আকুতি পর্ব ২
সে তার ব্যাগপত্র কোনোভাবে নিজের ঘরে রেখে দিয়েই তড়িঘড়ি করে দাদুর ঘরে চলে এসেছিল।ধীর পায়ে ঢুকেছিল সে দাদুর ঘরে।আস্তে করে দাদুর বিছানার পাশে রাখা চেয়ারখানি নিয়ে বসেছিল।তারপর সে নিষ্পলক তাকিয়েছিল দাদুর চোখের দিকে আর দাদুর যন্ত্রনাক্লিষ্ট চোখ দুখানি স্হিরভাবে নিবদ্ধ ছিল তাতানের চোখের দিকে।বেশ কিছুক্ষণের এই নিস্তব্ধতাতেই নিঃশব্দে হয়ে গেল অনেক কথার মূক বিনিময়।যাবার সময়ে তাতান দাদুর হাত ধরে বলেছিল,"দাদু...তুমি এই ঘরে আর একা থাকবে না।আমি আমার ব্যাগপত্র নিয়ে এই ঘরে আসছি।বাইরের লোক নয়,এবার থেকে আমিই তোমার সেবাযত্ন করব।"
বৃদ্ধ ভগ্নকন্ঠে কোনোমতে বললেন,"আমায় একটু একা থাকতে দে দাদুভাই,একটু একা থাকতে দে"।
তাতান উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল,"তা কি করে হয় দাদু...তোমার শরীরের এই অবস্হায়...
"শ্ শ্ শ্ শ্ শ্"...
চাপা অথচ প্রখর তীব্র কন্ঠে দাদু তার মুখের কাছে আঙুল এনে দৃঢ়স্বরে বললেন,এই বিষয়ে আর একটাও কথা নয়।এটা আমার আদেশ।"
তাতান যারপরনাই বিস্মৃত হল।তারপর ধীরকন্ঠে বলল,"ঠিক আছে দাদু।যেমন তোমার ইচ্ছা...আমি মাঝে মাঝে তোমায় দেখতে আসব।সাবধানে থেকো !আর আমার ঘর তো কাছেই,দরকার মতো আমায় ডেকে নিও কেমন!"
এই বলে সবেমাত্র চেয়ার ছেড়ে উঠতে যাবে তাতান।এমন সময়ে দাদু হঠাৎই এক অদ্ভুত কান্ড করে বসলেন।তিনি তাতানের হাত দুখানি জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন,
"আামার একটা কাজ করে দিবি দাদুভাই?"
অবাক হয়ে তাতান বলল,"হ্যাঁ নিশ্চয়ই।বলো না দাদু"।
দাদু বললেন,"আমায় একটা বড় ক্যানভাস আর কিছু রং তুলি এনে দিবি?"
তাতান অবাক হয়ে দাদুকে জিজ্ঞাসা করল,তুমি এই শরীর নিয়ে রং তুলি ক্যানভাস নিয়ে কি করবে?
রোগক্লিষ্ট মুখে অল্প হাসি এনে দাদু বললেন,এনে দে না রে দাদুভাই...মরবার আগে একটু বেঁচে নিই...
দাদুর সারা মুখে এক অদ্ভুত আকুতি দেখল তাতান।মৃদুস্বরে সে বলল,ঠিক আছে দাদু।আমি আজ বিকেলের মধ্যে তোমায় এনে দেব।এখন আমি আসি...সাবধানে থেকো...
ঘরের পরদা সরিয়ে ধীরপায়ে ঘর থেকে বিদায় নিল সে।সেদিন বিকেলের মধ্যে সে একটা বড় ক্যানভাস আর কিছু রংতুলি কিনে এনে দাদুকে দিয়ে এল।তার অল্পকিছু দিন পর পরই দাদুর মধ্যে এক বিরাট পরিবর্তন দেখা দিল।দাদুর শরীর থেকে যেন কোনো অজানা যাদুমন্ত্রে রোগ যন্ত্রণার সমস্ত লক্ষণ ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে থাকল।এমনকি দাদুর মধ্যে ক্রমশ বার্ধক্যের সমস্ত লক্ষণ ও চিহ্নও অবিশ্বাস্যভাবে গায়েব হয়ে যেতে থাকল।আশি পার করা দাদুর সারা শরীর ক্রমশ বিশবর্ষীয় অকাল তারুণ্যে লাবণ্যময় হয়ে উঠতে লাগল যেন।দাদু মরার আগে তাঁর চার ছেলের মধ্যে কোনজন আগে সিংহভাগ সম্পত্তি তাঁকে দিয়ে নিজের নামে লিখিয়ে নেবেন সেটা নিয়ে যখন পরিবারের প্রতিটি আনাচ কানাচ জুড়ে চাপা উত্তেজনার পারদ ক্রমাগত উচুতে চড়ছিল,ঠিক সেই সময়ে তাঁর অপ্রত্যাশিত এবং অপার্থিব এই ভোলবদলে গোটা পরিবার এখন বিস্ময়ে একেবারে বাকরুদ্ধ।দাদু এখন শয্যাত্যাগ করেছেন এবং একেবারে রোগমুক্ত সুস্হ শরীর নিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন।কিন্তু যেটা আশ্চর্য ব্যাপার,সেটা হল,তিনি সব সময়ে নিজের ঘর বন্ধ রাখেন এবং বন্ধ দরজার আড়ালে নিজেকে স্বেচ্ছাবন্দী করে এক অজ্ঞাত অতিপ্রাকৃতিক একাকিত্বে মগ্ন জীবন যাপন করেন।বন্ধ দরজার বাইরের পৃথিবীর যেন জানা বারণ তাঁর এই আত্মমগ্ন জীবনের স্বরলিপি।
তাতান যত সবকিছু সামনে থেকে প্রত্যক্ষ করতে থাকল ততই বিস্ময়ে হতবুদ্ধি স্তব্ধ হয়ে যেতে থাকল।চারপাশে দাদুর মৃত্যুর দিনক্ষণ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণের মাঝখানে এই অপ্রত্যাশিত যবনিকার অমোঘ বিস্ময় এবং সম্পত্তি টাকাপয়সার ভাগবাঁটোয়ারার চিন্তাভাবনার খেই হারিয়ে নোঙর খোঁজার পরিস্হিতিতে পরিবারের সবার যখন হাবুডুবু খাওয়ার মতো অবস্হা তখন এইসব পার্থিব হিসেবনিকেশের চিন্তার উর্দ্ধে অবস্হান করা তাতানের
মনে দেখা দিল এক তোলপাড় করা কৌতূহল। দাদুর শরীর আরোগ্যলাভ করাতে তাতান যারপরনাই খুশি হলেও প্রকৃতির সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে গিয়ে দাদুর এই অপার্থিব পরিবর্তনে তাতান ভীষণভাবে এক কূহেলী আচ্ছন্ন রহস্যের গন্ধ পাচ্ছে যা তাকে উদঘাটন করতেই হবে।বন্ধ ঘরের ভিতরে,জগতের থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন সেই অলীক দুনিয়ার পর্দা সরিয়ে দেখার কৌতূহলটা ক্রমে তাতানের ভিতরে একেবারে গোঁজ হয়ে চেপে বসল।সে বুঝতে পারল এটা সহজ কাজ নয়।কারণ দাদু নিজের সেই ঘরখানার দরজা এবং জানলার মধ্যে কোনোরকম ফাঁকফোকরটাও উন্মুক্ত রাখবার পক্ষপাতী নন।অতএব এই রহস্য উদঘাটন করতে যদি হয় তাহলে তাতানকে একেবারে সবসময় মনযোগ দিয়ে তক্কে তক্কে থাকতে হবে সময় অথবা সুযোগের অপেক্ষায়।অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।দাদুকে সে যত চোখের সামনে দেখছে,তার সমস্ত চেনা হিসেবনিকেশ নিমেষে গুলিয়ে যাচ্ছে।সে সারারাত বিভিন্ন বইপত্র ঘেঁটে বিস্তর পড়াশোনা করল।কিছু কোনোকিছুর কোনো কূলকিনারা করতে পারল না।সে বুঝল,রহস্য উদঘাটন করতে হলে তাকে আরো বেশ কয়েকদিন এখানে থাকতে হবে।সেইমতো পরিকল্পনা করে সে পরদিন সকাল সকালই বেরিয়ে গেল মেসের উদ্দেশ্যে আরো কয়েকদিন বাড়িতে থাকবার জন্য পর্যাপ্ত আরো কিছু জামাকাপড় আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আসবার জন্য।মেসে পৌঁছে জিনিসপত্র গোছগাছ করে,রুমমেটদের সাথে কিছুক্ষণ আলাপচারিতা সেরেটেরে বাড়ি ফিরতে বেশ দেরীই হয়ে গেল তাতানের।বাড়িতে ফিরে তাতান একটা অপ্রত্যাশিত দুঃসংবাদ শুনে একেবারে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল।দাদু আজ সকালেই ইহলোক ত্যাগ করেছেন।অলীক আরোগ্যপ্রাপ্ত দাদুর এই অকস্মাৎ মৃত্যুতে একেবারে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ল তাতান।সেই সাথে দাদুর এই অপার্থিব পরিবর্তনের রহস্য শুধু রহস্য হয়েই অধরা রয়ে যাবার আপশোষে তাতান ভীষণরকম মুষড়ে পড়ল।
বৃদ্ধ ভগ্নকন্ঠে কোনোমতে বললেন,"আমায় একটু একা থাকতে দে দাদুভাই,একটু একা থাকতে দে"।
তাতান উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল,"তা কি করে হয় দাদু...তোমার শরীরের এই অবস্হায়...
"শ্ শ্ শ্ শ্ শ্"...
চাপা অথচ প্রখর তীব্র কন্ঠে দাদু তার মুখের কাছে আঙুল এনে দৃঢ়স্বরে বললেন,এই বিষয়ে আর একটাও কথা নয়।এটা আমার আদেশ।"
তাতান যারপরনাই বিস্মৃত হল।তারপর ধীরকন্ঠে বলল,"ঠিক আছে দাদু।যেমন তোমার ইচ্ছা...আমি মাঝে মাঝে তোমায় দেখতে আসব।সাবধানে থেকো !আর আমার ঘর তো কাছেই,দরকার মতো আমায় ডেকে নিও কেমন!"
এই বলে সবেমাত্র চেয়ার ছেড়ে উঠতে যাবে তাতান।এমন সময়ে দাদু হঠাৎই এক অদ্ভুত কান্ড করে বসলেন।তিনি তাতানের হাত দুখানি জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন,
"আামার একটা কাজ করে দিবি দাদুভাই?"
অবাক হয়ে তাতান বলল,"হ্যাঁ নিশ্চয়ই।বলো না দাদু"।
দাদু বললেন,"আমায় একটা বড় ক্যানভাস আর কিছু রং তুলি এনে দিবি?"
তাতান অবাক হয়ে দাদুকে জিজ্ঞাসা করল,তুমি এই শরীর নিয়ে রং তুলি ক্যানভাস নিয়ে কি করবে?
রোগক্লিষ্ট মুখে অল্প হাসি এনে দাদু বললেন,এনে দে না রে দাদুভাই...মরবার আগে একটু বেঁচে নিই...
দাদুর সারা মুখে এক অদ্ভুত আকুতি দেখল তাতান।মৃদুস্বরে সে বলল,ঠিক আছে দাদু।আমি আজ বিকেলের মধ্যে তোমায় এনে দেব।এখন আমি আসি...সাবধানে থেকো...
ঘরের পরদা সরিয়ে ধীরপায়ে ঘর থেকে বিদায় নিল সে।সেদিন বিকেলের মধ্যে সে একটা বড় ক্যানভাস আর কিছু রংতুলি কিনে এনে দাদুকে দিয়ে এল।তার অল্পকিছু দিন পর পরই দাদুর মধ্যে এক বিরাট পরিবর্তন দেখা দিল।দাদুর শরীর থেকে যেন কোনো অজানা যাদুমন্ত্রে রোগ যন্ত্রণার সমস্ত লক্ষণ ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে থাকল।এমনকি দাদুর মধ্যে ক্রমশ বার্ধক্যের সমস্ত লক্ষণ ও চিহ্নও অবিশ্বাস্যভাবে গায়েব হয়ে যেতে থাকল।আশি পার করা দাদুর সারা শরীর ক্রমশ বিশবর্ষীয় অকাল তারুণ্যে লাবণ্যময় হয়ে উঠতে লাগল যেন।দাদু মরার আগে তাঁর চার ছেলের মধ্যে কোনজন আগে সিংহভাগ সম্পত্তি তাঁকে দিয়ে নিজের নামে লিখিয়ে নেবেন সেটা নিয়ে যখন পরিবারের প্রতিটি আনাচ কানাচ জুড়ে চাপা উত্তেজনার পারদ ক্রমাগত উচুতে চড়ছিল,ঠিক সেই সময়ে তাঁর অপ্রত্যাশিত এবং অপার্থিব এই ভোলবদলে গোটা পরিবার এখন বিস্ময়ে একেবারে বাকরুদ্ধ।দাদু এখন শয্যাত্যাগ করেছেন এবং একেবারে রোগমুক্ত সুস্হ শরীর নিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন।কিন্তু যেটা আশ্চর্য ব্যাপার,সেটা হল,তিনি সব সময়ে নিজের ঘর বন্ধ রাখেন এবং বন্ধ দরজার আড়ালে নিজেকে স্বেচ্ছাবন্দী করে এক অজ্ঞাত অতিপ্রাকৃতিক একাকিত্বে মগ্ন জীবন যাপন করেন।বন্ধ দরজার বাইরের পৃথিবীর যেন জানা বারণ তাঁর এই আত্মমগ্ন জীবনের স্বরলিপি।
তাতান যত সবকিছু সামনে থেকে প্রত্যক্ষ করতে থাকল ততই বিস্ময়ে হতবুদ্ধি স্তব্ধ হয়ে যেতে থাকল।চারপাশে দাদুর মৃত্যুর দিনক্ষণ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণের মাঝখানে এই অপ্রত্যাশিত যবনিকার অমোঘ বিস্ময় এবং সম্পত্তি টাকাপয়সার ভাগবাঁটোয়ারার চিন্তাভাবনার খেই হারিয়ে নোঙর খোঁজার পরিস্হিতিতে পরিবারের সবার যখন হাবুডুবু খাওয়ার মতো অবস্হা তখন এইসব পার্থিব হিসেবনিকেশের চিন্তার উর্দ্ধে অবস্হান করা তাতানের
মনে দেখা দিল এক তোলপাড় করা কৌতূহল। দাদুর শরীর আরোগ্যলাভ করাতে তাতান যারপরনাই খুশি হলেও প্রকৃতির সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে গিয়ে দাদুর এই অপার্থিব পরিবর্তনে তাতান ভীষণভাবে এক কূহেলী আচ্ছন্ন রহস্যের গন্ধ পাচ্ছে যা তাকে উদঘাটন করতেই হবে।বন্ধ ঘরের ভিতরে,জগতের থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন সেই অলীক দুনিয়ার পর্দা সরিয়ে দেখার কৌতূহলটা ক্রমে তাতানের ভিতরে একেবারে গোঁজ হয়ে চেপে বসল।সে বুঝতে পারল এটা সহজ কাজ নয়।কারণ দাদু নিজের সেই ঘরখানার দরজা এবং জানলার মধ্যে কোনোরকম ফাঁকফোকরটাও উন্মুক্ত রাখবার পক্ষপাতী নন।অতএব এই রহস্য উদঘাটন করতে যদি হয় তাহলে তাতানকে একেবারে সবসময় মনযোগ দিয়ে তক্কে তক্কে থাকতে হবে সময় অথবা সুযোগের অপেক্ষায়।অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।দাদুকে সে যত চোখের সামনে দেখছে,তার সমস্ত চেনা হিসেবনিকেশ নিমেষে গুলিয়ে যাচ্ছে।সে সারারাত বিভিন্ন বইপত্র ঘেঁটে বিস্তর পড়াশোনা করল।কিছু কোনোকিছুর কোনো কূলকিনারা করতে পারল না।সে বুঝল,রহস্য উদঘাটন করতে হলে তাকে আরো বেশ কয়েকদিন এখানে থাকতে হবে।সেইমতো পরিকল্পনা করে সে পরদিন সকাল সকালই বেরিয়ে গেল মেসের উদ্দেশ্যে আরো কয়েকদিন বাড়িতে থাকবার জন্য পর্যাপ্ত আরো কিছু জামাকাপড় আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আসবার জন্য।মেসে পৌঁছে জিনিসপত্র গোছগাছ করে,রুমমেটদের সাথে কিছুক্ষণ আলাপচারিতা সেরেটেরে বাড়ি ফিরতে বেশ দেরীই হয়ে গেল তাতানের।বাড়িতে ফিরে তাতান একটা অপ্রত্যাশিত দুঃসংবাদ শুনে একেবারে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল।দাদু আজ সকালেই ইহলোক ত্যাগ করেছেন।অলীক আরোগ্যপ্রাপ্ত দাদুর এই অকস্মাৎ মৃত্যুতে একেবারে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ল তাতান।সেই সাথে দাদুর এই অপার্থিব পরিবর্তনের রহস্য শুধু রহস্য হয়েই অধরা রয়ে যাবার আপশোষে তাতান ভীষণরকম মুষড়ে পড়ল।