবধূয়ে নিয়ে গেছে। আর আমাদের গাইট নিশান বাবু বললেন 'আর যদি বাঘই এইসে থাকে তাহইলে তার শিকার ফেইলে চইলে যায়।ছেইলেটা কি দেখতে না কি দেখেছে। আর তাছাড়া একা একা থাকার জন্য ওই ঘাবড়ে গেছিলো বোধহয়। নিশান বাবু লোকটাকে আমার বেশ খারাপ লাগে না। তবে এই প্রথম বার ওনার কথা শুনে ওনাকে বাঙালি বলে মনে হচ্ছে না। পরিষ্কার বাংলা বলে ঠিকই তবে ওনার কথার মধ্যে একটা অদ্ভুত টান রয়েছে।
এইবার যিনি এলেন পরিচয় আগেই দিয়ছি মানে কীলু স্যার আসলেন তবে বেশ খুশমেজাজ। হাতে একটা বই দুলাতে দুলাতে এলেন আর এসেই যে অসাধারণ খবর টি দিলেন তা হলো আজ লাঞ্চের পরে বনের দক্ষিণ দিকের জায়গা গুলি ঘুরে সন্ধ্যেবেলা পাশের একটা আদিবাসী গ্রাম ওদের পরব দেখতে যাচ্ছি। কথাটা শোনা মাত্রই আমাদের মন নেচে উঠল রাতের আমোদের জন্য। এই সব নানান কথা হওয়ার পর স্যার যে বইটি হাতে করে এনেছিলেন সেটা আমাকে দিয়ে বললেন অসাধারণ তুলনা আছে বনের নে পড় , নাহলে তুইও হারিয়ে যেতে পারিস। সবাই কথাটা শুনে হেসে একদম খান খান। তবে আমার আর হাসি পেল না কারণ যে বইটি উনি আমায় দিয়েছেন সেই বইটি সাধারণত দুষ্প্রাপ্য, বাজারে অনেক বইই আছে সুন্দরবন টুরিস্ট দের গাইট করার জন্য তবে এরকম বই নেই। কারণ এটি প্রায় পাঁচ দশক আগেকার। তবে এই বই স্যারই বা কোথায় পেলেন। অপুদার মুখে শুনেছিলাম কীলুবাবুর নাকি পুরোনো জিনিস সংগ্রহ করার অভ্যাস রয়েছে। আর ওনার এই অভ্যাস এবার আমাদের ক্ষেত্রে বেশ ভালো প্রমাণিত হয়েছে।
সকালের খাওয়া দাওয়া সেরে বই টা নিয়ে বসলাম। অপুদার দেখছি ওর বিছানায় সটাং হয়ে শুয়ে শুয়ে সিগারেটে টান মারছে। আমি গল্পটা পড়তে পড়তে এক জায়গায় থেমে গিয়ে অপুদাকে জিজ্ঞাসা করলাম ,"আচ্ছা অপুদা কোনো ভ্রমণ মুলক গল্পের মধ্যে প্রেমের কবিতা থাকাটা কী লেখকের হঠকারিতা । না তার কোনো বুদ্ধিমত্তার
প্রকাশ। অপুদা চোখ বন্ধ করে সিগারেট টানতে টানতেই বলল এক্ষেত্রে কবিতাটি না শুনে কীছু বলাটা বেশ মুশকিল। সে তো বুঝলাম কিন্তুু আরও একটা প্রশ্ন আছে। অপুদা এই বার উঠে বসেছে , সিগারেট টা ফেলে ও পা দিয়ে আগুন টা কে ঘষতে ঘষতে বলল কী প্রশ্ন? আমি বললাম বইটা জন ওয়াসিম নামে এক ইংরেজি লেখকের অতএব বইটিও ইংরেজি তে কিন্তুু কবিতা টি বাংলা হওয়ার কারণ টা কি? না এটি শুধু মাত্র একটা টাইপিং মিস্টেক, আর এত বড় ভুলই বা কী করে হয়! অপুদা একটু আশ্চর্যী হয়ে ভ্রুকুচঁকে বলল কবিতা টা একটি বার পড়তো। আমি অবাঞ্ছিত প্রেমের কবিতা টি পড়তে আরম্ভ করলাম
"দুরে চইলা গেছে তুমি কান্দাইয়া মোরে,
তুমি কী আর না আসিবেরে।
পর নব বধূর পঞ্চ মুখ দেখিবারে ?
কিন্তুু দেখা হইল মরণে!
মুই মুখ ঢাকিয়া সরমে।
যদি খুলিতে মোর
সালের ঘোমটা খানি!
দেখিয়া বিস্মৃত হয়তে
মোর দুর্লভ মনরত্ন খানি।।
কবিতা টি শোনার পর ওকে বিরবির করে দুবার বলতে শুনলাম ভেরি ইন্টারেস্টিং! তারপর ও স্বজোরেই বলে উঠলো গল্পটি না পড়ে কবির ভ্রমন গল্পের মধ্যে প্রেমের কবিতা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে জাজ করা মূর্খামি ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই তোর পড়াটা তারাতারি শেষ করে আমায় দে। আমি বইটি একবার হলেও পড়তে চায়।এই গল্পে শুধু বন সম্পর্কে লেখা আছে তাই নয় এখানকার জনজাতি ও তাদের কঠোর নিয়ম কানুন সম্পর্কে ও লেখা রয়েছে। আর নিয়ম কানুন উলঙ্ঘন কারী কে তাদের জনগোষ্ঠী থেকে বহিষ্কৃত করা হয় ও কঠোর শাস্তি নিশ্চিত থাকে তাদের জন্যে। এছাড়াও আরও অনেক কিছুই লেখেছেন জন ওয়াসিম এই বইয়ে।।


🙏🙏stay.....